somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরব বসন্ত দেখিনি, তাহরির স্কয়ারেও যাইনি। আমি দেখেছি, আমি গিয়েছি শাহবাগ চত্বরে।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আরব বসন্ত দেখিনি, তাহরির স্কয়ারেও যাইনি। আমি দেখেছি, আমি গিয়েছি শাহবাগ চত্বরে। মধ্যরাত পেরিয়েও সেখানে শুনেছি প্রতিবাদী তারুণ্যের জয়ধ্বনি। তাদের সঙ্গে সব বয়সের, সব শ্রেণীর মানুষ। প্রচলিত রাজনৈতিক কায়দায় সমাবেশ-বক্তব্য নেই। নেই কোনো ব্যক্তি বা দলের নেতৃত্ব। আছে স্বতঃস্ফূর্ত স্লোগান, দেশের গান, মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র—আর তরুণ প্রজন্মের নিখাদ দেশপ্রেম। প্রজ্বালিত শত শত মোমবাতির আলোয় আলোকিত সেই চত্বর। ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম রাতের পর ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। কয়েক হাজার মানুষ, স্বতঃস্ফূর্ততায় সেখানে জমায়েত। সবার দাবি একটাই, আবদুল কাদের মোল্লাসহ অভিযুক্ত সব যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড।
৫ ফেব্রুয়ারি আবদুল কাদের মোল্লার বিচারের যে রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২, তা বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও একজন হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি হলো না, এই রায় মেনে নিতে পারেনি তরুণ প্রজন্ম। রায় ঘোষণার পরপরই সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ফেসবুকে স্ট্যাটাসে স্ট্যাটাসে ক্ষোভ প্রকাশিত হতে থাকে। নিজেদের প্রোফাইল ছবি ঢেকে যায় কৃষ্ণ পর্দায়। বাংলা ব্লগসাইটগুলোতে ব্লগারদের পোস্টগুলো এই রায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে থাকে। ফেসবুকে, ব্লগে একজন থেকে আরেকজন; আরেকজন থেকে নানাজন—এভাবে মানুষের ভেতরের ক্ষোভ, অসন্তুষ্টি প্রবলভাবে নড়াচড়া করতে থাকে।
তরুণ প্রজন্ম, যাকে আমরা অনেকেই বলি ফেসবুক প্রজন্ম, সেই প্রজন্মের ক্ষোভ, হতাশা যেন আর ধারণ করতে পারে না ভার্চুয়াল জগৎ। ‘চলেন, আমরা শাহবাগে গিয়ে এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসি।’ মুঠোফোনে বন্ধুকে বলা, ‘ওই রায় শুনেছিস?’ ‘হুম্। কান্না পাচ্ছে। ইচ্ছা করছে...।’ ‘চল, শাহবাগে যাই।’
প্রথমে ৩০-৩৫ জন, একটু পরে আরও ৫০, তারপর ৫০০, হাজার...। এরপর তো হাজার হাজার মানুষের সমুদ্র হয়ে গেল শাহবাগ। যে দেশে আমরা শিখেছি আদালতের রায়ের ব্যাপারে কিছু বলা যায় না, সে দেশে মানুষ শাহবাগে এসে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করছে হাইকোর্টের সমমর্যাদার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে। রাজাকারের ফাঁসি চায় বাংলার মানুষ। তারই বহিঃপ্রকাশ শাহবাগের উত্তাল জনসুমদ্রে। শুধু কি শাহবাগ? সিলেটে মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার, ইয়াসমিন ম্যাডাম তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন; রাজশাহী, যশোর, চট্টগ্রাম—সর্বত্রই দিন-রাত প্রতিবাদ, সমাবেশ করছেন সচেতন মানুষ। এসব সমাবেশের কথা, আবেগ, প্রতিক্রিয়া, ছবি তাৎক্ষণিকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ফেসবুকে, ব্লগে ব্লগে।
এই যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তরুণদের রাজপথে নেমে আসা, এর সূতিকাগার ভার্চুয়াল জগৎ। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুক, বাংলা ব্লগসাইটে তরুণদের প্রতিবাদ সৃষ্টি করেছে বাস্তবের এই জনসমুদ্রকে। আরব বসন্ত বা অন্যান্য আন্দোলন, যেগুলোর সূচনা হয়েছিল ভার্চুয়াল জগতে সচেতনতা তৈরি করে, সেসব দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেশি। সেখানে টুইটারও আছে। সেসব আন্দোলন সংগঠিত করার ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোর অবদানের সঙ্গে আমাদের শাহবাগ চত্বরের আন্দোলনের গুণগত পার্থক্য আছে। আর সেই পার্থক্যে আমরাই এগিয়ে।
আরব দেশগুলোর আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে বা ছড়িয়ে গেছে ফেসবুক টুইটারের মাধ্যমে, এ কথা সত্যি। তবে সেখানে স্বতঃস্ফূর্ততার বাইরেও ঘটনা ছিল। আরব বসন্তের বিভিন্ন সময় আন্দোলনের নানা বার্তা ছড়িয়ে দিতে পশ্চিমা দেশগুলোর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিয়োজিত করেছিল মেধাবী কম্পিউটার প্রোগ্রামারদের, যাঁরা প্রতি সেকেন্ডে একই ধরনের লাখ লাখ টুইট স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম (বট) তৈরি করতেন। সেই প্রোগ্রামের মাধ্যমে নিমেষেই ছড়িয়ে যেত আন্দোলনের নানা কৌশলগত বার্তা।
আমাদের ফেসবুক ব্যবহারকারী বা ব্লগাররা সেসবের মধ্যে যাননি। তাঁদের সেসবের প্রয়োজন হয়নি। কেননা, দেশপ্রেম, জাতির দায় মেটানো ছাড়া অন্য কোনো স্বার্থ তাঁদের নেই। রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের ধারও তাঁরা ধারেন না। নিজেদের আবেগকে তাঁরা একই সুতায় বাঁধতে পেরেছেন। আর অনলাইনে তাঁদের আহ্বানে সারা দেশের মানুষও নিজের মনের কথার প্রতিফলন দেখতে পেয়েছে। তাই আজ বাংলাদেশের মতো প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা দেশেও একটা সফল গণ-আন্দোলনের সূচনা হলো ভার্চুয়াল কমিউনিটি থেকে।
বাংলাদেশে দ্রুত জনপ্রিয় হয়েছে ফেসবুক। ৩৩ লাখের বেশি মানুষ ব্যবহার করে ফেসবুক। যদিও মোট জনসংখ্যার তুলনায় এই সংখ্যা অতি নগণ্য। কিন্তু ফেসবুকে সচেতন মানুষের সংখ্যা বেশি। তাঁদের মতামত, তাঁদের অনলাইন তৎপরতা যেকোনো ইস্যুতেই নাড়া দিতে পারে অনলাইনের বাইরে থাকা মানুষদের। ৩৩ লাখ ব্যবহারকারীর মধ্যে ১৬ লাখের বেশি হলো ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ প্রজন্ম। এরপর আছেন ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সীরা। তাঁরাও তারুণ্যেও মধ্যেই পড়েন। এই তারুণ্য ন্যায়-অন্যায় বোঝে। জানে দেশপ্রেম। তাই তো তারা নিদ্বির্ধায় জাতির মনের ইচ্ছাটা ধরতে পারে। অনলাইন সম্প্রদায়ের মাধ্যমে সেই ইচ্ছাটা সঞ্চারিত করতে পারে। থামিয়ে দিতে পারে অনলাইনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা মাসোহারার বিনিময়ে রাজাকারদের বাঁচাতে নিয়োজিত জামায়াত-শিবিরের কর্মী ও যেকোনো ব্লগারকে। ভার্চুয়াল জগৎ থেকে উৎসারিত এই আন্দোলন প্রমাণ করে দিয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যাবে না। যেকোনো ক্রান্তিকালে তারুণ্য ডাক দেবে সত্যের পক্ষে, যেমনটি এবার দিয়েছে। তাই তো শাহবাগ চত্বরে গিয়ে অনেকের দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেখা যায়, মাহবুব উল আলম চৌধুরীর লেখা একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম কবিতার সেই লাইন, ‘আজ আমি কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি।’
পল্লব মোহাইমেন: সাংবাদিক।
Click This Link
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×