এক বনে একটি কাক বাস করত। সে মনের সুখে হাসত, উড়ত আর কা কা করে ডাকত। নিজের যা কিছু আছে তাই নিয়েই সে বেজায় সুখি ছিল। হঠাৎ একদিন সে একটি রাজহাঁসকে দেখতে পেল। রাজহাঁস দেখার পর থেকে তার চিন্তার জগত এলোমেলো হয়ে গেল। সে অবাক বিস্ময়ে ভাবতে লাগল, ‘এই রাজহাঁসটির গায়ের রঙ কত ফর্সা! সে দেখতেও কত সুন্দর! আর আমি? কুচকুচে আলো। আর দেখতে কতই না কুৎসিত। মনে মনে সে বলতে লাগল, এই রাজহাঁসটি অবশ্যই দুনিয়ার সবচেয়ে সুখি’।
সে তার মনের কথা রাজহাঁসকে জানাল। ‘সত্যি বলতে কি’, রাজহাঁস তাকে প্রতিউত্তরে বলল, ‘তোতা পাখি দেখার আগে আমিও নিজেকে সবচেয়ে সুখী মনে করতাম। তোতা পাখি দেখার পর আমার ভুল ভেঙ্গেছে। আমার ধারণা, তোতা পাখিই সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর’।
কাক তখন তোতা পাখির কাছে গেল। এবার তোতা পাখি ব্যাখ্যা দিল, ‘ময়ুর দেখার আগে আমিও খুবই সুখী জীবনযাপন করতাম। কিন্ত ময়ুর দেখার পর আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে গেছে। দেখো, আমার গায়ে তো মাত্র দুইটা রঙ। অথচ ময়ুরের গায়ে রঙের বাহার। ময়ুর যখন পেখম মেলে ধরে তখন মনে হয় জগতের সব রঙ বুঝি এখানেই’।
কাক তখন ময়ুরকে দেখতে চিড়িয়াখানায় গেল এবং দেখতে পেল শত শত মানুষ তাকে দেখার জন্য ভীড় করেছে। সবাই চলে যাওয়ার পর কাক ময়ুরের দিকে এগোল। ‘প্রিয় ময়ুর’, কাক বলল, ‘তুমি কত সুন্দর।! প্রতিদিন হাজারো মানুষ তোমাকে দেখতে আসে। আর আমাকে মানুষ দেখামাত্র ‘দূর দূর’ করে তাড়িয়ে দেয়। আমার বিশ্বাস, তুমিই এই গ্রহের সবচেয়ে সুখী ও সুন্দর পাখি’।
ময়ুর হতাশ কন্ঠে বলল, ‘হুম, আমিও সবসময় চিন্তা করতাম আমিই এই গ্রহের সবচেয়ে সুন্দর এবং সুখি পাখি। কিন্ত আদতে তা নয়। বরং আমার সৌন্দর্যের জন্যই আজ আমি চিড়িয়াখানায় বন্দী। আমি গোটা চিড়িয়াখানা তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখেছি যে, কাকই একমাত্র পাখি যাকে চিড়িয়াখানায় রাখা হয়নি। সেই থেকে আমি ভাবছি যদি কাক হতাম, তাহলে মনের সুখে খোলা আকাশে উড়ে বেড়াতে পারতাম’!
মোরাল অব দ্যা স্টোরিঃ
আমরা অযথাই অন্যের সাথে নিজের তুলনা করে জীবনটাকে বিষন্নতায় ভরিয়ে তুলি। আগে নিজেকে জানতে হবে। নিজের যা কিছু আছে তাই নিয়েই সুখি ও খুশি থাকতে হবে।
[ইন্টারনেট থেকে অনূদিত]
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:২১