মফস্বল শহরগুলোর রং বদলে যাচ্ছে দ্রুত। শৈশবে লোডশেডিং ছিলো নিত্যনৈমিত্তিক কিছু। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে এর একটি যোগসুত্র ছিলো। এখন হাতে হাতে মোবাইল আসাতে সেটা কমছে, তবে বাল্যবিবাহের মতো বিষয় ঘটছে প্রকাশ্যেই। যারা এই বাল্যবিবাহ রুখবেন তাঁরাই এর আয়োজক।
চ্যায়ারম্যান সাহেবের ছেলের হবু বৌ এর বয়স চৌদ্দ। ছেলেটা নর্থসাউথে পড়েছে, ধার্মিক মানুষ। আমার ওখানে ইন্টার্নির জন্য আবেদন করেছিলো। হয়তো কোরোনার প্রকোপ কমলে হয়ে যাবে। সে ছেলে কেন এ বিয়েতে রাজি হচ্ছে সেটা কস্টকর। শোনা যাচ্ছে এমপি সাহেবও বিয়ের দাওয়াত খেতে আসবেন। বাবা যেতে চাচ্ছেন না।
সে আমার ঘরে বসে অরুন্ধতি রায়ের বইটা উল্টে পাল্টে দেখছেন,”মেয়েটা এন্টি এস্টাবলিস্ট না বাম পন্থি?” আমি মিট মিট হাসলাম,”সে তার মাকে অনুসরন করে। মধ্যপ্রাচ্যে সংখ্যালঘুর ঘরের এক মায়ের সন্তান হিসেবে সে দেখতে পেলো গনতান্ত্রিক শাসনব্যাবস্থায় কিভাবে শ্রেনীবৈষম্যের সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা মিশে আছে তখনই সে তার মায়ের কথা গুলোই বলছে।” বাবার হাতের বইটা অবশ্য কাশ্মীর ও গুজরাটের ইস্যু নিয়ে বর্তমান ভারতের ধনী রাস্ট্রের সলুক সন্ধান করা হয়েছে, তবে আমি নিশ্চিত বাবা এ বই নিয়ে কথা বলতে আসেননি।
“বাবা, মনে আছে একবার পূজোর ছুটিতে ১০ টাকা চেয়েছিলাম খেলনা কেনার জন্যে? তুমি বলেছিলাম দূর্গার একটি মূর্তি আনতে। মা সেটা নিয়ে কি হৈ চৈ টাই না করলো।” বাবা মিস্টি করে হাসি দিয়ে সোফায় বসলেন,” তুমি কি সত্যি মা কে রাগাবার জন্য চেয়েছিলে?”
আমি অবশ্য উত্তরটা জানি,” তোর মা হুট করে আমাকে একটা জায়নামাজ কিনে দিলো। বাসায় দুটো জায়নামাজ আছে তারপরও ২৫০০ টাকা দিয়ে ইরানের মোটা জায়নামাজ কিনে আনলো। আত্তাহিয়াতু কায়দায় বসতে বসতে হাটুতে, পাতায় কহর জমেছিলো। বেটনোভেট লাগিয়েও সুফল পাচ্ছিলাম না। এখন নামাজ তো বন্ধ করতে পারি না। কিন্তু এই বাহুল্য খরচের দরকার ছিলো না, আর মসজিদে এত মোটা জায়নামাজ নিয়েও যাওয়া যায় না। তারপরও শুধু এতগুলো টাকা গচ্চা।” আমি প্রত্যুত্তরে যোগ করলাম,”তুমি কিন্তু নিজেই সেদিন আমার সাথে গিয়েছিলে। আমরা অনেক কিছু কিনেছিলাম কিন্তু তুমি দূর্গার মূর্তি কেনোনি। অথচ কেনো কিনিনি সেটা নিয়েও মায়ের কি রাগ! আমাকে তো বলেই বসলো, আমার কথার কোনো দাম নেই!”
বাবার পাশে গিয়ে বসলাম,”বিয়েতে তুমি না গেলেও ওটা থামানো যাবে না। সবচে ভালো হয় জহির আংকেলকে ফোন করো। তাকে নিয়ে বিয়ে বাড়িতে যাও। ইউএনও হিসেবে সে যদি নিজ থেকে থামানোর উদ্যোগ নেয় তাহলে দেখবে ব্যাপারটা প্রকাশ্যে রাজনৈতিক ইস্যু হবে না।” কথাটা শুনে তার গোমড়া মুখে একটা হাসির ঝিলিক দিলো। মাথায় হাত বুলিয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
আজকের সকালটা একটু বিষন্ন। দূর থেকে হিন্দি গানের আওয়াজ। শুনেছি ঢাকা থেকে ডিজে আসবে রাতে। একসময় বিয়ে বাড়ি মানে প্যান্ডেলের গান, সেই চেনা সুরের সাথে ব্যান্ডপার্টির আশেপাশে ঘিরে থাকা শিশু মাঝবয়সীদের নাচ একটু নস্টালজিক করে। কাঁচা রাস্তা হেটে পুরো এলাকা হেটে যাওয়া নৃত্যরত শিশুদের দল পুরো গ্রামবাসীকে জানিয়ে দেয় বিয়ের উত্সবে শরীক হবার।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৫৪