দাদু গানে পারদর্শী ছিলেন। দাবা খেলাতে ডিস্ট্রিক্ট চ্যাম্পিয়ন। পরিবার থেকেই সবাই এতটা উৎসাহ দিয়েছিলো টাকা খরচা করে বিলাত পাঠাতে প্রস্তুত। একদিন কি মনে করে দাদাজান জুম্মার নামাজ পড়ে এসে দাবা বোর্ড পুড়িয়ে ফেললেন। যখন দাবা বোর্ড পুড়ে যাচ্ছিলো উনি চুপচাপ কাঁদছিলেন। বাবা এই গল্পটা মাঝে মাঝেই বলতেন। খুব চেয়েছিলেন আমি দাবা খেলি। দাবা খেলবার মতো ধৈর্য্য ও মেধা আমার কখনো ছিলো না। এসএসসি পাশ করতেই গলদঘর্ম সেখানে দাবা খেলতে চাওয়া নেহায়েত দুঃসাহস।
রাতের বেলা ঢাকা আমার কাছে অসাধারন লাগে। চারিদিকে রাস্তা ফাঁকা, নিশ্চুপ। হঠাৎ দু একটা দূরপাল্লার গাড়ি শা করে চলে যায়। কুকুর গুলো ফুটপাতে মানুষের সাথে শুয়ে থাকে। দারিদ্রতা মানুষের সাথে পশুর দূরত্ব মিটিয়ে দেয়। প্রকৃতির খুব কাছে থেকে বাঁচতে শেখে তারা। প্রকৃতির কাছে তারা যতটা নিরাপদ, স্বপ্রজাতীর মানুষের কাছ থেকে ততটাই অনিরাপদ। পার্কে শুয়ে থাকা ছিন্নমূল নারীরা জানে না তাকে রাতে কে বা কারা ধর্ষন করে। নেশাগ্রস্থ ছিনতাইকারী পেটে চাকু মেরে শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিয়ে যায়। অথচ মানুষটি শেষ নিঃশ্বাস ফেলবার আগ পর্যন্ত জানতে পারে না তাকে কে হত্যা করলো। তার কিছু শেষ ইচ্ছা ছিলো, সেটাও পূরন হলো না। একটা মানুষ একটা ইতিহাস। এভাবে কত ইতিহাস রাস্তায় হারিয়ে যায়, এসবের হিসাব কোনো প্রতিষ্ঠানের খাতা কলমেও লেখা থাকে না, আন্জ্ঞুমানে মুফিদুলের ব্যাবস্থায় নামহীন কবরেই সে হারিয়ে যায়।
অথচ ঢাকা শহরেই আছে লক্ষাধিক মসজিদ। খালি পড়ে থাকে পুরো রাত। শুধু ৫ ওয়াক্তের নামাজের জন্য খোলা হয় এসব মসজিদের দরজা। এসব মসজিদের প্রাসাদোপম জেল্লায় খচিত আল্লাহর ৯৯ টা নাম। আমি কোরান হাদিসে কোথাও পাইনি আল্লাহর ঘরে গৃহহীন মানুষেরা আশ্রয় নিতে পারবে না। বরংচ যুদ্ধাহত আনসাররা আশ্রয় নিতো মসজিদে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ যৌবনে বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত মসজিদেই থেকেছেন। আবু হুরায়রা রাঃ তো জীবনের অধিকাংশ সময় গৃহহীন ছিলেন। তখন মসজিদে আশ্রয় নিতেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ একবার এক গৃহহীন দাসীকে মসজিদের পাশেই ঘর বানিয়ে থাকতে দিলেন। অথচ ঢাকা শহরের লক্ষাধিক মসজিদ থাকা সত্বেও কত গৃহহীন মানুষ, পাছে না তারা মসজিদ অপবিত্র করে ফেলে। মানুষের জীবনের চাইতে মসজিদের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা খুব দামি যে!
আমার দাবা না খেলার আরেকটা কারন ছিলো। দাদাজান বেঁচে থাকতে বলেছিলেন ইসলামে দাবা খেলা হারাম। কোরানেই এর বর্ননা আছে। আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, তিনিই ন্যায়বিচারক।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:০৬