somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রামীণ নারী দিবসের শোকগাঁথা

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গ্রামীণ নারী (শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন)

পুরুষেরা নিজে যেসব সংস্কারকে উপেক্ষা করে , যেসব মত বিশ্বাস করে না, যেসকল আচরণ পালন করে না, নারীদের বেলায় সেগুলিকে সযত্নে প্রশ্রয় দিয়েছে। তার মূলে তাদের সেই মনোবৃত্তি ছিল যে মনোবৃত্তি একেশ্বর শাসনকর্তাদের। তারা জানে, অজ্ঞানের অন্ধ সংস্কারের আবহাওয়ায় যথেচ্ছশাসনের সুযোগ রচনা করে; মনুষ্যোচিত স্বাধিকার বিসর্জন দিয়েও সন্তুষ্টচিত্তে থাকবার পক্ষে এই মুগ্ধ অবস্থাই অনুকূল অবস্থা। আমাদের দেশের অধিকাংশ পুরুষের মনে আজও এই ভাব আছে।

আমার মনে হয়, পৃথিবীতে নতুন যুগ এসেছে। আজও অব্দি মানবসভ্যতার ব্যবস্থাভার পুরুষের হাতে। এই সভ্যতার রাষ্ট্রতন্ত্র অর্থনীতি সমাজশাসনতন্ত্র গড়ে পুরুষ। নারীরা তার পিছনে প্রকাশহীন অন্তরালে থেকে কেবল করে যাচ্ছে ঘরের কাজ। এই সভ্যতা একঝোঁকা। এই সভ্যতায় মানবচিত্তের অনেকটা সম্পদের অভাব ঘটেছে; সেই সম্পদ নারীদের হৃদয়ভাণ্ডারে কৃপণের জিম্মায় আটকা পড়ে আছে। আজ ভাণ্ডারের দ্বার উন্মোচনের পথে।



নারী মানে আর অবরোধবাসিনী নয়; নয় কোন ব্যবসার পণ্য। নারী মানে আজ বিশ্বব্যাপী ভালোবাসা আর সম্মান নিয়ে ধন্য। যখন সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে গ্রামীণ নারী দিবস তখনো কষ্টের প্রহর গুনছে হয়তো কোনো গ্রামীণ নারী।

'একটা নারী গাঁও-গেরামের/একটা নারী শহুরে/নির্যাতিত গাঁওয়ের নারী/এমন আছে বহুরে।/এই নারীদের জন্য জীবন/জীবন মানে যুদ্ধ/গ্রামীণ নারী সারাজীবন/থাকেই কারারুদ্ধ।' এই সব কারারুদ্ধ নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলার মহান লক্ষ্য থেকে সারাবিশ্বে প্রতিবছর ১৫ অক্টোবর পালিত হয় গ্রামীণ নারী দিবস। এই দিবসের মধ্য দিয়ে মানুষকে সচেতনতার শিক্ষা দেয়া হলেও এখনো ঘরে বাইরে নানা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে গ্রামীণ নারীরা। দেশে নারী দিবস শত বছর পার করলেও এখনো শ্রমের স্বীকৃতি মেলেনি গ্রামীণ নারীদের। ঘরে বাইরে নানা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে তারা। সংসারে তো বটেই বাইরে পরিশ্রম করে নারী বলেই তাকে হতে হচ্ছে অবমূল্যায়িত। সারা দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও ন্যায্য মজুরি বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামীণ নারী কৃষি-শ্রমিকরা।



সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রচার হওয়া কিছু নারী নির্যাতনের ঘটনা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে সমাজের কোন স্তরেই নারী আজ নিরাপদ নয়। নারী নির্যাতনের ঘটনা আমাদের দেশে নতুন কোন বিষয় নয়। দেখা যায়, সমাজ-সংসার-কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে প্রতিটি জায়গায়ই নারীকে প্রতিনিয়ত কোন না কোনভাবে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। শিশু-তরুণী-মধ্যবয়স্কা কোন নারীই আজ আর নিরাপদে নেই। মানসিক-শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক নারীই বেছে নিচ্ছে মৃত্যুর পথ। সারাদেশের নারী নির্যাতনের মর্মস্পর্শী ঘটনাগুলো আবারও আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে সমাজের কোন স্তরেই নারী আজ নিরাপদ নয়। সমাজের সব শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের বিবেককে নাড়া দিতে একটি ঘটনাই যথেষ্ট। ভাবতে অবাক লাগে দিন দিন কোথায় চলেছি আমরা? আমরা যে সমাজে বাস করছি সে সমাজ কি আদৌ বাসযোগ্য! আমরা কি কোন সভ্য দেশের মানুষ! কোন সভ্য সমাজে কি এমনটি ঘটতে পারে?

বাংলাদেশের নারীরা সমাজের সর্বস্তরে বৈষম্যের শিকার। দীর্ঘকাল নীরব উপেক্ষার পর কয়েক দশক ধরে নারীকে মূল ধারায় সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু উন্নয়ন নীতিমালায় নারীর পশ্চাৎপদতার মূল কারণ উঠে না আসার কারণে নারীর উন্নয়ন কাংখিত মাত্রায় পৌঁছেনি। সম্পদের ওপর বিশেষ করে ভূ-সম্পত্তির ওপর নারীর অধিকার ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি এখনো পর্যন্ত আমাদের দেশে গুরুত্ব লাভ করেনি। সম্পদের ওপর নারীর অধিকার ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার কারণে তার অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ণ ঘটেনি। বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি এবং কর্মসংস্থান ও ক্ষুদ্র ঋণের বিষয়গুলি গুরুত্ব পেলেও গৃর্হস্থ্য কার্যের বিষয়টি গুরুত্ব লাভ করেনি।



নারীর উদয় থেকে অস্ত পারিশ্রমিকহীন এই শ্রমের বিষয়টি যে অর্থনীতিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তাতে তর্কের অবকাশ নেই। গৃহস্থালির এসব কাজের মূল্যায়ন তাকে জাতীয় আয়ের হিসেবের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি সর্বজনস্বীকৃত হলেও বা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতো বিশ্ব সংস্থাসমূহের দ্বারা উৎসাহিত হলেও আমাদের দেশে এর মৌলিক স্বীকৃতিটুকু পর্যন্ত নেই।



সভ্যতাসৃষ্টির নতুন কল্প আশা করা যাক। এ আশা যদি রূপ ধারণ করে তবে এবারকার এই সৃষ্টিতে নারীদের কাজ পূর্ণ পরিমাণে নিযুক্ত হবে সন্দেহ নেই। নবযুগের এই আহ্বান আমাদের নারীদের মনে যদি পৌঁছে থাকে তবে তাঁদের রক্ষণশীল মন যেন বহু যুগের অস্বাস্থ্যকর আবর্জনাকে একান্ত আসক্তির সঙ্গে বুকে চেপে না ধরে। তাঁরা যেন মুক্ত করেন হৃদয়কে, উজ্জ্বল করেন বুদ্ধিকে, নিষ্ঠা প্রয়োগ করেন জ্ঞানের তপস্যায়। মনে রাখেন, নির্বিচার অন্ধরক্ষণশীলতা সৃষ্টিশীলতার বিরোধী। সামনে আসছে নতুন সৃষ্টির যুগ। সেই যুগের অধিকার লাভ করতে হলে মোহমুক্ত মনকে সর্বতোভাবে শ্রদ্ধার যোগ্য করতে হবে, অজ্ঞানের জড়তা এবং সকলপ্রকার কাল্পনিক ও বাস্তবিক ভয়ের নিম্নগামী আকর্ষণ থেকে টেনে আপনাকে উপরের দিকে তুলতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:৩৮
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×