মুসলিম মাত্রই জানি যে, মানুষের দু’কাঁধে দু’জন সম্মানিত ফেরেশতা আছেন যারা মানুষের পাপ-পূণ্যের হিসাব রাখেন। তাদেরকে বলা হয় কিরামান কাতেবীন বা "সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ"। তারা একজন মানুষের প্রতিটি পল, অনুপল দেখেন, লেখেন এবং ধারণ করে রাখেন। সেটাই পরকালে ‘আমলনামা’ হিসেবে সবার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। স্বস্ব ‘আমলনামা’ দেখে মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত কন্ঠে বলে উঠবে, ‘হায়! এখানে দেখছি সব আছে! ছোটবড় কিছুই বাদ যায়নি’!
তবে মোবাইল-ফেসবুক-টুইটার তথা ইন্টারনেট আসার পর কিরামান কাতেবীনের কাজ কিছুটা কমে গেছে বোধহয় (আল্লাহ ক্ষমা করুন)। কারণ মানুষ প্রতিনিয়ত নিজেরাই তাদের কিছু কাজ করে দিচ্ছে। কিরামান কাতেবীন শুধু স্ক্রীণশট নিয়ে কপি+পেষ্ট করবেন। অনেকেই হয়ত বলবেন, সোশ্যাল মিডিয়ার সামান্য কয়েকটা পোষ্ট দিয়ে মানুষকে চেনা যায় না। আসল মানুষ লুকিয়ে থাকে তার অন্তরে। আমি আপনাদের সাথে একমত। তবে এটাও কিন্তু ঠিক যে, পোষ্টগুলো একজন মানুষের চিন্তা-ভাবনা, মন-মানসিকতা, পছন্দ-অপছন্দ, রুচির বহিঃপ্রকাশ।
একটা টাটকা উদাহরণ দেই। দুই/তিন আগে কোন এক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আমার এক মেয়ে ফেসবুক ফ্রেন্ড রীতিমত অশ্লীল একটা পোষ্ট শেয়ার দেয়। এটি আমার কাছে খুব দৃষ্টিকটু লাগায় কমেন্টে বললাম, ‘এসব কি শেয়ার দেন’। অতঃপর সে পোষ্টটি ডিলিট করলেও ‘বোনাস’ হিসেবে আমাকে ‘আনফ্রেন্ড’ করেছে। হাহা। মেয়েটি যে পোষ্ট শেয়ার দিয়েছিল তা আমরা ফ্রেন্ড সার্কেলে বলতেও দ্বিধাবোধ করি। অথচ সে ‘পাবলিকলি’ এটা শেয়ার দিয়ে মজা করছে! আজব ব্যাপার।
এই মেয়েটিকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। ফেসবুকের মাধ্যমেই পরিচয়, বন্ধুত্ব। মাঝে মাঝে আমরা একে অপরের পোষ্টে লাইক-কমেন্ট করতাম। এভাবেই একটা ভার্চুয়াল সম্পর্ক গড়ে ওঠেছিল। দু’জন মানুষের মধ্যে যে কোন সম্পর্ক গড়ে উঠার সাথে সাথে একটা দায়বদ্ধতাও তৈরী হয়। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই একজন শুভাকাংখী হিসেবে তাকে শুধরে দিতে গিয়ে ‘আনফ্রেন্ড’ হলাম। যদিও তার আনফ্রেন্ড করাতে আমার কিছু আসে যায় না। তবু পুরো বিষয়টি নিয়ে আমি ব্যথিত।
মেয়েটি প্রথমদিকে খুব সাধারণই ছিল। একদা সেই আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালে আমিও একসেপ্ট করেছিলাম। সে ফেসবুকে আহামরি কিছু লিখত তা না। প্রতিদিন তার কাজই ছিল বিভিন্ন ঢংয়ে নিজের, বয়ফ্রেন্ডের এবং রিলেটিভসহ ছবি দেয়া; কিছু ফান, কিছু ফ্লার্ট ইত্যাদি। এই করেই চার হাজারের উপরে ফলোয়ার নিয়ে সে এখন মাঝারি মাপের ফেসবুক সেলিব্রেটি হয়ে উঠেছে। সেটা হোক আপত্তি নেই। আমি মেয়েটিকে বোঝাতে চেয়েছিলাম যে, পাবলিকলি এসব পোষ্ট শেয়ার করা অনুচিত। কেননা, এখানে অনেকেই আছেন যারা তার পোষ্ট পড়ে লজ্জিত হবে। এমনকি তার ফ্রেন্ডলিষ্টে নিজের বাবা-মা, ভাই-বোন, ঘনিষ্ট আত্মীয়-স্বজন থাকাও অসম্ভব না। সব থোরাই কেয়ার করে সে যা-তা পোষ্ট শেয়ার করে যাচ্ছে! হয়ত সোস্যাল মিডিয়ার চক্করে পরে সে আজ বিপথে পরিচালিত হচ্ছে।
পরে ঐ শেয়ার করা পোস্টের সূত্র ধরে মূল পোষ্টদাতার পেজে ঢু মারলাম। তার কয়েকটা পোষ্ট পড়ে পুরাই তাজ্জব হয়ে গেলাম। আমার মাথাই কাজ করছিল না। চরম নোংরা টাইপের সব পোষ্ট। এসব লেখাও ‘পাবলিক’ করা যায়?! ছেলেটি চরম বিকৃত রুচির মানুষ! নাম্বার ওয়ান ‘পারভার্টেড’। সে সমাজের কীট; সে সমাজের ভারসাম্য নষ্ট করছে। সে অনেককে নীতি-নৈতিকতাহীনতার পথে নিয়ে যাচ্ছে। আমার জন্য আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। সেটা হল, সেসব নোংরা পোষ্টের বেশীরভাগ কমেন্টকারী মেয়েরা!! মেয়েরা ‘সহমত’ প্রকাশ করেই কমেন্ট করছে!! কি হচ্ছে এসব? এরা কি বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব তথা সমাজ-সংস্কৃতি কিছুই মানে না? এদের দেখার কেউ নেই, শাসন করার কেউ নেই? এরা পাবলিকলিই যদি এমন করে তাহলে মেসেঞ্জারে বা একান্তে কি করে তা ভাবতেই অস্থির লাগছে।
যাদের টিনেজার ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজন আছেন তারা দ্রুত সাবধান হন। চরম খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। টিনেজারদের ফেসবুক, মোবাইল ব্যবহার সীমিত করে দিন। কারা তাদের বন্ধু তা খেয়াল করুন। মাঝে মাঝে তাদের ফেসবুক পেজ ভিজিট করুন। তাদের বন্ধু-বান্ধবদের সাথে বিনিময় হওয়া কমেন্টগুলো ভালভাবে লক্ষ্য করুন। তাদের বন্ধু হয়েই তা করুন। সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই সাবধান হোন।
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪০