somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রামপাল আর আরামে দেশপ্রেম প্রদর্শনীর ইল্যুশন

০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শুরু করছি এই পোস্টের মূল বিষয়ের সাথে প্রাসঙ্গিক একটা স্মৃতিচারণ করে – গণজাগরণ মঞ্চের কথা। আমরা নিশ্চয়ই ভুলে যাইনি কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার জন্য আইন সংশোধনের দাবিতে যেদিন কিছু অনলাইন এক্টিভিস্ট রাস্তায় নামলো আর তাতে সাড়া দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে এলো, সেদিন অনেক মানুষ আবেগে থরো থরো হয়ে এই দেশের মানুষ দেশপ্রেমের জয়গান গেয়েছিল, জানিয়েছিল দেশের প্রয়োজনে এই দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে, ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’ শুরু করেছে। শহরের একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিং দিনের পর দিন আটকে রেখে এই আন্দোলন শুধু দেশপ্রেম আর প্রতিবাদের স্বাক্ষর ছিল, এটা বলাটা খুব যৌক্তিক বলে আমি মনে করি না, আমি মনে করি আমাদের সত্যিকার দেশপ্রেম আর প্রতিবাদের শক্তির তেমন কোন পরীক্ষাই হয়নি ওই সময়।

গণজাগরণ মঞ্চ নিশ্চয়ই শুরু হয়েছিল সরকারের ওপর অনাস্থা দেখিয়ে, কিন্তু এটাও ঠিক সরকার খুব দ্রুত এই আন্দোলনের একরকম স্বপক্ষ শক্তি হিসাবে নিজেকে প্রকাশ করে। অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিং এ এমন অবস্থানকে ছত্রভঙ্গ করা তো দূরে থাকুক, সরকার দিনের পর দিন নিরাপত্তা দিয়েছে সবাইকে থাকবার জন্য। এরকম একেবারে ঝুঁকিহীন একটা অবস্থানের অংশ হতে অসংখ্য মানুষ আসে ঢাকা, এমনকি দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে। আমি বলছি না, ওখানে যাওয়া সব মানুষের দেশপ্রেম নেই, কিন্তু এটা নিশ্চিন্তেই বলা যায় রাষ্ট্রীয় স্বার্থে সরকারী প্রচন্ড বাধার মুখে আন্দোলন করে সত্যিকার দেশপ্রেমের পরীক্ষা ওই অবস্থানের মধ্যে ছিল না। এর প্রমাণ পাওয়া যায় কিছুটা পরেই – এক পর্যায়ে ওই সংগঠন ভেঙে দেয়া হয় সরকারী দলের মাধ্যমে, তাদের নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে দেখি আমরা। ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে অন্য ইস্যু নিয়ে রাস্তায় নামতে গিয়ে পুলিশের পিটুনি খেতে দেখেছি আমরা, আর ইমরানের সাথে রাস্তায় এখন দেখা যায় সাকুল্যে ২০/২৫ জন মানুষকে।

এবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে। সঙ্গত কারণেই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ফেইসবুকে আন্দোলন এখন তুঙ্গে – অবশ্য ফেইসবুকে বাঘের ছবি দিয়ে স্ট্যাটাস দেয়া আর ‘আমি…….সংবিধানের ৭(১) ধারা মতে….’ পিটিশন লিখাকে যদি আন্দোলন বলা যায়। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কতোভাবে দেশের জন্য ক্ষতিকর সেটা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই – দেশপ্রেমিক অনেক বিশেষজ্ঞ এসব নিয়ে বিস্তারিতভাবে লিখছেন বহুদিন ধরেই। গুলশান আর শোলাকিয়ার ঘটনার পরের ডামাডোলের মধ্যে সরকার রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চূড়ান্ত চুক্তি সই করে ফেলেছে। এতোদিন আমাদের মধ্যে রামপাল নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা না থাকলেও চূড়ান্ত চুক্তির কারণে এখন আমরা অনেক ‘সংবেদনশীল’ হয়েছি। ফেইসবুকে এখন আমরা দারুণ ‘সরব’। এটা আমাদের সত্যিকার দেশপ্রেমের পরিচয় দেয় কি? B-)

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে গত ২৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এর অভিমুখের মিছিল পুলিশের টিয়ার গ্যাস আর লাঠির পিটুনিতে ছত্রভঙ্গ হয়। সেদিন মিছিলে গিয়েছিল সাকুল্যে হাজার খানেক মানুষ। এর প্রতিবাদে গতকাল দেশব্যাপী হয় বিক্ষোভ সমাবেশ। আগের দিনের ঘটনার কারণেই কিনা জানি না, এই সমাবেশে মানুষের উপস্থিতি হয় আরও কম। লক্ষ লক্ষ ‘দেশপ্রেমিক’ মানুষ মিলে ফেইবুকে ভরিয়ে ফেলছি আমরা, কিন্তু এই জাতির অতি গুরুত্বপূর্ণ এক সম্পদ সুন্দরবন রক্ষায় আমরা রাস্তায় নেমে আসছি না। রাস্তায় নামার কথা এজন্য আসছে, শুধু ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আমাদের দেশপ্রেম প্রকাশিত হলে যে কোন স্বৈরাচারী সরকারের পোয়াবারো – এসবকে তারা থোড়াই কেয়ার করেন; তারা করে যেতে পারে যে খুশি তা।

অন্যভাবে ভাবা যাক বিষয়টা – রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিলের দাবিতে আবার শাহবাগে মানুষের জমায়েত হলো, আর সরকার সেটাকে পিটিয়ে উঠিয়ে না দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের মতো আরামে থাকতে দিলো। নিশ্চিতভাবেই কি বলা যায় না, আবারো হাজার হাজার বা লক্ষ লক্ষ মানুষ দেশপ্রেম দেখাতে রাস্তায় নেমে আসবেন? গণজাগরণ মঞ্চ আমাদের মধ্যে একটা বাজে ইল্যুশন তৈরি করেছে আমাদের মধ্যে – আমরা অনেকেই ধরে নিয়েছি রাষ্ট্র আর জনগণের স্বার্থরক্ষার আন্দোলন পিকনিকের মতো আরামের ব্যাপার।

সাংবিধানিকভাবে মানুষের ‘জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার’ থাকলেও আমাদের দেশের মতো অবিকশিত গণতন্ত্রের দেশে সরকারের বিপক্ষে গেলেই যে কোন সমাবেশ এবং শোভাযাত্রার ওপর দমন-পীড়ন নেমে আসা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু সেটার ভয়ে আমাদের দেশপ্রেম শিকেয় উঠবে? গণজাগরণ মঞ্চের মতো আরামে দেশপ্রেম দেখানো যাচ্ছে না বলে আমরা আমাদের চোখের সামনে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাওয়া মেনে নেবো?

ফেইসবুকে যারা হরদম নানারকম স্ট্যাটাস আর পিটিশন দিয়ে রামপাল নিয়ে অবস্থান জানান দিচ্ছেন, সেটার একটা ভালো দিক আছে – এতে এই প্রশ্নে মানুষের অবস্থানের একটা ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু এটা কোনোভাবেই সরকারের স্বৈরাচারী অবস্থানের হেরফের ঘটাবে না বলেই আমার বিশ্বাস। তাই সবার উচিৎ এই ইস্যুতে রাস্তায় নেমে আসা, রাস্তায় তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলা। তাতেই সরকারকে হয়তো এই চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য করা যাবে। আর এতে সুন্দরবনকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।

আর এস্টাব্লিশমেন্ট এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গেলে টিয়ার গ্যাস, লাঠির বাড়ি, আর কিছু ধরপাকড়ের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকেই – আমাদের মতো দেশে এটা হতেই পারে। আমাদের মনে রাখা দরকার শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ কোনভাবেই সরকারের সিদ্ধান্ত বিরোধী আন্দোলনের আদর্শ হতে পারে না – কেউ সেটা ভেবে থাকলে সেটা স্রেফ তার একটা ইল্যুশন। যত দ্রুত সম্ভব এটা থেকে বেরিয়ে না আসলে আমাদের দেশ এবং দশের ক্ষতি আমরা ঠেকাতে পারবো না কোনভাবেই।
সোর্স

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:৩১
৫টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর এজেন্ট

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২



জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর একজন এজেন্ট। এই তথ্য কেউ জানতো না। তার ফ্যামিলিও জানতো না। ১৯৪১ সালে বর্ডার ক্রস করে সে ঢুকেছিল পাকিস্তান। তারপর আস্তে আস্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×