হিংসার চাষে স্বতঃস্ফূর্ততা আছে।মানুষের মনে তার যাতায়াত সাবলীল। এমন যাতায়াতের জন্য প্রয়োজন হয় না কোনো আমন্ত্রনপত্র, ক্রোড়পত্র অথবা সামান্য আকুতি মিনতি। মানুষের মনে হিংসার ক্ষুধা সবসময়ই ছিলো, আছে, থাকবে। তাই বলে একে মেনে নেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কোনো একদিন পুরো জাতী, গোত্র আত্মঘাতী হয়ে যায়।
প্রচন্ড গরমে অনেক সাপের মাথায় এমন কিছু ঘটে যা ব্যাখ্যাতীত। সে নিজের লেজ কামড়াতে শুরু করে। ওরাবোরাস নামের এই প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা খুব একটা জানা যায়নি তবে বিশ্বের নানা সাহিত্যিক রূপকে এসেছে। যদিও কোনো সাপকে নিজের লেজ কামড়ে খেয়ে মরে যেতে হয়নি। তাদের কামড়ে খাওয়াটা প্রানসংহারী নয়,শুধু কামড়ে বসে থাকা। কিছু কিছু প্রানী তো সত্যি সত্যি আত্মহত্যা করে। মানুষের মধ্যে এমন আত্মঘাতী বা অরাবোরাস চরিত্রটি দেখা যায়নি। তবে তারা যুদ্ধের নামে, দাঙ্গা বা মবলিঞ্চিংয়ের নামে নিজেদেরকেই হত্যা করছে। হত্যা খুনের এই শৈল্পিক কার্যক্রম চলছে হাজার বছর ধরে।
ধর্মবিশ্বাস কখনো পন্য হবে সেটাও ভাবিনি। মানুষের ব্যাক্তিগত ব্যাপার যখন অন্য মানুষের ক্ষতির কারন হয় তখন সাপের সাথে আমাদের একটা পার্থক্য হয়ে যায়। সাপ নিজেকে কামড়ে ধরে মাথার সমস্যা দেখা দিলে, আমরা নিজেদের ধ্বংস করি হিংসার চাষের আদলে। আজ কুস্টিয়াতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য গুড়িয়ে দিয়েছে। দুজন লোকের এ কর্ম সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে।
ছবি সৌজন্যে: বিডি নিউজ ২৪। এখানে দুজন মাদ্রাসাছাত্রকে দেখা যাচ্ছে
ছবি সৌজন্যে: বিডিনিউজ২৪। ভাস্কর্য ভাঙ্গাতে মাদ্রাসার ছাত্রদের সরাসরি অংশগ্রহন
মূখ্য নয় যে ভাস্কর্য আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় না ক্ষতিকর, এটাও মূখ্য নয় যে মানুষের ব্যাক্তি বিশ্বাসে এটা হারাম না হালাল। মূখ্য হলো উভয়ের হিংসার চাষে রাস্তায় কত রক্ত ঝরবে এবং দেশের পরিস্থিতি কতটা খারাপ হবে। মূখ্য এটাই যে বাংলাদেশের রাজনীতি যেদিকেই মোড় নিক, বিরোধীপক্ষের নামে প্রত্যেকে কতটা নির্যাতনের স্বীকার হবে। আমরা মুসলমান হবার কারনে নিরাপদ সেটাও ভুল। যদি ক্বওমী পক্ষ ক্ষমতায় আসে, তাহলে সুফিদের ঘাড়ে বিদায়াতের নামে কোপ পড়বে। চরমোনাই চড়াও হবে দেওয়ানবাগীর ওপর, নামাজে আমিন কেন জোড়ে বললাম, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধাচারন কেন করলাম অথবা কিছুই করিনি, শাতিমে রাসূলের গুজবে আমাকে কতল যে কেউ পুড়িয়ে ফেলতে পারে। শাতিমে রাসূলের ফতোয়া তো এটাই।
অথচ আমাদের দেশের শহীদ মিনার, স্বাধীনতার ভাস্কর্য, বুদ্ধ মন্দির, লালনের মাজার কারো কোনো ক্ষতি করছে না। কারন এতদিন এসব নিয়ে কারো মাথাব্যাথা ছিলো না। এখন হিংসা বাসা বাধছে, আমরা সহিংস পথে জান্নাতের হুর খুজি!
এদিকে ছোট বেলার প্রিয় বন্ধু রাহুলের বাসায় গিয়ে বলতে পারি না:
সবাই কেমন আছেন?
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০৫