somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পবিত্র ভোট: একটি ঐশ্বরিক কমেডি

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উপক্রমনিকা

রাজনীতির মহা থিয়েটারে একটি বিশেষ ধরনের রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব ঘটেছে। মিছিল সমাবেশে বিলি করা লিফলেটের মত এদের প্রতিশ্রুতির শেষ নেই। এই দলটি রাজনীতির চূড়ান্ত গোপন অস্ত্রটি আবিষ্কার করেতে পেরেছে: ধর্ম। আসলে যখন জনগনকে ঐশ্বরিকতার প্রলোভনে শান্ত রাখা যায় তখন স্বাস্থ্যসেবা বা শিক্ষার মতো সাধারণ বিষয়গুলি নিয়ে কে চিন্তা করে!

পবিত্র প্রচারণা

আমাদের গল্পের শুরু "পবিত্র পার্টি" দিয়ে; এদের স্লোগান হল “আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, এবং আপনিও করুন।” তাদের প্রচারণা সমাবেশগুলি লোকেলোকারণ্য, যেন এক বিশাল জনসভা, ভীর-আওয়াজ-ধর্মীয় সঙীত ইত্যাদিতে পরিপূর্ন। পার্টির নেতা, "আমীর পলিটিকো", সমবেত জনতাকে জানান তাদের দলকে দেয়া ভোটগুলি কেবল ভোট নয় বরং স্বয়ং ঈশ্বরকেই সমর্থন জানানো।

ঐশ্বরিক ইশতেহার

পবিত্র পার্টির ইশতেহারটি যেন ঈশ্বরপ্রদত্ত, ঠিক যেন ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণায় ভরা। এই ইশতেহারে স্কুলের চেয়ে উপাসনালয় স্থাপনের গুরুত্ব ও প্রতিশ্রুতি বেশি, কারণ পুথিঁগত বিদ্যার চেয়ে বিশ্বাসই সর্বোত্তম শিক্ষা। পবিত্র পার্টি সমস্ত সরকারি ছুটিকে ধর্মীয় উৎসবে প্রতিস্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এর ফলে জীবনের প্রতিটি দিনই, এমনকি ছুটির দিনটিও, একটি পবিত্র দিন হিসেবে পালন হয়ে যাবে। দলটির ইশতেহার কাজের সময় বাধ্যতামূলক প্রার্থনা বিরতি চালু করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে, কারণ কাজের ফলাফল কাজ করার উপরে নয় হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করার উপর নির্ভর করে।

অলৌকিক নীতিমালা

পবিত্র পার্টি বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসেছে। ক্ষমতায় আসার পর তারা তাদের ঐশ্বরিক নীতিগুলি বাস্তবায়নে একটুও সময় নষ্ট করেনি। তারা সরকারের প্রতিটি স্তরে, প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পবিত্র গ্রন্থের কসম খেয়ে শপথ নেওয়ার আইন পাস করেছে। ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাস কারো ভিন্ন হলেও তাকে পবিত্র গ্রন্থের নামে শপথ নিতে হবে। কোন বৈষম্য এক্ষেত্রে মেনে নেয়া হবেনা। তারা একটি অলৌকিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। এই মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে প্রকৃত অলৌকিক প্রকল্প-দাবী যেন সরকারি তহবিল পায় তা নিশ্চিত করা। এই মন্ত্রণালয় লৌকিক-অলৌকিক সব প্রকল্পকে অলৌকিকতার মানদন্ডে পর্যালোচনা, বিশ্লেষন, ও যাচাই-বাছাই করে, এবং শুধু অলৌকিক প্রকল্পগুলোকেই অর্থায়ন করে।

অপবিত্র বিরোধিতা

সবাই যে পবিত্র পার্টির ঐশ্বরিক শাসনে খুশি তা কিন্তু নয়। বাস্তবতাবাদী "মিস্টার রিজন" গড়ে তুলেছেন "ধর্মনিরপেক্ষ পার্টি"। তাদের বক্তব্য সরকারের উচিত পার্থিব বিষয়গুলির উপরও মনোনিবেশ করা। কিন্তু তাদের সমাবেশগুলিতে নেই তেমন চাকচিক্য, ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে আসা লোকের ভীড় নেই, নেই কোন ঐশ্বরিক চমক। তাই তাদের বক্তব্য, তাদের দাবী পবিত্র পার্টির সাথে প্রতিযোগিতায় ঠিক পেরে ওঠেনা। ঐশ্বরিক প্রতিশ্রুতি আর চিরন্তন পরিত্রাণের প্রচারণার সাথে পেরে ওঠা কঠিন। যুগ যুগ ধরে এটাই হয়ে এসেছে।

ঐশ্বরিক কমেডি

পবিত্র পার্টির শাসন অব্যাহত থাকে, ধর্মীয় উপসানলয়ের কাঠামো আর এবং রাষ্ট্রের কাঠামো ও দায়িত্বের মাঝে যে ফারাকটি আছে তা যেন ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে। পুরো রাষ্ট্রই যেন হয়ে উঠছে একটি ধরমীয় প্রতিষ্ঠান; একটি নির্দিষ্ট ধর্মের উপসানালয়। জনসাধারণের ভিন্নমত থাকার কোন সুযোগ থাকছেনা, বরং যেকোন বিষয়ের প্রয়োজনিয় বিতর্কগুলিকে ধর্মতাত্ত্বিক আলোচনায় প্রতিস্থাপিত করা হচ্ছে। দেশ পরিচালনার নীতি, সিদ্ধান্তগুলো ঐশ্বরিক ইচ্ছার কথা বলে তার ভিত্তিতে নেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ বলে, আশংকা করে, এভাবে চলতে থাকলে সমাজনীতি, অর্থনীতি, বিদেশনীতি সব শিগগিরই পরিণত হবে ধ্বংসস্তূপে। তবে পবিত্র পার্টি জনগণকে আশ্বস্ত করে যে বিশ্বাসের চেয়ে বড় কিছু নেই, ঐশ্বরিক ইচ্ছার বাইরে কিছু হতে পারেনা।

উপসংহার

অবশেষে, পবিত্র পার্টির এই ঐশ্বরিক কমেডি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ধর্ম মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে পারে, আমাদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারে, কিন্তু সাথে সাথে এটি একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এই নাটকটি যখন শেষ হচ্ছে, যখন এর পর্দা পরার সময় হয়েছে তখন কেউ কেউ, মনে মনে, হয়ত ভাবছেন, "রাজনীতির নাট্যশালায়, সত্যিই কি পবিত্র বলে কিছু আছে?"

নোটঃ বানান কিছু ভুল থাকতে পারে। পরে ঠিক করার চেষ্টা করবো।

ট্যাগঃ এক্সপেরিমেন্ট
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মায়ের শূন্যতা

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১৪ ই জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৯



যেদিন ভোরবেলা আব্বা মারা গেলেন, মা আমাদের চার ভাইকে মুরগির ছানার মতো বুকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। তার কান্নায় কেবল অসহায়ত্ব নয়, মিশে ছিল এক বুক গভীর শূন্যতা। বারবার বলছিলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের নিরাপত্তার আয়োজন কতটুকু?

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ১৪ ই জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৭



ভারত পাকিস্তান ও ইরান ইজরাইল সংঘাত যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার সামনে নিয়ে এসেছে। প্রথাগত সমরাস্ত্র আজ নতুন প্রযুক্তির কাছে খেলনায় পরিনত হয়েছে। বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান ও ঐতিহাসিক ভাবে প্রাপ্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।।এক রাতেই বদলে গেল হাসিনার ইতিহাসের গতি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০১



সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত সংবাদ সম্মেলন নিয়ে সারাদিন ধরে অপেক্ষায় ছিল গোটা দেশ। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজের আশা ছিল, আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে হয়তো কোনো ইতিবাচক বার্তা আসবে। কিন্তু রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবার তোরা মানুষ হ

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৪ ই জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৬


আবু সাইদের আত্মত্যাগ কি শুধু বৈষম্যহীন এক সমাজের স্বপ্ন দেখিয়েছিল, নাকি তা এখন নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টির এক ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে? জুলাই অভ্যুত্থানের সেই রক্তক্ষয়ী দিনগুলোর এক বছর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপির মুখে কেন জামাতবিরোধি শ্লোগান?

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১৪ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ৯:১১







নয়া পল্টন থেকে শাহবাগ অভিমুখে ছাত্রদল আজকে জামাত শিবির বিরোধী শ্লোগান দিতে দিতে মিছিল করছে!! কিন্তু যেই দলের নেতাকর্মীরা এই স্লোগান দিচ্ছে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×