somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম হাঁচি, প্রথম শব্দ, তাড়াহুড়ো, করোনা, গ্রেট লকডাউন ইত্যাদি।

১১ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কোন জিনিসটা হযরত আদমকে (আঃ) আদম বানালো? রূহ। এর আগে আদম (আঃ) আক্ষরিক অর্থেই মাটির তৈরি নিস্প্রাণ এক শরীর বৈ কিছু ছিলেন না। তখন আল্লাহ মাটির শরীরের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত রূহ ফুঁকে দিলেন। রূহ যখন নাকের কাছে আসলো তখন তিনি হাঁচি দিলেন। আদমের (আঃ) মুখ থেকে উচ্চারিত প্রথম আওয়াজ হাঁচি। কি চমৎকার! কাজেই আদম সন্তান হিসেবে উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা হাঁচি দেয়া শিখেছি। এটা আমাদের জন্মগত স্বভাব।



হাঁচি দেয়ার পর আদম (আঃ) প্রথম যে শব্দ উচ্চারণ করেন তাহলো "আলহামদুলিল্লাহ "(সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর)। এটা খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার যে, রূহ পুরো শরীরে সক্রিয় হবার আগেই প্রথম শব্দ ছিল "আলহামদুলিল্লাহ"। এটা মানবজাতির একটা স্বভাব (ফিতরাত)। আমরা যে প্রায়ই বলি 'Alhamdulillah এটা মোটেও কথার কথা না। এর শক্তিশালী ভিত্তি আছে। আল্লাহ চান বান্দারা সবকিছুর জন্য তার শুকরিয়া আদায় করুক। আলহামদুলিল্লাহ।



আদম (আঃ) এর আলহামদুলিল্লাহ এর জবাবে আল্লাহ বললেন, "ইয়ারহামুকাল্লাহ ইয়া আদম" (আল্লাহ তোমার উপর রহম করুক হে আদম)। এটাও খুব বিস্ময়কর যে, মহান স্রস্টার উচ্চারিত প্রথম শব্দযুগল ছিল ইয়ারহামুকাল্লাহ তথা মানুষের প্রতি রহম করা, দয়া করা। আল্লাহ কত দয়ালু! মানবজাতির শুরুটা কতই না চমৎকার! সুবহান আল্লাহ!

এরপর রূহ যখন হাতের কাছে পৌঁছালো তখন আদম (আঃ) উঠে দাঁড়ানোর চেস্টা করলেন। পুরো শরীরে রূহ পৌঁছানোর আগেই তিনি দাঁড়াতে চাইলেন। এটা দেখে আল্লাহ বললেন, "মানুষ খুব তাড়াহুড়ো করে"! তাড়াহুড়োও মানবজাতির আরেকটা স্বভাব। জন্মগত স্বভাব।

এই তাড়াহুড়ো স্বভাবের কারণে জন্ম থেকেই মানুষের ব্যস্ততার শেষ নেই। একদন্ড জিরিয়ে নেয়ার ফুসরত নেই তাদের। আমরা বলি 'লাইফ ইজ আ রেস'। সেজন্য সবাই দৌড়ের উপর থাকি। 'এই দরকার' 'সেই দরকার'। এটা চাই, ওটা চাই, সব চাই আমার, সব।



এহেন অস্থিরমতি মানুষ আজ নিতান্ত বাধ্য হয়ে ঘরবন্দী। গ্রেট লকডাউন। ইচ্ছে হলেই সে বের হতে পারছে না। এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাসের ভয়ে সারাবিশ্বের কয়েক বিলিয়ন মানুষ আজ চুপচাপ শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছে। ব্যবসা বাণিজ্য, টাকা কড়ি, ক্ষমতা সবকিছু আজ বেকার। একরাশ আতংক নিয়ে তারা ঘরবন্দী। সব ঔদ্ধত্য, সব অহংকার, সব উন্নয়ন আজ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। আজ মানুষের কোন কিছুরই প্রয়োজন নেই, শুধু প্রাণে বেঁচে থাকা ছাড়া। সব কিছু হারিয়ে হলেও সে শুধু বেঁচে থাকতে চায়।

আচ্ছা, এরকম গ্রেট লকডাউন কি দুনিয়াবাসী আগে কখনো দেখেছে। আমার জ্ঞানমতে একবার। হযরত নুহ (আঃ) এর জামানায়। ধরণ ভিন্ন হলেও সেটাও এক প্রকারের টোটাল লকডাউন ছিল।আল্লাহর হুকুমে নুহ (আঃ) তার অনুসারীদের নিয়ে (সুস্থ লোক ধরুন) এক নৌকায় চড়লেন। সেখানে অবশ্য সামাজিক কিংবা ব্যক্তিগত দুরত্ব ছিল না। হয়তো গাদাগাদি করেই ছিলেন। আর বাকি সমস্ত লোক (ধরুন অসুস্থ, জীবানু বহনকারী) পরে রইলো। এরপর এক মহাপ্লাবন এলো। নৌকার মধ্যে যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিল তারা ব্যতিত বাকি সবাই ডুবে মরে গেল।

আল্লাহ যুগে যুগে, বিভিন্ন রূপে, বিভিন্ন তরিকায় মানুষকে সুপথে আনয়ন করতে চেয়েছেন। এখন যেমন করোনা এসেছে। বেশির ভাগ মানুষ এটাকে আল্লাহর তরফ থেকে গযব হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আল্লাহর গযব থেকে তারাই প্রাণে বেঁচে যাবেন যারা লাইনমত চলবে। কিন্তু মানুষ তো অস্থিরমতি। আল্লাহ বারে বারে দয়া করেন, আর মানুষ বারে বারে লাইনচ্যুত হয়ে যায়। অথচ কোন নবী, কোন কিতাব, কোন ওহী আসার আগেই মানুষ আল্লাহকে রব্ব হিসেবে স্বাক্ষ্য দিয়েছে। এটাও কিন্তু আমাদের স্বভাব। কিন্তু আমরা তা ভুলে যাই।

সবশেষ কথা, প্রাণে বেঁচে থাকতে হলে লাইনে থাকার বিকল্প নেই। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন।

ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন, সাবধানে থাকুন, আত্মবিশ্বাসী থাকুন।

সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:২৬
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×