somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা কি চাঁদে গিয়েছি? আমরা কি নাসার বড় কোন ষড়যন্ত্রের শিকার? যুক্তি এবং প্রতি-যুক্তির লড়াই... নিজেই যাচাই করে দেখুন!!

২৭ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“One small step for a man, one giant step for mankind”, বলা মানুষটি মারা গেছেন। এ খবর নতুন নয়। প্রত্যেক শতাব্দীতেই এমন কিছু মানুষ জন্মান, যারা পুরো সময়টাকে একধাপ এগিয়ে দিয়ে যান। নীল আর্মস্ট্রং তেমনি একজন মানুষ। স্যালুট এই নায়ক কে।
যাই হোক, তাঁকে নিয়ে এ পোস্ট নয়। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে ঘুরে বেড়ানো বিখ্যাত কথাগুলো আবার একান-ওকান হয়ে ছড়ানো শুরু হয়েছে, “সত্যি কি আর্মস্ট্রং চাঁদে গিয়েছিলেন?” “মানুষ কি সত্যি চাঁদে পা রেখেছে?” “অ্যাপোলো মিশন পুরোটাই কি ষড়যন্ত্র ছিলো?” ইত্যাদি ইত্যাদি...
আমেরিকানদের সাথে আমাদের একদিক দিয়ে মিল আছে, আমরা দুজনই বেশ হুজুগে জাতি। একটা জিনিস বুঝি আর না বুঝি, লাফ-ঝাঁপ দু চারটা না দিলে ভালো লাগে না। আজকেই এক আড্ডায় বন্ধুদের সাথে বিরাট তর্ক হয়ে গেলো এসব নিয়ে। এক বন্ধু গলার রগ ফুলিয়ে বলল, “আমেরিকা দুনিয়ার সবচেয়ে শয়তান জাতি, তুই এসবের কি বুঝবি?” আরেকজন বলল, “ইরাক-আফগানিস্তান থেকে টাকা নিয়ে সব এইসব শয়তানি করতেছে, মানুষ এতো বোকা আর কি!” মজার ব্যাপার হলো, তারাই সাধারণত এগুলো নিয়ে এভাবে তর্ক করে, যারা ঠিকভাবে জানেনা জিনিসটা কি। অনেকেই আছেন চাঁদ আর নীল আর্মস্ট্রং সম্বন্ধে শুধু এটাই জানেন যে আর্মস্ট্রং নাকি চাঁদে গিয়ে আজান শুনে এসেছেন! এই বাঙালী মার্কা জ্ঞান নিয়ে গলার রগ ফুলিয়ে তর্ক করা যায়, সত্যিকারের কিছু জানা যায় না।

চাঁদে মানুষ গিয়েছিলো কি যায়নি, এটা নিয়ে প্রথম বিতর্ক জন্ম দেন বিল কেসিং নামক এক লেখক তাঁর নিজের প্রকাশিত একটি বইতে। তখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা আর্থার সি. ক্লার্ক আর স্ট্যানলি কুবরিক কে জড়িয়ে বেশ একটা নাটক প্রস্তাব করেন তিনি, যেটা অনুসারে মানুষ কখনোই চাঁদে যায়নি, এবং সম্পূর্ণ অ্যাপোলো মিশনই অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে সাজানো একটি ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের পেছনের মোটিভ হিসেবে বেশ জোরালো কিছু যুক্তি দেন তিনি, যার প্রথমেই ছিলো তৎকালীন রাশিয়া-আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। এছাড়া সমগ্র পৃথিবীতে আমেরিকার একাধিপত্য বাড়াতে এমন একটা কিছুর প্রয়োজন ছিলো বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার এ যুক্তিগুলো একদিক দিয়ে ঠিক, কারণ অ্যাপোলো মিশন আমেরিকা আর নাসা কে এক ধাক্কায় এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলো, যা এর আগে কেউ পারেনি।
এরপরের দীর্ঘ চল্লিশ বছরে প্রচুর সমর্থনে পুষ্ট হয়েছে কেসিং-এর মতবাদ। মিডিয়া বারবার আলোড়িত হয়েছে এই ঘটনা নিয়ে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, সার্বজনীন কোন বিখ্যাত বিজ্ঞানী বা সংশ্লিষ্ট কেউ কিন্তু কখনো এ ব্যাপারে কোন উচ্চবাচ্য করেনি। অভিযোগকারীদের একটা বড় অংশই মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। এছাড়া আমেরিকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়ার কোন মহাকাশ সংস্থা/বিজ্ঞানীর পক্ষ থেকেও এমন কোন দাবী জানানো হয়নি। তবে হ্যাঁ, রাশিয়ার ২৮% মানুষ বর্তমানে বিশ্বাস করে যে অ্যাপোলো মিশন একটি বড় ধরনের ষড়যন্ত্র ছিলো।
মূল টপিকে চলে যাই। অভিযোগকারীদের অভিযোগগুলোর বেশিরভাগই চাঁদের তোলা বিভিন্ন ছবি/ভিডিও উপর ভিত্তি করে দাঁড় করানো। এছাড়া রয়েছে অসামঞ্জস্যতা, টেকনিক্যাল ইস্যু। কিছু কিছু খুবই ফালতু যুক্তিও দাঁড় করানো হয়েছে, যেগুলো কে যুক্তি নাও বলা চলে। নিচে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অভিযোগ আর তাদের প্রত্যুত্তর তুলে ধরছি-


#ফটোগ্রাফি নিয়ে অভিযোগ
১. শুটিং গেম খেলার সময় আমরা প্রায়ই ক্রসহেয়ার ব্যবহার করি, যা মূলত ডিরেকশান ঠিকঠাক রাখতে ব্যবহৃত হয়। অ্যাপোলো মিশনে ব্যবহৃত ক্যামেরাগুলোর লেন্সের সামনে এই ক্রসহেয়ার যুক্ত একটি কাঁচের প্লেট ছিলো। তাই ছবি তুললে স্বাভাবিকভাবেই ওই ক্রসহেয়ার সহ চলে আসতো। কিন্তু চাঁদের কিছু ফটোতে দেখা যায়, ক্রসহেয়ারের ওপর ছবি চলে এসেছে, অর্থাৎ উলটো ওভারল্যাপ হয়েছে যেটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই এখানে অভিযোগ, ছবিগুলো আলাদা করে পেস্ট করা হয়েছে।
উত্তরঃ শুধুমাত্র স্ক্যান করা ও এডিট করা ফটোগুলোতেই এই সমস্যাটা দেখা যায়। মূল ছবিগুলো একটু ভালোভাবে বিশ্লেষণ করলেই যে কেউ এর ব্যাখ্যাটা বুঝতে পারবে। মাত্র ০.১ মিলিমিটার পুরু ক্রসহেয়ার কোন কোন জায়গায় উজ্জ্বল ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণে ঝাপসা হয়ে গিয়েছে, যেটা ওভার এক্সপোজারের কারণে যে কোন ছবিতেই হতে পারে।
আরেকটা কথা হলো, যদি পুরো ব্যাপারটা বানানোই হয়, তাহলে খামোখা ক্রসহেয়ার সম্বলিত ক্যামেরারই বা কি দরকার ছিলো? আর যদিও বা সেটা ব্যবহার করা হলো, তাহলে সরাসরি শুটিং করলেই তো হতো, কি দরকার ছিলো এডিট করে কাট-পেস্ট করার মতো অহেতুক একটা ঝামেলা করার?


এই স্ক্যান করা ছবিটী ভালোভাবে খেয়াল করে দেখুন, মনে হচ্ছে ক্রসহেয়ারের একটা পাশ যন্ত্রটার পেছনে ঢাকা পড়ে গেছে


এবার এটি লক্ষ্য করুন। উজ্জল সাদা রঙের সামনে ক্রসহেয়ারটি শুধু ফেড হয়েছে মাত্র। এটিই মূল ছবি।


পতাকার এই ছবিতেও একই ব্যাপার। স্ক্যান ও এডিট করা ছবিতে মনে হবে ক্রসহেয়ার ঢাকা পড়ে গিয়েছে, কিন্তু ওটা আসলে শুধু উজ্জ্বল সাদা রঙের সামনে ঝাপসা হয়ে গিয়েছে

২. কোন ফটোতেই আকাশে কোন তারা দেখা যায়নি, এমনকি পরবর্তীতে অ্যাপোলো ১১ এর অভিযাত্রীদের তারার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, তাঁরা বলেছিলেন যে কোন তারা দেখতে পান নি আকাশে।
উত্তরঃ মহাকাশচারীরা বলেছেন তাঁরা শুধু চাঁদে অবস্থানকালে ‘দিনের বেলা’ তারা দেখতে পান নি, কিন্তু রকেট থেকে যাত্রাপথে দেখতে পেয়েছিলেন। আর শুধু অ্যাপোলো ১১ না, অ্যাপোলো ১৭ পর্যন্ত প্রত্যেকটি অভিযানেই চাঁদের নামা হয়েছিলো দিনের বেলায়। সে সময় চাঁদের পৃষ্ঠে সূর্যরশ্মির প্রতিফলনের কারণেই তারা অদৃশ্য ছিলো। অভিযাত্রীদের হেলমেট-এর গ্লাস ও ক্যামেরার লেন্স ওই রশ্মি প্রতিরোধ করার মতো এক্সপোজার দিয়ে তৈরি করা হয়েছিলো, যার ফলে চাঁদের পৃষ্ঠের তুলনায় আকাশ নিকষ অন্ধকার দেখা যায়। এটা একটা প্রমাণিত ঘটনা, কারণ উজ্জ্বলভাবে আলোকিত ব্যাকগ্রাউন্ড সার্ফেসের উজ্জ্বলতার কারণে সম্পূর্ণভাবে অন্ধকার হয়ে যেতে পারে। একই কারণ উজ্জ্বলভাবে আলোকিত কার পার্কিং-এ দাঁড়িয়ে আপনি আকাশে তারা দেখতে পারবেন না।
এছাড়া সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো, বিভিন্ন সময়ে তোলা পৃথিবীর বিভিন্ন ছবিতেও একই কারণে তারাহীন আকাশ দেখা গিয়েছে।


২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন থেকে তোলা এই ফটোটি দেখুন। এখানেও আকাশে কোন তারা নেই

তবে অ্যাপোলো ১৫ এবং ১৬ তে আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি ব্যবহার করে লং-এক্সপোজারের সাহায্যে কিছু ছবি তোলা হয়েছিলো, যেগুলোতে তারা আবছাভাবে চোখে পড়ে।

৩. কিছু কিছু ছবির আলো-ছায়ায় কৃত্রিমতা ও অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়। কাছাকাছি দাঁড়ানো দুজন নভোচারীর ছায়ার দৈর্ঘ্যও অনেক বেশি।
উত্তরঃ চাঁদের ছায়া নিয়ন্ত্রিত হয় বেশ কিছু বিষয় দ্বারা, যেমন- সূর্যের প্রতিফলিত আলো, উঁচু-নিচু ভূমি, ধূলা ইত্যাদি। এর ফলে বিভিন্ন আকৃতির ছায়া তৈরি হতে পারে।
এ অভিযোগটি সম্পূর্ণভাবে খন্ডন করেছে মিথবাস্টারস নামক একটি টেলিভিশন প্রোগ্রাম তাদের ‘নাসা মুন ল্যান্ডিং’ পর্বে । তারা কৃত্রিমভাবে একটি চাঁদের মতো স্থান তৈরি করে পরীক্ষা করে দেখেছে, তেমন পরিবেশে এটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক।

৪. কিছু ফটোতে একটি পাথরের ওপর C অক্ষরটি দেখা যায়। ছবির শুটিং-এ এই C এলিমেন্টস বা প্রপস বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। তাই এটি একটি শুটিং করা সাজানো ব্যাপার।
উত্তরঃ C আকৃতিটি স্পষ্টভাবে বোঝা যায় শুধুমাত্র এডিট করা ও স্ক্যান করা ছবিতে। মূল ছবিতে একে শুধু একটি সাধারণ পাথরের দাগের মতোই দেখা যায়। এডিট করার সময় ছবির আলো বৃদ্ধি করার ফলে C স্পষ্ট হয়ে ওঠে।


নাসার মূল ফটো


এক্সপোজার ও কন্ট্রাস্ট এডিট করে জুম করা ফটো

৫. শুটিং-এর সময় কিছু স্থানে অতিরিক্ত আলো ফেলে হটস্পট তৈরি করা হয়। চাঁদের একটি ফটোতে এমন কৃত্রিম হটস্পট লক্ষ্য করা গেছে।
উত্তরঃ শিশির কিংবা ভেজা রাস্তা যেভাবে আলোকে প্রতিফলিত করে, চাঁদের বালিও কোন কোন স্থানে সেভাবে আলোকে প্রতিফলিত করতে পারে। এটি ওই সময় চাঁদের অবস্থান, পরিবেশের উপর নির্ভর করে।
এছাড়া এই হটস্পট শুধু এডিট করা হাই কন্ট্রাস্ট ফটোতেই দেখা যায়। মূল ফটোতে এমন কিছু লক্ষ্য করা যায় না।

#পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ
১. গ্যালাক্টিক রেডিয়েশন ও পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের পরে ছড়িয়ে থাকা ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট-এর তেজস্ক্রিয়তার কারণে অভিযাত্রীদের বেঁচে থাকার কথা নয়।
উত্তরঃ ভ্যান অ্যালেন বেল্ট পার হতে রকেটের সময় লেগেছিলো প্রায় চার ঘন্টা। বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত আয়নাইজড অ্যালুমিনিয়াম শেল-এর আবরণ ছিলো রকেটে, যা সেই রেডিয়েশনকে রুখে দিতে সক্ষম। এছাড়া রকেটটি সবচেয়ে কম ঘনত্বের এবং কম শক্তির স্থান দিয়ে এ বেল্ট অতিক্রম করেছিলো। এর ফলে যাত্রীদের যে তেজস্ক্রিয় চাপ সহ্য করতে হয়েছিলো, তা নিউক্লিয়ার ফিল্ডে কাজ করা কর্মীদের এক বছরের তেজস্ক্রিয় চাপের সমান।
এই তেজস্ক্রিয়তা অভিযাত্রীদের দেহে কিছু সমস্যাও তৈরি করেছিলো, যা বরং চাঁদের যাওয়ারই আরেক প্রমাণ। যেমন- নয়টি অ্যাপোলো মিশনে অংশ নেয়া ৩৬ জন নভোচারীর ৩৩ জনেরই চোখে তেজস্ক্রিয়তার কারণে দ্রুত ছানি পড়েছিলো।

২. দিনের বেলা চাঁদের পৃষ্ঠ খুবই উত্তপ্ত থাকে, যা নাসার ব্যবহৃত ক্যামেরা গলিয়ে দিতে সক্ষম।
উত্তরঃ চাঁদের তাপমাত্রা অত্যধিক হলেও সেখানে তাপ পরিবহনের কোন সরাসরি মাধ্যম নেই। যেহেতু সেটি একটি বায়ুশূন্য স্থান, তাই বিকিরণ ছাড়া সেখানে তাপ ছড়ানোর কোন উপায় নেই। সেই বিকিরণ কে প্রতিরোধ করার মতো কোটিং ক্যামেরা ও লেন্সের ছিলো।

৩. চাঁদে বাতাস নেই ভালো কথা, তাহলে সেখানে স্থাপন করা পতাকা পতপত করে উড়ছে, এমন ছবি তোলা হলো কিভাবে?
উত্তরঃ যে দন্ডের সাথে পতাকা লাগানো ছিলো, সেটা চাঁদের মাটিতে গেঁথে দেয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই একটু ভাইব্রেট করে। এটি মোটেই পতপত করে ওড়া নয়। আর পতাকায় যে ভাঁজ দেখা যায় ছবিতে, সেগুলো তৈরি হয়েছে কারণে গুটিয়ে ভাঁজ করেই পতাকাটিকে নিয়ে আসা হয়েছিলো।
মিথবাস্টার প্রোগ্রামটিতে এ অভিযোগকে সম্পূর্ণভাবে খন্ডন করা হয়েছে। তারা দেখিয়েছে, বায়ুশূন্য স্থানে একটি পতাকা এভাবে স্থাপন করলে একই ঘটনা ঘটে।



৪. চাঁদের আবহাওয়ায় তো আর্দ্রতা নেই, তারপরও এর মাটিতে অভিযাত্রীদের পায়ের ছাপ এতো ভালোভাবে পড়লো কিভাবে? ছবি দেখে মনে হয় যেন কাদা-মাখা বালিতে পা ফেলা হয়েছে, যা শুধু পৃথিবীতেই সম্ভব।
উত্তরঃ চাঁদে তো আর বাতাস নেই যে ধুলো উড়বে। তাই বছরের পর বছর ধরে ধুলোবালি একই জায়গায় থেকে অনেকটা কাদার মতোই হয়ে যায়। অ্যাপোলো ১১-এর এডুইন অলড্রিন একে বলেছেন ‘ভেজা পাউডার বা বালির মতো’।
এ অভিযোগটিও মিথবাস্টার অনুষ্ঠানে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে।

৫. চাঁদে অবতরণের ভিডিও পৃথিবীতেই কোন মরুভূমিতে স্লো-মোশনে করা হয়েছে। যাতে মনে হয় অভিযাত্রীরা চাঁদে আছে। কেননা ভিডিওটা দেখতে সেরকমই মনে হয়।
উত্তরঃ ভিডিও থেকে এটাও দেখা গিয়েছে, অভিযাত্রীদের চলার ফলে এবং যন্ত্র বসানোর ফলে যে ধুলা উড়েছে, তা সাধারণ উচ্চতার চেয়ে বেশি উচ্চতায় উঠেছে। কারণ চাঁদে এদের ভর অনেক কম। এছাড়া বায়ুশূণ্যতার ফলে এরা যে পথে উপরে উঠেছে, ঠিক সে পথেই অর্ধবৃত্তাকারে আবার মাটিতে পতিত হয়েছে। এটা পৃথিবীতে সম্ভব নয়, ধুলা কিছুটা অনিয়মিত আচরণ এখানে করবেই। তাই ভিডিওটি পৃথিবীতে করার সুযোগ নেই।
এছাড়া অ্যাপোলো ১৫ মিশনে ডেভিড স্কট একটি হাতুড়ি ও পালক একই উচ্চতা থেকে মাটিতে ফেলে দেখেন যে তারা একই সাথে মাটিতে পড়েছে। এটা চাঁদের বায়ুশূন্যতার কারণেই সম্ভব হয়েছে।
মিথবাস্টার প্রোগ্রামে এ অভিযোগও খন্ডিত হয়েছে।

#যান্ত্রিক অভিযোগ
১. চাঁদের অবতরণকারী রকেটের অবতরণের সময় কোন স্ফুলিঙ্গ দেখা যায় নি, চাঁদের মাটিতে কোন গর্তও তৈরি করে নি এটি।
উত্তরঃ এটা নিতান্তই সায়েন্স ফিকশন প্রেমীদের অভিযোগ বলা যায়! বিভিন্ন বইতে ও সিনেমায় এ ধরনের ‘স্ফুলিঙ্গ বিচ্ছুরণকারী’ অবতরণ দেখে এ ধারণাটি করা হয়েছে।
মহাকাশযানের তিনটি অংশ ছিলো, যার মধ্যে শুধু একটি চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করেছিলো। সেটার ওজন বলতেও ছিলো শুধু নিজস্ব ওজন, যা চাঁদের অভিকর্ষ বলের প্রভাবে আরও কমে গিয়েছিলো। এবং এর এগজস্ট সিস্টেমও এমন ছিলো না যে আগুন ছড়িয়ে তারপর প্রেসার কমাতে হবে। খুব ধীরে ধীরে প্রচন্ড মাত্রায় প্রেসারাইজড গ্যাস নজল-এর মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে চাপ কমিয়ে চাঁদে নামা হয়েছিলো। তাই এখানে আগুনের স্ফুলিঙ্গের প্রশ্নই আসে না। এছাড়া ল্যান্ড করার জন্যে সবসময়ই বেছে নেয়া হয়েছে সবচেয়ে শক্ত পাথুরে এলাকাকে, যেখানে ধুলা ছড়ানোর সম্ভাবনাও খুব কম।
আর স্ফুলিঙ্গ যেখানে দরকার ছিলো সেখানে দেখা গিয়েছে, অর্থাৎ পৃথিবী থেকে শাটল নিক্ষেপ করার সময়।


প্রয়োজনের সময় স্ফুলিঙ্গ ঠিকই সৃষ্টি করতে হয়েছিলো

২. চাঁদে অবতরণকারী মডিউলের ওজন ছিলো ১৭ টন। এর কোন ছাপ পড়েনি চাঁদের পৃষ্ঠে, কিন্তু অভিযাত্রীদের পায়ের ছাপ পড়েছে।
উত্তরঃ চাঁদের অভিকর্ষের কারণে অবতরণকারী মডিউলের ভর ৩ টনের নিচে নেমে এসেছিলো। অভিযাত্রীদের ওজনও অবশ্যই এর চেয়ে অনেক কমে গিয়েছিলো, কিন্তু তাদের পায়ের বুটের ক্ষেত্রফল রকেটের ১ মিটার চওড়া ল্যান্ডিং প্যাডের চেয়ে অনেক কম ছিলো, এর ফলে চাঁদের ধুলোতে তাদের চাপ(প্রতি একক ক্ষেত্রফলে প্রয়োগকৃত চাপ) অনেক বেশি ছিলো। একটা পিনে চাপ দিলে বেশি ব্যাথা লাগে, কিন্তু দুটো সমান পিনে চাপ দিলে ব্যাথা কম লাগে একই কারণে।
এছাড়া খাঁজকাটা বুটের ছাপের চেয়ে সমতল, চওড়া ল্যান্ডিং প্যাডের ছাপ চাঁদের এবড়োখেবড়ো পৃষ্ঠের মতনই অনেকটা, যে কারণে এটা সহজে লক্ষ্য করা যায় না।

৩. নভোচারীদের পরিহিত স্পেসস্যুটের অটোমেটিক কুলিং সিস্টেম বায়ুশূন্য কোন মাধ্যমে কাজ করা সম্ভব নয়।
উত্তরঃ সম্পূর্ণ ভুল। সঠিক ব্যাপার হচ্ছে, বিশেষভাবে তৈরি করা সে স্পেসস্যুট পৃথিবীর আবহাওয়াতেই ব্যবহার করা সম্ভব নয়, কারণ সেগুলো তৈরি করা হয়েছে সম্পূর্ণ বায়ুশূন্য পরিবেশের জন্যে। এর কুলিং সিস্টেম স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলো, যা ৬ বছরের গবেষণার মাধ্যমের আবিষ্কৃত একটি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিলো।

এর বাইরেও একটি বড় অভিযোগ রয়েছে। সবগুলো সফল মানুষবাহী চন্দ্রাভিযানই সম্পন্ন হয়েছিলো রিচার্ড নিক্সন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে। অ্যাপোলো মিশনগুলোর পর আমেরিকা তো নয়ই বিশ্বের অন্য কোন দেশই আর আগ্রহ প্রকাশ করেনি এ ধরনের মিশনের প্রতি। গত ৪০ বছরে প্রযুক্তির যে উন্নতি হয়েছে, তাতে আরও সহজে চাঁদে যাওয়া যেতে পারে, কিন্তু এ ধরনের কোন উদ্যোগই আর পৃথিবীতে দেখা যায় নি।
উত্তরঃ অত্যন্ত জোরালো যুক্তি! এবং এটাই সম্ভবত সবচেয়ে শক্ত অভিযোগ!
কিন্তু এর জবাবটাও যে কম শক্তিশালী না, তা বোঝার জন্যে আপনাকে সম্পূর্ণ অ্যাপোলো অভিযানের কাহিনী জানতে হবে এবং ওই সময়ের কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্বন্ধে জানতে হবে।
এক কথায়, ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ছয়-ছয়টা অকল্পনীয় ব্যয়বহুল সফল মনুষ্যবাহী অভিযানের পর আর দরকার ছিলো না এরকম অভিযানের। কোল্ড ওয়ার দ্বারা প্রভাবিত যে তীব্র শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই চলছিলো রাশিয়া আর আমেরিকার মধ্যে, তাতে আমেরিকার নিরঙ্কুশ জয় হয়েছিলো। তাই বলা যায়, যুদ্ধ জেতার পরও খামোখা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার এ লড়াইয়ের পেছনে খরচ করার ইচ্ছা বা সামর্থ্য আমেরিকার ছিলো না। এবং এটাও ঠিক, টানা দশ বছরে শুধু এই খাতে কয়েক শত বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের প্রভাব আমেরিকার অর্থনীতিতেও পড়েছিলো। বিপরীতে রাশিয়ার কোন ইচ্ছা ছিলো না চন্দ্রবিজয়ে আমেরিকার একাধিপত্যের পর দ্বিতীয় হওয়ার জন্যে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করার। আশির দশকে জাপান সরকার এ ব্যাপারে কিছু আগ্রহ প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে তা বাতিল করে দেয়। তাদের মূল কথা ছিলো, ‘এর কোন প্রয়োজন এ মুহূর্তে নেই’। তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে স্বাভাবিকভাবেই কোন জাতি চায়না নিজেদের অভ্যন্তরীণ কাঠামোর বদলে শুধুমাত্র শ্রেষ্ঠত্বের জন্যে এতো টাকা খরচ করতে। এছাড়া এখানেও কথা রয়েছে। চাঁদ সম্বন্ধে মোটামুটি যতোটুকু জানার, আমরা অ্যাপোলো সহ বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে জেনে ফেলেছি। এখন এর পরবর্তী ধাপের রিসার্চের জন্যে পূর্বের অন্তত তিনগুণ অর্থ প্রয়োজন, যেটা খুব সহজ ব্যাপার না। তবে সুখের বিষয়, এ অর্থ ব্যয় করতে পারে এমন একমাত্র প্রতিষ্ঠান নাসা ২০২০ সালের পর চাঁদের অভিযানের Next Phase শুরু করতে পারে বলে জানিয়েছে। সেটা হবে সরাসরি মানুষের বসবাস সম্পর্কিত।
আরেকটা কূটনৈতিক ব্যাপারকেও এখানে অবহেলা করা যাবে না। চাঁদের অভিযান নিক্সনের সময় ঘটলেও এর শুরুর অবদানটা সম্পূর্ণ জন এফ. কেনেডির। বিশেষ করে ১৯৬১ সালে কেনেডির দেয়া প্রতিশ্রুতি, “আমরা এই দশকের মধ্যেই চাঁদ জয় করব” দারুণভাবে নাড়া দিয়েছিলো বিশ্ববাসীকে। ১৯৬৩ সালে তার মার্ডারের পর নতুন করে এ প্রসঙ্গটি চাঙা হয়েছিলো, কেনেডির অসম্পূর্ণ কাজটি সম্পূর্ণ করার দায় এসেছিলো নিক্সনের উপর। তাই একে কেনেডির অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করার একটা জেদও বলা যেতে পারে।

সবশেষে মানুষের চাঁদে যাওয়ার স্বপক্ষে এমন কিছু যুক্তি আছে, যেগুলোর প্রত্যেকটিই অকাট্য। অভিযোগকারীরা শত খুঁত বের করলেও এ ব্যাপারগুলো নিয়ে বরাবরই নিশ্চুপ। এ ব্যাপারগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১. অ্যাপোলোর ছয়টি মিশনে মোট ৩৮২ কেজি মুন রক বা চাঁদের পাথর নিয়ে আসা এসেছিলেন অভিযাত্রীরা। এগুলো নিয়ে প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। অ্যান্টার্কটিকায় খুঁজে পাওয়া চাঁদের বিক্ষিপ্ত টুকরার সাথে এদের মিল পাওয়া গেছে। অনেকেই অবশ্য এখানে অভিযোগ করে থাকেন যে অ্যান্টার্কটিকায় পাওয়া টুকরাগুলোকেই চাঁদের টুকরা বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। তবে চাঁদের টুকরাগুলোকে নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, এগুলো মধ্যে কোন কোনটি ৪.৫ বিলিয়নেরও বেশি বছরের পুরনো, যেখানে পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন পাথর ৪.৩ বছরের পুরনো। এই গবেষণায় নাসা ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের কিছু সংস্থা অংশ নিয়েছিলো।

২. রেট্রোরিফ্লেক্টর হলো বিশেষ ধরনের আয়নার মতো সেন্সর, যেগুলোকে লেজারের মাধ্যমে ট্র্যাক করা যেতে পারে। বেশ কিছু এমন রিফ্লেক্টর চাঁদের মাটিতে স্থাপন করা হয়েছে, যেগুলো পৃথিবী থেকে আজও ট্র্যাক করা হয়।
এখানে অবশ্য একটা অভিযোগ করতে পারে অবিশ্বাসীরা। চাঁদে রিফ্লেক্টর বসানো মানে তো এই না যে মানুষ চাঁদে গেছে! কোন রোবটের মাধ্যমেও তো সেগুলো বসানো যেতে পারে! এর অবশ্য কোন উত্তর নেই।


অ্যাপোলো ১১ এর রেট্রোরিফ্লেক্টর

৩. বেশ, বোঝা গেল অ্যাপোলো ১১ থেকে ১৭ পর্যন্ত নাসার ষড়যন্ত্র ছিলো, কিন্তু তার আগের গুলো? এর আগের ১০ টি রকেট যে তারা তৈরি করেছিলো এবং সেগুলো দিয়ে সবরকম পরীক্ষা সম্পন্ন করেছিলো, সেটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই! অ্যাপোলো ৮ সুষ্ঠুভাবে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে ঘুরে এসেছিলো, অ্যাপোলো ১০ নিখুঁতভাবে প্রত্যেকটি ধাপ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছিলো। তাই অ্যাপোলো ১১ যে একেবারেই অসম্ভব, তা বলা যেতে পারে না। অ্যাপোলো অভিযান পুরোটাই একটা নাটক হলে শুধু শুধু প্রথম ১০ টা রকেট নিয়ে ১০ বছর ধরে পরীক্ষা করার কোন দরকার ছিলো না। শুধু তাই না, অ্যাপোলো ১ থেকে শুরু করে ১১ পর্যন্ত কম মানুষের মৃত্যু ঘটেনি এই দুঃসাধ্য সাধন করতে গিয়ে।

৪. অ্যাপোলোর পরবর্তী বিভিন্ন মনুষ্যবিহীন অভিযানে তোলা ছবি থেকে স্পষ্টই বোঝা যায় চাঁদে স্থাপিত অ্যাপোলোর ৬ টি যানের বিভিন্ন যন্ত্রগুলো ও আমেরিকার পতাকা। ৪০ বছর পরও ঠিক আগের মতোই একই স্থানে থেকে এ নিদর্শনগুলো মানুষের চন্দ্রবিজয়ের ঘোষণা করছে।



লুনার রিকনশাস অরবিটের তোলা ছবি

৫. অ্যাপোলো ১৬ অভিযানে বিশেষ ধরনের আল্ট্রাভায়োলেট ক্যামেরায় তোলা একটি ছবিতে পৃথিবীর পাশে ক্যাপ্রিকর্নাস ও অ্যাকুয়ারিস নক্ষত্রমন্ডলীর দেখা পাওয়া যায়। পরে বিস্তারিত গবেষণায় দেখা যায়, এদের অবস্থান সম্পূর্ণভাবে সঠিক।



৬. ২০০৮ সালে জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সী দ্বারা প্রেরিত ‘সেলেনে’ নামক চন্দ্র মডিউলটি অ্যাপোলো ১৫-এ ব্যবহৃত রোভারের স্পষ্ট ছবি তোলে। অ্যাপোলো প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার পরে এটাই তোলা চাঁদে মানুষের অস্তিত্বের সবচেয়ে স্পষ্ট ছবি। এছাড়া ভারতের চন্দ্রায়ন-১ যানটিতে সেলেনে-এর মতো শক্তিশালী ক্যামেরা না থাকলেও এটি চাঁদের মাটিতে মানুষের পায়ের ছাপ, লাইটার নিশ্চিত করেছে।


সেলেনে-এর ছবিতে স্পষ্ট অ্যাপোলো ১৫ রোভার

৮. এতোক্ষণ ধরে এতো লজিক-এন্টি লজিক পড়ার পর নিজের বুদ্ধি প্রয়োগ করুন তো। সত্যি কি এই বিরাট মহাযজ্ঞটি একটি খুব বড় ষড়যন্ত্র হতে পারে?
প্রায় দশ বছর ধরে আমেরিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন প্রান্তের ৬ লক্ষেরও বেশি মানুষ কাজ করেছে অ্যাপোলো প্রোগ্রামে। সাধারণ শ্রমিক থেকে শুরু করে বড় প্রকৌশলী, সবাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এর সাথে যুক্ত ছিলো। এদের মধ্যে কেউই কখনো এমন অভিযোগের কথা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করেছেন বলেও শোনা যায় নি। এমনও না যে তাদের সবাইকে খুব গোপনে ট্রেনিং দেয়া হয়েছে, গুপ্ত কিছু শেখানো হয়েছে। অভিযোগকারীরা বলে থাকেন, অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে অ্যাপোলো প্রোগ্রামে বেশি মানুষ মারা গিয়েছে, কিন্তু তারা এটা ভুলে যায় যে রাশিয়াতেও ইউরি গ্যাগারিন সহ মোটামুটি একই সংখ্যক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। আর এর প্রতিটি ক্ষেত্রেই এতো বেশি সংখ্যক মানুষ কাজ করেছিলো যে খুব স্বাভাবিকভাবেই যে কোন স্থান থেকে একটি স্ক্যান্ডাল ধরনের কিছু বের হয়ে আসার সুযোগ ছিলো। কিন্তু সেটা কখনোই হয়নি। শুধু নাসা নয়, স্পেসস্যুট প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে শাটল প্রস্তুত করা পর্যন্ত অনেক দেশী-বিদেশী সংস্থা নাসার সাথে কাজ করেছে এ অভিযানে। তাদের কারো কাছ থেকে কখনো ষড়যন্ত্রের নূন্যতম আভাসও পাওয়া যায় নি।
সবচেয়ে বড় কথা, পুরো ব্যাপারটা সাজানোটা যতোটা দুঃসাধ্য হতো, চাঁদের যাওয়াও বোধহয় তার চেয়ে সহজ ছিলো! ফিল্ম হিসেবে ব্যাপারটা তৈরি করা হলে সেটার জন্যে যে অকল্পনীয় গোপনীয়তা অবলম্বন করতে হতো, তা যেমনি ঝুঁকিপূর্ণ তেমনই দুঃসাধ্য। অভিযানের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে কোথাও তেমন কোন ফাঁক রাখে নি নাসা, কিংবা কোন জায়গাতেই অবহেলা করে নি। শুটিং-এর মাধ্যমেই সব সম্পন্ন হলে প্রতিটি স্পেসস্যুট-এর জন্যে মিলিয়ন ডলার খরচ করতো না নাসা।
এছাড়া রাশিয়ার সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে অভিযোগ আসলেও রাশিয়ান সরকার এ ব্যাপারে বরাবরই চুপ ছিলো। অথচ অভিযোগগুলো বিন্দুমাত্রও সত্যি হলে তারা এ সুযোগ গ্রহণ করে আমেরিকা কে একহাত দেখে নিতে পারতো।
তবে এইসব অভিযোগের জবাবগুলো যে নিখুঁতভাবে দেয়া হয়েছে, তা কিন্তু নাসার কৃতিত্ব নয়। দীর্ঘ একটা সময় পর্যন্ত তারা কোন মন্তব্যই জানায় নি এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে। ২০০২ সালে নাসা জেমস ওবার্গ নামক এক বিখ্যাত সাংবাদিক কে দায়িত্ব দিয়েছিলো তাদের তত্ত্বাবধানে এ ষড়যন্ত্রের জবাব দিয়ে একটি বই প্রকাশ করতে। কিন্তু পরবর্তীতে তারা সিদ্ধান্ত বাতিল করে, কেননা এতে এটা প্রমাণিত হতো যে নাসা অভিযোগ কে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে।
২০০৪ সালের অ্যাস্ট্রনমি রিসার্চ কাউন্সিলের বাৎসরিক সভায় দেশ-বিদেশের বিজ্ঞানীদের উপস্থিতিতে সবগুলো অভিযোগ উপরের যুক্তি অনুসারে খন্ডন করে অফিসিয়ালি নাসাকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তারা এটাও বলেন, অভিযোগগুলো তৈরি হয়েছে তার কারণ এই না যে ব্যাপারগুলোতে খুঁত ছিলো, বরং এ সম্বন্ধে সাধারন মানুষের প্রায় কিছুই না জানাই মূল কারণ। স্বাভাবিক সিক্রেট রীতি অনুসারেই নাসা তাদের অভিযানের সূক্ষ্ম খুঁটিনাটি ও টেকনিক্যাল বিভিন্ন ইস্যু জনসমক্ষে প্রকাশ করেনি। এছাড়াও সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশই জটিল মহাকাশবিজ্ঞান ও অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কিত জটিল বিষয়গুলো নিয়ে অনভিজ্ঞ, যার ফলে তারা সহজ অনেক বিষয়ও বুঝতে পারেন নি। এ কারণেই খুব সাধারণ, তুচ্ছ কিছু ব্যাপারকে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে। এখনও বেশিরভাগ মানুষ না বুঝেই দুদ্দাড় বিশ্বাস করে ফেলেন যে মানুষ কখনো চাঁদে পা রাখেনি। এমনও অনেক ব্যাপারকে মানুষ অভিযোগ হিসেবে দাঁড় করিয়ে ফেলে যা মূলত ‘অভিযোগ’ নয়, ‘কেন’ বা ‘কিভাবে’ সম্বলিত একটি প্রশ্ন মাত্র।


দুঃসাহসীতম পাইলট নীল আর্মস্ট্রং। তাঁর দক্ষ নেতৃত্ব ছাড়া কোনভাবেই এ অভিযান সফল হতো না

তাই আসুন, অহেতুক মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি কে অস্বীকার না করি। আমেরিকা, নাসার কাজকর্ম কে আমরা পছন্দ না করতে পারি, কিন্তু এটাও ঠিক যে সারা পৃথিবীর জন্যে তারা সেরা কিছু জিনিস উপহার দিয়েছে। এই তো কিউরিওসিটি মঙ্গলে অবতরণ করলো কয়দিন আগে... কে জানে, পরবর্তী ২০ বছরের মধ্যে মঙ্গলেও পা রাখতে পারে মানুষ!
৩৬টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×