মেয়েটা যখন বলে, "কিছুই ভালো লাগছে না" তখন ছেলেটা ঘুম, পরীক্ষার পড়া, এ্যাসাইনমেন্টের কাজ বাদ দিয়ে ছুটে আসে মেয়েটার কাছে। বলে, "চলো কিছুক্ষণ হেটে আসি তাহলে ভালো লাগবে"।
ছেলেটা যখন ঘুমানোর আগে বলে, "রাত তিনটার সময় আমাকে একটু ডেকে দিবা? পরীক্ষা তো পড়তে হবে।" মেয়েটা রাত তিনটা পর্যন্ত জেগে থেকে ঠিকঠাক তিনটায় ছেলেটাকে ডেকে দেয়।
মেয়েটা বলে সে কখনো ঢাকার ভোর দেখেনি। ছেলেটা ঠিকই পরদিন ভোরে ফোন দিয়ে বলে, "তোমার বাসার বা হলের সামনে দাড়িয়ে আছি। জলদি রেডি হয়ে বের হও।"
হলে বা মেসে থাকা ছেলেটা বাইরের খাবার খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে যখন হাপিয়ে উঠে, কখনো রান্নাঘরে না ঢোকা মেয়েটা ঠিকই হাত পুড়ে কিছু একটা রান্না করে কোন এক দুপুরে এসে ফোন করে বলে, "রান্না খুব বাজে হয়েছে কিন্তু একটুও বাজে বলতে পারবে না।"
এভাবে চলে অনেকদিন। ততোদিনে তাদের সম্পর্কটা আর বন্ধুত্বের ভিতর সীমাবব্ধ থাকে না।
একসময় মেয়েটা মনে মনে ভাবে, বা বান্ধবীর কাছে হাপুস নয়নে কেঁদে বলে "এতোকিছু করি, এতো ভালোবাসি তবু গাধাটা বোঝে না কেন?"
আর ছেলেটা ভাবে, "আমি হয়তো যেমন ভাবছি সে হয়তো এরকম ভাবছে না। ভালোবাসার কথা বলে দিলে সে যদি যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়? থাক যেমন চলছে তেমনি চলুক।"
একসময় ছেলেটার বা মেয়েটার অপেক্ষা করতে করতে দমবন্ধ লাগে। তার জন্য অপেক্ষা করা অন্য কাউকে হ্যা বলে দেয়।
মেয়েটি আবার কাঁদতে কাঁদতে বালিশ ভেজায়। খাবার ছুয়ে দেখে না কয়েকদিন। মনে মনে বলে, "ওই মেয়ের সাথেই যদি রিলেশন করবে, তাহলে আমার সাথে ওভাবে মেশার কি দরকার ছিলো?"
বা কখনো সিগারেট না ধরা ছেলেটি নিকোটিনের ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে মনে মনে বলে, "তাহলে এই ছিলো তার মনে!"
শুধু মুখ ফুটে না বলায়, দুজনের মধ্যে ভালোবাসার বদলে জায়গা নেয় তিক্ততা। শুধু কেউ একজন আগ বাড়িয়ে মুখ ফুটে বললেই হয়তো আজ গল্পটা অন্যরকম হতো।
ঝুম বৃষ্টিতে হঠাৎ ছাতাটা বন্ধ করে বলা যেতো চলো ভিজি। দুজন হাত ধরাধরি করে বৃষ্টিতে ভিজে সর্দিজ্বর বাধিয়ে আরেকটু যত্ন পাওয়া যেতো।
মন খারাপের সময়টা তার বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদা যেতো।
শীতের কুয়াশা ঢাকা সকালে এককাপ চা দুজন মিলে ভাগ করে খাওয়ার নামে গোপন চুমু খাওয়াটা হয়ে যেতো।
হয়ে যেতো ঘুরতে যাবার নাম করে সারাদিন একসাথে কাটানো। দিনশেষে রিকসায় উঠে খুব ক্লান্তি লাগছে বলে কাঁধে মাথা রেখে একটু চোখ বোজা।
বলি বলি করে না বলা কথাটা সেদিন বলে ফেললে, আজকে হয়তো একজনের হাত ধরে আরেক জনকে মিস্ করতে হতো না।
করতে হতো না, একজনের মাঝে সারাজীবন অন্যকে খোজার বৃথা চেষ্টা।