somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুৎসিত হাসি

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক.
শনশন করে বাতাস বইছে। চারিদিকে ঘোর অন্ধকার। বৃষ্টি আসতে পারে। ছোট ছোট পায়ে বাসার দিকে এগিয়ে চলছে রায়হান। হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়। মনে হচ্ছে কে জানি পিছু নিচ্ছে তার। ইদানিং তার সাথে কেমন অদ্ভুত ঘটনা ঘটে চলেছ। চায়ের কাপ থেকে চা উদাও হয়ে যাচ্ছে। বাথরুমে ডুকলে পানি শেষ হয়ে যাচ্ছে। এসব কেনইবা ডুকছে তার মাথায় ধরছে না।
ভাবতে ভাবতে বাড়িতে এসে পৌঁছায় সে। দরজা খুলে দেয় তার বউ সালমা। মাস দেড়েক আগে তাদের বিয়ে হলো। রায়হানের বিয়ের ইচ্ছে ছিলোনা। তার মাকে খুশি করতেই তার বিয়ে করা।

— এ কি, বৃষ্টিতে ভিজে এলে কেন?
— বৃষ্টি কখন হলো? আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে রায়হান।
— দেখো তোমার সারা শরীর পানিতে ভিজে আছে। আর বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে।
রায়হান গায়ে হাত দিয়ে দেখে আসলেই সেই বৃষ্টিতে ভিজে এসেছে। কিছু না বলে বাথরুমে চলে যায় রায়হান।

দুই.
দরজা বন্ধ করে রায়হান আজকের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতেছে। বৃষ্টির ব্যাপারটা টের পেলো না কেন সেটাই তাকে খুব ভাবাচ্ছে। হঠাৎ মনে হলো তার রুমের ভেতর কেউ হাঁটতেছে। সে স্পস্ট দেখতে পারছেনা। মনে হচ্ছে খুব চেনা একজন মানুষ।
হ্যাঁ আসলেই তো তার চেনা মানুষ। তার শত্রু সাদ্দাম।

বছর খানেক আগেও সাদ্দাম আর রায়হান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলো। কিন্তু সাদ্দাম সেটার সুযোগ নিয়েই তার প্রেমিকা মলিকে বিয়ে করে পেলে। এর থেকেই রায়হান আর সাদ্দাম এর দা-কুমড়া সম্পর্ক।

রায়হান খুব ঘামছে। ক্রোধে তার ভেতরটুকু পেটে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি গিয়ে মাথাটা পাটিয়ে দিবে।
হঠাৎ দরজা আওয়াজ পায়। তার বউ ডাকছে চা খেতে।
— গামছো কেন?
— না, কারেন্ট নাই যে তাই। গরম পড়ছে খুব।
— কি বলছো এসব? মাথার উপরে ফ্যান চলছে তো।
হা করে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকে রায়হান।

তিন.
সালমা ভীষণ চটে আছে। রায়হানের এসব আচরণ একদম ভালো ঠেকছেনা তার কাছে।

রায়হানের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। তার সাথে কেন এমন হচ্ছে। সে যতই এসব নিয়ে ভাবতেছে ততই তার পুরোনো দিনের প্রেমটুকু জাগ্রত হচ্ছে। কিন্তু সে এটা চাচ্ছেনা। সব ভুলে গিয়ে সে সুন্দর ভাবে বাঁচতে চায়। সে তার বউকে আজকেই সব খুলে বলবে।

— মন খারাপ? খুব আদরের স্বরে সালমাকে জিজ্ঞেস করলো রায়হান।
অভিযোগের স্বরে উত্তর দিলো।
— না।
রায়হান খুব কাঁপতেছে। আজকে সে সব বলে দিবে।
সালমার কোলে মাথা রেখে রায়হান বলতে লাগলো,
— তোমাকে কিছু বলবো।
— বল
— কিছু মনে করো না। খুব হতাশায় আছি।
— আরে কি হয়েছে বলো সব।
— ইদানিং খুব বাজে কিছু ঘটছে আমার সাথে। মনে হচ্ছে কেউ যেন আমার সাথে হাটছে। আমার নিমকহারাম বন্ধুটা। চিনো তাকে? আমাকে ঠকিয়ে সে আমার প্রেমিকাকে বিয়ে করেছে।
সালমা তার রায়হানের দিকে তাকাচ্ছে। এমন বিচলিত কখনো তাকে দেখেনি সে। রায়হান বলে যেতে লাগলো।
— চলো কালকে ডাক্তারের কাছে যাই। আমার ব্যাপারটা ভালো লাগছেনা।
— আচ্ছা সকালে যাবো। এখন ঘুমাও। এই বলে সালমা রায়হানকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো। রায়হান ভাবতেছে। মনে হচ্ছে কেউ জানি তার পাশে এসে বসলো।

চার.
রায়হান নাস্তা খেয়ে রেডি হচ্ছে তার বউকে সাথে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে। তার সবকিছু খুলে বলবে ডাক্তারকে।
রুমে সালমা ডুকতেই রায়হান বলে উঠলো,
— যাবেনা?
— কেন? ডাক্তারের কাছে। কাল রাতে যে বললাম!
— মাথা কি গেছে নাকি? কখন কি বললে? আমি তো এসে দেখলাম তুমি ঘুমোচ্ছে।

রায়হান চুপ করে রইলো। সে যখন শুয়ে পড়েছে, তখন সালমা কিচেনে ছিলো।। এর মধ্যেই ঘুমিয়ে গিয়েছিল রায়হান। বাকী যে ঘটনা ঘটেছে সবটাই স্বপ্নে। সে সবকিছু ঝট পাকিয়ে পেলেছে। তার বুকের ভেতরে ধুকধুক শব্দ হচ্ছে। এমনটা বেশিদিন চললে সে পাগল হয়ে যাবে।

পাঁচ.
রায়হান শুয়ে আছে। কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না। তার আচরণ নাকি স্বাভাবিক নয়। সবাই তাকে পাগল বলে ডাকে। সে টের পাচ্ছে তার পাশে কেউ একজন আছে। এবার কোনো ছেলে নয়। তার প্রাক্তন প্রেমিকা মলি । যাকে সে জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসেছে। যার
প্রতারণার কথা মনে উঠলে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে। যার জন্য তার এই মানসিক যন্ত্রণা সেই তার সামনে বসে আছে।
রাগে রায়হানের দেহে আগুন জ্বলছে। রায়হান তার মাথার নিচের বালিশটা নিয়ে চেপে ধরলো মলির মুখোর উপর। মলি চিৎকার করছেনা।
সে হাসতেছে।
কি অমায়িক হাসি। যে হাসির প্রেমে পড়েছিলো রায়হান।
রায়হান ক্লান্ত হয়ে বালিশ পাশে রেখে তাকিয়ে আছে মলির দিকে। অনেকদিন পরে দেখলো তাকে।

ছয়‌.
হাত পা বাঁধা অবস্থা সালমার লাশের কাছে দাঁড়িয়ে রায়হান। তাকিয়ে আছে মায়াবী চোখদুটোর দিকে। যেন তাকে কিছু বলতে চাচ্ছে। সে কান্না করতে পারছেনা।

খুব সংশয়ে আছে। সে কি স্বপ্ন দেখছে নাকি বাস্তবে?
কাল রাতেই তো সালমা তার পাশে ঘুমোলো। কিভাবে মারা গেলো? তার হাত বাঁধা কেন?
নানা প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি মারছে তার মাথায়। নিজেকে পাগল মনে হচ্ছে তার। মনে হচ্ছে তার পাশে কেউ হাঁটছে। তার বন্ধু সাদ্দাম। তাকে দেখে খিলখিলিয়ে হাসছে। যগতের সবচেয়ে কুৎসিত হাসি তার মুখে।

সাত.
সালমার মারা যাওয়ার আজকে একবছর। রায়হানের ভাবনার জগতে শুধু এখন সালমা। কবরে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে রায়হান। মনে হচ্ছে তার পাশে সালমা দাঁড়িয়ে আছে। একগাদা অভিমান নিয়ে অন্যদিক ফিরে।



ভাবনার জগতটা যত সুন্দর হয়, মানুষের মস্তিষ্কের তত বিকাশ ঘটে। কিন্তু কিছু ভাবনা জগতকে এলোমেলো করে দেয়। সৃষ্টি করে সংশয়ের, দ্বিধার আর রহস্যের। মিথ্যার আবডালে ডাকা পড়ে সত্য।
তবুও আমরা ভাবি। আমাদের ভাবনা প্রসারিত করি।
দ্বিধাদ্বন্দ্বের এই পৃথিবীতে কত রহস্যের খোঁজে নিজেকে ভাবিয়ে তুলি। ভাবনায় তৈরি করি হাজারো চরিত্র।
যেগুলো আমাদের হাসায়, আমাদের কাঁদায়।গল্প বলে, গান শোনায়, সঙ্গ দেয় একাকিত্বের রাতে।

"কুৎসিত হাসি"
গল্পের ধরন: সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার
© ইসমাইল হোসেন
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:২৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×