somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনার পিক টাইমের কত দেরি পাঞ্জেরি?

৩০ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে প্রথম যখন করোনা নিয়ে বেশ হৈচৈ হচ্ছিল তখন সরকার মহাশয় বংগবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী নিয়ে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু এক সময় যখন দেখা গেল করোনা ধেয়ে আসছে তখন প্রোগ্রাম বাতিল করে লকডাউন ঘোষণা করলো। আমার মতে সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে ভালো ছিল।

লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল মার্চের একুশ তারিখ। দিন কয়েক পরই সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। যদিও সাধারণ ছুটি ঘোষণা এবং গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণার মধ্যে কোন সমন্বয় ছিল না। ফলে সামাজিক দুরত্বকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে মানুষ ঈদের ছুটির আমেজে নাড়ির টানে বাড়ি চলে যায়। আর বিদেশ থেকে প্রবাসী ভাইয়েরা স্রোতের মত এসে ভয় আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিলো।

তখন আমার মত বিশেষভাবে অজ্ঞ বিশেষজ্ঞ মহাশয় বেশ বিজ্ঞের মত নিজের মত দিয়েছিল "এপ্রিল মাসটা মহাগুরুত্বপূর্ণ"। কিন্তু এপ্রিল মোটামুটি ঢিমেতালে কেটে গেল। করোনা আক্রান্ত আর মৃত্যু উভয়ই নগণ্য। পিকও এলো না করোনাও গেল না। আমার বিশেষজ্ঞ মত পুরো ফেইল।

সরকার মহাশয় আবারো সাধারণ ছুটি বাড়ালো। আমরা ঘরবন্দী থাকলাম। আর টিভিতে বিশেষজ্ঞদের বিজ্ঞ মতামত শুনে নিজেকে আবার একজন বিশেষ ভাবে অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করে বললাম, "মে মাসের মাঝামাঝি মহাগুরুত্বপূর্ণ"। কিন্তু টিভি বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলে বসলেন, "জুন মাসের পনের তারিখ পর্যন্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ"। তাদের এহেন কথা শুনে পিত্তি জ্বলে গেল। মনে মনে বললাম, "আরে মিয়ারা! দেশের ইকোনমি গোল্লায় যাচ্ছে। আর তোমরা পিক টাইমকে টেনে রবারের মত লম্বা বানাইতেছে"।

যাইহোক সরকার মহাশয় রেগুলার ইন্টারভেলে সাধারণ ছুটি বাড়িয়েই যাচ্ছে। আর আমরা ঘরবন্দী থেকে হাসফাস করতে লাগলাম। সবাই নানা ছুতো নাতায় বের হতে লাগলাম। বাজার ঘাট, ঔষধপত্র কেনা এমনি বিড়িসিটামল আনতেও বাইরে যাওয়া বাদ থাকলো না। আমাদের সাহস বেড়ে গিয়েছিল। কারণ বেশি মৃত্যু হচ্ছিল না। তাছাড়া বীর বাংগালী এসব করোনা ফরোনা দেখে ভয় পায় না। ভাগ্যিস করোনার আকৃতি একটা চুলের ত্রিশ ভাগের এক ভাগ। মোটামুটি চোখে দেখা গেলেও বাংগালী করোনাকে ধরে সকাল বিকাল নাস্তা করত।

যাইহোক এই পর্যায়ে এসে আমাদের প্রিয় আরএমজি মালিকেরা গড়বড় করে ফেললেন। হাজার হাজার শ্রমিক ভাইদের ডেকে এনে চাপের মুখে আবার বললেন, "তোমরা যাও গা"। আবারও চরম সমন্বয়হীনতার বহিঃপ্রকাশ। লাভের লাভ কিছুই হলো না। মাঝখান থেকে করোনার পিক টাইম আরও পিছিয়ে গেল। যে বিশেষজ্ঞর উপর রাগ হয়েছিল তাকে মনে পড়লো।

মে যায় যায়। পিক খুব সম্ভবত জুনেই। কারণ করোনা বেশ ভালো গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করেছে। সারা দেশে ছড়িয়ে পরেছে। অন্যান্য দেশের সাথে এখানেই আমাদের তফাত। আমেরিকার নিউইয়র্ক এবং আরও দুয়েকটা শহরে করোনা ছড়িয়েছ। তাই এমন অবস্থা। আর আমাদের প্রায় সব জেলায় করোনা রোগী আছে। আর প্রতিদিন নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে। করোনা প্রতিদিন তার আক্রমণের ধার বাড়াচ্ছে। এই সুযোগ অবশ্য আমরাই দিয়েছি। জীবনের চেয়ে জীবিকার মূল্য বেশি দিয়েছি। লকডাউনও মানিনি। গরীব দেশের গরীব মানুষ আমরা। আমরা বিশ্বাস করি পেটে খেলে পিঠে সয়। কিন্তু কে বোঝাবে করোনা পিঠে না, হৃদয়ে আক্রমণ করে। ফুসফুস অকেজো করে দেয়, দম আটকে দেয়।

জুন থেকে সব সীমিত পরিসরে প্রায় সবকিছু খুলে যাচ্ছে। লকডাউনেই বীর বাংগালী "যেভাবে" স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলেছে তাতে ভালো কিছু আশা করা বোকামী। এতদিন তবু করোনার বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়েছি। প্রয়োজনীয় কাজ সেরে দ্রুত বাসায় ফিরেছি। আর এখন? এবার হবে সম্মুখ সমর। দক্ষিণী সিনেমার মত "আমনেসামনে" যুদ্ধ। দেখা যাক বাংগালীর জোর বেশি না করোনার। আমরা বীরের জাত! জানের পরোয়া করি না।প্রতিদিন জানবাজি রেখে, জান হাতে নিয়ে চলি। ব্যাঙের আবার সর্দি।

প্রিয় ভ্রাতা এন্ড ভগিনীগণ, ভয় পাবেন না। পরাজয়ে ডরে না বীর। করোনাকে রাস্তায়, বাসে, ঘাটে, রিকশায় মোটকথা যেখানেই দেখবেন ডিপজলের মত বলবেন, "আহো করোনা আহো। আমি তোমার লাইগাই অপেক্ষা করতেছি"। দেখবেন করোনা 'মাগো বাবাগো' বলে এক দৌড়ে উহানে পালাবে; উহানে না যাক ইউরোপে যাবেই। কিন্তু সমিস্যা অইলো গিয়া করোনা চোউক্ষে দেখা যায় না। অই ব্যাটা করোনা তুই কিছু খাস না! এত ছোট্ট হইলি ক্যান!?!

এবার সিরিয়াসলি কিছু কথা বলি। আমার মতে, করোনার পিক টাইমে সব কিছু খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত সুবিবেচনাপ্রসূত হয়নি। করোনায় যেখানে প্রতিদিন দুই আড়াই হাজার আক্রান্ত বা শনাক্ত হচ্ছে সেখানে এই অসময়ে জনগণকে চরম ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়া সমীচীন হচ্ছে না। জনগণ কথা শোনে না, পেটে খাবার নেই। খাবার দেন। বাধ্য করেন কথা শুনতে। আর পনের বিশদিন বাড়ালে কি এমন ক্ষমতা হত।

আমরা সাধারণ মানুষ। আমরা ইচ্ছে করলেও সব ধরনের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে পারব না। সম্ভব না। আমরা আম পাবলিক। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট আমাদের ভরসা। এখানে আমরা কিভাবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলব?

তাই ঘুরেফিরে সেই স্রস্টার কাছেই ফিরে যাই। যার কেউ তার আল্লাহ আছেন। আমরা তার কাছেই ফিরে যাই। আল্লাহ আমাদের জানিয়েছেনঃ "আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো মৃত্যু হতে পারে না, যেহেতু সেটার মেয়াদ সুনির্ধারিত"। [সুরা আল ইমরান; আয়াত ১৪৫ এর প্রথমাংশ]

এটা গলায় লটকে অথবা হৃদয়ে ধারণ করে রাস্তায় নামবেন। কুছ পরোয়া নেহি। আর হ্যাঁ, পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলবেন অবশ্যই। বাইরের লকডাউন শেষ। এবার নিজের লকডাউন শুরু।

সবাই সাবধানে থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:৪২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×