কোন জিনিসটা হযরত আদমকে (আঃ) আদম বানালো? রূহ। এর আগে আদম (আঃ) আক্ষরিক অর্থেই মাটির তৈরি নিস্প্রাণ এক শরীর বৈ কিছু ছিলেন না। তখন আল্লাহ মাটির শরীরের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত রূহ ফুঁকে দিলেন। রূহ যখন নাকের কাছে আসলো তখন তিনি হাঁচি দিলেন। আদমের (আঃ) মুখ থেকে উচ্চারিত প্রথম আওয়াজ হাঁচি। কি চমৎকার! কাজেই আদম সন্তান হিসেবে উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা হাঁচি দেয়া শিখেছি। এটা আমাদের জন্মগত স্বভাব।
হাঁচি দেয়ার পর আদম (আঃ) প্রথম যে শব্দ উচ্চারণ করেন তাহলো "আলহামদুলিল্লাহ "(সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর)। এটা খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার যে, রূহ পুরো শরীরে সক্রিয় হবার আগেই প্রথম শব্দ ছিল "আলহামদুলিল্লাহ"। এটা মানবজাতির একটা স্বভাব (ফিতরাত)। আমরা যে প্রায়ই বলি 'Alhamdulillah এটা মোটেও কথার কথা না। এর শক্তিশালী ভিত্তি আছে। আল্লাহ চান বান্দারা সবকিছুর জন্য তার শুকরিয়া আদায় করুক। আলহামদুলিল্লাহ।
আদম (আঃ) এর আলহামদুলিল্লাহ এর জবাবে আল্লাহ বললেন, "ইয়ারহামুকাল্লাহ ইয়া আদম" (আল্লাহ তোমার উপর রহম করুক হে আদম)। এটাও খুব বিস্ময়কর যে, মহান স্রস্টার উচ্চারিত প্রথম শব্দযুগল ছিল ইয়ারহামুকাল্লাহ তথা মানুষের প্রতি রহম করা, দয়া করা। আল্লাহ কত দয়ালু! মানবজাতির শুরুটা কতই না চমৎকার! সুবহান আল্লাহ!
এরপর রূহ যখন হাতের কাছে পৌঁছালো তখন আদম (আঃ) উঠে দাঁড়ানোর চেস্টা করলেন। পুরো শরীরে রূহ পৌঁছানোর আগেই তিনি দাঁড়াতে চাইলেন। এটা দেখে আল্লাহ বললেন, "মানুষ খুব তাড়াহুড়ো করে"! তাড়াহুড়োও মানবজাতির আরেকটা স্বভাব। জন্মগত স্বভাব।
এই তাড়াহুড়ো স্বভাবের কারণে জন্ম থেকেই মানুষের ব্যস্ততার শেষ নেই। একদন্ড জিরিয়ে নেয়ার ফুসরত নেই তাদের। আমরা বলি 'লাইফ ইজ আ রেস'। সেজন্য সবাই দৌড়ের উপর থাকি। 'এই দরকার' 'সেই দরকার'। এটা চাই, ওটা চাই, সব চাই আমার, সব।
এহেন অস্থিরমতি মানুষ আজ নিতান্ত বাধ্য হয়ে ঘরবন্দী। গ্রেট লকডাউন। ইচ্ছে হলেই সে বের হতে পারছে না। এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাসের ভয়ে সারাবিশ্বের কয়েক বিলিয়ন মানুষ আজ চুপচাপ শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছে। ব্যবসা বাণিজ্য, টাকা কড়ি, ক্ষমতা সবকিছু আজ বেকার। একরাশ আতংক নিয়ে তারা ঘরবন্দী। সব ঔদ্ধত্য, সব অহংকার, সব উন্নয়ন আজ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। আজ মানুষের কোন কিছুরই প্রয়োজন নেই, শুধু প্রাণে বেঁচে থাকা ছাড়া। সব কিছু হারিয়ে হলেও সে শুধু বেঁচে থাকতে চায়।
আচ্ছা, এরকম গ্রেট লকডাউন কি দুনিয়াবাসী আগে কখনো দেখেছে। আমার জ্ঞানমতে একবার। হযরত নুহ (আঃ) এর জামানায়। ধরণ ভিন্ন হলেও সেটাও এক প্রকারের টোটাল লকডাউন ছিল।আল্লাহর হুকুমে নুহ (আঃ) তার অনুসারীদের নিয়ে (সুস্থ লোক ধরুন) এক নৌকায় চড়লেন। সেখানে অবশ্য সামাজিক কিংবা ব্যক্তিগত দুরত্ব ছিল না। হয়তো গাদাগাদি করেই ছিলেন। আর বাকি সমস্ত লোক (ধরুন অসুস্থ, জীবানু বহনকারী) পরে রইলো। এরপর এক মহাপ্লাবন এলো। নৌকার মধ্যে যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিল তারা ব্যতিত বাকি সবাই ডুবে মরে গেল।
আল্লাহ যুগে যুগে, বিভিন্ন রূপে, বিভিন্ন তরিকায় মানুষকে সুপথে আনয়ন করতে চেয়েছেন। এখন যেমন করোনা এসেছে। বেশির ভাগ মানুষ এটাকে আল্লাহর তরফ থেকে গযব হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আল্লাহর গযব থেকে তারাই প্রাণে বেঁচে যাবেন যারা লাইনমত চলবে। কিন্তু মানুষ তো অস্থিরমতি। আল্লাহ বারে বারে দয়া করেন, আর মানুষ বারে বারে লাইনচ্যুত হয়ে যায়। অথচ কোন নবী, কোন কিতাব, কোন ওহী আসার আগেই মানুষ আল্লাহকে রব্ব হিসেবে স্বাক্ষ্য দিয়েছে। এটাও কিন্তু আমাদের স্বভাব। কিন্তু আমরা তা ভুলে যাই।
সবশেষ কথা, প্রাণে বেঁচে থাকতে হলে লাইনে থাকার বিকল্প নেই। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন।
ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন, সাবধানে থাকুন, আত্মবিশ্বাসী থাকুন।
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:২৬