somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্রুত বন্ধ হয়ে যাক পৃথিবীর প্রতিটি কপাট লাল সবুজের পতাকা খামচে ধরা নষ্ট শকুনগুলোর জন্য...

০১ লা মার্চ, ২০১০ দুপুর ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিনে সামহোয়ারইনের বিগত কয়েক দিনের সকল বিনোদন দাতাদের উৎসর্গে... আসুন ১৯৭১ এ রায়ের বাজার বধ্যভূমি ফেরত দু একজনের অভিজ্ঞতা পাঠ করি...

"" আর একটু এগিয়ে যেতেই সামনে বড় বড় দুটি মস্ত মানুষ, নাক কাটা, কান কাটা - মুখের কাছ থেকে কে যেনো খামচিয়ে মাংস তুলে নিয়েছে, হাত - পা বাঁধা। দুদিন পর্যন্ত লাশগুলো ওখানেই পড়ে ছিলো... ফর্সা বড় বড় দুটো মানুষের বিভৎস বিকৃত চেহারা এখনও ভেসে উঠে...""

"" আর একটু এগিয়ে যেতেই বাঁ হাতের পাশে যে মাটির টিবিটি ছিলো তারই পাদদেশে একটি মেয়ের লাশ। মেয়েটির চোখ বাঁধা। গামছা দুটো আজও ওখানে পড়ে আছে। পরনে কালো ঢাকাই শাড়ি ছিলো। এক পায়ে মোঁজা ছিলো। মুখ ও নাকের কোনো অস্তিত্ব নাই। কে যেনো অস্ত্র দিয়ে কেটে খামচে তুলে নিয়েছে। যেন চেনা না যায়... স্তনের একটা অংশ কাঁটা। চিৎ হয়ে পড়ে থাকা বিভৎস চেহারা বেশিক্ষন দেখা যায় না। তাকে আমি চিনতে পারি না। পরে অবশ্য সনাক্ত হয়েছিলো যে মেয়েটি সেলিনা পারভিন। শিলালিপির এডিটর।""

"" .... সামনে চেয়ে দেখি নীচু জলাভূমির ভেতরে এক ভয়াবহ বিভৎস দৃশ্য। এক নয় দুই নয় একেবারে বারো তেরো জন সুস্থ সবল মানুষ। একের পর এক শুয়ে আছে। পাশে আরো দুটো লাশ, তার একটির হৃদপিন্ড কে যেনো ছিঁড়ে নিয়েছে। সেই হৃদপিন্ড ছেঁড়া মানুষটিই হলো ড: রাব্বী। পাশের গাদাটিতে ইত্তেফাকের সিরাজউদ্দিন আর রমনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী। পাশের একজন বললেন মুনীর চৌধুরীর লাশও এখানে ছিলো..."

১৯৭২ সালের ২রা জানুয়ারী দৈনিক আজাদে প্রকাশিত অধ্যাপিকা হামিদা রহমানের লেখা "কাঁটাসূরের বধ্যভূমি" থেকে উদ্ধৃত...
----------------------------------------------------------------------------------

এইভাবে কত শত হৃদপিন্ড ওরা ছিঁড়ে নিয়েছিলো... আমার হৃদপিন্ড, আপনার হৃদপিন্ড.... আমাদের দেশের হৃদপিন্ড... এতশত আত্মার বলীদানে অর্জিত সেই স্বাধীনতার লাল সবুজ থেকে শকুনের ছায়া এখনো সরাতে পারি নাই আমরা... চরম লজ্জা আর নিন্দনীয় ব্যার্থতা আমাদের... তবে স্বাধীন দেশের স্বাধীন পতাকা খামচে একে ঠুকরে ঠুকরে খাবার চেষ্টায় রত এই শকুন গুলোর জন্য আমাদের বুক ভরা ঘৃণা... সেই সব শকুনদের সাথে তাল মিলিয়ে যারা আমাদের স্বাধীন জাতি হিসেবে জন্মানোর ইতিহাস নিয়ে তামাশা করে তাদের জন্য ঘৃণা... সেই সব নৃশংস হায়েনার স্বেচ্ছাসেবায় নিয়োজিত স্বজাতীয় বেইমানদের স্বেচ্ছাসেবী বোধ যারা নিজের মাঝে ধারণ করে এবং এই কূৎসিত বোধের চারাগাছটিকে যারা সযত্নে বেড়ে উঠার নিরাপদ আস্রয় প্রদান করে তাদের সবার জন্য ঘৃণা... আর অভিশাপ... পৃথিবীর প্রতিটি কপাট বন্ধ হোক এই নরপশুদের, তাদের সহযোগী এবং সকল সমর্থক দের জন্য....

------------------------------------------------------------------------
না আমি আসিনি
ওল্ড টেস্টামেন্টের প্রাচীন পাতা ফুঁড়ে,
দুর্বাশাও নই,
তবু আজ এখানে দাঁড়িয়ে এই রক্তগোধুলিতে
অভিশাপ দিচ্ছি।

আমাদের বুকের ভেতর যারা ভয়ানক কৃষ্ণপক্ষ দিয়েছিলো সেঁটে,
মগজের কোষে কোষে যারা
পুঁতেছিলো আমাদেরি আপন জনেরই লাশ
দগ্ধ, রক্তাপ্লুত,
যারা গণহত্যা
করেছে শহরে গ্রামে টিলায় নদীতে ক্ষেত ও খামারে,
আমি অভিশাপ দিচ্ছি নেকড়ের চেয়েও অধিক
পশু সেই সব পশুদের।

ফায়ারিং স্কোয়াডে ওদের
সারিবদ্ধ দাঁড়
করিয়ে নিমেষে ঝাঁ ঝাঁ বুলেটের বৃষ্টি
ঝরালেই সব চুকে বুকে যাবে তা আমি মানি না।
হত্যাকে উৎসব ভেবে যারা পার্কে মাঠে
ক্যাম্পাসে বাজারে
বিষাক্ত গ্যাসের মতো মৃত্যুর বিভৎস গন্ধ দিয়েছে ছড়িয়ে,
আমি তো তাদের জন্য অমন সহজ মৃত্যু করি না কামনা।
আমাকে করেছে বাধ্য যারা
আমার জনক জননীর রক্তে পা ডুবিয়ে দ্রুত
সিঁড়ি ভেঙ্গে যেতে
ভাসতে নদিতে আর বনবাদাড়ে শয্যা পেতে নিতে,
অভিশাপ দিচ্ছি, আমি সেই খানে দজ্জালদের।
অভিশাপ দিচ্ছি ওরা চিরদিন বিশীর্ণ গলায়
নিয়ত বেড়াক বয়ে গলিত নাছোড় মৃতদেহ,
অভিশাপ দিচ্ছি
প্রত্যহ দিনের শেষে ওরা
হাঁটু মুড়ে এক টুকরো শুকনো রুটি চাইবে ব্যাকুল
কিন্তু রুটি প্রসারিত থাবা থেকে রইবে
দশ হাত দূরে সর্বদাই।
অভিশাপ দিচ্ছি
ওদের তৃষ্ণায় পানপাত্র প্রতিবার
কানায় কানায় রক্তে উঠবে ভরে, যে রক্ত বাংলায়
বইয়ে দিয়েছে ওরা হিংস্র
জোয়ারের মত।
অভিশাপ দিচ্ছি
আকন্ঠ বিষ্ঠায় ডুবে ওরা অধীর চাইবে ত্রাণ
অথচ ওদের দিকে কেউ
দেবে না কখনো ছুঁড়ে একখন্ড দড়ি।
অভিশাপ দিচ্ছি
স্নেহের কাঙ্গাল হয়ে ওরা
ঘুরবে ক্ষ্যাপার মতো এপাড়া ওপাড়া,
নিজেরি সন্তান
প্রখর ফিরিয়ে নেবে মুখ, পারবে না
চিনতে কখনো;
অভিশাপ দিচ্ছি এতোটুকু আশ্রয়ের জন্য, বিশ্রামের
কাছে আত্নসমর্পনের জন্যে
দ্বারে দ্বারে ঘুরবে ওরা। প্রেতায়িত
সেই সব মুখের উপর
দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে পৃথিবীর প্রতিটি কপাট,
অভিশাপ দিচ্ছি।
অভিশাপ দিচ্ছি,
অভিশাপ দিচ্ছি...

অভিশাপ দিচ্ছি | শামসুর রাহমান
----------------------------------------------------------------------------------
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১০ দুপুর ১:১০
৩৮টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×