somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাকরাইল মসজিদ ও শিকদার মিয়া

০২ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন ঘোষণা দিয়ে এমন ঘটনা ঘটানো হয়না এই সত্য অনস্বীকার্য হলেও বৈশাখ মাসের যেই শুক্রবার থেকে শুরু করে কাকরাইল মসজিদে ঘটনাটি ধারাবাহিক পরবর্তী প্রতিটি শুক্রবারে ঘটতে আরম্ভ করেছিলো সেটায় আশেপাশের মানুষের অবাক না হয়ে কোন উপায় ছিলোনা। এরকম কোন ঘটনা আগে কখনো ঘটেছে বলে তারা শোনেনি। তাদের কল্পনার সম্ভাব্য চূড়ান্ততম রুপেও কখনো এমন কিছুর উপস্থিতি ছিলোনা।

কি সেই ঘটনা? বৈশাখ মাসের সেই শুক্রবারে অন্যান্য শুক্রবারের মতোই অনেক মানুষের সমাগম ঘটেছিলো কাকরাইল মসজিদে। জুম্মার নামাজের জন্য। পূন্যবাণ-পাপী, ভদ্রলোক-ইতর, সৎ-অসৎ সব রকমের মানুষ যারা কাকরাইল মসজিদে শুক্রবার এসে জুম্মার নামাজ পড়ে যায় তারা বরাবরের মতোই সেদিন জড় হয়েছিলো। তারা জড় হয়েছিলো নামাজ পড়বে বলে, মসজিদে ইমাম সাহেবের খুতবা শোনা থেকে শুরু করে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া – প্রতিটি গতানুগতিক কাজই সম্পন্ন করেছিলো একত্রে। বরাবরের মতোই। কিন্তু নামাজ শেষে যখন প্রত্যেকে নিজ নিজ জুতা খুঁজে নিজেদের বাড়ি ফিরবে তখন বিপুল জনতার বিশজনে আবিষ্কার করলো তাদের বাম পায়ের জুতা জায়গায় থাকলেও ডান পায়ের জুতা গায়েব। চোরে নিয়েছে এই নিয়ে সন্দেহ সামান্যই। কিন্তু প্রশ্ন হলো চোর জুতা নিয়ে গেলে জোড়াতেই তো নিয়ে যাবার কথা। বাম পায়ের জুতায় স্পর্শ পর্যন্ত করেনি। কিন্তু ডান পায়ের জুতাগুলো গায়েব। বিশ পাটি ডান পায়ের জুতা গায়েব।

ঘটনাটি শুধুমাত্র সেদিনেই সীমাবদ্ধ থাকলোনা। প্রতি শুক্রবারে ঘটতে লাগলো। ধারাবাহিকভাবে। বিপুল পরিমাণ মানুষ জুম্মার নামাজ আদায়ে কাকরাইল মসজিদে আসে। একত্রে নামাজ আদায় করে, অতঃপর নিজেদের জুতা খুঁজতে আসলে তাদের মধ্যে বিশজন আবিষ্কার করে যে তাদের ডান পায়ের জুতা গায়েব। অতঃপর হয় এক পায়ে জুতা পরে বাড়ি ফেরা নয়তো বাম পায়ের জুতা হাতে রেখে খালি পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরা নয়তো বাম পায়ের জুতা কোথাও ফেলে দিয়ে পুরোপুরি ঝাড়া খালি পা হয়ে বাড়ি ফেরা। এই তিনটি অপশনের যে কোন একটির অনুসরণ ব্যতীত জুতা হারানোওয়ালাদের আর কিছু করার থাকলোনা। কেননা এই অভিনব জুতা চুরির ঘটনা ঘটতেই থাকলো। নিয়মমাফিক প্রতি শুক্রবারে। কোন ভুলচুক নেই। নামাজ শেষে বিশ জনের মতো মানুষ জুতা খুঁজতে এসে আবিষ্কার করবে যে তাদের ডান পায়ের জুতা গায়েব।

কাকরাইল মসজিদে যারা শুক্রবারে এসে জুম্মার নামাজ আদায় করে থাকে তাদের বেশীরভাগই একে অপরকে শুক্রবার ব্যতীত অন্য কোন দিবসে কোথাও দেখে থাকেনা। কিংবা দেখে থাকলেও চিনে থাকেনা। কেননা কিছু ব্যতিক্রম বাদে মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসা মানুষজন একে অপরের সাথে কোনভাবেই পরিচিত নয়। তাদের মধ্যে অন্যত্র ব্যক্তিগত, সামাজিক কোন পরিসরেই সামান্যতম সংযোগও ঘটে থাকেনা। কিন্তু এই ধারাবাহিক উদ্ভুতুড়ে জুতা চুরির ঘটনা তাদেরকে একত্রিত করলো। জুতা ইতোমধ্যে চুরি যাওয়ারা, এখনো জুতা চুরি হয়নি কিন্তু তার জন্য অপেক্ষারত প্রত্যেকেই আবিষ্কার করলো যে এই অদ্ভুত ঘটনা, যা অবিরাম ঘটে চলেছে তাদেরকে পরস্পরের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। নাগরিক বিচ্ছিন্নতার যেই অনিবার্য জালে তারা প্রতি শুক্রবারে আল্লাহর দরবারে এসেও আবদ্ধ ছিলো সেই জাল ক্রমশই ছিঁড়ে যেতে শুরু করেছে। তাদের মধ্যে এক ধরণের কমিউনিটি ফিলিং ডেভেলপ করতে শুরু করেছে যা এই কিছুদিন আগেও তাদের কাছে অকল্পনীয় ছিলো। এই গড়ে উঠা যূথবদ্ধতার কারনে তারা ক্রমশই পরস্পরের কাছাকাছি চলে আসলো। সেই সূত্রে তারা একে অপরের পারিবারিক জীবন সম্পর্কেও জানতে শুরু করলো। একজনের পরিবারের কমেডি, ট্র্যাজেডি, গতানুগতিক সব ধরণের ঘটনা সম্পর্কেই অন্যরা অবহিত হবার সুযোগ পেলো। কারো পরিবারে স্ত্রী, পুত্র, কন্যা সবার কাছেই সে অনাহূত বলে বিবেচিত। অন্যরা জানতে পারলো যেই শুক্রবারে সে নিজের ডান পায়ের জুতা হারিয়েছিলো সেদিন বাড়ি ফেরার পরে তাকে কিভাবে পরিবারের সদস্যদের কাছে হেনস্থা হতে হয়েছে। আরেকজনের, পরিবারের মানুষজনের সাথে তার অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক। সবসময় হাসি, কৌতুকে তার বাড়ি পরিপূর্ণ হয়ে থাকে। সেই লোক নিজের ডান পায়ের জুতা হারাবার পর নিজের বাড়িতে গেলে কি হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছিলো সেই ঘটনাটি আর কেবল তার একান্ত ব্যক্তিগতই রইলোনা। এভাবে প্রতি শুক্রবার কাকরাইল মসজিদে ডান পায়ের জুতা হারানোওয়ালারা, জুতা হারানোর জন্য অপেক্ষারতরা একে অপরের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলো।

কিন্তু টানা ছয় মাস এই ডান পায়ের জুতা চুরির ঘটনাটি ঘটে যেতেই থাকলো। হিসাব করলে প্রতি মাসে চারটি সপ্তাহে চারটি শুক্রবার আসে। ছয় মাস হিসাব করলে টানা চব্বিশটি শুক্রবারে, প্রতি শুক্রবারে বিশজন, সবমিলিয়ে চারশো আশিজন আবিষ্কার করে যে তাদের ডান পায়ের জুতা গায়েব। এই ধারাবাহিক চৌর্যবৃত্তি সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার ফসল নয় বলেই তাদের ধারণা। চোর মাত্র একজনই। এই ছয় মাসে তাকে ধরবার জন্য চেষ্টা কম করা হয়নি। কাকরাইল মসজিদের ইমাম এই ছয় মাসে কম করে হলেও পাঁচবারের মতো কাঁদতে কাঁদতে খুতবায় আল্লাহর কাছে চোরের ধরা পড়া অতঃপর তার কঠোরতম শাস্তির ফরিয়াদ জানিয়েছে। কাকরাইল এবং তার আশেপাশের জায়গাগুলাতে নিরাপত্তা স্বাভাবিকের চাইতেও অনেক বেশী জোরদার করা হয়েছে। শহরের যেই সামান্য অংশটি প্রগতিশীল, বিশেষত বামপন্থী ঘরানার তারা এই নিয়ে শাহবাগে দুইটি এবং প্রেসক্লাবে চারটি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছে। এই বিক্ষোভ আয়োজনের মাঝেই তাদের কাজকর্ম সীমাবদ্ধ ছিলোনা। এই অভূতপূর্ব ঘটনাটি নিয়ে তাদের নিজস্ব বিশ্লেষণ আছে। সেটা হলো এই ছয় মাসে নিশ্চিতরুপেই রাষ্ট্রপক্ষ ভেতরে ভেতরে প্রচুর বিধ্বংসী কর্মকান্ডের পরিকল্পনা করে রেখেছে। জনগণের জীবনের জন্য ক্ষতিকর এমন সব বৈদেশিক চুক্তি থেকে শুরু করে জনগণের সামাজিক জীবনের অভ্যন্তরে বড় রকমের কোন নাশকতা সবকিছুই তার অন্তর্ভুক্ত। এবং এই সকল অপকর্মের কথা যেনো ঘুণাক্ষরেও জনগণের অনুমানে না আসে সেই কারনেই ছয় মাস ধরে কাকরাইল মসজিদে এই অদ্ভুত ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হচ্ছে। খুব বেশীই সরল বিশ্লেষণ তাতে সন্দেহ সামান্যই। কারণ রাষ্ট্রপক্ষ স্বৈরাচারী, অগণতান্ত্রিক এমনটা খোদ তাদেরই প্রদত্ত বিশ্লেষণ যা বহুকাল আগের। একটা স্বৈরাচারী রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়াশীল চরিত্র যে কোন বিচারেই নগ্ন। আবরণহীন। এই ধরণের উদ্ভট স্যাবোটেজ়ের প্রয়োজন তাদের কেনো পড়বে? ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোও নিজস্ব প্রণোদনায় নাকি পেছনের কলকাঠিতে কিনা তা জানা যায়না খুব হইচই করে আড়ম্বরে ময়দানে নেমে গেলো। তাদের বক্তব্য, কেয়ামতের আগে এরকম উদ্ভট উদ্ভট সব আলামত আল্লাহর দুনিয়ায় দেখা যায়। বিশেষত যখন মুসলমান দেশগুলিতে আল্লাহর শাসন বলতে কিছু থাকেনা। ছেলেমেয়েরা নাপাক, নাস্তিক হয়ে যায়। খোলে আম বেশরিয়তি কাজকর্ম করতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। রাষ্ট্রব্যবস্থা শরিয়ত মোতাবেক করার আকুল আর্জি জানিয়ে তারা নিজেদের কর্মকান্ডকে পরিচালিত করে। টিভি চ্যানেলগুলি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য নিয়মিত প্রচার করতে আরম্ভ করে। এদিকে ধারাবাহিকভাবে সংঘটিত এই অদ্ভুত ঘটনায় এনজিও সমাজও বসে থাকেনা। তারা বলে দেশে যেনো মানুষজন পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বল্পমূলে জুতার গ্রাহক হতে পারে এই বিষয়টির দিকে তাদের অখন্ড মনোযোগ রয়েছে। তাই তারা নরওয়ের স্থানীয় একটি এনজিও থেকে বিপুল পরিমাণ ফান্ড আনবার কথা চিন্তা করছে। তাদের ধারণা একবার দেশে সেই ফান্ড আনার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে জনগণ অপ্রত্যাশিতভাবে উদ্ভুত সংকটটি থেকে বেরিয়ে আসবে। এই উপলক্ষ্যে তারা রাষ্ট্রের কাছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইতিবাচক উত্তরের প্রত্যাশা করে বলে জানায়। কিন্তু তারা পাবলিক পালস ধরতে ব্যর্থ হয় কারণ যারা ইতোমধ্যে জুতা হারিয়েছে কিংবা জুতা হারানোর আসন্ন ঘটনার জন্য অপেক্ষারত তারা নতুন জুতা প্রাপ্তির সম্ভাবনার চাইতেও বেশী কৌতূহলী কালপ্রিটের ধরা পড়া অতঃপর তার পরিচয় সম্পর্কে অবহিত হতে।

অবশেষে, টানা চব্বিশটি সপ্তাহ অতিক্রান্ত হবার পর পঁচিশতম সপ্তাহে বহুল আকাঙ্খিত, গতো ছয় মাসে যে কিনা শহরের অবিসংবাদিত টক অব দা টাউনে পরিণত হয়েছে তাকে ধরা সম্ভব হলো। এই ঘটনাটি যেভাবে ঘটলো সেটাও অবাক করা। সেই শুক্রবারে, জুম্মার নামাজের সময়ে রাসেল নামের একটি যুবক ছেলে রিকশা করে তার প্রেমিকার সাথে কাকরাইলের দিকে আসছিলো। যেহেতু সে ধর্মবিশ্বাসে অবিশ্বাসী অতঃপর কোন মসজিদে গিয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করার বাস্তবতা তার জীবনে অনুপস্থিত। সে যখন রিকশায় বসে খোলা রাস্তার মাঝেই তার প্রেমিকা সিনথিয়ার গালে একটু চুমু খেতে যাচ্ছিলো তখন কাছ থেকেই দেখতে পেলো একটি সফেদ রঙের লুঙ্গি পরা লোক, আশেপাশে জনমানবহীন রাস্তা থাকা সত্ত্বেও চারপাশে সন্তর্পণে তাকিয়ে মসজিদের ভেতরে যাচ্ছে। ততোমধ্যে রিকশা মসজিদ অতিক্রম করে বেশ সামনে চলে গিয়েছে। কিন্তু গতো ছয় মাসের এই অদ্ভুতুড়ে ঘটনাটি রাসেলকেও স্পর্শ করেছে। তার কৌতূহলের কারণবশত সে রিকশা থামিয়ে, রিকশাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে প্রেমিকা সিনথিয়া সমেত সেই সতর্ক আগন্তুককে অনুসরণ করতে শুরু করে। লোকটির সাথে তার দূরত্ব কমে আসলে রাসেল আরো ভালোভাবে লোকটিকে পর্যবেক্ষণ করতে সমর্থ হয়। ক্লিন শেভ, হালকা পাতলা গড়ন, ডানদিকের ঘাড়ের কাছে একটা কাটা দাগ আছে। লোকটিকে অনুসরণ করতে করতে আরো কিছুদূর সামনে এগিয়েই রাসেল স্পষ্ট দেখতে পায় লোকটি তার সাথে বহন করা চটের ব্যাগটি খুলে সেখানে কিছু জুতা ব্যাগটির ভেতরে ঢোকাতে শুরু করে। রাসেল এবং তার প্রেমিকা তৎক্ষণাৎ নিঃসন্দেহ হয় এই লোকটি সেই কালপ্রিট ব্যতীত অন্য কেউ হতে পারেনা। এই ঘটনার আধাঘন্টা পরে যখন আবারো লোকটির দিকে তাকানো যায় তখন দেখা যায় সে ততোমধ্যে অর্ধমৃত। ততোমধ্যে মসজিদের ভেতর থেকে মুসল্লীরা নামাজ সেরে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু একজনও মসজিদ ত্যাগ করেনি। মব সাইকোলোজি, কিছু জায়গায় বেশ প্রেডিকটেবল। এরকম একটি ঘটনা যেই কালপ্রিট ছয় মাস ধরে ঘটিয়ে এসেছে ধরা পড়বার পরে তাকে এভাবে ছেড়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দেওয়া সম্ভবপর হয়ে উঠেনা। উত্তেজিত মুসল্লীদের অনেকেই ততোমধ্যে মোবাইল ফোনে বিস্ফোরিত কন্ঠে তাদের পরিবারের লোকজনকে চোরের এই পাকড়াও হবার ঘটনাটি জানায়। ক্রমশই কাকরাইলের মসজিদের আশেপাশ লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। উত্তেজিত জনতা চোরকে এক দফা বেধড়ক মার মেরে নিজেরা ক্লান্ত হয়ে গেছে। সেই অবস্থায় একজন চোরের দিকে এগিয়ে আসে। তাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে,

“নাম কি রে তোর?”

চোর নিরুত্তর।

“উত্তর দে খানকির পুত।” কথা শেষ হতে না হতেই প্রচন্ড এক চড় চোরের গালে এসে পড়ে চোরের সমগ্র মাথা নাড়িয়ে দিয়ে যায়।
এরপর চোরটি আর মিনিট বিশেকের মতো বেঁচে থাকতে পেরেছিলো। কিন্তু সেই বিশ মিনিটের মধ্যেই সে যা যা বলেছিলো তা হলো এইঃ

তার নাম শিকদার মিয়া। বাড়ি দিনাজপুরে। দুই বছর আগে কাজের খোঁজে পরিবার নিয়ে ঢাকায় এসেছিলো। স্ত্রী, আর এক পুত্র যার নাম ইসমাইল। এক বছর আগে এক রাতে রমনার দিকে যাবে বলে পরিবারকে নিয়ে পুরনো পল্টন থেকে রিকশায় উঠেছিলো। কাকরাইলের কাছাকাছি এসে রিকশাওয়ালা প্রস্রাব করবে বলে রিকশা থামিয়ে অনেকক্ষণ ধরে পেশাব করতে থাকলে সে মনঃস্থির করে বাকি পথটুকু তারা হেঁটেই যাবে। রাস্তাঘাট ফাঁকা আছে, এক্সিডেন্টের সম্ভাবনা তেমন নেই। তখন সে রিকশাওয়ালার ভাড়া মেটাতে গেলে ভাড়া নিয়ে রিকশাওয়ালার সাথে তার বচসা শুরু হয়। সেই ঝগড়া এক পর্যায়ে শারীরিক আক্রমণে রুপান্তরিত হলে রিকশাওয়ালা নিজের ডান পায়ের জুতা খুলে শিকদার মিয়ার বাম গাল বরাবর বসিয়ে দিলে ঘটনার আকস্মিকতায় শিকদার মিয়া প্রথমে স্তম্ভিত হয়ে যায়। কিন্তু পরিবারের সামনে এই বেইজ্জতি তার কাছে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য মনে না হলে সে এবারে রিকশাওয়ালার উপরে চড়াও হতে নেওয়া মাত্রই কোত্থেকে রিকশাওয়ালার পক্ষের একাধিক লোক এসে শিকদার মিয়াকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। তারা শুধুমাত্র শিকদার মিয়ার বাম গালে জুতা মেরেই ক্ষান্ত হয়না। শিকদার মিয়ার স্ত্রীকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করে অতঃপর শিকদার মিয়ার পুত্র ইসমাইলের বাম কানে কষে এক চড় দিলে ইসমাইল মাটিতে অচেতন পড়ে যায়। সমগ্র ঘটনাটি শিকদার মিয়াকে দীর্ঘদিন মানসিকভাবে আচ্ছন্ন করে রাখে। এরই মাঝে বাম কান বরাবর যেই প্রকান্ড চড়টি তার পুত্র ইসমাইল খেয়েছিলো তার ফলশ্রুতিতে সে বাম কানে আর কিছুই শোনেনা। অতঃপর শিকদার মিয়া এরকম একটি অদ্ভুট ঘটনা ঘটাতে নিজের কাছেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়।

শিকদার মিয়ার গণপিটুনীতে মৃত্যুর এই সংবাদ প্রত্যেকটি টিভি চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ হিসাবে প্রচারিত হয়। সেই শুক্রবারে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল কাকরাইলে অনেক রাত পর্যন্ত স্থানীয় মানুষের কাছে সংশ্লিষ্ট ঘটনাটি সম্পর্কে মতামত জানতে চায়। চ্যানেলগুলোর টিআরপি হু হু করে বাড়ে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্য প্রদান করেন যে কোন ধরণের সন্ত্রাস কি ন্যুইসেন্সের মূলোৎপাটনে এই সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আজকের এই ঘটনাটিই তার একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ। জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে।

পরবর্তী শুক্রবার থেকে কাকরাইল মসজিদে চিরাচরিত সেই পুরনো আমেজ ফিরে আসে। কিন্তু সেই বাস্তবতা মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লীদের ক্রমশ বিষণ্ণ করতে আরম্ভ করে। তারা ধীরে ধীরে উপলব্ধি করে শিকদার মিয়ার ছয় মাসের কান্ডকীর্তি মসজিদে তাদের যেভাবে একত্রিত করেছিলো, পারস্পরিক যেই হৃদ্যতার সম্পর্কে তারা কম বেশী প্রত্যেকেই উষ্ণতা অনুভব করেছিলো, গতানুগতিক একঘেঁয়ে জীবনের বাইরেও অন্য এক জগত, যার স্বাদ তারা আগে কখনো পায়নি সেই স্বাদ ক্রমশই তারা হারাতে শুরু করেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ৩:২৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাইনারি চিন্তাভাবনা থেকে মুক্তি: পূর্ণাঙ্গ তুলনার ধারণা এবং এর গুরুত্ব

লিখেছেন মি. বিকেল, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩০



সাধারণত নির্দিষ্ট কোন বস্তু যা শুধুমাত্র পৃথিবীতে একটি বিদ্যমান তার তুলনা কারো সাথে করা যায় না। সেটিকে তুলনা করে বলা যায় না যে, এটা খারাপ বা ভালো। তুলনা তখন আসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×