- তুই নাক ডাকিস!!
- চুপ থাক...আমি মোটেও নাক ডাকি না...
- হি হি!! তুই যা বাজে করে নাক ডাকিস...চিকন সুরে ভয়ে ভয়ে...মনে হয় থেমে থেমে বিল্লী কাঁদছে...হি হি!!
নেহা খুব রেগে গেলো “সবসময় বানিয়ে বানিয়ে এমন আজেবাজে কথা বলিস ক্যান? তুই কিভাবে জানিস আমি নাক ডাকি কিনা? কোন প্রমাণ আছে তোর কাছে?”
- জানি বলেইতো বলছি। মনে আছে গতমাসে জিনিয়ার গায়ে হলুদের আগের রাতে আমরা সব বন্ধুরা ওর বাসায় ছিলাম। তখনই তো তোর এই বিল্লীমার্কা নাসিকা বাঁশরী শুনলাম...হি হি!!
- আরেহ!! সেরাতে কি গাদাগাদি করে মেঝেতে বন্ধুরা ঘুমালাম। আর আমার তখন ঠান্ডাও লেগেছিলো...নাক দিয়ে পানি পড়ছিলো...মনে নেই তোর?
- এখনতো এইসব অজুহাত দিবিই...স্বীকার করে নিলে কি হয়? নাকডাকা তো কোন ফৌজদারী দন্ডবিধিতে অপরাধ না...আর তোর নাকডাকাতো শিল্পের পর্যায়ে পড়ে। মানুষ ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে আর তুই বাজাস বাঁশী...হি হি হি!!
- প্রমাণ ছাড়া স্বীকার করবো কেন? প্রমাণ দে!!
- তুইতো এখনো পর্যন্ত একা ঘুমাস...প্রমাণ দেবো কিভাবে? সামনের মাসে রাহুলের কাছে জেনে নিস...বৌয়ের নাসিকা গর্জনে বাসররাতে বরের ঘুম নষ্ট...হি হি!!
ফোনের ওপাশে লিমার হাসি শুনে নেহার রাহে গা জ্বলে যাচ্ছে। ও নাকি নাক ডাকে!! রাহুলের সাথে ওর বিয়ের কথাবার্তা মাত্র পাকা হলো। সামনের মাসে বিয়ের তারিখও ঠিক। নেহা পুরো দিব্য চক্ষে দেখলো বাসর রাতে রাহুল অবাক হয়ে উঠে বসে আছে আর ও হা করে বিশ্রী শব্দে নাক ডাকছে। ছি ছি!! নেহার খুব বাজে লাগছে।
- আচ্ছা শোন...আসলেই জানতে চাই নাক ডাকি কিনা!! প্রমাণ পেলে স্বীকার করে নেবো...কথা দিচ্ছি।
- তুই বরং খালাম্মাকে বল একদিন তোর সাথে রাতে ঘুমাতে...উনি শুনে জানাবেন।
- কি যে বলিস না!! মা বুঝি রাত জেগে আমার নাক ডাকা শোনার জন্য বসে থাকবে। বললে ভাববে আমার মাথা নষ্ট! আর রাতে বাবাকে ছেড়ে মা আমার সাথে থাকবে না। বাবার শরীরটা আজকাল ভালো নেই জানিসইতো...ডায়েবেটিসটা খুব বেড়েছে।
- আইডিয়া হ্যাজ!! তুই ঘুমানোর আগে ফোনের ভয়েস রেকর্ডার অ্যাপটা অন করে রাখ। সকালে উঠে শুনে নিবি...ব্যাস ঝামেলা শেষ। আর শোন রেকর্ডিংটা আমাকে শোনাবি কিন্তু। নাকডাকা প্রমাণ হলে খাওয়াতে হবে...
- ধ্যাত!! এর মধ্যে আবার খাওয়া আসলো কিভাবে? আচ্ছা যা...নাক ডাকলে ট্রিট পাবি!! এখন রাখি...রাত হয়ে যাচ্ছে...ঘুমাবো!!
ফোন রেখে মনে মনে লিমাকে ভেংচি দিলো নেহা। নাক ডাকা রেকর্ড হলেও ও স্বীকার করবে নাকি!! বাপরে তাহলে আর দেখতে হবে না। লিমাটা যে ফাজিল!! উঠতে বসতে এই কথা শুনাতে শুনাতে জীবন ছারখার করে দেবে। এসির টেম্পেরাচারটা ঠিক করে দিয়ে সাইড টেবিলে ফোনটা রেখে ভয়েস ভয়েস রেকর্ডার অ্যাপটা অন করলো নেহা। রাত বারোটা বেজে গেছে...ক্লান্ত লাগছে। টেবিল ল্যাম্পটা নিভিয়ে দিয়েই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলো ও।
হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে গেলো...এলার্ম বাজেনিতো!! ঘুমঘুম চোখে সাইড টেবিলের ডিজিটাল ঘড়ির দিকে তাকালো নেহা। অন্ধকারে লাল চক্ষু সংখ্যারা জ্বল জ্বল করে জানান দিচ্ছে এখন সবে রাত পোনে তিনটা। তিনঘন্টাও হয়নি ঘুমিয়েছে। আশ্চর্য!! ঘুম ভাংলো কেন? পানির পিপাসা হচ্ছে। নেহা চাদরের ভেতর থেকে হাত বাড়িয়ে টেবিল ল্যাম্পের আলো জ্বাললো। উঠে বসে ল্যাম্পের সামনে রাখা পানির বোতল খুলে দু’তিন ঢোঁক খেলো। বোতলটা রাখতে যেতেই ফোনের দিকে চোখ পড়লো।
“আরেহ!! রেকর্ডিংটা শুনে দেখলে হয়।“ হাতে ফোন নিয়ে অ্যাপটা বন্ধ করে রেকর্ডিংটা স্পিকারে অন করলো নেহা। প্রথম দিকে আশেপাশের বাড়ি থেকে ভেসে আসা শব্দ, দূরের রাস্তার গাড়ির ঝাপসা শব্দ, এসির শোঁ শোঁ আওয়াজ!! নেহা রেকর্ডিংটা ফরোয়ার্ড করলো...প্রায় চল্লিশ মিনিট পরেও নাক ডাকার আওয়াজ নেই। ওর মুখ খুশী খুশী হয়ে গেলো...ও ঠিক জানতো!! লিমার যত্তোসব বানোয়াট কথা!!
অফ করে দিতে যেয়েও কি মনে করে নেহা রেকর্ডিংটা আরেকটু আগালো। একি!! হালকা একটা কিসের আওয়াজ? ওইতো শোনা যাচ্ছে...হালকা নাক ডাকার শব্দ, তালে তালে উঠছে নামছে। নেহার চোখে জল চলে এলো। ইশশ!! কি বিশ্রী করে নাক ডাকছে ও। আচ্ছা নাক ডাকা বন্ধ করার কি কোন উপায় আছে বা অষুধ? ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ শোনে আরেকটা আওয়াজ। একি? এটা কিসের শব্দ? নেহার দমবন্ধ হয়ে গেলো। আরেকটা নাক ডাকার আওয়াজ? দু’জনের নাক ডাকা...তা কি করে হয়?
ভুল শুনেছে নিশ্চয়ই!! ফোনটা কানের কাছে নিয়ে এলো নেহা। নাহ!! এখনোতো একজোড়া নাসিকা গর্জনই...এ কিভাবে সম্ভব? আচমকা ফোনে একটা অচেনা শীতল কন্ঠ সাপের মতো হিসহিসিয়ে বলে উঠলো “বলেছিলাম না...তুমি নাক ডাকো!!”
নেহা ফোন ছুঁড়ে ফেলে দিলো। ওর বুক হাপরের মতো ওঠানামা করছে। ভয়ে আতঙ্কে ও নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। মেঝেতে ফোনের দিকে তাকালো নেহা, চুরমার স্ক্রিণ!! ঠিক তক্ষুনি টেবিল ল্যাম্পের আলোটা দপ করে নিভে গেলো। আর...আর অন্ধকারে সেই অতিপ্রাকৃত স্বর নেহার কানের কাছে রক্ত জমাট করে হেসে উঠলো “হা হা হা...বলেছিলাম না...তুমি নাক ডাকো!!”
© শিখা রহমান
বিঃদ্রঃ আজ ৩১শে অক্টোবর। HAPPY HALLOWEEN!!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:৪১