somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৈশোরের আবেগ , প্রেম , এবং !!..........................

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঘটনা -১

ছেলেটির নাম নাবিল ( ছদ্মনাম ) আমাদের এলাকায় থাকে । এইবার নবম শ্রেণীতে উঠেছে এবং বেশ ভাল একটা স্কুলে পড়ে । কিছুদিন আগেও বেশ ভালভাবে চলাফেরা করত , পড়াশোনায় মন ছিল । কিন্তু হঠাৎ করেই কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায় । অল্পতেই রেগে উঠে । সবসময় খিটখিটে মেজাজে থাকে । দিনের অনেকটা সময় বাইরে বাইরে থাকে ।পড়ালেখায় আস্তে আস্তে পুরোপুরি অমনোযোগী হয়ে যায় । মা-বাবা কিছু বললে উল্টো জিনিসপত্র ভাঙ্গাচোরা করে । ঘরে যতক্ষন থাকে কম্পিউটারের সামনে ফেসবুক নিয়ে বসে থাকে । হঠাৎ করেই তার হাতখরচ প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায় । প্রত্যেকদিন টাকার জন্যে মা-বাবাকে চাপ দিতে থাকে । টাকা না পেলে জিনিসপত্র ভাঙ্গচুর সহ বেপরোয়া হয়ে উঠে সে । মা-বাবা কিছুতেই কিছু করতে পারেন না , কারন এতদিন অতিরিক্ত আদর দিয়ে বড় করেছেন । একপর্যায়ে সে চাহিদামতো টাকা না পেয়ে ঘরের বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সরাতে থাকে । এমন কি একদিন আলমারির চাবী ভেঙ্গে ১০,০০০ টাকার মত নিয়ে যায় । চোখের সামনে ছেলেকে এইরকম বদলে যেতে দেখে তার মা-বাবা রীতিমতো আতংকিত হয়ে পড়েন । অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে এমনকি কঠোর শাস্তি দিয়েও কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না ।এমনকি সে এতদিনে ঘরের পাশাপাশি সুযোগ পেলে বাইরে থেকেও টাকা/জিনিসপত্র সরাতে থাকল । এর মধ্যে একদিন তাদের কাছে মাথায় বাজ পড়ার মত খবর এল । এক দোকান থেকে তার বাবার কাছে খবর এল সে নাকি একটা কাপড়ের দোকান থেকে একটা শার্ট লুকিয়ে সরাতে গিয়ে ধরা খেয়েছে । এলাকায় তার বাবার অনেক সম্মান ছিল । ছেলের এরকম ঘটনায় তিনি কেঁদে ফেললেন । একমাত্র ছেলে হওয়ায় ছোটবেলা থেকে অতিরিক্ত আদর দেওয়ার এবং ছেলেকে ভালভাবে গাইড না দেয়ার কুফল তিনি তখন আস্তে আস্তে বুঝতে পারছেন । দোকানে গিয়ে টাকা দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে আনলেন । এই ঘটনার পর সে বেশ কিছুদিন ভাল হয়ে । তারপর যেই লাউ সেই কদু ।
ছেলের এইরকম বদলে যাওয়ার পেছনের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে তার মা-বাবা একসময় জানতে পারেন সে একই এলাকার সপ্তম শ্রেণীতে পড়া একটা মেয়ের সাথে প্রেম করে , এবং ঐ মেয়েকে দামী মোবাইল কিনে দেয়া সহ ঐ মেয়ের পেছনে অনেক টাকা খরচ করে । সবকিছু জেনে তারা তো রীতিমতো স্তব্ধ হয়ে যান । ঘটনা পুরোপুরি জানাজানি হয়ে যাওয়ার পরে ছেলে তো আর কাউকে পরোয়া করে না । সে মেয়েকে বিয়ে করতে চায় বলে বাসার সবাইকে , নাহলে পালিয়ে যাবে বলে হুমকি দেয় । এতটুকুন ছেলের মুখে এই বয়সেই বিয়ে করার কথা শুনে সবাই তো থ হয়ে যায় । এরপর এ নিয়ে নানারকম গন্ডগোল - ক্যাচালের পর মেয়েটা একদিন এক কান্ড করে বসে ! তাদের ২ তলা থেকে এক লাফ দিয়ে নিজের ঠ্যাং নিজেই ভেঙ্গে ফেলে । :|এরপর হাসপাতালে মাসখানেক থেকে যন্ত্রনায় হাহ-হুহু করতে করতে মেয়েটার মাথা থেকে প্রেমের ভুত উবে যায় । সুস্থ হবার পর তার মা-বাবা উনাদের মেয়েকে নিয়ে এই জায়গা ছেড়ে অন্য আরেক জায়গায় চলে যান । আর ঐ দিকে নাবিল নামের ছেলেটি কিছুদিন দেবদাসের মত ঘুরাঘুরি করে সেও একসময় মেয়েটিকে মোটামুটি ভুলে যায় । এবং কয়েকদিন পর সে অন্য আরেকটি মেয়ের সাথে প্রেম করছে বলে শোনা যায় । আর এই দিকে তার বার্ষিক পরীক্ষাও ঘনিয়ে আসল । কিন্তু প্রেমের মত মহান একটা কাজ নিয়ে ব্যস্ত নাবিল এই সব পড়ালেখার মত ছোট কাজের থোরাই কেয়ার করে । ফলস্বরূপ বার্ষিক পরীক্ষায় ৩ সাবজেক্টে ফেল করে নাইনেই থেকে যাওয়া ।

আচ্ছা নাবিল আপাতত থাকুক নাবিলের মত চলুন এখন অন্য আরেকটি ঘটনা থেকে ঘুরে আসা যাক ।

ঘটনা-২

মেয়েটির নাম ইমি( ছদ্মনাম )। ক্লাশ এইটে উঠেছে এবার । সদা হাস্যোজ্জল , ছটফটে , দুরন্ত , প্রাণোচ্ছল মেয়েটাকে হঠাৎ করে কেমন যেন মনমরা , বিষন্ন , চিন্তিত একট মেয়েতে রূপান্তরিত হয়ে যেতে দেখেন তার মা-বাবা । সারাদিন কম্পিউটারের সামনে ফেসবুক নিয়ে বসে থাকে । আর কিছুক্ষন পরপর মোবাইলে আলাপ । প্রথম দিকে তেমন গুরুত্ব না দিলেও আস্তে আস্তে চিন্তিত হয়ে পড়েন ইমির মা-বাবা । ঐ দিকে ফেসবুকে থেকে দশম শ্রেণীতে পড়া একটা ছেলের সাথে বেশ খাতির হয় ইমির । সেই খাতির থেকে প্রথমে বন্ধুত্ব এবং এরপর ধীরে ধীরে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে তারা । তাদের কারও পরিবারের মা-বাবা বা অন্য কেউ বুঝার আগেই হঠাৎ একদিন ধুম করে পালিয়ে যায় ইমি ঐ ছেলেটার সাথে । মাথায় যেন বজ্রপাত পড়ে ইমির মা-বাবার । পাগলের মত দিশেহারা হয়ে যান তারা । ভেবে পান না কি করবেন ।মান-সম্মানের ভয়ে বলতেও পারেন না কাউকে কিছু । তারপর অনেক খুঁজাখুঁজি, চেষ্টা করে একসময় ইমিকে জোড় করে নিয়ে আসেন তার মা -বাবা । ঐ দিকে প্রেমিকা হারানোর বেদনায় পরদিন হারপিক খেয়ে ফেলে ঐ ছেলেটা । ( ছিহ : খাবি তো খা , হারপিক কেন অন্যকিছু খেতে পারল না :-* ) । তারপর আর কি ? কয়েকদিন হাসপাতালে থেকে চরম কষ্ট পেল পুরস্কার হিসেবে, আর স্থানীয় পত্রিকায় তার ছবি উঠল যার মাধ্যমে তার বংশের মর্যাদা একলাফে কয়েকহাত বৃদ্ধি করিয়া ফেলল । B-)B-)

ঘটনা-৩

এই ঘটনাটা একটু বেশি করুণ । ছেলেটি নবম শ্রেণীতে পড়ত । নাম তারেক ( ছদ্মনাম ) । সে যে ব্যাচে প্রাইভেট পড়ত ঐ ব্যাচের একটি মেয়েকে সে ভালবাসত । তো ঐ মেয়েটিকে অন্য আরেকটি ছেলে ভালবাসত । এ নিয়ে তারেক এবং ঐ ছেলেটার মধ্যে একদিন প্রচন্ডরকম বাগবতিন্ডা ও ঝগড়া হয় । এর সূত্র ধরে তারেক তার বন্ধুদের নিয়ে ঐ ছেলেটিকে পরের দিন রাস্তায় পেয়ে মারধর করে । এর কিছুদিন পরের ঘটনা । ঈদের কিছুদিন আগে মার্কেট করার জন্যে তারেক একা একা গিয়েছিল । সে সময় ঐ ছেলেটি তার বন্ধুবান্ধব সহ ঘুরছিল । তারা তারেক কে একা পেয়ে একটি গলির ভেতর টেনে নিয়ে তাকে মারতে থাকে । এর মধ্যে হঠাৎ ঐ ছেলেটি তারেকের পেটে ছুরি ঢুকিয়ে ফেলে । তারপর তারা পালিয়ে যায় । তারেকের চিৎকারে লোকজন এসে তারেক কে হাসপাতালে নিয়ে যায় , কিন্তু কিছুক্ষনের ভেতর ই সে মারা যায় । পরে ঐ ছেলেগুলোকেও পুলিশ গ্রেফতার করে ।


কিছু কথা -----------------------------------------

উপরের তিনটি ঘটনা গত কয়েক মাসে আমার জানা সত্যি ঘটনা । এরকম কত রকম ঘটনাই ঘটছে । কৈশোরের অতিরিক্ত আবেগ , প্রেম একটা কিশোর/কিশোরীর জীবনে কতটা বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিতে পারে এইগুলো তার কিছু উদাহরন । তাদের পরিবারকে ফেলে দিতে পারে অসহনীয় দুর্ভোগে । হিন্দী সিরিয়াল , সিনেমার আগ্রাসন এবং আরও নানা কারনে বর্তমানে কিশোর-কিশোরীদের কাছেও প্রেম একটি ফ্যাশনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে ।গার্লফ্রেন্ড /বয়ফ্রেন্ড না থাকলে যেন নিজেদের স্ট্যাটাস ই থাকে না । কিছুটা বুঝতে শিখলেই পোলাপাইন এখন জি এফ খুঁজে ;) । ফেসবুক-মোবাইল তাদের প্রেমকে করছে আরও গতিশীল ;)B-) । যে বয়সে গল্পের বইয়ের পাতায় হারিয়ে যাওয়ার কথা , খেলাধূলা নিয়ে মেতে থাকার কথা , যে সময়টা নিজেকে গড়ে তোলার সময় , সে সময়টায় অনেক পোলাপাইন এখন কাটায় জি.এফ খুঁজে । প্রেম করবা তো কর - একটু বড় হয়ে করলে দোষ কি । :|:|
কৈশোর বয়সটা অনেক আবেগের , তাই অভিভাবক দের উচিত তাদের সন্তান রা কি করছে তা সম্পর্কে ভালভাবে খোঁজখবর রাখা ।
৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×