১।
বডি ল্যাংগুয়েজ শব্দের চেয়েও পরিস্কার বার্তা দেয়। শেখ হাসিনার সাথে জো বাইডেনের সেলফি আর অল্প সময়ের হাই হ্যালোতে কি কথাবার্তা হইছে তা আমরা জানি না, কিন্ত বডি ল্যাংগুয়েজ পোস্টমর্টেম করে সেই সাক্ষাতে দুই নেতার সেই সময়ের মানষিক অবস্থার অনুমানের চেষ্টা করতে বাধা নাই। যাদের সময় কম তারা ৩য় প্যারা থেকে শুরু করতে পারেন।
আমরা যখন Comfortable থাকি তখন আমাদের চেহারার মাসলগুলো রিলাক্সড থাকে, সেই অবস্থায় হাসলে চেহারায় Happiness বা Enjoyment ফুটে উঠে, এইটা জেনুইন স্মাইল।
কিন্তু যখন কেউ হাসছে কিন্তু তার চেহারায় নেগেটিভ ইমোশন যেমন Frustration, nervousness, arrogance, embarrassment, sarcasm, contempt ইত্যাদির যেকোনো একটা বা একাধিক ইমোশন ফুটে উঠে তখন সেটা ফেইক স্মাইল।
আবার অনেক সময় শুধুমাত্র সামাজিকতার খাতিরে (ফেইক) স্মাইল দেওয়া হয়, তখন চেহারায় কোনো নেগেটিভ ইমোশন লক্ষ্য করা যায় না।
আবার অনেক সময় Highly trained ব্যাক্তিরা ফেইক স্মাইল দিলেও তা বুঝার উপায় নাই, যেমন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদেরকে গ্রুমিং করানো হয় কিভাবে বিভিন্ন কূটনৈতিক মিটিংয়ে এমনভাবে ফেইক স্মাইল দিতে হয় বা Hand তথা Body gesture এমনভাবে করতে হয় যাতে অন্যপক্ষের বডি ল্যাংগুয়েজ এক্সপার্টরা আসল নকলের পার্থক্য ধরতে না পারে।
২। সহজ করে বললে হাসিতে চেহারার দুইটা অংশ বেশি ইনভলভ থাকে, ঠোট ও ঠোঁটের আশপাশ এবং চোখ ও চোখের আশপাশ। জেনুইন স্মাইলে উভয় অংশের ইনভলমেন্ট থাকে ঠোঁট প্রসারিত হয়, চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে, চোখের আশেপাশের মাংসপেশি কুঁচিত (wrinkled) হয় (যাকে Duchenne marker বলে) ।
কিন্তু সাধারণত ফেইক স্মাইলে শুধুমাত্র ঠোঁট ইনভলভড থাকে, (duchenne marker দেখা যায় না বা ) চোখ ইনভলভ থাকে না, কারণ চোখের আশেপাশের মুভমেন্ট কন্ট্রোল করা ঠোঁট কন্ট্রোল করার চাইতে কঠিন।
প্রিয় মানুষকে দেখলে আপনার মুখের পাশাপাশি চোখেও হাসি ফুটে উঠে, কিন্তু মনে করেন কাউকে পছন্দ না কিন্তু সামাজিকতার খাতিরে হাই হ্যালো করতে হয় তাকে দেখলে যে হাসি দিবেন সেই হাসিতে চোখের মুভমেন্ট থাকবে না। যদি না আপনি হাইলি ট্রেইনড হন(স্পাইদের মতো)।
জেনুইন স্মাইল গড়ে পাচ সেকেন্ডের মতো স্থায়ী হয়, অন্যদিকে ফেইক স্মাইল স্থায়ী হয় সর্বোচ্চ তিন সেকেন্ড ।
৩।
যেমন বলেছিলাম অনেক রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ এই বিষয়ে ট্রেইনড থাকেন তাই তাদের হাসি আসল না নকল বুঝার উপায় নাই, যেমন শেখ হাসিনার সাথে জো বাইডেনের সাক্ষাৎকারকালীন হাসি আপাতদৃষ্টিতে জেনুইন হাসির ক্রাইটেরিয়া পূরণ করে, এবং মনে হচ্ছে জো বাইডেন শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করে খুশি। এই সাক্ষাতের কোনো ভিডিও না থাকায় অন্যান্য বডি ল্যাংগুয়েজ যেমন হ্যান্ড জেশ্চার ইত্যাদি স্টাডি করা না যাওয়ায় বাইডেনের বিষয়ে সিদ্বান্ত নিতে তার হাসিই একমাত্র ভরসা। এবং মনে হচ্ছে তিনি জেনুইন হাসিই দিচ্ছেন।
অন্যদিকে শেখ হাসিনার হাসির দিকে খেয়াল করুন, উনার হাসি ফেইক বলে মনে হচ্ছে, একই সমাবেশে নরেন্দ্র মোদির সাথে উনার ফেইসের এক্সপ্রেশন আর বাইডেনের সাথের এক্সপ্রেশনের পার্থক্য ধরতে বডি ল্যাংগুয়েজ এক্সপার্ট হওয়া লাগে না।
শেখ হাসিনার হাতের দিকে খেয়াল করলে দেখতে পাবেন উনার হাত একটা আরেকটার উপর রাখা (clenched), এই হ্যান্ড জেশ্চারের মানে হচ্ছে আপনি স্ট্রেসড অথবা আনকমফর্টেবল, অর্থাৎ এই সাক্ষাৎকারে আপনি স্বতঃস্ফূর্ত না। এর মানে এও বুঝায় যে আপনি রিজার্ভড অর্থাৎ আপনি আপনার পজিশনে অনড় এবং আপনাকে নড়ানো বা কনভিন্স করা কঠিন হবে।
বেশকিছু ফটোতে দেখলাম উনি বাইডেনের সাথে আই কন্টাক্ট ব্রেক করেছেন। আই কন্টাক্ট থাকা মানে আপনি যা বলা হচ্ছে বা যে বলছেন তার প্রতি ইন্টারেস্টেড, আপনি এটেনশন পে করছেন এবং কনভার্সেশনে আপনি এক্টিভ। কিন্তু শেখ হাসিনার আই কন্টাক্ট না থাকা মানে উনি এই কনভার্সেশনে এক্টিভ না।
তিনি হয়তো রাজনৈতিক কারণে বাইডেনের সাথে সাক্ষাৎকার করাকে জরুরি মনে করেছেন, কিন্তু বাইডেনকে তিনি পছন্দ করছেন না, বা এই মিটিংয়ে উনার স্বতঃস্ফূর্ততা নাই।
কিন্তু বাডেনের হ্যান্ড জেশ্চার অনেকটা অপেন (খুব বেশি না আবার)
পুতুল আবার এক্সাইটেড বাইডেনের সাথে সাক্ষাৎ করতে পেরে, যেমন আমাদের মোমেন সাহেবও, তাদের স্মাইল ও বডি ল্যাংগুয়েজ পজিটিভ
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৩:৩৪