somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গেম রিভিউঃ Homefront (2011) [সাথে আগের মতোই বোনাসঃ গেমিং সম্পর্কিত যেকোন প্রশ্ন/সমস্যার সমাধান/আলোচনা!! ]

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৮:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কথায় কথায় আমরা মাঝে মাঝেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে আনি, ভবিষ্যতের সে যুদ্ধে কে জিতবে, কে হারবে তার হিসাব কষতে থাকি। প্রতীক্ষার পালা বোধহয় এতোদিনে শেষ হয়ে এলো।

না না, সত্যি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে শুরু হতে যাচ্ছে না! কিন্তু বিশ্বখ্যাত গেম পাবলিশার THQ এর ব্যানারে ইতোমধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হাল-হাকিকত নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে অখ্যাত আমেরিকান গেম ডেভেলপার Kaos Studios।

গেমটির নাম Homefront।

ট্যাগলাইনে ‘Home is where the war is’ এবং সিডি কাভারে রক্তাক্ত এক সৈনিকের প্রতিমূর্তি দেখে নিমিষেই বুঝতে পারবেন, এটি একটি হার্ডকোর যুদ্ধের গেম। গেমটির জেনার ফার্স্ট-পারসন শুটার, প্রেক্ষাপট ২০২৬ সাল। গেম তৈরিকারকদের কল্পনা অনুযায়ী, সে বছরই শুরু হবে ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ!

গল্পের প্লট সাজানোর ক্ষেত্রে গল্পকার যথেষ্ট মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। আমরা যেখানে চিরপরিচিত পরাক্রমশালী যুক্তরাষ্ট্রকে দেখে অভ্যস্ত, সেই যুক্তরাষ্ট্র এখানে বিধ্বস্ত, পরাজিত, এবং দিশেহারা। ততোদিনে দুই উত্তর কোরিয়া একত্রিত হয়ে বৃহত্তর কোরিয়া গঠন করেছে, ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে বিদ্যমান দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে সারা বিশ্বে তেলের সরবরাহ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে, রাশিয়া ও ইউক্রনের মধ্যকার এক চুক্তির কারণে সম্পূর্ণ ইউরোপের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এমন শ্বাসরূদ্ধকর পরিস্থিতিতে আমেরিকার টেক্সাসে শুরু হয় এক ভয়াবহ বার্ড ফ্লু, যা ধীরে ধীরে সমস্ত যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে ইউ.এস. আর্মিকে ছন্নছাড়া করে দেয়, ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষ মারা যায়। বহির্বিশ্ব হতে তেমন সাহায্য না পাওয়ায় অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র, এবং এমন মোক্ষম সময়ই জাপানসহ দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর সাথে সাথে হাত মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণ করে বৃহত্তর কোরিয়া।

এমনই টানটান পরিস্থিতে আপনাকে খেলতে হবে রবার্ট জ্যাকবস নামক একজন অবসরপ্রাপ্ত ইউ.এস. মেরিন পাইলটের ভূমিকায়, যিনি ভাগ্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন সাধারণ মানুষদের নিয়ে গঠিত ‘প্রতিরক্ষা বাহিনী’-এর সাথে। কলোরাডো অঞ্চলে কোরিয়ান আর্মির চোখের আড়ালে এই প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তোলে ছোট্ট ‘আমেরিকা’, যেখানে সাধারণ মানুষ নির্দ্বিধায় আশ্রয় নেয়। এবং এখান থেকেই প্রতিরক্ষা বাহিনীর সব কাজকর্ম পরিচালিত হয়।

গেমটির গ্রাফিক্সের কাজ অসাধারণ, মৃত বাবা-মায়ের উপর শিশুর কান্না থেকে শুরু করে কাঁদতে কাঁদতে নামাজ পড়া; সবধরনের কাজই মানুষজনকে আপনি করতে দেখবেন আশেপাশের পরিবেশে। এমনকি সিভিলিয়ানদের উপর কোরিয়ান আর্মির নির্যাতনের মাত্রা দেখে শিউরেও উঠতে পারেন বেশ কয়েকবার। গণকবরে লাশের নিচে লুকিয়ে থাকতে হতে পারে বেশ কিছু সময় শত্রুর চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্যে। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু বিখ্যাত জায়গাতেও আপনার লড়াই করতে হবে শত্রুর সাথে (যেমন- গোল্ডেন গেট ব্রীজ)। সাথে রয়েছে চমৎকার সাউন্ড ইফেক্ট।



হাই-এন্ড পিসিতে গেমটি খেলে অন্যধরনের মজা পেতে পারেন, যা থেকে হয়তো সাধারণত পিসি ইউজাররা বঞ্চিত হবেন। বিশেষ করে ভাল একটি গ্রাফিক্স কার্ড এ গেমটিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাবে।

গেমটির গেমপ্লে প্রশংসনীয়, যদিও অনেকেই একে কল অফ ডিউটি সিরিজের গেমপ্লের ওপিঠ বলেছেন। তবে কিছু কিছু খুঁত মাঝে মাঝেই আপনাকে বিরক্ত করবে; যেমন- কাভার বা স্ট্রেফ কোন ধরনের অপশন না থাকায় আপনি প্রায়ই অসুবিধায় পড়তে পারেন। মাঝেই মাঝেই দেখা যায় ডজনখানের গুলি লাগার পরও শত্রু মরছে না, তখন আপনার বিরক্তি আরও বেড়ে যাবে।

স্বল্পদৈর্ঘ্য গেমটির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা, কাহিনীর মধ্যে ডুবে যেতে যেতেই দেখবেন আপনি গেমের শেষ প্রান্তে চলে এসেছেন। তবে এর মাল্টিপ্লেয়ার মোডটি ক্যাম্পেইন মোডের তুলনায় বেশ প্রশংসনীয়। ব্যাপক ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র গেমটিতে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে, আরও রয়েছে হেলিকপ্টার ও বিভিন্ন সামরিক যুদ্ধযান।

বিভিন্ন বিখ্যাত গেম ম্যাগাজিন প্রদত্ত রেটিং থেকে দেখা যায়, গেমটির গড় রেটিং ৭.৫/১০।

সবমিলিয়ে বলা যায়, হোমফ্রন্ট-এর পেছনে আপনার সময় ব্যয় নেহাৎ বৃথা যাবে না। তাই দেরী না করে বসে পড়ুন পিসি গেমাররা কি-বোর্ড নিয়ে, এবং কনসোল গেমাররা জয়প্যাড নিয়ে।



এক নজরে ভালঃ

১. আকর্ষণীয় প্লট, সাথে মানানসই উঁচু মানের, নিখুঁত গ্রাফিক্যাল কাজ।
২. ছোটখাট কিছু খুঁত বাদ দিলে আকর্ষণীয় গেমপ্লে, সাথে বোনাস হিসেবে থাকছে অনেক ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র।
৩. নন-প্লেয়িং ক্যারেক্টারদের ইন্টারেকশান নিঃসন্দেহে উপভোগ্য, বিশেষ করে প্রোটাগোনিস্ট জ্যাকবস-এর সঙ্গীসাথীদের।

এক নজরে খারাপঃ

১. সিঙ্গেল প্লেয়ার মোড-এর স্বল্পদৈর্ঘ্য।
২. গেমপ্লের কিছু দুর্বল দিক, সাথে রয়েছে শত্রুর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর বেশ কিছু ত্রুটি।
৩. মিশনগুলোর বিভিন্নতা থাকলেও সাধারণ ফার্স্ট-পারসন শুটারদের জন্যে নতুন কিছু খুঁজে পাওয়া মুশকিল,বিশেষ করে যুগান্তকারী কল অফ ডিউটি সিরিজের ভক্তদের জন্যে অনেক মিশনই সাদামাটা মনে হতে পারে।

কিছু তথ্যঃ

১. গেমটির কনসোল ভার্সন অখ্যাত ডেভেলপার Kaos Studios তৈরী করলেও পিসি ভার্সন তৈরী করেছে বিখ্যাত ডেভেলপার Digital Extremes।
২. গেমের প্লট তৈরী করেছেন ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার বিখ্যার সিনেমা ‘Apocalypse Now’-এর সহকারী চিত্রনাট্যকার জন মিলিয়াস।
৩. গেমটি জাপানে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনার আগ পর্যন্ত, এবং দুই কোরিয়াতেই এটি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এছাড়া গেমটি পরিকল্পনার সময় প্রথমে আক্রমণকারী দেশ হিসেবে চীনকে দেখানো হলেও পরে তা পরিবর্তন করে কোরিয়া করা হয়।
৪. গেমটি সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত ৩.৬ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়েছে।

গেমটি খেলতে নূন্যতম যা লাগবেঃ
১. ইন্টেল কোর ২ ডুয়ো ২.৪ গিগাহার্জ/ এএমডি অ্যাথলন এক্স২ ২.৮ গিগাহার্জ প্রসেসর
২. পিক্সেল শেডার ৩.০ সহ কমপক্ষে ২৫৬ মেগাবাইট গ্রাফিক্স কার্ড, রেডন ১৯০০ এক্সটি/ এনভিডিয়া জিফোর্স ৭৯০০ জিএস বা এর পরবর্তী মডেল
৩. ১০ গিগাবাইট ফ্রি হার্ডডিস্ক স্পেস
৪. ২ গিগাবাইট র‍্যাম

টরেন্ট ডাউনলোড লিংক
---------------------------------------------------------------------------------
পূর্বে আইটি রিভিউ তে প্রকাশিত। আমাদের অনেক চেষ্টার পর প্রকাশিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ম্যাগাজিন, দ্বিতীয় সংখ্যা চলছে। পড়ে দেখতে পারেন। :)

গেমিং সম্পর্কিত কারও কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন, সাধ্যমত উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৮:১৭
২১টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×