somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজয়ের ডায়েরী (বাংলাদেশ ক্রিকেট ফ্যান-ফিকশন)

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২৭ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৫ (রাত ১১:৩০)

আমাকে যে রুমটা দেয়া হয়েছে সেটি ১৭তালায়। এর জানালা দিয়ে নিচে তাকালে নিজেকে খুব বড়-বড় মনে হয়। এত রাত, তবু নিয়নের আলোয় আলোকিত রাস্তাগুলোয় হঠাৎ করে একটা/দুইটা গাড়ি যাচ্ছে। গতকাল-ও আমি জানালা দিয়ে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। কোচের যদিও কড়া নির্দেশ ছিল ঠিক ১০টায় ঘুমিয়ে পড়তে হবে, কিন্তু ঘুম আসছিল না। প্রায় দেড়ঘন্টা শুয়ে থেকে উঠে জানালার পাশে বসে ছিলাম। এত্ত নার্ভাস ছিলাম... খুব ভয় করেছিল।
আজ সকালে প্রস্তুতির সময় মাশরাফি-ভাই বলেছিল, “টস পেলে ব্যাটিং হবে। বিজয়, তামিম রেডী থাকিস।” কথাটা শোনার পর উত্তেজনার পাশাপাশি ভয়টাও কাজ করছিল খুব। আগের ম্যাচেও ভাল খেলতে পারিনি, আজ কিছুতেই খারাপ করা যাবে না। কিন্তু ভাগ্যের জোরে টস-টা ওরা জিতার পর আরো চিন্তায় পড়ে গেলাম। রান তাড়া করার চেয়ে রান তৈরী করা অনেক সহজ লাগে আমার। যাই হোক, আপাতত আমার কিছুই করার নেই, শুধু বল-টাকে বাউন্ডারীর ভিতরে রাখতে হবে ৫০ওভার!
মাশরাফি-ভাই বল শুরু করল। চার নাম্বার বলে ক্যাচ উঠল। বলটা বলা যায় একদম আমার হাতেই এসে পড়েছিল, কিন্তু কিভাবে যেন ফসকে গেল। আমি নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, এতো সহজ ক্যাচ মানুষ ছাড়ে কিভাবে! আমার যে ঐ মুহুর্তে কেমন লেগেছিল। মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল। আমি মাশরাফি-ভাইয়ের চোখের দিকেও তাকাতে পারিনি। এরপর থেকে প্রত্যেকটা বলে আমি নিজেকে প্রমাণ করার জন্য দৌড়িয়েছি, প্রতিটা বলে আমি চাইছিলাম যেন আরেকটা ক্যাচ ওঠে... কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, আর একটাও ক্যাচ আমি পেলাম না। পুরো খেলাতে একটা মাত্র উইকেট গেল! বিশাল এক রানের পাহাড়ের নিচে পড়লাম আমরা...
ব্রেকের সময় সবাই বলছিল যে বাজে ফিল্ডিং হয়েছে। কাউকে নির্দিষ্ট করে কখনোই দোষারোপ করা হয় না দলের ভিতর। কিন্তু আমি তো নিজের কাছেই নিজে ছোট হয়ে গেলাম। খুব খারাপ লাগছিল... প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, এই ম্যাচ জিতিয়েই ছাড়ব! যেভাবেই হোক...
ব্যাটিং শুরু করার সময় কোচ বলেছিল, একটা বল-ও যেন নষ্ট না করি। কিন্তু কোনোভাবেই মনোযোগ আনতে পারছিলাম না। তাছাড়া শুরুতেই তামিম-ভাই চলে যাওয়ায় আরো বেশি স্ট্রেসে পরে গিয়েছিলাম। প্রতিটা বলে আমি মারতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে থেমে যাচ্ছিলাম। এতো রাগ হচ্ছিল নিজের উপর! তখন বুঝতে পারছিলাম না যে উইকেট কি ছেড়ে দিব, নাকি স্লো হলেও খেলে যাব। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারায় বেশ কয়েকটা বল নষ্ট হয়ে গেল। এরপর তাড়াহুড়ো করা রান নিতে নিয়ে মনোযোগ হারিয়ে আউট হয়ে গেলাম!
এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে নিজ হাতে নিজের দেশটাকে হারিয়ে দিলাম! আমি কেন এই স্কোয়াডে আছি? আমার কোনো যোগ্যতাই নেই খেলার... খুব কষ্ট হচ্ছে। সাকিব-ভাই,তামিম-ভাই আর মাশরাফি-ভাই ডিনারের পর এসেছিল। বুঝিয়েছে, শান্তনা দিয়েছে। কিন্তু আমি তো জানি দোষ আমারই! আমার দেশের মানুষ আমাকে ১৭ তালার উপরে স্থান করা দিয়েছে কিন্তু আমি আমাদের পতাকা-টাকে মাটিতে মিশিয়ে দিলাম......


( লেখকের কথাঃ এটা শুধুই একটি ফ্যান-ফিকশন। ব্যক্তিগতভাবে কোনো খেলোয়াড়কে ছোটো করার জন্যে এটি লেখা হয়নি। আমি মন থেকে বিশ্বাস করি আমাদের টাইগাররা মনে-প্রাণে দেশের মুখ উজ্জ্বল করার চেষ্টা করে। একটা ম্যাচে একজন খারাপ খেলতেই পারে। সেই অবস্থায় তাকে কিয়ে সরাসরি সমালোচনা বা, গালাগালি করার আগে একবার ভাবা উচিত তার মনের অবস্থা এখন কেমন? একটা ২২ বছরের ছেলের কাছে ১৫কোটি মানুষের বোঝা অনেক ভারী। তাই ভাল সময়ে তাকে একটানে আকাশে উঠিয়ে খারাপ সময়ে তাকে ধাপ করে নিচে ফেলে দেয়ার চেয়ে সবসময় সমর্থন দেয়ার চেষ্টাই আমি করি। আমার কাছে তাদের স্থান অনেক উপরে... সবসময়-ই উপরে... )
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৫ ভোর ৬:২২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×