somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাতা কাহিনী (রম্য)

২৫ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ছাতার বয়স এ বছর নয়ে এ পড়লো।
ছাতার রঙ গাঢ় কালো নয়। এই জন্যে কেউ চট করে দেখে বুঝতে পারে না যে ছাতাটা এত পুরনো। ছাতা মেলে ধরার ক্ষেত্রে বিশেষ কসরত প্রয়োগ করতে হয়। ছাতার হাতলের যেখানটায় বোতাম আছে, সেখানে টিপলেই ছাতা খুলবে না। হাতলে দুটো অংশ। দুটোই ফিক্সড ছিল আগে। এখন উপরের অংশ নড়বড়ে হয়ে গেছে। এই নড়বড়ে অংশটি বিশেষ কায়দায় এদিক ওদিক নড়াতে হয়। তারপর বোতামে টিপতে হয়। এমনভাবে টিপতে হবে যেন বেশি চাপ না পড়ে। বেশি চাপ পড়লে দীর্ঘ সময়ের জন্য আর ছাতা খোলা যাবে না। একটা নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হবার পর আপনা আপনি খুলে যাবে।
এই ছাতার ভয়ংকর একটা রোগ আছে! যখন তখন এটি উলটে যায়। এর জন্য প্রবল বাতাসের দরকার নেই। ছাতা মেলে জাস্ট একটু উচুনিচু করলেই ছাতা যায় উলটে। আমার অনেক বন্ধুই এই ছাতা ব্যবহার করে এরকম অভিযোগ করেছে। অবশ্য আমার কাছে কখনো উলটে যায় না। ছাতা বন্ধ করার ক্ষেত্রেও বিশেষ কসরত দেখাতে হয়। অনন্ত জলিলের পক্ষে সব কিছু সম্ভব হলেও আমার ছাতা বন্ধ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। ছাতার মাথা ধরে যতই টানাটানি হোক, ছাতা বন্ধ হবে না! লোহার ডান্ডাটার একদম উপরের দিকে ছোট সুইচের মত স্প্রিং আছে। বন্ধ করার সময় ওইটা চেপে ধরতে হয়।

এই নয়-বছর বয়সী ছাতাটি আমি উত্তরাধিকার-সূত্রে পাইনি। ছয় বছর আগে যখন ভার্সিটিতে ফার্স্ট ইয়ারে ছিলাম তখন একটি নতুন ছাতা কিনেছিলাম। আমার ছোট বোন ছাতাটি দেখে পছন্দ করে ফেললো। সে তার দু'বছরের পুরনো ছাতাটি আমার নতুনটির সাথে পাল্টালো। কালো রঙের ছাতাটি সেই থেকে আমার সঙ্গী হল।

প্রথম দিকে ছাতার এইসব অদ্ভূত আচরণ চোখে পড়ে নি। সেকেন্ড ইয়ারে থাকতে একবার বৃষ্টির মধ্যে টিএসসিতে যেতে হয়েছিল ব্যাংকে টাকা জমা দিতে। সঙ্গে ছিল এই জীর্ণ ছাতাটি। ব্যাংকের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে রোকেয়া হলের এক রূপসী ললনার সাথে কথা হল। মোটামুটি ভাব হল তার সাথে। টাকা জমা দিয়ে বাইরে এসে দেখি ঝুম বৃষ্টি। ছাতা খুলতে যাবো অমনি সদ্য পরিচিত সেই ললনার কণ্ঠস্বর,
"ভাইয়া আমাকে একটু গেট পর্যন্ত আগায় দেন না, প্লিজ!"
মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি!
আমি 'ইটস ওকে' বলে হাসিমুখে ছাতা খুলতে গেলাম। তখনি বিড়ম্বনার শুরু! ছাতা আর খোলে না! ছাতার বোতাম এদিক ওদিক করে অনেক চেষ্টা করলাম! একটু উপরে নিচে দোলালাম। কোন কাজ হল না। অথচ এই ছাতাকে আমি কতটা বিশ্বাস করতাম! ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ার মত মুখ তুলে ললনার মুখপানে চাইলাম। মিটিমিটি হাসছে সে! আমি সরি বলতে যাবো, ঠিক তখনি কট করে ছাতা খুলে গেল আপনা আপনি! লজ্জার হাত থেকে বাচা গেল তবু!
আমি আর সেই ললনা মাঝারি বৃষ্টির মাঝে একই ছাতার নিচে হাটতে লাগলাম। পৃথিবীর বুকে এক অদ্ভুত রোমান্টিক দৃশ্যের অবতারণা হল।
টিএসসির পাশেই রোকেয়া হল। মাত্র তিন মিনিটের পথ। তবুও যখন ভাবছিলাম, 'এই পথ যদি না শেষ হয়..' তখনি আমার ছাতাটা কোন পূর্বাভাস ছাড়াই গেল উলটে! অথচ কোন ঝোড়ো বাতাস ছিল না... হালকা বাতাসও না। কী এক বিচিত্র কারণে এরকমটা হয়েছে! আমরা কোন রকম দৌড়ে গেটের কাছে পৌছলাম। ললনা যখন গেট দিয়ে ঢুকছিল তখন কি সে ভেবেছিল যে আমি তার প্রতি নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম?
হলে ফিরে টানা সাতদিন ধরে আমার ছাতা নিয়ে গবেষণা করলাম। ৮-১০ জন বন্ধু-বান্ধবকে দিয়ে পরীক্ষা করলাম। তারা কেউই এত সহজে ছাতা মেলতে পারলো না! অর্থ্যাত, ছাতাতেই ছমছ্যা!
অতঃপর এই ছাতার সমস্ত অদ্ভূত আচরন আমি আয়ত্তে আনলাম।

ভুলোমনা হিসেবে আমার খুব খ্যাতি আছে। বিশেষ করে এই ছাতা আমি ভুল করে অনেক জায়গায় ফেলে এসেছি। আশ্চর্য ব্যাপার এই যে, প্রতিবারই আমি ছাতাটি কোন না কোনভাবে ফেরত পেয়েছি! একবার আগারগাও এক ছাত্রকে পড়ানোর পর ফুটপাতের ধারের এক দোকানে চা খেলাম। সেদিন হালকা বৃষ্টি ছিল। তাই ছাতাটাও সঙ্গে ছিল। চা খাওয়ার সময় ফুটপাতের রেলিং এ ছাতাটা ঝুলিয়ে রেখেছিলাম। বাসে ওঠার সময় ছাতাটা নেয়ার কথা ভুলে যাই। হলে ফিরে যখন মনে পড়লো ছাতার কথা তখন আর তা ফিরে পাওয়ার আশা ছিল না।
এর মধ্যে বাসায় চলে যাই এক সপ্তাহের জন্যে। বাসা থেকে ফিরে তার পর দিন আগারগাও গেলাম পড়াতে। পড়ানো শেষে সেই ফুটপাতের দোকানে গিয়ে আমি অবাক! ছাতা যেখানে রেখে গেছি ঠিক সেখানেই আছে! আমি গিয়ে যেই না ছাতাটা ধরলাম, অমনি একটা যুবক বয়সী ছেলে এসে দাড়ালো আমার পাশে।
"এটা আপনার ছাতা?"
আমি বিব্রত হয়ে মাথা নাড়তেই সে বলে উঠলো, "আপনিই এই ছাতার মালিক? গত এক সপ্তাহ ধরে আমি এটার মালিকের জন্যে এর আশে পাশে ঘুরতেছি.."
আমি অনেক বিস্ময় নিয়ে ছেলেটির মহানুভবতার পরিচয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "কেন আমাকে খুজছেন ভাই?"
সাথে সাথে ছেলেটি বললো, "ধুর মিয়া! আমার ইজ্জত পাংচার করে দিসে এই ছাতা! বৃষ্টিতে তো এই ছাতা খুলতে পারিই নাই, উলটা বাসের মধ্যে এক ভয়ংকর মহিলার পিছনে দাঁড়ায় থাকতে গিয়া আপনের ছাতা হুট করে খুলে গেছে!"
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×