হাশরের ময়দানে আল্লাহর আদালতে ডান পাশের দল সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন, “এরা লাভ করবে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ছায়াযুক্ত কণ্ঠহীন কুল ও ফলবাগান আর সর্বদা প্রবাহিত পানির ঝর্ণাধারা ও অফুরন্ত ফলমূল। এ সকল ফলমূল সকল মৌসুমেই পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাবে এবং তা লাভ করবেও তার স্বাদ লাভ করতে কোন বাধা বিপত্তি থাকবে না। তারা উচ্চ আসনে সমাসীন থাকবে। তাদের স্ত্রীদেরকে নতুন করে গঠন করা হবে। তাদেরকে কুমারী বানিয়ে দেয়া হবে। তারা হবে প্রেমদায়িনী। তাদের বয়স হবে সৌন্দর্য পরিস্ফুটিত হবার বয়স। এ সবকিছু ডান পাশের মানুষের জন্যে।” (সূরা তুর)
সাধারণ মানুষদের মধ্যে যারা জান্নাতি হবেন তারাই ডান পাশের দলে অবস্থান করবে। বেহেশতে কুমারিগণ ওই সমস্ত নারীই হবেন পৃথিবীতে যারা ইসলামের বিধান অনুযায়ী জীবন-যাপন করেছেন। পৃথিবীতে তারা বৃদ্ধা অবস্থায় ইন্তেকাল করলেও বেহেশতে তারা হবে নব যৌবনা। দুনিয়ায় তারা সুন্দরী অথবা কুৎসিত থাকুন না কেন, বেহেশতে তারা হবেন অকল্পনীয় সুন্দরী। তারা একাধিক সন্তানের মা হয়ে ইন্তেকাল করলেও বেহেশতে হবে চির কুমারী। স্বামীর সাথে অসংখ্যবার মিলিত হলেও তাদের কুমারীত্ব মুছে যাবে না। এসব সৌভাগ্যবতী নারীগণের স্বামীগণও যদি বেহেশতবাসী হন, তাহলে সেখানে তারা একে অপরকে লাভ করবে। অন্যথায় তাদের নতুন করে বিয়ে হবে। তিরমিজি শরীফে একটি ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, একদিন এক বৃদ্ধা নারী নবী (সা: ) এর কাছে এসে বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা: ) আমার জন্যে আপনি দোয়া করুন। আমি যেন আল্লাহর বেহেশত লাভ করতে পারি।
মহানবী (সা: ) সাধারণ হাল্কা রসিকতা করে মানুষকে অনেক সময় আনন্দ দান করতেন। ওই বৃদ্ধার সাথে রসিকতা করে তিনি বললেন, কোন বৃদ্ধা তো বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না! (একটা কথা মনে রাখতে হবে, নবী (স: ) রসিকতা করতেন বটে, কিন্তু সে রসিকতা হতো সত্য ও ন্যায়ভিত্তিক। কাল্পনিক কোন কথা বা মিথ্যে কথা দ্বারা তিনি রসিকতা করতেন না) নবী (সা: )-এর কথা শুনে বৃদ্ধা হতাশ হয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে চলে যেতে লাগলেন। তিনি (সা: ) অন্য সাহাবাদের বললেন, তোমরা ওই নারীকে ডেকে বলে দাও, কোন বৃদ্ধা বেহেশতে প্রবেশ করবে না। আল্লাহ যে নারীদেরকে বেহেশত দান করবেন তাদেরকে তিনি কুমারী করে পাঠাবেন।
অর্থাৎ কোন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বেহেশতে থাকবে না। পৃথিবীতে মানুষ যত বৃদ্ধ অবস্থায় উপনীত হয়েই মৃত্যুবরণ করুক না কেন, তারা যদি বেহেশতে প্রবেশের অনুমতি পায়’ তাহলে তারা নতুন যৌবন লাভ করবে। তাবারানীতে হযরত উম্মে সালমা (রা: )-এর একটি বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, তিনি নবী (সা: )-এর কাছে কুরআনে বর্ণিত বেহেশতের কুমারীগণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছিলেন।
মহানবী (সা: ) বলেছিলেন, এরা হলেন সেই সব নারী যারা পৃথিবীতে মৃত্যুবরণ করেছিল। আর তারা ছিল বৃদ্ধা। তাদের চোখ ছিল কোঠরাগত। মাথার চুল ছিল পাকা এবং সাদা। তারা এরূপ বৃদ্ধা হবার পরেও আল্লাহ তাদেরকে কুমারী করে পয়দা করবেন। হযরত উম্মে সালমা (রা: ) জানতে চাইলেন, পৃথিবীতে যদি কোন নারীর একাধিক স্বামী থাকে, তাহলে বেহেশতে সে কোন স্বামীর সংগ লাভ করবে? নবী (সা: ) বললেন, তাকে পূর্ব স্বামীদের মধ্যে একজনকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী বেছে নেয়ার অধিকার প্রদান করা হবে। মহিলা ওই স্বামীকে বেছে নেবে, যার স্বভাব চরিত্র আচরণ ছিল সর্বোত্তম। সে নারী আল্লাহর নিকট এভাবে আবেদন করবে, ‘হে আল্লাহ, যেহেতু অমুকের ব্যবহার ও আচার আচরণ আমার প্রতি অন্যদের তুলনায় অনেক ভালো ছিল, সুতরাং আমাকে তারই হবার অধিকার দাও।”
তারপর মহানবী (সা: ) বললেন, “উম্মে সালমা, উত্তম চরিত্র ও আচার ব্যবহার এভাবে লুটে নেবে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ-মংগল।
বেহেশতে যে সব পুরুষগণ প্রবেশ করবেন, তারাও নতুন যৌবন লাভ করবেন। অপূর্ব সুন্দর চেহারা-স্বাস্থ্য হবে তাদের। তাদের বয়স হবে নব্য যুবকের ন্যায়। অদ্ভূত সুন্দর হবে তাদের দেহ সৌষ্ঠব।
ইত্তেফাকে প্রকাশিত
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:৩৭