বারে যাওয়া মানেই মদ খাওয়া, এটাই ধারনা ছিলো। এলিনা শুনেই হেসে বলে উঠলো, বারে ননএলকোহলিক ড্রিংকও আছে। আমার গড়িমসি অনেক কিছুই নিয়েই। নিজেকে প্রাকটিসিং মুসলিম বলতে পারি না। বিশ্বাসটা জোড়ালো না থাকায় ৫ ওয়াক্ত নামাজ আর মৌসুমী রোজা ছাড়া তেমন কিছু পালন করা হয় না। মুসাফির হবার পরও পুরো নামাজটা পড়ার চেষ্টা ছিলো, এখন সেটাও কাজের চাপে ছুটে গেছে। মন টানছে না, টিকিট কাটার কথা বলতেই অফিসের সবাই বেশ মন মড়া হলো। বললো একদিন জমসে গিটারে বাংলা শুনিয়ে যেতে হবে। উল্লেখ্য আমার একটা শখের ভেন্ডার স্ট্রাটোকাস্টার আছে। এখানে এসে আরও একটা কিনেছি।
সবার টানাটানিতে আর ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। এখানে নাকি বারে ঢোকার আগে রিজার্ভেশন দিতে হয়। রেস্টুরেন্ট, বার ব্যাবসা রাশিয়াতে কোরোনার মধ্যেও এতটা জমজমাট ভাবতে অবাক লাগে। বলা যায় স্পন্দিত এক শহর আমাকে শিহরিত করে, উদ্বেলিত করে। এলিনা হাত ছাড়বে না, এমনভাবে ধরেছিলো হাতের রক্ত জমাট বেধে যায়। ওর হাসি দেখলেই কেমন যেন মনে হয়। সাবধান কিন্তু এরা হাসিতে ভোলায়, ধরা দেবে না। অদ্ভুত কুহেলিকা যার প্রতিটা ছন্দে সেখানে বেশিদিন না থাকাই ভালো। বিশাল লাইনে দাড়াতে হলো না, দীর্ঘকায় গার্ড আমাদের দেখেই ভেতরে সম্ভাষন জানালো। উচ্চস্বরের মিউজিকে চারিদিকের হল্লা হাটি ডুবে গেছে। প্রতিটা বিট শরীরে নাচন ধরাবেই, সে নাচনে হারাতে হবেই। রেডবুলের একটা ড্রিংক হাতে নিতেই এন্টনির সাথে দেখা। ও আমাদের মেইন সাপ্লাইয়ার, সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে কোয়ান্টাম ফিজিক্সে ব্যাচেলর করার পর আবার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হয়। রোহিঙ্গাদের কথা শুনতেই খুব সহজেই ডিজাইনগুলো পাশ করিয়ে দিলো। আমাদের অফিসে ওরই অভাব ছিলো।
: তুমি নাকি দেশে ফিরছো?
: আরে, খবর তো দেখি পুরোনো হয়ে গেলো।
: আসল খবর কি জানো?
: আমরা কি চাঁদে যাচ্ছি?
: বন্ধু, চাঁদের খবর জানি না, তবে এলিনা বাংলাদেশের ভিসার এপ্লাই করেছে।
একটু অবাক হলাম। ভাষানচরের প্রজেক্টের ছবিগুলো আহামরি ছিলো না। সবুজের সমারোহ অনুপস্থিত হলেও সারি সারি ঘর আর সুবিন্যাস্ত শহরের চাইতে হাজার গুন সুন্দর নভগারাদের মফস্বল শহর। দূরে ডিস্কোর তালে তালে নাতালির উন্মাতাল নাচের মাঝেও ওর শ্যেনদৃষ্টি চোখ এড়ায়নি।
দিন গুলো খুব দ্রূত চলে গেলো। কাজ গুছিয়ে আনতে দেখি আমি সত্যিকারার্থেই অলস। রিপোর্টের কোনো কিছুই গোছানো ছিলো না, লিগ্যাল টিমসের কাগজগুলো পড়েছিলো যেগুলো অর্ধেকই মাথার ওপর দিয়ে গেলো। খুব শখ ছিলো একটা বিএমডব্লিউ কেনার। বাংলাদেশি লাইসেন্সেই কাজ হতো কিন্তু নিয়ে তো যেতে পারবো না। দিনটি ছিলো রবিবার, বেলা ১ টায় ফ্লাইট। সকাল ৮ টা বাজতেই কলিংবেলে ধুম ধুম বোতাম চাপা হচ্ছে। দরজা খুলতেই দেখি এই হিম ঠান্ডায় নাতালি শাড়ি পড়ে। কপালে আবার সিদুর পড়েছে। সিদুরের মানে বলতেই লজ্জায় লাল। গিফট এনেছে সাথে একটা অদ্ভুত খবর, বাংলাদেশের ভিসা দিয়েছে আগামী ৫ বছরের জন্য। পরের দিন ভিসাটা তুলেই দেশে আসতে চায়।
ওর চোখে তাকিয়ে আমি ভাবলাম কিছু জিজ্ঞেস করলেই বিপদে পড়তে হবে। তাহলে কি বলবো? আনন্দিত না বিস্মিত!
কিছু তো বলতেই হবে, একটা কিছু.............
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৫৯