somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুবাদ গল্প: মাছ বিক্রেতা

১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দরজাটা খানিকটা খুলে উঁকি দিয়ে প্রহরী বলে, ‘ম্যাডাম, মাছ বিক্রেতা এসেছে। আপনি কি আজ মাছ রাখবেন?’

আমি চেয়ারটা ঘুরিয়ে প্রহরীর দিকে তাকাই। আমরা একটা জরুরি রির্পোট তৈরি করতে হবে। সেটা থামিয়ে মাছের দাম নিয়ে দর-কষাকষি করার মতো সময় আমার নেই। বললাম, ‘আজ না। বরং তাকে আগামি সপ্তাহে আসতে বলো।’

‘কিন্তু সে এখন এখানেই আর আপনার সঙ্গে দেখাও করতে চায়।’



অগত্যা কিছুটা বিরক্ত হয়েই আমি চেয়ার ছেড়ে উঠি এবং অফিসের ভেতরেই ছাউনি দেয়া পার্কিং জোনে যাই। মাছ বিক্রেতা ওসমানি সেখানেই দাঁড়িয়ে। তার কালো গুরুগম্ভীর মুখখানা শ্রদ্ধার সঙ্গে নিচের দিকে ঝুকে আছে। সে একটা ছেঁড়া টি-শার্ট আর হাফ-প্যান্ট পরা। সঙ্গে আছে মাছের ঝুড়ি ও দাঁড়িপাল্লা। কিন্তু তবু তার চেহারায় কেমন যেন একটা সৌমকান্তি ভাব আছে যাতে তাকে একজন চিত্রকর বা শিল্পী মনে হয়।

‘কী ধরনের মাছ আছে তোমার কাছে ওসমানি?’

‘শৌল এবং কার্পমাছ, ম্যাডাম।’

‘টাটকা তো?’

‘জি¦, ম্যাডাম।’

‘আমি কি দেখতে পারি?’ আমি সবসময় নিজেই দেখে শুনে মাছ কিনতে আগ্রহ বোধ করি। মাছগুলো ধরে দেখি সেগুলো নরম কিনা, চোখ স্বচ্ছ কিনা, কোনো দুর্গন্ধ আসে কিনা- ঠিক আমার মা আমাকে যেভাবে শিখিয়েছিলেন। মাছগুলো আসলেই ভালো তাই আমি দু’কেজি নিয়ে নেই। আজ রাতে কিছুটা রাঁধতে পারব আর বাকিগুলো রেখে দেবো ফ্রিজে। ওসমানি দ্রুত কাজ করল। মাছ মাপলো, কাটলো যত্ন নিয়ে। দশ মিনিটেরও কম সময়ে সে মাছগুলো সুন্দরভাবে পরিষ্কার করে একটা বরফভর্তি ব্যাগে ভরে আমার হাতে দিল।



‘ধন্যবাদ ওসমানি। আগামি সপ্তাহে আবার দেখা হবে।’ বলে মাছের দাম ও কিছুটা অতিরিক্ত ওর পরিশ্রমের জন্য দিয়ে আমি অফিসের দিকে রওনা হলাম। ওসমানি তখনও দাঁড়িয়ে। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। মাথার টুপিটা হাতে। তাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে।

‘তোমার বাড়ির সবাই কেমন আছে?’ আমি যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলাম।

‘জি¦ ভালো, ম্যাডাম।’

‘তোমার বৌ?’

‘সেও ভালো, ম্যাডাম।’

‘তোমার বাচ্চাদের খরব কী?’

‘ভালো ম্যাডাম। কিন্তু ছোটটা একটু অসুস্থ ছিল।’

‘ওহ্, একেবারে শেষের বাচ্চাটার কথা বলছো? বয়স কত ওর?

‘এই দু’য়ের মতো হবে।’

‘তো, এখন কি অবস্থা, একটু ভালো তো?

‘এই দুই রাত আগে তার জ¦র এসেছিল। আমার বৌ তাকে গোসল করিয়ে খাওয়াতে চেষ্টা করেছিল কিন্তু তার জ¦র নামছিলই না। মনে হয় ম্যালেরিয়া। আমরা অনেক কিছুই করছিলাম কিন্তু সে কেবল নিস্তেজই হয়ে পড়ছিল। তাই তাকে ফার্মেসীতে নিয়ে যাই। আপনি তো জানেনই আমার কাছে টাকা-পয়সা নেই। আর ঐ দিন মাছও বিক্রি করিনি।’

বিরক্ত হয়ে রাগের সুরেই বলি, ‘তাহলে পরে তুমি কি করেছিলে ওসমানি?’ এই মানুষগুলো কেন বোঝে নাÑ এমন জ¦র হলে তাকে নিয়ে ঘুরতে হয় না। ‘তোমার দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত ছিল।’

‘হুম, ফার্মেসি থেকেও তা বলেছিল কিন্তু আমার কাছে টাকা না থাকায় আমি তাকে বাড়িতেই নিয়ে আসি।’

‘বাড়িতে নিয়ে আসি মানে কি ওসমানি? তুমি অফিসে আসোনি কেন? আমার কাছে তো টাকা চাইতে পারতে।’

‘অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। অনেক রাত ছিল তখন আর অফিস তো খোলা ছিল না।’

‘তাহলে পরে কি হলো? তুমি তো প্রতিবেশি কারো সাহায্যও নিতে পারতে। এখন ওর কী অবস্থা?’

‘গত রাতে ও মারা গেছে, ম্যাডাম।’

আমার বুকের ভেতর যেন একটা বিশাল পাথর থেকে ধাক্কা মারল। আমার ঠোঁট দুটো কেঁপে কেঁপে উঠলো।

‘কি! ওসমানি! তুমি ঠিক বলছো তো? ও কোথায়?’

‘আজ ভোরে ওকে কবর দেয়া হয়েছে। আমরা মুসলিম তাই আমাদের ধর্মীয় নিয়ম অনুসারে মৃত্যুর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কবর দিতে হয়।’ ওসমানির চোখ তখনও স্থির ভাবে নিচের মেঝেতে তাকিয়ে রয়েছে।

আমি হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম।

ভোরে বাচ্চাকে কবর দিয়ে এসে মাছ বিক্রেতা মাছ বিক্রি করছে। আমার তিন বছরের বাচ্চাটা এখন বাড়িতে ঘুমিয়ে আছে। ওর বিছানার চারপাশে সুন্দর সুন্দর খেলনা ছড়িয়ে আছে। গতবছরও ওসমানিকে আমার বাচ্চার পুরোনো কাপড় দিয়েছিলাম এবং এবারও কিছু কাপড় গুছিয়ে রেখেছিলাম দেওয়ার জন্য। আমার বাচ্চার গায়ে যখন সামান্য র‌্যাশ হয় তখন আমি কতটা বিচলিত হয়ে পড়ি অথবা মাস কয়েক আগে যখন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল তখন আমার অবস্থা কী হয়েছিল! আমি কী করতাম যদি সেও.......

আমার ভাবনার বিক্ষিপ্ত স্রোতকে আমি আটকাতে পারছি না।

‘দুঃখিত ওসমানি।’ এই বলে কিছুটা টাকা বের করে ওর দিকে দিয়ে বলি, ‘এগুলো নাও বাকি মাছগুলোর দাম হিসেবে। আর..............বাড়ি যাও।’





অনুবাদ:

সুব্রত দত্ত

উত্তরখান, উত্তরা, ঢাকা

জুন ০৪, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ।



মূল গল্প:
The Fishman (English story)

by Amba Mpoke-Bigg (Ghana)

Strategic Communication Expert

UN & AU.

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪০
১০টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×