somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনার ইতিবাচক দিক

০৫ ই মে, ২০২০ দুপুর ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

করোনা মানুষের জীবন পুরো এলোমেলো করে দিয়েছে। অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছু বন্ধ। যদিও ইদানিং সীমিত আকারে শপিংমল খুলে দেয়া হচ্ছে। যাইহোক, গত প্রায় দুই মাস যাবত মানুষ ঘরবন্দী। এতটা সময় ঘরে অলস বসে থাকতে থাকতে অনেক মানুষ ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে গেছে। নানা ছুতোয় মানুষ বাইরে বের হচ্ছে। যদিও বাইরে যাওয়া মানেই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পরার সমূহ সম্ভাবনা। যাইহোক, করোনা মানেই বিপদ, করোনা মানেই ভয় নয়। এরমধ্যে অনেক ইতিবাচক ব্যাপারও আছে। চলুন সেদিকে কিছুটা আলোকপাত করি। আশা করি সাথে থাকবেন।

অবসরঃ
ইট-কাঠ-পাথরের কর্মব্যস্ত এই শহরের বাসিন্দারা জীবন-জীবিকার তাগিদে উদয়াস্ত হাড়ভাংগা পরিশ্রম করে। দু'দন্ড অবসর নেবার ফুসরত তাদের নেই। থাকলেও তা হেলায় হারায়। হাদিসে আছে, 'দুটি নিয়ামত এমন রয়েছে যে দুটির ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ ধোকায় পতিত হয়ে আছে। (১) সুস্থতা। (২) অবসর'।

করোনা মানুষকে অখণ্ড অবসর দিয়েছে। ব্যস্ত মানুষের জন্য এই অবসর একরকম প্রশান্তির। এতে সবাই শারীরিক মানসিক উভয়ভাবে উজ্জীবিত এবং প্রাণশক্তি ভরপুর হয়ে উঠবে।

পরিবারকে সময় দেয়াঃ
মানুষ ব্যস্ততার কারণে পরিবারকে খুব একটা সময় দিতে পারে না। সারাদিন কাজ শেষে ক্লান্ত বিধ্বস্ত শরীরে আর ইচ্ছে হয় না। করোনা মানুষকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে।

পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করাঃ
বাড়িতে একসাথে থাকার ফলে পরিবারের সবার সাথে আলাপচারিতা, গল্পসল্প ইত্যাদির ফলে সম্পর্ক আরও মজবুত হচ্ছে। জীবনের ব্যস্ততাকে বিরতি দিয়ে পারিবারিক জীবনকে যেন নতুন চোখে দেখার সুযোগ এসেছে। শিশুদের সঙ্গে খেলা, গল্প করাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানো, ঘর-বাড়ির আশপাশটাও নতুন করে দেখা হচ্ছে। অনেক বন্ধুরা দেখছি পরিবারে ঘরকন্যার কাজ শুরু করেছে। দারুণ। সব মিলিয়ে এতে একধরনের টান তৈরি হচ্ছে।

সময়কে উত্তমরূপে কাটানোঃ
অনেকের বইপড়ার অভ্যাস আছে। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে সময় হয় না। করোনা সেই সুযোগ এনে দিয়েছে। হাতে অনেক সময়। কেউ ইচ্ছে করলে তার প্রিয় বইগুলো পড়ে শেষ করতে পারেন।

অনেকে আবার এই হঠাৎ পাওয়া অবসরকে ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে কাটাতে পারেন। নফল নামাজ, রোজা, কুরআন-হাদিস এবং প্রয়োজনীয় ইসলামিক বই পড়ে জ্ঞানার্জনের উত্তম সুযোগ এটা। সামনেই রামাদান মাস। রামাদানের প্রস্তুতিস্বরূপ আজ থেকেই শুরু করতে পারেন।

এছাড়া অনেকে ছবি একে, গান গেয়ে, মুভি দেখে, লেখালেখি কিংবা যেকোনো সৃজনশীল কাজ করে এই অলস সময়কে কাজে লাগানো যেতে পারে।

মানবসেবা করাঃ
মানুষের সেবা মহত্তম। করোনা প্রান্তিক শ্রেণির মানুষগুলোকে কঠিন অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। দান সদকার মাধ্যমে একদিকে মানবসেবা হলো অন্যদিকে ধমীয় হুকুম পালনও হলো।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঃ



করোনা তথা লকডাউনের কারণে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়তো প্রকৃতি। ঢাকার কথাই ধরি। একটা স্বাভাবিক দিনে ঢাকার রাস্তায় চলা মানে পুরো যুদ্ধে নামার শামিল। অথচ এখন নেই কোন গাড়ি প্যা পু, ধোঁয়া, ময়লা আবর্জনার গন্ধ নেই, শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ নেই, অযথা হাকডাক নেই। কি শান্ত, কি সুন্দর পরিবেশ। এখন ঢাকার বাতাসে বিষের পরিমাণ কমে গেছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে এর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আকাশ আরও ঝকঝকে এবং নীল, রাতের তারাগুলো আরও উজ্জ্বল, বাতাসও নির্মল হয়েছে। ঢাকার মানুষ এখন রাতের নিস্তবদ্ধতাও উপলব্ধি করতে পারছে।

পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাঃ
এ নিয়ে আর কি বলার আছে। "পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ" এই বাণীর কাগজে কলমে শিক্ষা যেন করোনার মাধ্যমে হচ্ছে। ঘনঘন হাত ধোয়া, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, হাঁচি কাশি শিস্টাচার শিক্ষা, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক গ্লাভস ব্যবহার ইত্যাদি বহু সুঅভ্যাস গড়ে তুলতে করোনার বিশাল ভূমিকা পালন করছে। আশা করি এই অভ্যাসগুলো করোনা পরবর্তী সময়ে বজায় থাকবে।

পৃথিবীর সুদিনঃ
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অনেক ফ্যাক্টরি। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে ভ্রমণে। যানবাহন খুব কম চলছে। এতে বিশ্ব অর্থনীতি একটা দুর্যোগের মুখে পড়লেও এই পরিস্থিতি সুখবর বয়ে এনেছে পরিবেশের জন্য। কম কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে। ফলে পৃথিবী নতুন জীবন পেয়েছে যেন। এটা মানুষসহ সকল প্রকার জীবজন্তু এবং গাছপালার জন্য দারুণ উপকারী।



করোনা এটাও প্রমাণ করে দিয়েছে যে, এই পৃথিবী শুধুমাত্র মানুষের জন্য নয়। প্রকৃতি, পশুপাখি, নদী-নালা-সমুদ্র, বিস্তৃত খোলা আকাশসহ সবার। বহু শতাব্দী পর আবারও প্রকৃতি তার জায়গা কিছুটা হলেও ফিরে পেয়েছে। আমরা অবাক বিস্ময়ে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারছি।

সহমর্মিতা বেড়েছেঃ
অনেকেই পরিবার, পরিজন ছেড়ে থাকতে হচ্ছে সেলফ কোয়ারেন্টাইনে। এতে একাকিত্বের পরিস্থিতি তৈরি হলেও কঠিন এই পরিস্থিতিতে সহমর্মিতা যেন আরও বেড়েছে। সবাই পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের খবর নিচ্ছেন। করোনায় আক্রান্ত না হওয়ার উপায় বাতলে দিচ্ছেন। এসব কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো। অনেকে গ্রুপ অ্যাকাউন্ট করে পরিবার-পরিজন, বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।

আল্লাহকে ডাকা বেড়েছেঃ
অনেকেই মনে করেন করোনা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা গযব। সেজন্য এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মহান আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করছে মানুষ। আল্লাহকে খুশি করার নানা প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

আত্মোপলব্ধিঃ
করোনা সঙ্কটে মানবজাতি নতুন করে কিছু কঠিন সত্যি হৃদয়ঙ্গম করতে পারলো - বিশ্বস্রস্টার কাছে মানুষ খুবই ক্ষুদ্র; প্রকৃতির রোষের কাছে সে বড় অসহায়; প্রকৃতির অপব্যবহার করলে সে কোনো না কোনোভাবে এর বদলা নেবেই।
আশা করা যায় করোনা পরবর্তী সময়ে মানুষ এই সত্য ভুলে যাবে না।

এরকম আরও বহু ইতিবাচক দিক আছে। কেননা সব অমংগলের মধ্যেই কিছু মংগল লুকিয়ে থাকে। তেমনি সকল মংগলের মধ্যে নিহিত থাকে অমংগলের বীজ। আমাদের এ থেকে সঠিক শিক্ষা নিতে হবে।

করোনা পরবর্তীতে মানুষ নিজেকে কতটুকু পরিবর্তন, সংশোধন করবে তা সময়ই বলে দিবে। মানুষকে বুঝতে হবে পৃথিবীটা অংশীদারমূলক। নিজে বেঁচে থাকার পাশাপাশি জীবজগতের কথাও মাথায় রাখতে হবে। আশা করি আশরাফুল মাখলুকাতের শ্রেষ্ঠজীব মানুষ এই চরম সত্যি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারবে।

তবে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই একটা সত্য পরিস্ফুট যে, মানুষ খুব কমই শিক্ষা নেয়। মানুষ যদি শিক্ষাই নিতো তাহলে আল্লাহ এত জাতিকে সমূলে ধ্বংস করতো না।

সবাইকে ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০২০ দুপুর ১২:৫২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×