somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সহজ ভাষায়ঃ কপি-পেস্ট দোষের কেন [একটি গল্প ফাও]

১৩ ই জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একটা গল্প বলিঃ ৯০ এর দশকের কোন এক সময় হবে, তখনকার। গ্রামের নাম নীলগন্জ। ঢাকা থেকে অল্প দূরে -- ধরা যাক ২৫ কি ৫০ কিলোমিটার হবে -- ছোট একটা গ্রাম। গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িঘর মাটির; কিছু ছনের, কাঠের, টিনের, দু' একটা দুই রুমের বাসা ইটের তৈরী তাও আবার টিনের চালা। গ্রামের সবচেয়ে বড় বাড়িটা চেয়ারম্যানের ইট, কাঠ আর টিনের চালায় তৈরী।

হঠাৎ কোন এক সকালে দিনের কাজ কর্মে বের হয়েছে যখন সবাই, লোকজন দেখলো গ্রামের মাটির রাস্তা দিয়ে একটা ট্রাক ইট নিয়ে ফেলছে চেয়ারম্যানের বাড়ির দুই ক্ষেত পরে এক জমিতে। গত মৌসুমেও ঐ জমিতে ধান হয়েছে, এবার ওটা ফাকা পরে ছিল। এই গ্রামে ট্রাকে করে ইট আসা মানে বিরাট বিষয়। ইটের পরপর আরো নির্মান সামগ্রী আসটে লাগলো।

দেখতে দেখতে ঐ জমিতে বিরাট একটা বাড়ি হয়ে গেল। বাড়ির উপরে পানির ট্যাংকি; সেই পানি পাইপ হয়ে রান্নার ঘরে, গোসলখানায়, শৌচাগারে, বাগানে যাবে। বাড়ির ফার্নিচার আসলো; আসলো সোফা, টিভি, ফ্রিজ। সেই বাড়িতে লোক থাকা শুরু করলো কিছুদিনের ভেতর। তাদের একটা লাল রঙএর গাড়ি ছিল, সম্ভবত নিসান সানি। ঐ বাড়িতে লোকজন যেতনা খুব একটা, ঐ বাড়ির লোকজন বাইরের মানুষের সাথে মিশতোওনা। ছোট ছেলেপেলেরা বাড়িটা এড়িয়ে চলতো কারণ ঐ বাড়িতে দুটো কুকুর ছিলো।

বাড়ির মালিক করিম সাহেব। তার সম্পর্কে কেউ খুব ভালো করে কিছু জানেনা। তবে কয়েক বছর পর এর মুখে ওর মুখে জানা গেল করিম সাহেব কোন এক সরকারী প্রতিষ্ঠানে ৪র্থ শ্রেনীর একজন কর্মচারী এবং ওনার বাসাবাড়ি, গাড়ি, কুকুর সবই ঘুষের টাকায়। করিম সাহেবের হয়ত লজ্জা ছিলো তিনি নিজেকে কিছুটা লুকিয়ে রাখতেন, হয়তবা ঘুষের বিষয়টার জন্যই। কিন্তু, সময় পাল্টেছে। ঘুষ দেয়া-নেয়া এখন আর লজ্জার কোনো বিষয় নয়, ঘুষের টাকায় করা বাড়ি, ঘুষের টাকায় গড়া ভুঁড়ী এখন খুব নরমাল। সময়ের সাথে সাথে ঘুষ নেয়া-দেয়ার মত একটা অপরাধকে স্বাভাবিকিকরণ করা হয়েছে।

এই গল্পের সাথে "কপি-পেস্ট"এর সম্পর্ক কী? সম্পর্ক আছে। মন্দকে, অন্যায়কে মেনে নিলে সেই অন্যায় প্রতিষ্ঠা পায় সমাজে, আমাদের জীবণে। কপি-পেস্ট বিষয়টা যে একটা অন্যায় এটা স্বীকার না করলে, এটাকে অন্যায় বলে নিরুৎসাহিত না করলে অন্যায়টিই একসময় মূল ধারায় মিশে যাবে।

এখন কথা কপি-পেস্ট অন্যায় কেন? অন্যের লেখা ভালো লেগেছে তাই ব্লগে পোস্ট করেছি সমস্যাটা কোথায়? ১০ টা লেখা থেকে এক প্যারাগ্রাফ করে নিয়ে সম্পাদনা করেছি, ভুল কোথায় হলো? বইয়ে লেখা আছে সেটা ব্লগে টাইপ করেছি; কষ্ট করে টাইপ করেছিতো!!

ছোট একটা প্রশ্ন করি। ধরুণ আপনি বিয়ে করলেন, আপনার বাচ্চা হলো, বাচ্চা ইসকুলে যায়। একদিন বাচ্চাকে ইসকুল থেকে আনতে গিয়ে দেখেন আপনার পাড়ার কিবরিয়া সাহেব আপনার বাচ্চাকে নিজের বাচ্চা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। কেমন লাগবে বিষয়টা বলুনতো? আপনি যার লেখা কপি-পেস্ট করছেন সেই লেখাটা অন্য কারো সৃষ্টি আর সৃষ্টি সন্তানের মত, ওখানে আপনার কোনো অধিকার নেই!

হ্যাঁ, বাচ্চার উদাহরণটা সরলীকরণ করা হয়েছে, কিন্তু মূল বিষয়টা হয়ত অনেকে বুঝতে পেরেছেন। লেখালেখিতে তথ্য বিভিন্ন জায়গা থেকে নিতে হয়। যদি কোন তথ্য নেয়া হয়, তবে সেই তথ্যসূত্র উল্লেখ করা একজন ব্লগার হিসেবে, লেখক হিসেবে, মানুষ হিসেবে আপনার নৈতিক দায়িত্ব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ব্লগে নিজের নামে পোস্ট করলে, ঠাকুর বাবু পরোকাল থেকে এসে আপনার নামে হয়ত মামলা ঠুকবেননা, আদতে সেটা তাঁর পক্ষে করা সম্ভব হবেনা। কিন্তু, আপনার নৈতিক জায়গা থেকে কাজটা করা কী ঠিক হবে!

শেষ করার আগে দু'টো কথা। অনেকে বলছেন, কপি-পেস্ট বিষয়ে লেখালেখি ব্লগের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করছে, এটা একটা "ক্যাচাল" আর যারা এটা করছেন তারা ক্যাচাল করছেন। দুঃখিত, আপনারা অন্যায়টার মাত্রাই বুঝতে পারছেননা। একটা অন্যায়কে ধরিয়ে দেয়া, সেটা শোধরাতে বলা, সেটা নিয়ে প্রতিবাদ করা ক্যাচালহতে পারেনা।

অনেকে বলছেন, যাদের নিয়ে কথা হচ্ছে তারা পুরোনো ব্লগার, তারা ব্লগকে জমিয়ে রাখেন, অন্যের পোস্টে মন্তব্য করেন। তাদের ছাড়া ব্লগ ঝিমিয়ে পরবে... ... দুঃখিত, সামহোয়ারইন ব্লগ একটা প্রতিষ্ঠান; আর সামহোয়ারইনের মত প্রতিষ্ঠান কখনো ব্যক্তিনির্ভর হয়না।

সবার মঙল কামনায়...

-----------------------
আ.র.ইউ
দুপুর ১:২৯
১৩ জুন ২০২১
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৪৯
২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভাবছিলাম ২ লক্ষ ব্লগ হিট উপলক্ষে ব্লগে একটু ফান করব আড্ডা দিব, কিন্তু এক কুৎসিত অপব্লগার সেটা হতে দিলোনা।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৫



এটি ব্লগে আমার ২৬০ তম পোস্ট। এবং আজকে আমার ব্লগের মোট হিট ২০০০০০ পূর্ণ হয়েছে। আমি আনন্দিত।এই ছোট ছোট বিষয় গুলো সেলিব্রেট করা হয়তো ছেলে মানুষী। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্প: সম্পত্তি

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৪



গল্প:
সম্পত্তি

সাইয়িদ রফিকুল হক

আব্দুল জব্বার সাহেব মারা যাচ্ছেন। মানে, তিনি আজ-কাল-পরশু-তরশু’র মধ্যে মারা যাবেন। যেকোনো সময়ে তার মৃত্যু হতে পারে। এজন্য অবশ্য চূড়ান্তভাবে কোনো দিন-তারিখ ঠিক করা নেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শয়তান বন্দি থাকলে শয়তানি করে কে?

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২০



রমজানে নাকি শয়তানকে বেধে রাখা হয়,তাহলে শয়তানি করে কে?

বহুদিন পর পর ব্লগে আসি এটা এখন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বেশ কিছু বয়স্ক, মুরুব্বি, সম বয়সি,অল্প বয়সি একটিভ কিছু ব্লগার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কট বাঙালি

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:২৪



কদিন পরপরই আমাদের দেশে বয়কটের ঢল নামে । অবশ্য তাতে খুব একটা কাজ হয় না । বাঙালির জোশ বেশি দিন থাকে না । কোন কিছু নিয়েই বাঙালি কখনই একমত... ...বাকিটুকু পড়ুন

“রোজা” নিয়ে গবেষণা করে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন জাপানের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ‘ইউসোনরি ওসুমি’।

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১১:৫০




‘রোজা’ ফারসি শব্দ, আরবিতে ‘সওম’। ভারতের রাজনীতিতে ‘অনশন’। ইংরেজিতে ‘ফাস্ট’। কিন্তু মেডিকেলের পরিভাষায় রোজার কোনও নাম ছিল না ও মেডিকেল বই গুলোতে রোজা’র বিশেষ কিছু গুণাগুণও উল্লেখ ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×