শহুরে মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তরা গ্রামীণ সংস্কৃতি সংরক্ষণ/পালনের নামে সংস্কৃতির স্বাভাবিক বিবর্তন (evolution) বাধাগ্রস্ত করছে। অন্যদিকে তারা নিজেদের ইচ্ছামতো কৃত্রিম বিবর্তন (Artificial Evolution) ঘটাচ্ছে যার ফলে বিরাজমান কালচারাল প্রাকটিসের সাথে প্রকৃত আদি/আসল সংস্কৃতির ব্যাপক মৌলিক পার্থক্য এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
বউ গিন্নিকে না জাগিয়ে, চুলা না জ্বালিয়ে আগের রাতের পানিতে ভেজানো ভাতের সাথে কলা আর নুন অথবা নুন মরিচ আর পেয়াজ দিয়ে সকালের নাশতা সেরে কাজে যাওয়া ছিলো কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সংস্কৃতির অংশ।
শহুরে ভদ্রলোকেরা এই কালচারের প্রতি সমর্থন আর প্রায় হারিয়ে যাওয়া এই কালচারকে সংরক্ষণের জন্যে বছরে একদিনের জন্য হলেও তা উদযাপনের মাধ্যমে এর অস্তিত্ব রক্ষার দায়িত্ব জোরপূর্বক নিজ কাধে নিলেন, এর সাথে সাথে একটু বড়লোকি যোগ করতে গিয়ে পান্তা ভাতের সাথে ইলিশ যুক্ত করলেন।
এক ইলিশই গরীবদের এই উৎসব থেকে বের করে দিলো, লাল সাদা পাঞ্জাবি আর শাড়ি পরে মংগল শুভাযাত্রায় গরীবের ছেড়া লুংগি আর গামছা যায় না।
এবছর যে ঘরের চাল ঠিক করা হয় নি, নতুন টিন লাগাবার পয়সা ছিলো না, ঘরের চাল এবার বৈশাখের ঝড় সামলাতে পারবে কি না এই চিন্তায় অস্থির গরীবের কাছে চামুক চাকুম পান্তা ইলিশ চাবানোর শব্দ অশ্লীল লাগে।
এখন এই কৃষক বা তাদের উত্তরসূরীদের বড় একটা অংশ যদি বাবুদের স্টাইলে বৈশাখের উদযাপনের মধ্যে নিজেদের খুঁজে না পেয়ে এইধরনের প্রাকটিসকে অস্বীকার করে তখন তাকে মৌলবাদী তকমা কেনো দেওয়া হবে?
আর কালচার একদিনে গড়ে উঠে না এবং শহুরে স্টাইলে চলমান বৈশাখের উদযাপনের ইতিহাসও বেশি পুরোনো না কিন্তু একে ধীরে ধীরে কালচারে পরিণত করার চেষ্টা চলছে, যেহেতু ক্ষমতাসীনদের সমর্থন তাদের উপর আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে সেহেতু তারা এই ধারা চলমান রাখবেন এবং কয়েক দশক এভাবে উদযাপনের পর এই প্রাকটিস একটা শক্ত অবস্থানে যাবে এবং এর বিরুদ্ধে আসা সকল আক্রমণকে "কয়েক দশক ধরে চলে আসছে" যুক্তি দিয়ে প্রতিহত করা হবে এই পরিকল্পনায় আগানো হচ্ছে তখন জেনেশুনে বিতর্কিত একটা বিষয়কে কালচারে পরিণত করার অপচেষ্টাকে "সংস্কৃতি ধ্বংসের মিছিল" বলে মনে করি ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১০:১২