somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জ্যোৎস্নার ভিতর থেকে নড়ে ওঠে হাওয়া, হাওয়ার ভিতর থেকে ঝরে পড়ে পাপ

২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





মানুষ মৃত্যুকে ছোঁয়, নাকি মৃত্যু মানুষকে? এইরকম একটা প্রশ্ন পোস্ট করা হয়েছে এক কবি-বন্ধুর টাইমলাইনে। একের পর এক কমেন্ট করা হচ্ছিল তাই নিয়েই। স্ক্রোল করতে করতে প্রায় পেরিয়েই গিয়েছিলাম যদিও। তারপর, হঠাৎ উঠে এলাম। কী হতে পারে এর উত্তর। কে কাকে ছোঁয়? কী উত্তর করছেন কারা—কার কী ভাষ্য এই ব্যাপারে—কৌতুহল থেকেই হয়তো আচমকা ওই পোস্টে আবার ফিরে আসা। ইদানিং আরও একটা ব্যাপার যে খুব চল হয়েছে তাও নিশ্চয়ই খেয়াল করেছি আমরা। সেটা হচ্ছে ফেসবুকের লাইভ-আড্ডা। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও-না-কোথাও, কেউ-না-কেউ এই লাইভ-আড্ডা দিয়েই যাচ্ছেন। কিছু কমন মুখ প্রায় সব আড্ডাতেই দেখা যাচ্ছে। এবং আড্ডার বিষয়বস্তু আর প্যাটার্ন ঘুরে ফিরে সেই একই। বিরক্ত লাগে। তবে, এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। আমি সেই ব্যতিক্রম খুঁজতে খুঁজতে মাঝে মধ্যে কিছু মুক্তোও যে পেয়ে যাই না—তা কিন্তু নয়।—এই কথাটুকু স্বীকার করতে যেমন দ্বিধা নেই, তেমনি আমার আনন্দও হয়। যেমন আমার আনন্দ হয় মৃত্যুকে ছুঁয়ে দেখতে প্রিয় কবি কালীকৃষ্ণ গুহ'র কবিতার মতো—

তারপর আমি ঘুম ভেঙে দেখি আমার শরীরে
ইতস্তত রক্তের দাগ। কারা হত্যা করে চলে গেল আমাকে?
ঘুম ভেঙে দেখি আমার ঘরের ভিতর কেউ নেই
না পাখি, না ডানার শব্দ, না ফুলের বাগান, না বাহকেরা কেউ

আমি জেগে উঠে দেখি আমার গলিত শব সমস্ত ঘরের ভিতর
আশ্চর্য সুন্দর ভাবে শুয়ে আছে।

এই অপরূপ মৃত্যু এই নির্জনতা আমরা আপনআপন জীবনের যাপন-পথের কোথাও তো দেখেছি। কিন্তু কোথায়? সহসা ঠিক স্পষ্ট করে মনে করতে পারি না। নয়তো এই কবিতা আমাকে এমন করে স্পর্শ করতে চাইবে কেন। এমনই কোনো ঘুম-ভাঙানো মুহূর্তের ভেতর দিয়ে কি কখনোই যেতে হয়নি আমাকে? চেতনে কিংবা অবচেতনে ওই যে আশ্চর্য সুন্দর গলিত শব-টা কি আমারই ছিল না? এইতো, এই বছরের শুরুর দিকেও তো আমার ঘর ছিল অন্যরকম। এখনকার সাথে একদমই মিল ছিল না কোনো। ছিল অন্য সময়। করোনার কবলে তখনও পড়িনি আমরা। আমার ঘরে, আমার শিয়রে সে’বার সবুজের সুষমা নিয়ে ছোট্ট একটা গাছ তার প্রশাখা মেলে ছড়িয়ে ছিল। পুরো একটা বাগানের চেয়ে কম ছিল না সে আমার কাছে। সকাল সন্ধ্যা ওর গায়ে পানি নয় যেন আদরই ঢেলে দিতাম আমি। আর ছিল কলরব-গান। সুরেলা পাখির সাথে আমার সকাল বেলার প্রশান্তিময় জাগরণ যেন আসন্ন দিনের দারুণ এক ব্যাপ্তিকেই ছুঁয়ে দিতে চাইতো। কী নাম ছিল তার? কিটি। মাঝেমধ্যেই ওর ডানা ঝাপটানো আর মিষ্টি কণ্ঠে গেয়ে-ওঠা এখনও পর্যন্ত আমার কর্ণকুহরে আমার চোখের গভীরে যেন গেঁথে আছে অনেকটাই। এরপর, আমিও অসুস্থ হলাম করোনায় আক্রান্ত হয়ে। আর আমার পাখিটাও অসুস্থ হলো সেই একই সময়ে। পাখিদের কী কী অসুখ হয় আমার জানা ছিল না। বুঝতেও পারিনি তেমন। ভেবেছিলাম সেরে যাবে হয়তো। কিন্তু না,—সারেনি। তারপর একদিন বিকেল বেলায় দেখলাম মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ও, ওর ওই ছোট্ট খাঁচায়। কিছু হয়তো বলতে চেয়েছিল আমাকে। মৃত্যুর আগের ক'টা দিন একদম নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। কী বলতে চেয়েছিল ও? মুক্ত আকাশে একবারের জন্য হলেও ডানা মেলতে চেয়েছিল কি? বলতে চেয়েছিল, ও ভালো নেই, মৃত্যু ওকে ছুঁয়ে দিতে চাইছে? মনে আছে, এর পরের কয়েকটা দিন ভীষণ বিষণ্ণ ছিলাম। আমার শিয়রের গাছটাকেও সরিয়ে ফেলা হয়েছিল ব্যালকনিতে। আমার ঘর হয়ে গিয়েছিল সবার জন্য নিষিদ্ধ। কলরবময় ঘর আমার বদলে গেল নির্জনতায়। সেই নিশ্চুপ মুহূর্তগুলো সেই নৈঃশব্দ্যের রাতগুলো দীর্ঘ হয়ে গেল আমার সামনে। আমি ঘুমোতে যেতে ভয় পেলাম। জ্বালানো আলোর মধ্যে আমার তখনকার রাতগুলো ডুবিয়ে রাখলাম যতক্ষণ না চোখের অন্ধকার তাদের গিলে ফেললো। এর মধ্যে রাতগুলোর কোনো কোনো অজ্ঞাত প্রহরে, আমার স্বপ্ন কিংবা দুঃস্বপ্নের ভেতর ভেঙেও গেল ঘুম। ভেঙে গেল ভয়। আধো অন্ধকারে ভৌতিক আমি যেন আমাকেই জাগিয়ে দিলাম। আর দেখতে পেলাম নির্জনতা একটা আবছা আলোর মতো ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ঘরময়। কেউ নেই। না পাখি, না ডানার শব্দ, না ফুলের বাগান, না বাহকেরা। আমি নই, আমার শরীরটাই শুধু শুয়ে আছে; আশ্চর্য রকম দেখতে। কী ভাবছিলাম তখন? আমি কি মৃত্যুকে ছুঁয়ে ফেলেছি? আমার হন্তারক তবে কে? কারা আমাকে ইতস্তত রক্তের ভেতর—এই মৃত্যুময়তায় ফেলে গেল?

এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে, আসুন, সেই আলোর কথা শুনি, প্রাচীন নাবিকের কথা শুনি। যে আলো সারা ঘরময় নিজেকে বিছিয়ে দিয়েছে, আমি টের পাই সে আমার বুকের ভেতরটাতেও যেন জ্বলছে। জ্বলছে, ভেতরকার যে অন্ধকার নদী রয়েছে আমাদের, যেই হৃদয়-জলের বহমানতায় আমরা ধারণ করে আছি আমাদের আবহমান কাল-কে, সেই নদীর বুকেও যেন জ্বলছে সেই আলো। আলোকবর্তিকার মতো ওই আলোয়, প্রাচীন নাবিক আমাদের, বুকের সেই নদীটির শরীর কাঁপিয়ে দাঁড় বেয়ে চলে যাচ্ছেন কোথাও। কোথায় যান তিনি? তাকে প্রশ্ন করতে করতে আমরা তাঁর অদৃশ্য গন্তব্যের দিকে চেয়ে থাকি। মনে আসে, ইনিই কি সেই ancient mariner আমাদের? স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজ এর শাশ্বত সৃষ্টি, যুগ যুগ ধরে, শতাব্দীর পর শতাব্দী জয় করা আশ্চর্য কবিতার সেই প্রাচীন নাবিক। ১৭৯৭-৯৮ থেকে স্থির জীবনসমুদ্রে দাঁড় বেয়ে চলেছেন যিনি। দিনের পর দিন, স্তব্ধতায়, নৈঃশব্দ্যে আর নিঃশ্বাসহীনতায়। Instead of the cross, the Albatross / About my neck was hung. ওই-যে এলবাট্রোস, সে-ই কি আমার সেই কিটি হয়ে এসেছিল এই ঘরে? যে আজ আমার হৃদয়-বেদনার গলায় মালা হয়ে ঝুলে আছে। সারাক্ষণ ও-ই তো বুকের ভেতর ওর অলৌকিক ডানায় ঝাপটায়। শেষের দিনগুলোয় কী বলতে চেয়েছিল ও? "Night-mare Life-in-Death". Death wins the lives… এই যে জীবন, এই যে মৃত্যু.. পাখির মৃত্যু, মানুষের মৃত্যু, নদীর মৃত্যু.. জীবন-নৌকার ডুবে যাওয়া.. এইভাবেই সমস্ত পৃথিবীর মৃত্যু.. এই সবকিছুই যেন শেষ পর্যন্ত একাকার হয়ে যায়; কালের গর্ভে।— শুয়ে থাকে আমার বুকের অন্ধকারে।



সেই আলো বুকের মধ্যে জ্বলে, অন্ধকার নদীতে জ্বলে:
প্রাচীন নাবিক দাঁড় বেয়ে যায়, বুকের ভিতর নদীর শরীর কাঁপিয়ে
নৌকা বেয়ে যায় বৃদ্ধ মাঝি।

সারাক্ষণ শুধু বুকের ভিতর পাখি ডানা ঝাপটায়
সারাক্ষণ শুধু বুকের ভিতর নৌকা ডুবে যায়

কিন্তু আমি সবকিছু একাকার করে দেখি—পাখির মৃতদেহ
নদীর মৃতদেহ, সমস্ত পৃথিবীর মৃতদেহ আমার বুকের
অন্ধকারে শুয়ে থাকে।

জীবনের কোনো কোনো বাঁকে এসে আমরা কখনো এমন অবস্থায় পৌঁছাই যে, আমাদের মনেই হয়: The air is cut away before, / And closes from behind. অন্তত, কিটির মৃত্যুর পরের সেই দিনগুলোতে আমার এমনই মনে হচ্ছিল। ভিন্ন ভিন্ন জীবন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গিয়েও আমরা যে একই অনুভূতির সাক্ষাৎ পেতে পারি। বাবার মৃত্যুর পর ৮ বছর বয়সের ছোট্ট সিলভিয়া প্লাথের সেই কবিতার কথাই ধরুন— Father, this thick air is murderous / I would breath water. মানে হচ্ছে জল। আমাদের বুকের ভেতর যে জল রয়েছে, এ যেন সেই জলের কথাই বলা হলো। কখনো সেই জল হয়ে ওঠে অথৈ নদী। আমরা সেই জলে জল-শ্বাস নিই। ভাসাই আমাদের জীবন-নৌকো।




নৌকোর কথাই যেহেতু এলো, আজ থেকে ৩০ বছর আগের এক ডিঙি নৌকোয় কাটানো দুপুর-গড়িয়ে-বিকেল এর কথা বলি। ময়মনসিংহের শহরতলী, কেওয়াটখালী রেলওয়ে কলোনিতে তখন আমাদের দুরন্ত কৈশোর কাটছিল। স্কুল পালানো একদল ছেলে পড়ালেখা ফেলে প্রায়শই চলে যেত নদের তীরে। ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় আমাদের খেলার তীর্থ। কাদা ছুড়াছুড়ি, নদে লাফ দেয়া থেকে শুরু করে মারামারি খেলা পর্যন্ত কতো খেলাই যে খেলতাম আমরা তার ইয়ত্তা নেই। অতি দুরন্ত কেউ কেউ আবার টারজানের মতো মুখে চিৎকার করতে করতে নদের উপর দিয়ে চলে-যাওয়া রেল-ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়তো পানিতে। অসম্ভব থ্রিল আর অনন্দের সেই দিনগুলোর কোনো এক দুপুরে যথারীতি স্কুল পালিয়ে আমি আর আমার এক বন্ধু তখন নদের পাড়ে এসে হাজির। ১৯৯০এর অক্টোবরের সেই কাঠ-ফাটা রোদে আমি আর ও, কিছুক্ষণ শতবর্ষী শিমুল গাছের নিচে, ছায়ায় বসে রইলাম। কেউ নেই আশপাশে। হঠাৎ চোখে পড়লো একটা ডিঙি। অসহায় ভাবে নদের কিনারায় পড়ে আছে। মাঝি নেই। কার নৌকা জানি না। দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেল। মুহূর্তেই ভাসিয়ে নিলাম। ভয়, আনন্দ আর অপরাধবোধে একাকার হয়ে ভেসে গেলাম আমরা। এর পরের কয়েক ঘন্টা হালকা ঢেউয়ের ব্যাপক জলরাশিকে যেন অন্যভাবে, একান্ত আপন করে আবিষ্কার করলাম। আস্তে আস্তে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এলো। রেল ব্রিজের বিশাল বিশাল পা গুলোর পাশ দিয়ে এগিয়ে গেলাম নদের অপর পাড়ে। মাঝেমাঝেই ছোট ছোট মেঘের ছায়া আমাদের মাড়িয়ে যাচ্ছিল। বাতাসের মৃদু ঝাপটায় ছুঁয়ে যাচ্ছিল ক্লান্ত দেহ। পৌঁছে গেলাম। এই পাড়টা যে এতো স্নিগ্ধ এতো শান্তিময় তা আগে কখনো এমন করে অনুভূত হয়নি আমাদের। দারুণ এক প্রশান্তির ভেতর দিয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল নৌকা, নাকি জলের উপর স্থির দাঁড়িয়ে ছিল অনন্তকাল, আমরা কেউ খেয়াল করিনি। এখনও ভাবলে মনে হয়, আশ্চর্য নির্জনতায় আর অদ্ভুত নৈঃশব্দ্যের ভেতর দিয়ে আমাদের সেই আসন্ন বিকেল যেন পার্থিব ছিল না।

কোন নদীতে তুই নৌকা ভাসিয়েছিলি?
হাজার বছর আগে কোন বিকেলে তুই নৌকো ভাসিয়েছিলি?
বিকেলের নদী শান্ত কলবর। নৌকো বেয়ে যেতে যেতে
কত কথা মনে আসে! ছায়ার ভিতর দিয়ে
নৌকো বেয়ে যেতে মনে হয়—এইখানে
চিরদিন শুয়ে থাকা যায়। চিরদিন নির্জনতা বুকে নিয়ে
ছায়ার ভিতর যেন শুয়ে থাকা যায়। কিন্তু যা-কিছু কলরব তা
নদীর ভিতরে নেই ছায়ার ভিতরে নেই।

হ্যাঁ, অনেক কথাই মনে আসছিল সে’দিন। কত কী যে ভেবেছিলাম! কে জানে, সে’দিনের সেই বিকেলেই হয়তো, অলক্ষ্যে, আমার অন্তরাত্মার ভিতর কবিতার ভ্রুণ স্থাপিত হয়ে গিয়েছিল। আর আজ, এতোকাল পর, কালীকৃষ্ণ গুহের এই যে কবিতাটি পড়ছি এখন, এ যেন আমার সেই ‘আসন্ন-বিকেল’-এর সাথে মিলে যাচ্ছে খুব। সহজ ভাবেই ভাসতে ভাসতে কবিতাটি এগিয়ে এসেছে বিকেলের শান্ত নদীটির শরীর বেয়ে, ছায়ার ভেতর দিয়ে নির্জনতায়। স্বাভাবিক ভাবেই মনে হয় যেন এইখানে চিরদিন শুয়ে থাকা যায়। শুয়ে থাকা যায় কেননা এখানে কোনো কলরব নেই। যা-কিছু কলরব তা আছে অন্য কোথাও। নদীর ভেতরে নেই। ছায়ার ভেতরেও নেই। অদ্ভুত প্রশান্তির এই নির্জনতা বুকে নিয়ে যেন শুয়ে থাকা যায় অনন্তকাল। ঠিক তার পরপরই আছে নিচের পংক্তিগুলো। যেখানে এসে মুহূর্তে বদলে গেল সব। ’শুধু বুকের ভিতর অস্থির সময়’ থেকে কবিতাটি সেই নদীটির এক পরম বাঁকে এসে বদলে দিল সব মানে। নৌকো আর নৌকো রইল না। নদী আর নদী রইল না। ছায়াও সরে গিয়ে অন্য ছায়া। আর আমার এই যে যাওয়া—এ যাওয়া কোন যাওয়া? কোন অন্ধকারে আমার যাত্রার কথা বলা হলো? সে কি মৃত্যু!

শুধু বুকের ভিতর অস্থির সময়। কিন্তু তোকে
নৌকো বেয়ে যেতে হবে এখনো অনেক দূর। নদীতে এখন
ছায়া। ছায়া সরে যাবে। তারপর তুই
কোন এক অন্ধকারে চলে যাবি! কোন অন্ধকার?

নদী, হয়ে গেল পৃথিবী। নৌকো মানে জীবন-নৌকো। মানে আমি। আমার জীবন/প্রাণ। ভূমিষ্ঠ হবার পর থেকে আমার মা আমার বাবা আমার পরিবার পরিজন আমার ছায়া হয়ে রয়েছেন। ’নদীতে এখন ছায়া’। আমি বড় হচ্ছি। শৈশব কৈশোর যৌবন পেরিয়ে যাচ্ছি। আর আমার ছায়ারা—তারাও একদিন একে একে চলে যাবেন আমাকে ফেলে। ‘ছায়া সরে যাবে’। আমিও পৃথিবীর পথে চলতে চলতে ঢুকে যাবো জীবনের পার্থিবতায়, এক রকম অন্ধকারে। তারপর সেই অন্ধকারও পেরিয়ে গিয়ে আরো এক পরম অন্ধকারের দিকেই হবে আমার অন্তিম যাত্রা। কবি কালীকৃষ্ণ গুহ সহজ ভাষায়, সরাসরি, স্বগতোক্তির মতো কবিতা লিখে যান যেন। যতোটা আড়াল হলে বোধগম্যতার প্রশ্ন আসে, অতোটা আড়াল নেই বললেই চলে। অবলীলায় তাঁর কবিতার গভীরে ঢুকে যাওয়া যায়। টলটলে স্রোতস্বিনী জল স্পর্শ করার মতোই তাঁর কবিতা পাঠকের হৃদয় ছূঁয়ে দেয়। পড়তে পড়তেই মনে হয়, এইসব কবিতাই হয়ে উঠছে কখনো গভীর অতলান্ত, আবার কখনো গহিন অন্তরীক্ষের মতো ব্যাপ্ত। সরলতার ভেতর দিয়ে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনকেই যেন নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করায় এইসব কবিতা। মাঝেমধ্যেই কিছু আশ্চর্যর দেখা পাওয়া যায়। যেমন ‘ঘাসের রক্তমাংস’ কবিতাটি। শেষ হচ্ছে এই রকম একটি পংক্তির মাধ্যমে, ’প্রতিদিন ঘরে ফিরে এলে ঘাসের রক্তমাংস লেগে থাকে পায়ে।’ একেবারে নতুন এক চিন্তা—’ঘাসের রক্তমাংস’ কথাটি। ঘাস কতো তুচ্ছ একটা ব্যাপার। পায়ে মাড়িয়ে যাই সব সময়। খেয়ালই করি না যে ঘাসেরও জীবন আছে। শরীর আছে। শরীরে মাংস আছে। সেই শরীরের ভেতর দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে। রক্তের প্রবাহ মানে তো জীবনের প্রবাহ। অথচ কী অলক্ষ্য, কী তুচ্ছ জ্ঞান-করে-রাখা তাকে! পথে প্রান্তরে, মাঠে ঘাটে ঘাস নিজেকে বিছিয়ে দিয়ে যে সবুজের সমারোহ ঘটায় আমাদের জন্য, আমরা লক্ষ্য না করলেও, আমাদের অজান্তেই সে এই পৃথিবীটাকে আমাদের জন্য সুন্দর করে তোলে। ঘাস বিহীন মাঠ যেন মাঠ নয়, বিড়ানভূমি। সেই রকমই আবার এ-ও ভেবে নিতে পারি যে, আমাদের আশপাশে এমনই অনেক তুচ্ছ-জ্ঞান-করা মানুষ অথবা প্রাণ রয়েছেন যাদের দিকে সেইভাবে তাকিয়েও দেখি না হয়তো। প্রতিদিনকার বাড়ি ফেরার সময় যেভাবে ঘাসেদের পায়ে মাড়িয়ে আসি, ঠিক তেমনি হয়তো অতি সাধারণ সুন্দরকে, সহজ-কে অবহেলা করে, তাদের হৃদয়কে দলিত করে, হৃদয়ের রক্তমাংসকে মাড়িয়ে আসি, যা হয়তো খেয়ালও করে দেখি না। অথচ কী ক্ষরণই-না ঘটে যায় ও’দিকে!

জ্যোৎস্নার স্খলিত গ্রীবা ফুলের রক্তে ভিজে যায়
উদ্যানের মাটি ভিজে যায়
হাত ভেজে

ফুলগুলি মৃত্যুর বুকের ভিতর কেন বেঁচে থাকে?

’জ্যোৎস্নার স্খলিত গ্রীবা’ নিয়ে ভাবনায় পড়ে যাই আমি। জ্যোৎস্নারও গ্রীবা হতে পারে কখনো ভেবে দেখিনি আগে। এ-ও এক নতুন চিস্তা আমার কাছে। কীভাবে হয় সেটা? কেমন দেখতে? তাও আবার তার স্খলন। পড়ে যাচ্ছে সে। পতিত হয়ে আছে মাটিতে। ফুলের রক্তের ভেতর ভিজে আছে। ফুলের রক্তে ভেজা এই জ্যোৎস্নার গ্রীবা-কে আমি পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারি না। আমি হাতড়ে বেড়াই আমার জীবন অভিজ্ঞতার সঞ্চিত স্মৃতি। বেঁচে থাকি যেন ওই ফুলগুলির মতোই মৃত্যুর বুকের ভেতর। আর—

’প্রতিদিন আমি তিলে তিলে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছি স্বপ্নের মধ্যে। আতঃপর স্বগত বিষাদ কাছে আসে, আমার স্বপ্ন ভাঙে, আমি তার হাত ধরি। চতুর্দিকে শুনি তীব্র আর্তনাদ।’— এই কবিতাটিতে এসে মনে হয়, আমাদের এই জীবন যেন এক স্বপ্ন, একটা ঘোর। প্রশ্ন জাগে, তবে কি সেই ঘোরের ভেতর সেই জীবনের ভেতর প্রতিদিন একটু একটু করে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছি আমরা? কী ক্ষয় হয় আমাদের? কী সেই সঞ্চয় একটু একটু করে যা হারিয়ে যায় আমাদের জীবন থেকে? জীবনের স্বপ্নের প্ররম্ভে তো আমরা সব শূন্য। ‘চতুর্দিকে শূন্য পড়ে আছে’ আমাদের। আমরা চলে যাই সেই শুরুতে। মায়ের পেটের ভেতর থাকা অবস্থায় আমাদের যে সঞ্চয়—সেই নিষ্পাপ, সেই নিষ্কলুষ, সেই পবিত্রতা, সেই সারল্যের সঞ্চয়ের কথাই যদি ধরে নিই। তবে কি, ভূমিষ্ঠ হবার পর থেকেই যে জীবনে পতিত হই আমরা সেই জীবনের ঘোরের মধ্যে, পার্থিব জটিলতা আর কদর্য‘র পাঁকে একটু একটু করে সেই স্বর্গীয় সঞ্চয়কে হারাতে থাকি আমরা। আমাদের ভেতরটা কলুষিত হতে থাকে। যতই জীবন-সমুদ্রের পাকা কাণ্ডারী হই না কেন, আঁধার সমুদ্রে আমাদেরকে ডুবে যেতেই হয়। বিষাদ ভর করে। স্বপ্ন ভাঙে। আমাদের অন্তর্গত শূন্য পৃথিবীটার চারদিকে শোনা যায় শুধু তীব্র আর্তনাদ। শোনা যায় আমাদের অন্তরাত্মার স্বগত চিৎকার।




এবার সেই প্রশ্নে ফিরে আসি। আমি কি মৃত্যুকে ছুঁয়ে ফেলেছি? আমার হন্তারক তবে কে? কারা আমাকে ইতস্তত রক্তের ভেতর—এই মৃত্যুময়তায় ফেলে গেল? আমি কি আমাকেই বলবো, ‘ডাক দাও, আমারই / গভীর ভিতর থেকে ডাক দাও, নিশ্চলতা / নিশ্চলতা তোমার আমার / আমাদের গভীর ভিতর থেকে ডাক দিয়ে ওঠো।’ নিশ্চল আশ্চর্য সুন্দর হে শবদেহ আমার। কথা বলো। তোমার হন্তারক-কে ডেকে ওঠো তোমার আপন স্বরে। আমি শুনি। আমাকে শোনাও। দ্যাখো, তোমারই চতুর্দিকে নতজানু হাওয়া, প্রকীর্তিত বধ্যভূমি, দীর্ণ কোলাহল। চিৎকার করে ওঠো। ডাকো।

অতর্কিতে কে অমন চিৎকার করে উঠল?
কেউ কোনোখানে নেই। চতুর্দিক শূন্য পড়ে আছে।
এখানে আমি একা দাঁড়িয়ে আছি। এখানে এবং চতুর্দিকে
আমি একা দাঁড়িয়ে আছি। তাহলে কি অমন
চিৎকার করে উঠলাম আমি? আমার কণ্ঠস্বর
এই প্রথম পৃথিবীতে? আমি কি এই প্রথম
আমার নাম শুনলাম? এসব প্রশ্ন করার আগে
আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। এসব প্রশ্ন করার আগে
অসংখ্য হলুদ পাতায় আমার শরীর ঢাকা ছিল।

তবে কি আমিই আমার হন্তারক! নিজেকে মৃত্যুময়তায় ফেলে মৃত্যুকে ছুঁয়ে ফেলতে চাইছি? নয়তো এই যে চিৎকার শুনতে পেলাম, অথচ কেউ তো নেই শুধু আমি ছাড়া। এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আমিই প্রথম আমার নাম শুনলাম। এর আগে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম নির্জনতার আবছা আলোয়। অসংখ্য হলুদ পাতায় ঢাকা ছিল আমার মুখ। মৃত্যুকে ছুঁয়ে দেখার অমন পিপাসা তো আমারই। বলা হয়ে থাকে মহৎ কবিতার প্রধান বৈশিষ্টই হচ্ছে আড়াল। যে কবিতায় আড়াল যতো বেশি, তার কালোত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষমতাও ততো বেশি। কিন্তু কেন যেন এই কথাটায় মন তেমন সায় দিতে চায় না আমার। আড়াল না হলে অনেক লেখাই হয়তো বাঁচানো যাবে না—এই রকম অনেকেই হয়তো ভেবে থাকেন নিজের লেখার ক্ষেত্রে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? আবার এমনও শুনেছি কোনো এক বয়োজ্যেষ্ঠ অগ্রজ কবির কাছে যে, কবিতাকে গূঢ় হতে হয়, গহন হতে হয়, বাঁকা তির্যক আর আবছা, এরকম কতো কিছুই তো হতে হয়। কবিতায় অবশ্যই এমন কিছু থাকে যে কারণে অমোঘভাবে লক্ষ্যভেদ করতে চায়। কবিতার শরীর বা কবিতার ভাষা যে একটু আলাদারকম হয় সে তো ওই পৌঁছে যাবার উদ্বেগ থেকেই। শুধু আড়াল থাকে না বলে নয়, আভাস ইঙ্গিতের আশ্রয় ছাড়া কবিতাকে বড়ো অসহায় লাগে। কথার গায়ে ভিতর থেকে তাপ লাগা চাই। নিচের কবিতাটি পড়ুন—

আজ এই হাওয়ার মধ্যে দাঁড়িয়ে আমি তাঁর কথা মনে
আনতে পারি।
তার একটি হাত ঝুঁকে পড়েছিল
মৃত্যুর দিকে।

আজ গহন বিশ্লেষণে তার কথা মনে আনতে গিয়ে বুঝতে পারি
সমন্ত মাঠে বীজ ছড়ানো রয়েছে। বীজের মধ্যেই
তার আরেকটি হাত মেলে দেওয়া আছে।

আজ হাওয়া লাগছে, ভীষণ হাওয়া লাগছে, হিম—

আমি মাঠের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে বুঝতে পারি
যুগ যুগ ধরে আমাদের চারপাশে স্তব্ধতা ছড়িয়ে পড়েছে।

আজ তবু কেউ কথা বলে উঠতে চায়।
কে কথা বলে উঠতে চায়? মাটি? হিম-হাওয়া? বীজ?
ডালপালার ভিতর দিয়ে ঝুঁকে-পড়া আকাশ? বিস্তৃত প্রকৃতি?
স্তব্ধতা?
আমি কিছুই বুঝতে পারি না। শুধু তার কথা
মনে পড়ে আমার—

তার একটি হাত ঝুঁকে পড়েছিল অন্ধকারে, মৃত্যুর দিকে।

আজ থেকে ৫৫ বছর আগে লিখা কবিতা। অথচ কী অধুনিক আর সাবলীল তাঁর কাব্যভাষা! কতোটাইবা আড়াল আছে তাঁর কবিতায়? কিন্তু একবারও কি মনে হয়, কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে? বরং যতোবারই পড়ি, মনে হয় নতুন কবিতা পড়ছি। মনে হয় সেই গূঢ় লক্ষ্যভেদের কথা, সেই কোথাও পৌঁছে যাবার উদ্বেগ। কালীকৃষ্ণ গুহের কবিতা কখনো পাঠকের মনোযোগ হারায় না। আশ্চর্য তাঁর আপাত সরল এইসব কবিতা পাঠকের হৃদয়ে অলক্ষ্যেই দ্রবিভূত হয়ে যায়। সময়ের মাত্রা কেটে বেরিয়ে আসতে চায় যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দীতে। এক হাত ঝুঁকে পড়ে মৃত্যুর দিকে, অন্ধকারে। অন্য হাত মেলে দেওয়া বীজের ভেতর। জীবনের দিকে। বীজ মানে তো জীবনই। অমোঘ জীবন। সঞ্চিত জীবনীশক্তি। জেগে ওঠার অপেক্ষায় আছে যে। আর ওই অদ্ভুত স্বগত উচ্চারণ— কে কথা বলে উঠতে চায়? মাটি? হিম-হাওয়া? বীজ? ডালপালার ভিতর দিয়ে ঝুঁকে-পড়া আকাশ? বিস্তৃত প্রকৃতি? স্তব্ধতা?— এইভাবে, এক হাতে মৃত্যু আর অন্য হাতে এক নিমেষেই সমস্ত জীবনকে ধরে ফেলা যায় এই কবিতায়।



—ঋতো আহমেদ, ২২শে আগষ্ট ২০২০।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৫০
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×