খালেদ সাইফুল্লাহ একজন আলেম। তিনি আধ্যাত্মিকতার সবক রপ্ত করেছেন শায়খ ইব্রাহিম আফ্রিকীর কাছে। তিনি আমিরে শরিয়ত সাংসদ মোহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহমাতুল্লাহি আলাইহের স্নেহধন্য শিষ্য এবং জামাতা। কমলনগরের ওলামায়ে কেরামের প্রধান প্রতিনিধি। শোষণযুগের সফল শাসক। ধর্মপ্রাণ দেশপ্রেমিক মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গী। সবাইর কাছে ‘পীর সাহেব কমলনগর’ নামেও পরিচিত।
তিনি একজন সুবক্তাও। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তিনি ওয়াজ-মাহফিল করে বেড়ান। তার মাহফিল মানেই খোদাভীতির ক্লাস, আধ্যাত্মিকতার সুপেয় শরাব। প্রতিটি মাহফিলেই তিনি প্রভুর ভয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীর মতো ডুকরে ডুকরে কাঁদতে দেখা যায়।
তিনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পরে তাঁর জীবনের অচেনা নাজানা অধ্যায়টি প্রকাশ পেতে শুরু করে। মানুষ জানতে পারে, তিনি শাসক হিসেবে কেমন! একটি ইউনিয়ন পর্ষদ কিভাবে পরিচালনা করতে হয়, এগুলো তিনি হাতে-কলমে দেখিয়ে দিয়েছেন সবাইকে। শোষণ-নিপীড়ন-উৎপীড়নের যুগে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিলেন, 'খলিফা উমরের শাসনামল' বুঝি এমনটা ছিল।
খলিফা উমর রাযিআল্লাহু আনহু সাড়ে আটলক্ষ বর্গমাইল তথা অর্ধপৃথিবীর সম্রাট হয়েও রঙমহল আর মিছে দুনিয়ার মোহ পরিহার করে ছেঁড়া ডোরাকাটা চাদর পরে মানুষের খোঁজখবর নিয়েছেন রাতের আঁধারে। অসহায় আর অন্নহীন লোকদের মুখে আহার তুলে দিয়েছেন জনগণের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে। ঠিক তেমনি আজ চৌদ্দশ' বছর পর আমরা পেয়েছি উমর রাযিআল্লাহু আনহুর এক প্রতিবিম্ব।
পরনে নেই ভালো কাপড়। নেই চকচকে কোর্তা-জুতা। দামি লালগালিচা আর মখমলের গদি নেই তার। যুগের ‘বিএমডব্লিউ’ বা ‘ফ্রাডো’ গাড়ির বিলাসিতাও নেই। সম্বল আছে ২০০ টাকা দামের কম্বলের গদি আর সাধারণ একটি চেয়ার। চলাচলের জন্য একটি বাইসাইকেল। গায়ে জড়ানো ধুসর ময়লাগোছের পরিধেয়। পায়ের মোজা ছেঁড়াফাটা। বড়জোর অর্ধশত টাকার একজোড়া স্যান্ডেল প্রায়ই দেখা যায় তার পায়ে। অথচ ইনি আজকের বিলাসী যুগের একজন দাপুটে চেয়ারম্যান।
কিছুদিন আগে তাকে দেখা গেছে মানুষের সাথে কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে মাটি কেটে জনগণের চলাচলের রাস্তা ভরাট করতে। দেখা গেছে তক্তা দিয়ে নির্মিত সাঁকো নিজহাতে তৈরি করতে। চলার পথে কারো মালবাহী গাড়ী আটকে গেলে নিজহাতে ঠেলে দিতে। কি মানুষ পেলাম আমরা! কি চেয়ারম্যান পেলো জনগণ!
আপনি হয়ত ভাববেন, তাঁর গায়ে জোর আছে। তিনি টগবগে যুবক। আসলে তা নয় তিনি ষাটোর্ধ্ব ধবল দাঁড়িঅলা মুরুব্বি। বর্তমানে সারাদেশে নভেল করোনার প্রাদুর্ভাব চলছে। ভাইরাসের আতঙ্কে যখন মানুষ লকডাউন হয়ে ঘরকুনো। দিনমজুরের কাজকর্ম যখন থেমে গেছে, দেশ দরিদ্রসীমার নিচে নামতে নামতে তলানিতে ঠেকেছে, তখন মানুষের দোরগোড়ায় হাজির নিত্যকার খাবার নিয়ে। নিজেই সাধারণ ‘কামলা’ হয়ে নেমে পড়েছে ময়দানে। অন্য কারোর কাবিখায় নয়, নিজেই যেন খাবার গ্রহণ করেন জনগণের কাজের বিনিময়ে। নিজেই চাল-আলু নিয়ে যাচ্ছেন অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে।
আহা কী দেশপ্রেম! কী গণমুখী ভালোবাসা আর জনপ্রীতি! সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য নয়, মানুষকে ভালোবেসেই তাদের বিপদে পাশে দাঁড়ানেরা দোর্দণ্ড নাবিক। আহা কী দায়িত্ববোধ! গ্রাম-বাংলার প্রতিটি ইউনিয়ন-ওয়ার্ডে এমন শাসক বাংলাদেশ দেখতে মুখিয়ে আছে। উন্মুখ হয়ে আছে দেশের জনগণ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ২:৪৩