শান্তিময় বিশ্বে আজ যে হানাহানি, মারামারি তথা ধ্বংসলীলা দেখছি তার প্রধান ও সহায়ক হাতিয়ারই হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যাবহার। মুহুর্তেই ভুমি পরিনত হচ্ছে কারাবালার প্রান্তরে, নিমিষেই বলি হয়ে যাচ্ছে অসহায় মানবজাতী। ক্ষমতার দ্বন্ধ, হিংসা, স্বার্থ হাসিল করার প্রতিযোগীতা দিনে দিনে মানুষকে করে তুলছে পাষান্ড, হিংস্র ও প্রতিহিংসাপরায়ন। ধ্বংসের হাতিয়ার হয়ে উঠছে আধুনিক থেকে আরো অত্যাধুনিক। পৃথিবীর কোনায় কোনায় আরো সহজভাবে ছড়িয়ে পরেছে এসব ধ্বংসাত্বক আগ্নেয়াস্ত্র। বিশেষকরে দুর্বল, অসহায়, গরীব ও মধ্যপ্রাচ্যের মানুষরাই এসব হাতিয়ারের সহজ শিকারে পরিনত হতে হচ্ছে। এ থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা সদ্য জন্ম নেয়া পৃথিবীর নতুন বাসিন্দা যারাকিনা আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ নিরীহ নিষ্পাপ শিশু। ঠিক এই মুহুর্তে বিছানায় মাথা রেখে আমি যখন এসব বাক্য লিখে চলেছি তখন হয়তোবা হাসপাতালের লক্ষ লক্ষ শিশুর আত্তঃচিৎকারে এই পৃথিবীর আকাশ-বাতাস কেঁপে চলেছে। অবুঝ শিশুটি হয়তো মায়ের বুকের দুধ খাবার জন্য মৃত মায়ের লাশের বুকেই হামাগুড়ী দিয়ে চলেছে। আপনজনের বিভিষিকাময় মৃত্যুর সামনে অসহায় দাড়িয়ে আছে কেও। অস্ত্রের লেলিহানশিখা আর ক্ষুধার জ্বালায় মানুষ নিষ্পেশিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অস্ত্রের অহংকার বিকৃত করে দিচ্ছে মানব মতিষ্ক।। বিপন্ন হচ্ছে মানবতা নামক শব্দার্থটি।। নতুনভাবে গর্বের সাথে জন্ম নিচ্ছে নতুন নতুন কৌশলী অপরাধ প্রবনতা। যেসকল দেশের অস্ত্রের সক্ষমতা বেশী সেই সকল উন্নত দেশগুলোও কিন্তুু রক্ষা পাচ্ছে না অস্ত্রের ঝনঝনানি থেকে। নতুন করে জন্ম ও আরো শক্তিশালী হচ্ছে অনেক ভয়ংঙ্কর ভয়ংঙ্কর আর্ন্ডারওয়াল্ড অপরাধ গোষ্ঠী। রেহাই পাচ্ছেনা পৃথিবীর কোন দেশই। মানবজাতীর জীবন হয়ে উঠছে আতংকিত, সংকটাপন্ন আর বিপদজনক। আত্তঃরক্ষার্থে তৈরী হাতিয়ারটা পৃথিবীতে ক্রমাগত ক্ষমতার লিপ্সা, ক্রোধ আর শক্তির দাপট দেখাতে আত্তঃহনন প্রতিযোগীতা শুরু করেছে। যার যতবেশী অত্যাধুনিক আরো কর্যকরী অস্ত্রের মজুদ আছে তাকে ততোবেশী ক্ষমতাবান ও শক্তিশালী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একটি দেশের শক্তির পরিমাপক হিসেবে অস্ত্র হাতিয়ার যখন নিয়ামক হয় তখনতো এর উৎপাদন, ব্যাবহার আর ব্যাবসা বেড়ে চলবেই সারা দুনিয়ায়। এই সুযোগে অপরাধ চক্রগুলো অস্ত্র বাজারে আগমন আর নিয়ন্ত্রন করার ছক আকঁতে ব্যাস্ত বিভিন্ন লেবাসে। অস্ত্র চলে যায় নিয়ন্ত্রন ব্যাস্থার বাহিরে। সহজলভ্য হয়ে পড়ে বিভিন্ন অপরাধ চক্রের মানুষের কাছে। আর এর ফলাফল বিভিন্ন দেশে দেশে শিশু, অসহায় মানুষ নির্বিচারে হত্যা, অপরাধ দৌরাত্ব বেড়ে যাওয়া, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার বাসনা, দ্বন্ধ, নির্যান্তন। কারো স্বার্থহানী হলো বা রাগ হলো ব্যাস!! একটি বোতাম বা ট্রিগার টিপে দিলে নিমিষেই সবশেষ। শতশত মানবজাতী শেষ হচ্ছে অবলিলায়। ঠিক যেমন আমরা আনন্দের ছলে বা কর্মকান্ড দেখার আশায় পিঁপড়ার বাসায় কেরোসিন ঢেলে দিয়ে তাদের উচ্ছেদ করি আর মারা যেতে দেখে কৌতুহলি হয়ে আনন্দ বোধ করি, তেমনি আমরা নিজেরাই আজ অস্ত্রের বারুদের কাছে পিঁপড়ার মতো কৌতুহলি হয়েছি।
সারা পৃথিবী আজ ধ্বংসাত্বক অস্ত্র মজুদের প্রতিযোগীতায় নিমজ্জিত। কেউ নিরাপত্তা দেবার নামে আর কেউবা প্রতিরোধ করার নামে অজুহাতে তৈরী করে তাদের অস্ত্র ভান্ডার বৃদ্ধি করেই চলেছে। বিংশ শতাব্দী পেড়িয়ে আধুনিক অস্ত্রগুলো এখন হচ্ছে অত্যাধুনিক। নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যাবহার করে বানানো হচ্ছে আরো সহজে ধ্বংসাত্বক কার্যক্ষমতাসম্পন্ন আগ্নেয়াস্ত্র। বড়বড় শক্তিধর দেশের মুল্যবান মানুষগুলো বুঝতে পারে আগ্নেয়াস্ত্রের ক্রমাগত প্রভাব মানবজাতীর জন্য হুমকিই বয়ে নিয়ে আসছে। তাই তারা আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রন করার ছক তৈরী করছে। কিন্তু ততোদিনে সারা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অপরাধীর হাত স্পর্শ করে ফেলেছে অত্যাধুনিক প্রায় সব মেশিন। বিশ্ব অস্ত্র নিয়ন্ত্রক দেশগুলোর মজুদকৃত অস্ত্রের ব্যাবহার বিভিন্ন কার্যক্রম ও প্রভাব বিস্তারের ফলে সেই সব দেশ আর আন্তর্জাতিক সংস্থার উপোর আস্থা হারিয়ে আরো অস্ত্র মজুদ করে যাচ্ছে তুলনামুলক দুর্বল রাষ্ট্রগুলো নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে বাহানায় । এর ফলে কিন্তু অঘোষিতভাবে ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে গোপন সব অত্যাধুনিক মরনাস্ত্রের ব্যাবসা ও উৎপাদন।
আত্বরক্ষার নামে কুক্ষাত্য আগ্নেয়াস্ত্র হাতিয়ার আগমনের ইতিহাস, ব্যাবহার, ধ্বংস কার্যক্রম, আধুনিক অস্ত্র কিভাবে এলো ? আগ্নেয়াস্ত্র কি ? কতো ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র আছে ? বিভিন্ন দেশে আগ্নেয়াস্ত্রর ধরন, ধ্বংসাত্বক ক্ষমতা, অস্ত্রের ব্যাবহারের ফলাফল জানার ও জানাবার উপোলব্ধী করে অনলাইনে প্রকাশিত তথ্য উপাত্ত সংবলীত লেখা সংগ্রহ করে একত্রে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি পাঠকদের জন্য। আশাকরি সকলে এরকম ধ্বংসাত্বক হাতিয়ার ব্যাবহার, উৎপাদন, সরবরাহ নিষিদ্ধ করতে সোচ্চার হবো। আর আমাদের সুন্দর এই পৃথিবীটা নিরাপদ করবো ধ্বংসাত্বক অস্ত্রমুক্ত পৃথিবী গড়ার আন্দোলনের মাধ্যমে।।
জন্ম ও ইতিহাস : চীনে ট্যাং রাজত্বকালে ৮৫০ সালের দিকে এক উদ্যমী রসায়নবিদ মানুষকে অমর করার জন্য এক সাহসী পরীক্ষা চালান। বহুবার ব্যর্থ হওয়ার পর চূড়ান্ত স্তরে এক সংমিশ্রণ তৈরি করেন, যাতে ৭৫ শতাংশ পটাশিয়াম নাইট্রেটের সঙ্গে ১০ শতাংশ সালফার এবং ১৫ শতাংশ চারকোল মেশান। এটি আগুনের সংস্পর্শে আসামাত্র বিস্ফোরিত হয় ভীষণভাবে। আলকেমির দুই হাত পুড়ে, মুখ পুড়ে—ঘরবাড়ি সব পুড়ে ছারখার হয়ে যায়।
এর থেকে কিন্তু চীনারা অমর হওয়ার ওষুধ না পেলেও আতশবাজি ফোটাতে পেরেছিল। তবে অস্ত্র হিসেবে চীনারাই প্রথম ব্যবহার করে এই রসায়ন, যার নাম গানপাউডার, মোঙ্গলদের আক্রমণ ঠেকাতে। নিজেরা বন্দুক তৈরি করেছিল বাঁশ কেটে নল বানিয়ে—এটাই হলো পৃথিবীর আদিম বন্দুক বা আগ্নেয়াস্ত্র। এই গানপাউডার ১৩ শতকে ইউরোপে যায়। সেখানে এটাকে উন্নত করা হয়। ১২৪৭ সালে যুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়।