somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্প -ফিরে আসা

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছয় বছর ধরে আয়াতের সাথে আমার সম্পর্ক, আমরা গোপনে বিয়েও করি । এ বছর পারিবারিক ভাবে আমাদের বিয়ে ঠিক হয়, বেশ কিছু দিন আগে আয়াতের আব্বু আম্মু এসে আমাকে আংটি পরিয়ে যান । কিন্তু কয়েকদিন থেকে দেখছি আয়াত আমার সাথে ঠিক মত কথা বলছে না । কেমন যেন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে । জিগ্যেস করলামঃ

-আয়াত কি হইছে ? তুমি কি আমার উপর কোন কারণে রাগ ?
নাহ !
-তাহলে এড়িয়ে চলছো কেন আমায় ?
কই এড়িয়ে চলছি । আমিই তো তোমাকে কল করেছি তাই না ?
-কল করেছো ঠিক আছে ! কিন্তু তুমি চুপ চাপ কেন ?
কই চুপ চাপ আমি ঠিক আছি !
-না তুমি ঠিক নাই ! কিছু একটা লোকাচ্ছ তুমি আমার কাছে, আমি বুঝতে পারি ।
কিছু'ই লুকাচ্ছি না আমি ।
-প্লীজ বলবে কি হইছে ?
আসলে অদিতি তুমি ঠিক'ই ধরেছো ! বাসায় কালকে অনেক ঝগড়া হইছে।তোমার আমার বিষয় নিয়ে । আমার পরিবার আরও সময় চাচ্ছে । মানে আমাদের বিয়ে আরও দুই বছর পর...

আয়াতের কথার মধ্যে অন্যরকম আভাস। অদিতি বুঝতে পারছে আয়াত তাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে না । অদিতি আয়াতকে প্রশ্ন করেঃ
-তুমি কি বলেছ উনাদের ?
অদিতি আমি আমার পরিবারের অমতে কিছু করতে পারবো না !
-কিছু ই যদি করতে না পারো আমার জীবনের ছয়টি বছর ফিরিয়ে দাও !
শুনো অদিতি বাবা মায়ের আশীর্বাদ ছাড়া বিয়ে করলে সুখী হওয়া যায়না ।
-তাহলে আমরা যে গোপনে বিয়ে করেছি ?
-তখন মনে ছিল না এই সব কথা ?
-সে দিন কোথায় ছিল তোমার নীতি বাক্য ?
-এখন তোমার কাছে পরিবার বড় ! আমি কেউ না ?
-আমি তোমার পরিবারের একজন না ?
হুট করে লাইন কেটে দেয় আয়াত ।
অদিতি অনেক কল দেয় কিন্তু আয়াত মোবাইল অফফ করে রাখে।

এক সময় অদিতি পাগলের মত হয়ে যায় ...
সব কিছু ই তো ঠিক ছিল হুট করে কেন এমন হল ?
আয়াতের আব্বু আম্মু তো আমাকে অনেক পচন্দ করতো !
কিন্তু কেন আয়াত এমন করলো ?
অদিতি আয়াতের কাছের এক বন্ধু কে কল করে জানতে পারে ,
আয়াতের দু'বোন বিয়েতে রাজি না , তারা অদিতিকে কে পচন্দ না ।
মূলত তারাই আয়াতকে অদিতির নামে উল্টা পাল্টা বুঝিয়েছে ।

মুহূর্তের মধ্যে ছয় বছর ধরে তিল তিল করে গড়া ভালোবাসার সুন্দর বাগান শেষ । খুব যত্ন করে বুকে লালন করা স্বপ্নের মৃত্যু ।
কিন্তু কেন ? কেন আমরা এমন ভুল করি ?
সম্পর্ক কি কোন ছেলে খেলা ?
ইচ্ছে হলে ইট বালি দিয়ে খেলাঘর বানাবো,
আবার ভালো না লাগলে ভেঙ্গে ফেলব ?
কিন্তু একটি মেয়ের জীবনে যে দাগ পড়ে যায় ! বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার মত একটা "দাগ" হয়তো একটি ছেলে খুব সহজে ভুলে যেতে পারে।কিন্তু একটি মেয়ে কখনো ভুলতে পারে না।, আমাদের সমাজ একটি মেয়ে কে ভুলতে দেয় না । বার বার আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় " তোমার জীবনের বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার মত একটা "দাগ" আছে ।তোমার জীবনে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার মত একটা গল্প আছে।

তার পর আর ছয় -সাত মাস আয়াত আর অদিতির যোগাযোগ হয়নি। একদিন সন্ধায় অদিতিদের বাড়ীতে আয়াতের আব্বু আম্মু । দরজা খুলেই অদিতি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তার পর আয়াতের আব্বু আম্মু কে সালাম করে সে ভেতরে চলে যায়।অদিতির আব্বু আম্মু এসে উনাদের সাথে কথা বলছেন। উনারা এসেছেন বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে। অদিতি আড়াল থেকে সব শুনছে। খুব ইচ্ছে হচ্ছে আয়াতকে কল করতে। কিন্তু সে মোবাইল হাতে নিচ্ছে কল দিচ্ছে না। হুট করে আয়াতের কলে চমকে উঠে অদিতি... কাপা কাপা হাতে কল রিসিভ করে...

হ্যালো...অদিতি
-জি বলুন
ভুলে গেছো আমাকে?
-হ্যাঁ ভুলে গেছি
সত্যি?
-সত্যি না তো কি ?
তুমি মিথ্যে বলছো।
-মিথ্যে হলে তাহলে সত্যি টা কি শুনি ?
সত্য হচ্ছে আমি তোমাকে যে ভাবে মিসস করেছি
তুমিও আমাকে ঠিক এর থেকে একটু বেশী মিসস করেছো।
-জিনা আমি কাউকে একটু মিসস করিনি।
তোমার জিনা এর ভেতোর যে জি হ্যাঁ লুকিয়ে আছে আমি বুঝি।
-আপনি বুঝেন কচু ! বুঝলে আমার সাথে কথা না বলে এতোদিন থাকতে পারতেন না।

মাঝে মাঝে ভেতরের ভালোবাসাকে জাগিয়ে তুলতে হলেও দূরে যেতে হয়! এই ছয়টি মাসে আমি বুঝতে পেরেছি। তোমাকে ছাড়া আমার জীবনটাই অর্থহীন। একটি মুহুর্তের জন্যও তোমাকে ভুলতে পারিনি। প্রতিটি সময় আমার শুন্যতায় কেটেছে। বাসায় কারো সাথে ঠিক মত কথা বলতাম না। খাওয়া দাওয়া করতাম না। তার পর একদিন আব্বু আম্মু আমাকে ডেকে বলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে তারা তোমাদের বাসায় আসবে। মুহুর্তের মধ্যে আমি ভুলে গিয়েছি এই ছয় মাসের সব কষ্ট যন্ত্রনা ! আমি আব্বু আম্মু কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ছিলাম সেদিন। তোমাকে কত টা পাগলের মত ভালোবাসি আমি এই ছয় মাসে বুঝতে পেরেছি। অদিতি অনেক ভালোবাসি তোমায় ।

তার কিছুদিন পর আয়াত অদিতির বিয়ে হয়। তাদের বিয়ের তিন বছর চলছে। ঘর আলো করে এসেছে দুটি কন্যাসন্তান । এখন তারা অনেক সুখে আছে...


সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৫৯
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×