রফউল ইয়াদাইন
বা সালাতে তাকবিরে তাহরীমা,
রুকুতে যাওয়া, রুকু হতে উঠার সময় ও দুই
রাকাত শেষ তৃতীয় রাকাতে দারাবার
সময় দুই হাত
দিয়ে ইশারা করা যেভাবে তাকবিরে তাহরীমার
(প্রথম তাকবীরের) সময় বুক/কান পর্যন্ত
হাত উত্তলন করা হয়, একেই রফউল
ইয়াদায়ন বলে।
রফউল ইয়াদাইন সবাই করে। প্রত্যেক
মুসলিমই রফউল ইয়াদাইন করে। রফউল
ইয়াদাইন সালাতের প্রথম
তাকবীরে তাহরীমা আল্লাহু আকবার
বলার সময় করাটা ফরজ আর বাকি সময়
গুলোতে হাতের দারা ইশারা (বুক/কান
পর্যন্ত তোলা) করাটা সুন্নাহ যা রসুল
(সা) এর সহীহ হাদীস দারা প্রমানিত।
আসুন কিছু হাদীস দেখি বুখারী ও মুসলিম
থেকে….............
সহীহ আল বুখারী থেকে প্রথম
দেখবো ইনশাআল্লাহ।
---------------------------------------------
------------
১. ১০/৮৪ অধ্যায়: তাকবীরে তাহরীমা,
রুকুতে যাওয়া এবং রুকু হতে উঠার সময়
উভয় হাত উঠানো।
হাদীস নং-৭৩৬
-------------------
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসুল (সা)
কে দেখেছি, তিনি যখন সালাতের জন্য
দাঁড়াতেন তখন উভয় হাত কাঁধ বরাবর
উঠাতেন। এবং যখন তিনি রুকুর জন্য
তাকবীর বলতেন তখনও এ রখম করতেন।
আবার যখন রুকু হতে মাথা উঠাতেন তখনও
এমন করতেন এবং “সামীআল্লাহ হুলিমান
হামীদা” বলতেন। তবে সাজদাহর সময় এ
রকম করতেন না।
(তাওহীদ প্রকাশনী হাদীস নং-৭৩৬,
আধুনীক প্রকাশনী হাদীস নং-৬৯২,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন হাদীস নং-৭০০)
হাদীস নং-৭৩৭
------------------
আবু কিলাবাহ (রা) হতে বর্ণিত।
তিনি মালিক ইবুন হুয়ায়রিস (রা)
কে দেখেছেন, তিনি যখন সালাত আদায়
করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তার
দুহাত উঠাতেন। আর যখন রুকু করার
ইচ্ছা করতেন তখনও তার উভয় হাত
উঠাতেন, আবার যখন রুকু
হতে মাথা উঠাতেন তখনও তার উভয় হাত
উঠাতেন এবং তিনি বর্ণনা করেন যে,
আল্লাহর রসুল (সা) এরুপ করেছেন।
(তাওহীদ প্রকাশনী হাদীস
নং-৭৩৭,আধুনীক প্রকাশনী হাদীস
নং-৬৯৩,ইসলামিক ফাউন্ডেশন হাদীস
নং-৭০১)
সহীহ আল মুসলিম
থেকে দেখবো ইনশাআল্লাহ।
---------------------------------------------
---------
৯. অধ্যায়: তাকবীরে তাহরীমার সময়,
রুকুতে যাওয়ার সময়, রুকু
থেকে মাথা উঠানোর সময়, কাধ পর্যন্ত
হাত উঠানো (রফউল ইয়াদাইন)
মুস্তাহাব, কিন্তু সাজদাহ থেকে ওঠার
সময় এটা না করা মুস্তাহাব।
হাদীস নং-৭৪৭
-------------------
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আত তামীমী,
সাঈদ ইবনু মানসুর, আবু বাকর ইবনু আবু
শাইবাহ, আমর আন নাকিদ যুহায়র ইবনু
হারব ও ইবনু নুমায়র (রহ) সালিম
থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি রসুল (সা) কে দেখেছি-
যখন তিনি সালাত শুরু করতেন তখন উভয়
হাত কাধ পর্যন্ত উঠাতেন।
তিনি রুকুতে যাওয়ার আগে এবং রুকু
থেকে উঠার সময়ও এরুপ করতেন। কিন্তু
তিনি দুই সাজদার মাঝখানে হাত
উঠাতেন না।
(তাওহীদ পাবলিকেশন হাদীস নং-৭৪৭,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন হাদীস নং-৭৪৫,
ইসলামিক সেন্টার হাদীস নং-৭৫৮)
হাদীস নং-৭৪৮
-------------------
সালেম ইবনে আবদুল্লাহ (রা)
থেকে বর্ণিত। ইবনে উ‘মার (রা) বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামাযের
জন্য দাঁড়াতেন তখন নিজের দুই হাত কাঁধ
বরাবর উঠাতেন, অতপর
তাকবীরে তাহরিমা বলতেন।
তিনি রুকুতে যাওয়ার সময়ও এবং রুকু
থেকে উঠার সময়ও কাঁধ পর্যন্ত দুই হাত
তুলতেন। কিন্তু
সিজদা থেকে মাথা তোলার সময়
তিনি এরূপ করতেন না।
(তাওহীদ পাবলিকেশন হাদীস নং-৭৪৮,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন হাদীস নং-৭৪৬,
ইসলামিক সেন্টার হাদীস নং-৭৫৯)
দুটি করে হাদীস দেখালাম উৎসুক
যেকেউ উক্ত অধ্যায় পুরাটাই
দেখতে পারেন সেখানে আরোও অনেক
হাদীস আছে।
আসলে প্রত্যেকটি হাদীসের কিতাবেই
রফউল ইয়াদাইন এর হাদীস রয়েছে।
যেমন, সুনান আবুদাউদ,জামে’য়
তিরমিযী,সুনান নাসায়ী,সুনান
ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা ইমাম
মালেক,মুননাদে আহমাদ প্রমুখ হাদীসের
কিতাবে রফউল ইয়াদাইনের হাদীস
আছে।
অনেকে এই প্রমানিত রসুল(সা) এর
সুন্নাহ, রফউল ইয়াদাইনকে অস্বীকার
করে তার বলে যে রসুল (সা) প্রথম
জীবনে এরখম করেছিলেন পরে শেষ
জীবনে আর রফউল ইয়াদাইন করেন নাই।
তাদের জবাব মুখদিয়ে নয় হাদীস
দিয়েই দিবো ইনশাআল্লাহ।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা)
হতে বর্ণিত। রসুল (সা) যখন সালাত শুরু
করতেন, যখন রুকু করতেন, যখন রুকু
থেকে মাথা উঠাতেন তখন হস্তদয়
উত্তলোন করতেন কিন্তু সাজদার
মধ্যে হস্তদ্বয় উত্তলোন করতেন না।
রসুল (সা) মহান আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ
অর্থাত তার মৃত্যু পর্যন্ত সর্বদাই তার
সালাত (নামাজ) এরুপ করতেন।
(বায়হাকী,হেদায়াহ দেরায়াহ ১ম খন্ড
১১৪ পৃষ্টা)
তাই স্পষ্ট বোঝাগেলো রসুল (সা) মৃত্যুর
আগ পর্যন্ত রফউল ইয়াদাইন করেছেন
তা প্রমানিত।
ইবুন উমার (রা) বলেন, রফউল ইয়াদাইন
হলো সালাতের সৌন্দয্য, রুকুতে যাবার
সময় ও রুকু হতে উঠার সময় কেউ রফউল
ইয়াদাইন না করলে তিনি তাকে ছোট
পাথর ছুড়ে মারতেন।
(নায়ালুল আওত্বার ৩/২১, ফাতহুল
বারী ২/২৫৭)
ইমাম আবু হানিফার ছাত্রর ছাত্রের
রফউল ইয়াদাইন:
==========================
ইমাম আবু হানিফা (রহ) এর ছাত্র আবু
ইউসুফের সাগরেদ ইছাম (রহ) রফউল
ইয়াদাইন করতেন। আল্লামা আব্দুল হাই
লাখনোভী বলেন: ইছাম ইবনু ইউসুফ ইমাম
আবু ইউসুফের (রহ) এর শাগরেদ ছিলেন
এবং তিনি হানাফি ছিলেন।
তিনি রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু
হতে মাথা উঠার সময় দু হাত উঠাতেন
(রফউল ইয়াদাইন করতেন) (আল
ফাওঢায়েদুল বাহিয়্যাহ ১১৬ নুর
মোহাম্মদ প্রেস) আব্দুল্লাহ ইবনুল
মোবারক, সুফইয়ান ছাওরী এবং শুবাহ
(রহ) বলেন: ইছাম ইবনু ইউসুফ মুহাদ্দীস
ছিলেন তাই তিনি রফউল ইয়াদাইন
করতেন। (আল ফাওঢায়েদুল বাহিয়্যাহ
১১৬ নুর মোহাম্মদ প্রেস)
আসুন দেখি অন্যন্ন ইমামরা কি বলেছেন:
===========================
ইমাম বুখারী (রহ) তিনি রফউল
ইয়াদাইন যারা অস্বীকার করে তাদের
বিরুদ্ধ্যে হাদীসের একটি কিতাব
রচনা করেছেন নাম হলো ”জুজুল রফউল
ইয়াদাইন” নামে তাওহীদ
প্রকাশনী থেকে প্রকাশ
করা হয়েছে কিতাবটি। সেখানে মোট
১৯৬ টি হাদীস বিদ্যমান। আল্লাহু
আকবার।
আব্দুল কাদীর জীলানী (রহ) বলেন,
সালাতের শুরুতে রুকুতে যাওয়ার সময়
এবং রুকু হতে উঠার সময় রফউল ইয়াদাইন
করা সুন্নাত। (গুনিয়াতুত ত্বালীবিন
পৃষ্টা ১০)
শায়খ আবুতবালিব মাক্কি হানাফী (রহ)
বলেন, রুকুতে যাওয়ার সময় রফউল
ইয়াদাইন করা এবং তাকবীর
বলা সুন্নাত। (কূতুল কুলূব ৩/১৩৯)
কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী (রহ)
বলেন, বর্তমান সময়ের অধিকাংশ
আলেমের দুষ্টিতে রফয়ে ইয়াদাইন
সুন্নাত। অধিকাংশ ফাকিহ
এবং মুহাদ্দীসগনে একে প্রমান
করে থাকেন। (মালা বুদ্দা মিনহু
পৃষ্টা ৪২,৪৪)
==============================
====
তাই রফউল ইয়াদাইন (হাত উত্তলন করা)
কে অস্বীকার করা মুসলিমের কাজ নয়।
কেননা তা রসুল (সা) হতে প্রমানিত
একটি সত্য। যা অস্বীকার করার
ধৃষ্টতা মুসলিমের করা উচিত নয়
এবং কেউ রফউল ইয়াদাইন
করলে তাকে খারাপ চোখে দেখা উচিত
নয়। কেননা তা সহীহ হাদীস
দারা প্রমানিত।
আসুন রসুল (সা) এর
সুন্নাহকে আকড়ে ধরি কেননা হারিয়ে যাওয়া প্রায়
সুন্নাহ গুলোকে আকড়ে ধরলে ৫০ জন
সাহাবা (রা) এর সমান সাওয়াব
পাওয়া যাবে বলে রসুল (সা) বলেছেন।
আল্লাহ আমাদের কে বোঝার তাওফিক
দিন ও আমল করার
মানসিকতা তৈরি করে দিন। সুন্নাহর
বিরুধীতা করা থেকে রক্ষা করুন।
আমীন। কেননা সুন্নাহ
বিরুধীতা করলে সে স্পষ্ট
ভাবে গোমড়া হয়ে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৫