somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রামে বাড়ি করবেন? সাবধান! ওৎ পেতে আছে আবুল মাল

০২ রা মে, ২০১৮ দুপুর ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গ্রামে আমাদের একটা পাকা বাড়ি আছে। একতলা এবং বেশ বড়। আমরা সব ভাইবোন এবং মা মিলে তিলতিল করে বাড়িটা তৈরি করেছি। বাড়িটা তৈরি করার ফলে এবং ঢাকায় চাকরী করার কারণে গ্রামের সবাই আমাদের মোটামুটি ধনী ব্যক্তি হিসেবেই জানে। যদিও অামরা টিপিক্যাল মিডল ক্লাস ফ্যামিলি। এখন কোনো একদিন আমাদের বাড়িতে একজন বা দুজন লোক আসলো এবং বললো, ‘আমরা কর অফিস থেকে এসেছি। আপনাদের গ্রামে বাড়ি আছে এবং আপনারা ধনী, তাই আপনাদের এতো টাকা কর দিতে হবে। যদি না দেন তাহলে কর ফাঁকির মামলা হবে আপনাদের বিরুদ্ধে।’ আমরা সাধারণ মানুষ। আমজনতা। মামলা তো আমাদের বিরুদ্ধেই হবে। অতঃপর মামলা খাওয়ার ভয়ে আমি আপনি সবাই কর দিয়ে দিবো। জ্বী হ্যা, এমনটাই ঘটতে যাচ্ছে। সরকারের বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ঘোষণা দিয়েছেন যে, আগামী বছর রাজস্ব আয় বাড়াতে গ্রামাঞ্চলে যাদের বড় বড় বাড়ি আছে অথবা যারা ধনাঢ্য হিসেবে পরিচিত, তাদের কর দেওয়ায় উদ্বুদ্ধ করার পদক্ষেপ থাকবে। (সূত্রঃ প্রথম আলো, 01/05/2018) কর দেওয়া অতি উত্তম কাজ সন্দেহ নেই। তবে সমস্যাটা হলো করের বোঝাটা সবসময় কেন যেন এই ম্যাংগো পিপলদের উপরই বর্তায়। যদি এই আইন কার্যকর হয় তবে আপনি নিশ্চিত থাকুন সরকার দলীয় কোনো ব্যক্তি গ্রামে বাড়ি বাবদ এক পয়সাও কর দিবে না। কারণ তাদের আছে কোটি কোটি টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার অভিজ্ঞতা। এ অবস্থায় আরো কিছু কর ফাঁকি দিতে তাদের কোনো অসুবিধাই হবে না। তাই শেষ অবধি ঐ ম্যাংগো পিপলরাই কলুর বলদের মতো আরো কিছু করের বোঝা মাথায় নিবে।

আবুল মালের নিত্য নতুন ফন্দি ফিকিরের কোনো অভাব নেই। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সঙ্গে এক বৈঠকে আবুল মাল সঞ্চয়পত্রের সুদের হার পর্যালোচনা করার কথা বলেছেন। তার মতে, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশি হওয়ায় ব্যাংকের আমানতে বেশি সুদ দিতে হচ্ছে। এ কারণে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদের হার কমাতে পারছে না। ঋণ ব্যবস্থাপনার সাথে সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশের বিষয়টি খুব বেশি সাংঘর্ষিক নয়। এর কারণ প্রথমত: সঞ্চয়পত্র হল একটি সরকারি বন্ড যা ঋণ গ্রহণের একটি হাতিয়ার। সরকার মূলত উন্নয়ন কাজের ব্যয় মেটাতে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে ঋণ করে। সঞ্চয়পত্র যদি বিক্রি না হয় তবে বেশি করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে। এর ফলে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় সংকট সৃষ্টি হবে। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ কমে যেতে পারে। তাই ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রার ঋণের একটি অংশ সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহ করাই সমীচীন। তবে এর পরিমাণ কত হবে তা নীতি-নির্ধারকদেরকে হিসাব করে ঠিক করতে হবে। তবে এর মানে এই না যে, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমাতে হবে। কারণ সঞ্চয়পত্রের ক্রেতা মূলত মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো। তারা তাদের তিলতিল করে জমানো একলাখ বা দুলাখ টাকা দিয়ে একটি সঞ্চয়পত্র কিনে মাস শেষে কিছু মুনাফা পায়। কারণ তাদের ঐ টাকা আসলে অন্য কোথাও বিনিয়োগ করার উপায় নেই। পোস্ট অফিসে গেলে দেখা যায় সমাজের একদম সাধারণ মানুষগুলো লাইন দিয়ে দাড়িয়ে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা তুলছে। এখন সরকার যদি মুনাফার হার কমিয়ে দেয় তাহলে এই সাধারণ মানুষগুলোর যাওয়ার আর কোথাও জায়গা থাকবে না। তাদের আয়ের একটা পথ একরকম বন্ধই হয়ে যাবে। এর পিছনে যে কলকাঠি নাড়ছে আবুল মাল সেটা জনগণ একসময় ঠিকই বুঝতে পারবে। এবং সেটার জবাব তারা ভোটের মাধ্যমেই দিবে। সেই জবাবটা সরকারের জন্য অবশ্যই সুখকর হবে না।

সঞ্চয়পত্রের সুদের হার একবার কমানো হলেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কারণ তাতে ব্যাংকের সুদের হার কিছুটা কমলেও পরে আবার অদৃশ্য হাতের কারসাজিতে তা ধাই ধাই করে বেড়ে গেছে। বিনিয়োগ বাড়েনি এক ফোটাও। অথচ ব্যাংকগুলো অলস টাকার পাহাড় নিয়ে বসে আছে। তাই দোষটা আসলে এককভাবে সঞ্চয়পত্রকে দিলে হবে না। বরং সঞ্চয়পত্রের সাথে যেহেতু কোটি কোটি সাধারণ মানুষ জড়িত তাই সঞ্চয়পত্রকে হিসাবের বাহিরে রেখে সমাধান খোঁজা যুক্তিসঙ্গত হবে।

বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পাহাড় জমে গেছে। খেলাপি ঋণের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর অন্যতম। ঋণখেলাপির দিক দিয়ে সরকারি ব্যাংকগুলো আবার চ্যাম্পিয়ান। তারা নিজেদের মূলধন এরই মধ্যে খেলাপিদের কাছে হারিয়েছে। প্রতিবছর সরকারকে বলছে তুমি যেহেতু মালিক, তাই নতুন করে আমাদের মূলধন দাও; নইলে যে আমাদের ব্যবসা বন্ধ হতে চলেছে। সরকারও কী বুঝে জনগণের বিরোধিতা সত্ত্বেও হাজার হাজার কোটি টাকার ফ্রেশ মূলধন দিয়ে এই ব্যাংকগুলোকে বাঁচিয়ে রাখছে। গত বাজেটে আবুল মাল বড় অঙ্কের একটা বরাদ্দ রেখেছিলো সরকারি খেলাপি ব্যাংকগুলোর জন্য। একেকবার সরকার যখন বলে অমুক সরকারি ব্যাংককে মূলধন বাবদ এত হাজার কোটি টাকা দিতে হবে, তখন ভাবি অর্থনীতিতে অন্যত্র অর্থপ্রাপ্তি কঠিন হলেও এই এক জায়গা, যেখানে অর্থপ্রাপ্তি অনেক সহজ! ব্যাংক পরিচালনা করতে গিয়ে অতি উদারভাবে ঋণ দিয়ে ব্যাংককে বসিয়ে দিয়েছে; কিন্তু যারা ঋণ দিতে ছিল উদার হাতে তারা আবার ঋণ আদায়ে যেন সমভাবে অক্ষম ছিল! এটা কেমন ব্যবসা! অর্থ দাও, সরকার তুমি যে মালিক, আর ব্যবসা করব আমরা, কোনো প্রশ্ন করতে পারবা না। ব্যবসায়ে লাভ-লোকসান আছে। ধরে নাও আমরা শুধু লোকসানই করবো! এটা কেমন আজগুবি ব্যবসা! যেখানে সরকারি ব্যাংকগুলো শুধু লোকসান দিয়েই যাবে, ঋণ খেলাপির শিকার হবে? আর সাধারণ জনগণকে সেই খেলাপি ঋণ পূরণ করতে হবে?

সরকার আজ্ঞাবহ আবুল মাল বিভিন্ন ফন্দি ফিকির করে করের মাধ্যমে অর্থ এনে সরকারি ব্যাংকগুলোকে দিচ্ছে আর বছর ফিরতেই সেই অর্থ হজম! ফুটো বন্ধ না করে পানি ঢাললে এমনই হয়। এখন জনগণ বুঝে নিয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলোর তলাটার ফুটো বন্ধ হওয়ার নয়। এগুলো হলো জনগণের অর্থ সাবাড় করার মেশিন। জনগণ এখন তাদের কপালের দোষ দেয়। কারণ বেসিক ব্যাংককে ডুবিয়ে জাহাজ ভাসালেও আবুল মালের কিছু যায় আসে না। কিন্তু সাধারণ জনগণ গ্রামে একটা বাড়ি বানালে তাতে আবুল মালের লাগে। আবুল মাল নিত্য নতুন ফন্দি আটতে থাকে কিভাবে জনগণের উপর আরো নতুন নতুন করের বোঝা চাপানো যায়।

ইংরেজ শাসনামলে বাংলার জমিদার কৃষ্ণদেব রায় খাজনা আদায় ও শোষণের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঘোষণার কয়েকটা ধারা ছিলো নিম্নরূপঃ
১। কোন কৃষক দাড়ি রাখলে অথবা গোঁফ কমিয়ে রাখলে জমিদারকে আড়াই টাকা হারে কর দিতে হবে।
২। কোন প্রজা বাড়ির ভিতরে অথবা সংলগ্ন স্থানে পাকা সমজিদ নির্মাণ করলে ১০০০ টাকা কর দিতে হবে।
৩। কোন প্রজা কাঁচা মসজিদ নির্মাণ করলে পাঁচশত টাকা কর দিতে হবে।
৪। কোন মুসলমান পিতা-মাতার দেয়া নাম পরিবর্তন করে অথবা সন্তানের নাম ইসলামিক বা আরবী রাখলে কর দিতে হবে ৫০ টাকা।

আবুল মালের মধ্যে কেন যেন কৃষ্ণদেব রায়ের ছায়া খুজে পাওয়া যাচ্ছে। কৃষ্ণদেব রায় হিন্দু হওয়ায় মুসলমানদের মসজিদ নির্মানের উপর কর ধার্য করেছিলেন। এখন আবুল মাল যেহেতু মুসলমান তাই সে তো আর মসজিদ নির্মানের উপর কর ধার্য করতে পারে না, তাই সে বেছে নিয়েছে গ্রামে পাকা বড় বাড়িকে। তাই গ্রামে বড় বাড়ি করার আগে সাবধান হোন। কারণ ওৎ পেতে আছে আবুল মাল। ঋণ খেলাপিদের বাঁচাতে সে সর্বদা তৎপর। ঋণ খেলাপিদের বাঁচাতে এবং আরো বেশি করে ঋণ খেলাপির সুবিধার্থে সরকারি ব্যাংকে টাকা যোগাতে সে আপনার গলা টিপে আদায় করবে কর। আর ঋণ খেলাপির কোনো প্রতিকার? কোনো প্রতিকার নেই। এ সম্পর্কে আর নাই বললাম। (02/05/2018)

Ref:
(1) বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলেই কমতে পারে সুদের হার, আবু আহমদ, আমার সংবাদ পত্রিকা (31/4/2018)।
(2) সঞ্চয়পত্র নিয়ে টানাহেঁচড়া ও মধ্যবিত্ত, আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
(3) প্রথম আলো পত্রিকা (01/05/2018)।
(4) সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বনাম ব্যাংক ঋণের সুদহার বিতর্ক, আলি জামান, দৈনিক ইত্তেফাক (04/07/2015)।
(5) আমাদের তীতুমীর ও একজন স্বকৃত নোমান!! মোস্তাফিজ নাদিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (27/11/2014)।
(৬) ছবিঃ গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৫০
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×