আজকে অবাক হলেও এটাই সত্য যে, বর্তমানে পৃথিবীতে তিনশো সত্তুর কোটি মানুষের যা সম্পদ, তারচে বেশি সম্পদ স্রেফ ৪২জন ধনী মানুষের করায়ত্তে।
এভাবে পুঁজিবাদী স্টাইলে মধ্যবিত্তরা যখন গরিব হয় তখন তারা ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বলে, "আমরা গরিব হইতে পারি কিন্তু ফকির মিসকিন না।"
এটা হলো আসল কাহিনী। অথচ বিটিভি প্রজ্ঞাপন দিলো, বাংলাদেশে ফকির মিসকিন নাই। এটা তথ্যমন্ত্রণালয়ের বিপ্রতীপ চিন্তা। তাদের পরিসংখ্যান ছিল, ফকির মিসকিনরা একটু উন্নত পর্যায়ের জীবন পাইছে, তাই মানবেতর জীবন ভুলে গরিবী জীবন কাটাচ্ছে। অথচ কাহিনী হলো উল্টো। ফকির মিসকিনরা গরিব হয় নাই, গরিব হইছে মধ্যবিত্তরা। কারণ, দেশে যদি আসলেই ফকির মিসকিন না থাকত আর কুলখানির দাওয়াত দিতে আসায় যদি তাদের অপমান করা হত, তাহলে যাকাত ও কুরবানির চামড়ার টাকা কাকে দেয়া হলো? ফকির মিসকিনের অংশটা নিলো কারা?
যাকাতের অর্থ সংগ্রহের জন্য মানুষের উপর্যপুরি ভিড়ে স্পটডেথ হওয়ার ঘটনা তো প্রতিবছরই শোনা যায়। মসজিদ থেকে বের হতে নিলেই চোখে পড়ে অসহায় দুস্থশ্রেণির লোকদের। বৌদ্ধমন্দির থেকে দেয়া ইফতারি বিতরণে ধর্মের জাত ভুলে যারা নিজেদের অন্ন যোগায়, তাদের পেটে লাথি মেরেই অভিজাত শ্রেণির পুঁজিবাদী এলাকা নির্মাণ করে তাতে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিচ্ছেন, ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা।
যাক, এ বিষয়টা নিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করছে সরকারের ওপর। তথ্যমন্ত্রণালয়ের ওপর। বিটিভির ওপর। কিন্তু আমার কাছে এটা স্রেফ বাজারী পণ্যের মতো চটকদারী বিজ্ঞাপন মনে হইছে। যেটা ধরেন, এনার্জি ড্রিংক স্পিড খেয়ে দেয়াল ভেঙে ফেলার মতো কিংবা গরম উত্তপ্ত লাল লোহাকে ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে ফেলার মতো, যার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।
শুরুটা যেহেতু পুঁজিবাদ দিয়েই করছি তাই শেষটাও পুঁজিবাদী তত্ত্ব দিয়েই করি। কার্ল মার্ক্সের একটা বড় তত্ত্ব ছিল পুঁজিবাদ নিজেই নিজের ধ্বংস ডেকে আনবে।
কিভাবে?
মার্ক্স বলছেন, যখন সবাই বুঝতে পারবে যে এই পদ্ধতিতে গলদ উপাদান আছে, তখন তারা নিজেরাই বিদ্রোহ করে বিপ্লব ঘটাবে।
তাই বোকা জনগণরা যখন বুঝবে এসব প্রজ্ঞাপন/বিজ্ঞাপনে গলদ উপাদান আছে, তারা কিন্তু বিদ্রোহ বিপ্লব ঘটাবে। পরিণাম কী হবে, সেটা তো কার্ল মার্ক্সই বলেছেন, ধ্বংস, পতন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৬