somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অশিল্পের অন্ধকার থেকে

১০ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নারীঃ আমি ভোরবেলা দাঁড়িয়েছিলুম বারান্দায়
আর তুমি সূর্যের আলোর নীচে মুখ রেখে বলেছিলে
প্রেমিকঃ পৃথিবীর যন্ত্রণার উত্তরণ হোক


১০ই নভেম্বর। ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম ফেবুতে ৪ বছর আগের কবি জয় গোস্বামীর জন্মদিনের একটি শুভেচ্ছা বার্তা ফিরে এসছে। সেইসাথে স্ক্রল করতে করতে উঠে আসতেছে আরও একটি ছবি। আজ থেকে প্রায় ৩৪ বছর আগের ঢাকার সেই উত্তাল রাজপথে উন্মুক্ত শরীরের বুকে আর পিঠে এক আশ্চর্য কবিতা নিয়ে যে ছেলেটি দাঁড়িয়ে গেছিল বন্দুকের নলের সামনে, সেই শহিদ নূর হোসেনের ছবি। লিখা ছিল, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। ঘুম-ভাঙ্গা চোখে সেই ছবি ক’টা দেখতে দেখতেই মনে হচ্ছিল, কী অদ্ভুত যে আজও ওটা দারুণ ভাবেই প্রাসঙ্গিক। আজকের দিনের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আর সেইদিনের ৩৪ বছর আগের সেই পরিস্থিতি হয়তো পুরোপুরি এক নয়। গণতন্ত্রের মানস-কন্যা আর তাঁর দলই এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। কিন্তু কীভাবে, সে অন্য কথা। তবে, এরপরও কি আমরা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, যেই গণতন্ত্রের আশায় নূর হোসেন প্রাণ দিয়েছিলেন সে’দিন, সেই কাঙ্ক্ষিত মুক্তি কি আজও পেয়েছে গণতন্ত্র? আজও কি স্বৈরাচারের রাহুর কবলে পড়ে হাঁসফাঁস করছি না আমরা? মুহুর্মুহু নাভিশ্বাস উঠছে না মানুষের! হ্যাঁ, এই স্বৈরাচার দ্রব্যমূল্যের স্বৈরাচার, এই স্বৈরাচার দুর্নীতির স্বৈরাচার, সাম্প্রদায়িক স্বৈরাচার, বিচারহীনতার স্বৈরাচার, কণ্ঠরোধের স্বৈরাচার। যেই বন্দুকের নল সে’দিন তাক করা হয়েছিল নূর হোসেনদের দিকে, সেই নলগুলো তো আজও তাক করা আছে আজকের নূর হোসেনদের দিকে, একটু অন্যভাবেই। সে’দিন ঢাকার অলিতে-গলিতে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছিলেন যেই ২৬ বছরের তরুণ, সে-ই আজ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, তাঁরা এখনও আছেন ক্ষুধার যে বন্দুক তাক করা আছে যুগের পর যুগ, সেইসব নলের মুখেই, অসহায় অবস্থানে। আর আছে মহামারীর থাবা। পৃথিবীর যন্ত্রণার করুণ প্রকাশ। যে’সব যন্ত্রণা থেকে উত্তরণ চেয়েছিলেন আরও এক প্রেমিক, এরও এক যুগ আগে, ১৯৭৫ এর এই নভেম্বরেই যিনি চলে গিয়েছিলেন আমাদের ছেড়ে। গতকাল রাতে যার কবিতা পড়ছিলাম নিবিষ্ট মনে। জানছিলাম একটু একটু করে। নারী, সুরাইয়া খানম যারে অভিহিত করেছিলেন, বাংলা কবিতার ‘আহত ও ক্ষুধার্ত সিংহ’ বলে। ষাটের দশক থেকে যিনি জেগে উঠছিলেন অশিল্পের অন্ধকার থেকে শিল্পের ঊষার দিকে। মাত্র ২৯ বছর বয়সে, এতো তাড়াতাড়ি তিনি কেন চলে গিয়েছিলেন সে প্রশ্ন অবশ্য অবান্তর। কেননা, শারীরিক অসুস্থতায় মানুষের মৃত্যুকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কিছু নেই। তবে, আফসোস রয়ে যায়, যদি আরও ক’টা বছর বাঁচতেন, বাংলা কবিতা হয়তো আরও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেত।

সমৃদ্ধির কথায় মনে এলো, হাসান আজিজুল হক একবার এক সাক্ষাৎকারে বাংলা কবিতা গত একশ বছরে কতদূর এগিয়েছে এই প্রসঙ্গে বলছিলেন তাঁর হতাশার কথা, আক্ষেপের কথা। এডোরেবলি তিনি দায়ী করছিলেন বুদ্ধদেব বসুকে। বুদ্ধদেব বসুর বোদলেয়ার-এর অনুবাদ নাকি নির্ঘাত সর্বনাশ করেছে বাংলা কবিতার নিজস্ব উন্মেষের। এরপর নাকি বাংলার কবিরা ওঁর থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেননি; আজও না। কেন যেন কথাটায় পুরোপুরি সায় দিতে চাইলো না আমার মন। তথাপি, এতো বড়ো মাপের একজন কথাসাহিত্যিকের অবলোকিত বিচার বলে কথা। যথেষ্ট অভিনিবিষ্ট না হয়ে তো মন্তব্য করার কথা নয়। তাহলে কি আমি নিজে কবিতা লিখি বলে, কবিতার প্রতি কাব্য জগতের প্রতি নিষ্কলুষ ভালোবাসার করণেই কি অন্ধ হয়ে আছি। দেখতে পাচ্ছি না যেই ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে তিনি কথা বলছেন, সেইটাকে। ছুঁতে পারছি না কিছুতে! কিন্তু আবার আমরা এওতো জেনেছি অরুণ মিত্রের পর বিশিষ্ট ফরাসিবিদ চিন্ময় গুহও আমাদের জানিয়েছেন সেটা, বুদ্ধদেবের বোদলেয়ার আসলে বোদল্যের। বোদল্যের-এর অনেক কবিতাই মূল ফরাসি থেকে অনেকটা পথ দূরে সরে সরে গেছে বুদ্ধদেব বসুর অনুবাদে। এর সম্ভাব্য কারণ হয়তো তিনি ফরাসি জানতেন না। ইংরেজি থেকে নামাতে গিয়েই এমন দশা হয়ে গেছে। সে অবশ্য অন্য কথা। কিন্তু বোদল্যের কী প্রভাব ফেললেন তখনকার বাঙালি কবিদের উপর? আর ফেললেইবা কি,— যুগে যুগে, শতকে শতকে বিশ্ব কবিতার ইতিহাস তো এমনই আমরা জেনেছি। এক সময় গত শতাব্দীর শুরুর দিকে এলিয়ট, এজরা পাউন্ডরা হন্যে হয়ে ফরাসি কবিতার দবারস্থ হয়েছিলেন। আবার কী আশ্চর্য যে সেই ফরাসি কবিদের গুরু, অর্থাৎ আধুনিক ফরাসি কবিতার জনক বলা হয় ইংরেজি ভাষার কবি আমেরিকার এডগার এলান পো-কেই। তাঁদের ভাষায় তিনি এদ্গার পো। পো’র কবিতা ভাবনা থেকেই আলোক রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়েছে আধুনিক ফরাসি কবিতায়। তাহলে এই যে দেয়া-নেয়া, এতে তো কবিতার ইতিহাস—সমৃদ্ধ হওয়ারই ইতিহাস।

ঋতো আহমেদ
১০/১১/২০২১
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৫৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×