অনলাইনে প্রায় একমাস কথা বলার পরে সে একদিন হঠাৎ করে তার আইডি ডিসেবল করে দেয়। আমার তার প্রতি যে ইন্টারেস্ট ছিল সেরকম কিছু না। কথা বলতে ভালে লাগতো তাই কথা বলতাম আর হঠাৎ করে একজন মানুষ উধাও হয়ে গেল, কোন সমস্যা হয়েছে হয়তো। তাই কয়েকদিন পরে তার নামবারে ফোন দিলাম, খোঁজ খবর নিয়ে ফোন রাখলাম। তার পাঁচ পর তার নাম্বার থেকে আমার নাম্বারে ফোন আসল। সে আমাকে প্রপোজ করল, আমি তাকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম আমি ভালোবাসার মধ্যে আবদ্ধ থাকতে পারি না। সে আমার কাছে উল্টা ভয় দেখাল আমাকে বিয়ে না করতে পারলে সে আর কাউকে বিয়ে করবে না। তার বুঝানোর ক্ষমতা আছে বেশ ভালো। অনেক রকমের অনেক যুক্তি দাড় করাবে তার উদ্দেশ্য সফল করতে। সেদিন সে আমাকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিল যে সে দায়িত্বশীল মানুষ। সে সব ভয়ের মধ্যে সাহস যোগাতে পেরেছিল।
তারপর দুইজনের ভালোবাসাবাসি। কিন্তু দুইজনের মধ্যে অনেক ব্যবধান থাকার পরেও মনে হয়েছে যেন এটাই আসলে সত্য ভালোবাসা। তাকে ছাড়ার জন্য বন্ধু-বান্ধব মন্ত্রণা দিতো তাই তাদেরকেই ছেড়ে দিলাম। বলে রাখা ভাল, সে অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। তাই এই পর্যন্ত তার সাথে সরাসরি দেখা হয়নি। কিন্তু ভিডিও কলে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা হয়েছে। তার সাথে কথা বলে ফোনে কথা বলার সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছি। আহা, এর চেয়ে আর কোন প্রেম কি সত্য হতে পারে! সে আমাকে গিফট পাঠাল, আমিও তার জন্য গিফট পাঠালাম। এই প্রেম কি কখনো ভাঙতে পারে!
কিছুদিন পরে জানতে পারলাম তার নাকি অনেক বছর আগে বিয়ে হয়েছিল। সে নাকি ঐ মেয়েচার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল কিন্তু তাকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে কিনেতু সে মেনে নেয়নি। সেটা ঘটেছিল তার অস্ট্রেলিয়া আসার আগের দিন। সেদিন যদি সে বিয়ে না করতো তাকে নাকি মেরে ফেলা হতো। তারপর আমার মনে একটা প্রশ্ন জেগেছিল যে কারো প্রতি অন্যায় করছি কিনা। কিন্তু ভালোবাসার খাতিরে আমি সেটা তাকে কঠিনভাবে কখনো জিজ্ঞাসাবাদ করিনি। তারপর তার পরিবারের কাছে নাকি আমি প্রসংশিত হয়েছিলাম। আমি নাকি আসলেই তাকে ভালোবাসি। এতো বড় সম্মান আমি কোথায় রাখি!
আমার অনুসন্ধানী মন যতই জানতে চাক তাকে আর জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবেনা। কত পথই হয়তো ছিল অনুসন্ধান করার কিন্তু তেমন কিছুই করিনি। মনে মনে আল্লাহর কাছে চেয়েছি যেটা ভালো হয় সেটাই যেন করে আল্লাহ কারণ কার ভুল সেটা আমি জানি না।
তবে তার দূরে সরে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করেও আমি পারছিলাম না। আমার ভালোবাসার দিক আর তার চেষ্টা ভালোভাবেই আমার বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছিল।
দিন যাচ্ছে, ভালোবাসা যেন গভীর থেকে গভীরতম হচ্ছে। এই গভীরতার যে শেষ আছে ভালোবাসা জানতো না।
কিছুদিন আগে আবার আমাকে সে বুঝাল, আমিও বুঝলাম। কিন্তু এবারের টা ছিল অন্যরকম। তার অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব প্রয়োজন তাই তাকে অস্ট্রেলিয়ার কাউকে বিয়ে করতে হবে আর তাছাড়া তাকে অপেক্ষা করানো আমার উচিত হচ্ছে না। আমি আসলেই বুঝলাম তাকে তাকে অপেক্ষা করাচ্ছি আমার সুবিধার জন্য! আসলে আমার কখনোই উদ্দেশ্য ছিল না তাকে বিয়ে করে সুখি হওয়ার।
কাউকে দোষ দিচ্ছি না। আমরা যতই গলাবাজি করি আমরা একে অপরকে বুঝতে পারি, আসলে আমরা পারি না। কখনোই পারবো অন্যের জায়গায় নিজেকে দাড় করাতে। ভালো থাকুক সেই কামনাই করি।
সে বলেছিল তার নীলপদ্ম নিতে, নিয়েছি কিন্তু সে থাকেনি। আসলে নীলপদ্ম একটা ভুয়া জিনিস! নীলপদ্ম আমারও ছিল না তারও ছিল না।
ন্যায়-অন্যায়, ভুল-শুদ্ধ সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে যায় মানুষ যখন প্রেমে পরে। মানুষ তার ভালোবাসাকে সবকিছু দিয়ে হলেও রক্ষা করতে চায়। কিন্তু সেই ভালোবাসার মানুষগুলোই সময়মতো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমরাই ভুল ছিলাম।