পৃথিবীর মানচিত্রটি মাপজোখ করলে দেখা যাবে, পাঁচটি মহাসমুদ্র আর ৬৬টি সমুদ্র মিলিয়ে পৃথিবীর প্রায় ৭১ ভাগ অংশই পানিতে ঢাকা, আর বাদবাকি অংশ ডাঙ্গা, অর্থাৎ মহাদেশ। সমুদ্র যে কত বড় (৩৬ কোটি ১ লাখ বর্গ কি.মি) শুধু আকারেই বড় নয় বরং এর গভীরতাও অনেক। এতো বিশাল আর গভীর সমুদ্রের কিভাবে উদ্ভব হলো এই প্রশ্নটি শুধু সাধারণ মানুষের মনকেই নয়, বরং ভূ-বিজ্ঞানীদের চিন্তাকেও নাড়া দিয়েছে। এ বিষয়ে প্রথম উল্লেখযোগ্য মতবাদটি বিবর্তনবাদের প্রবক্তা চার্লস ডারউইনের ছেলে জর্জ ডারউইনের। আজ থেকে প্রায় একশ বাইশ বছর আগে ১৮৭৮ সালে জর্জ ডারউইন বললেন, প্রায় চারশ কোটি বছর আগে পৃথিবীর বাইরের খোলস যখন পুরোপুরি শক্ত হয়নি, ভেতরে নরম-গরম অবস্থা, সেই সময় সূর্যের টানে পৃথিবীর নরম বুক থেকে খানিকটা অংশ ছিটকে বেরিয়ে গিয়েছিল মহাকাশে। সেই উপড়ে চলে যাওয়া অংশই হলো চাঁদ। এরই ফলে পৃথিবীর বুকে তৈরি হলো একটি বিরাট গর্ত, যার নাম প্রশান্ত মহাসাগর। জর্জ ডারউইনের এই মতবাদ ঊনিশ শতকে ও বিশ শতকের প্রথমদিকে খুব আলোড়ন তুললেও পরবর্তী সময়ে কোনো বিজ্ঞানীই তার এই মতবাদে বিশ্বাস করেননি। জর্জ ডারউইনের এই মতবাদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানীরা যুক্তি দিলেন, ভূ-স্তর সৃষ্টির পর, তা যত পাতলাই হোক, এমনই কঠিন হয়ে পড়েছিল যে তখন তার পক্ষে আর পৃথিবী থেকে উৎক্ষিপ্ত হওয়া সম্ভব ছিল না। মহাসাগর সৃষ্টির ব্যাপারে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তত্ত্বটি হলো জার্মান ভূ-বিজ্ঞানী ওয়েগনারের (১৮৮০-১৯৩০)। ১৯১২ সালে প্রচারিত তার 'চলমান মহাদেশ' তত্ত্বটিতে তিনি মহাসাগর সৃষ্টির কথা বলেন।
ওয়েগনার বলেছেন, আজ থেকে পঁচিশ কোটি বছর আগেও পৃথিবীর মহাদেশ আর মহাসমুদ্রের চেহারা এরকম ছিল না। তখন পৃথিবীর সব মহাদেশ মিলে একটি মহাদেশ ছিল। সেই আদি প্রাগৈতিহাসিক মহাদেশ ঘিরে ছিল এক আদি মহাসমুদ্র প্যানথালসা। জার্মান ভূ-বিজ্ঞানী ওয়েগনারের মতে, খুব সম্ভবত মেসোজয়িক যুগের প্রথম দিকে, অর্থাৎ এখন থেকে প্রায় কুড়ি কোটি বছর আগে, প্রাকৃতিক কারণে প্যানজিয়া মহাদেশটি দুই টুকরায় ভেঙে গিয়ে সরে যায় একে অন্যের কাছ থেকে। এগুলোর একটি টুকরোর নাম 'গন্ডোয়ানা'-মধ্যপ্রদেশের 'গড' আদিবাসীদের নামানুসারে। এ দুটো প্রকল্প ছাড়াও আরও বেশকিছু প্রকল্প রয়েছে মহাদেশ ও সমুদ্র সৃষ্টির ব্যাপারে। তবে আধুনিক প্রযুক্তি বিজ্ঞানের যুগে সেই প্রকল্পগুলো নেহাতই সেকেলে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




