somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সব ইলম কি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করে?

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'এলেম' কী জ্যাটা?"
খলিফা ভাইদের খুলিতে বসে আছি আমরা। বাঁশের কঞ্চি দিয়ে পাইছা বানাচ্ছেন জ্যাঠা। খলিফা ভাইয়ের বাবা। শ্রীরামপুর গ্রামের সবথেকে প্রবীণ মানুষ। পাইছা বানাতে বানাতেই উত্তর দিলেন, "এলেমের মানে ম্যালা কিচু বাহে। এহুনকার আলেমরা এক রহম কয়, আগে আমরা হুনছি আরেক রহম।"
জ্যাঠার বয়স সত্তর পার হয়েছে। সেই ছোটবেলা থেকে দেখি। এক মুহূর্ত কাজ ছাড়া থাকেন না। হয় জাল বোনেন, না হয়, বাঁশ ফেড়ে বেড়া বানান। জ্যাঠা আমাদের হাত ধরে টেনে দেখান তার গায়ে এখনো কত শক্তি।
"আরাক রহম কিবা জ্যাটা?" আমি কৌতূহল দেখাই। জ্যাঠা হাতের কসরতে কঞ্চি বুনে ধীরে ধীরে গোল করে ফেলেছেন।
"এহুনকার আলেমরা কয়, এলেম মানে আল্লাহকে পাওয়া। আর আমরা হুনছি, ম্যালা স্তরের কথা।"
"কী কও জ্যাটা, বুজায়া কও।"
"হোনো, এহুন ত ম্যালা ফেরকা বাড়াইচে। দল বাড়াইচে। ব্যাবাকেই নিজেগোরে মত এলেমের অর্থ বানাইচে।"
"হ, এলেম মানে জ্ঞান, এডো তো জানি। কিন্তুক ইসলামিক এলেম মানে ত খালি জ্ঞান না, তাই না?"
"ঠিক দরচাও। ভার্সিটিত পরতিচাও, তাই তোমরা বুজবা। জানা মানেই জ্ঞানী না। শয়তানও ম্যালা কিছু জানে। কোরান হাদিস বেবাক মুখস্ত। হেই জন্যে কি শয়তানকে আমরা মাওলানা ইবলিস ডাহি?"
আমি হাসলাম। কথা সত্য। জানলেই সে আলেম না। আবার না জানলেও সে মূর্খ জাহেল না। যেমন শিশুরা। কিছু জানে না। তাই বলে তারা মূর্খ, এটা বলা যাবে না। জ্যাঠার কাছে বসলে, কত কিছু জানা যায়।
আমাদের পাড়ায় কত মানুষ। জ্যাঠার মত জ্ঞানী মানুষ এ পাড়ায় আর দেখলাম না। জ্যাঠার প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনা কতদূর তাও জানি না। অজপাড়া গায়েও কত আলো গোপনে জ্বলে জ্বলে একদিন নিভে যায় কেউ খবর রাখে না।
"ও জ্যাটা। তুমি কিন্তুক এহুনও কও নাই। তোমার কাছে এলেম মানে কী?"
জ্যাঠা উত্তর দিল, "কুরমানির সুম, এক গরুহে জহুন মাটিতে শোয়ায়, আরেক গরু কী করে? ভয় খায়? না। ঘাস খায়, খ্যাড় খায়। পাশে আরেক বকরিহে জবো করে। তা দেইহাও গরুর কুনো ছ্যাত ভ্যাত নাই। কী জন্যে?"
"ওরা তো পশু। বুদ্ধি নাই।"
"না। ভুল কইলা। বুদ্দি আচে। জ্ঞান নাই। "
"মানে?"
" বুদ্দি না থাকলি খায় কিবা কইরা? জবো করবার দরলি শুইবার চায় না ক্যা? বুদ্দি অবশ্যই আচে।"
"মানুষেরও বুদ্দি আচে। পার্থক্য অইলো, মানুষ জ্ঞান অর্জন কইরা তার পাশের মানুষের অনুভূতি বোঝে। অন্য মানুষ কী চিন্তা করে, তা সে বুজবার পায়৷ যে যত জ্ঞানী, সে তত বোজে। এতে কী অয়? সে তহুন অন্য মানুষেক নিয়া ভাবে। তার প্রতি দয়াশীল অয়, তার দুক্ষে দুখী অয়, সহানুভূতিশীল অয়। এবংকি সহনশীল অয়।"
আমি জ্যাঠাকে থামালাম না। জ্যাঠা হাতের করছে আর বলেই যাচ্ছে।
"এলেম মানে অইলো, হেই জ্ঞান, যা মানুষ অর্জন কইরা অন্য মানুষেক চিনবার পারে। মানুষ দয়াশীল অয়। আর দয়া অইলো আল্লাহর গুণ। আল্লাহ মানুষেক তার গুনগুলা দিয়া বানাইচে। অল্প অল্প কইরা। মানুষ যত এলেম অর্জন করে, তত আল্লাহর গুনে গুণান্বিত হইয়া সে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে।"
"জ্যাটা, এই কতাই ত এহুনকার আলেমরা কয়। আল্লাহর নৈকট্য পাওয়া।"
"উহু। না। হেরা কয় এলেম অর্জন করলেই সে কামেল। আসলে, তা ত না। এলেম অর্জন কইরা সে যদি আল্লাহর মতো দয়াশীল, ক্ষমাশীল, প্রেমময় না হইবার পারে, হে আলেমই নয়। হের অই জ্ঞান এলেমই নয়।"
"মানে জ্যাটা তুমি কইবার চাও, এলেম অর্জন কইরা আল্লাহকে পাওয়া অইলো শেষ স্তর, তার আগে মানুষকে আরো অনেকগুলো স্তর পার হইতে অয়?"
"এইবার বুজচাও। এলেম মানে সেই জ্ঞান যা তোমাহে মানুষ হইয়া অন্য মানুষ, পশু পাখি সবার প্রতি সহানুভূতিশীল বানাইবো। যদি না অয়, হেইডো যতই কোরান হাদিসের জ্ঞান হোক, হেইডো এলেম না।"
"অন্য মানুষ বলতে, অন্য মতের, পথের, ধর্মেরও?"
"এইডো আসলে এলেমের স্তরের উপর। যার যত এলেম হে তত অন্য মতের পথের ধর্মের মানুষের প্রতিও দয়াশীল অইবো। যেইবা আল্লাহ অইলো চূড়ান্ত জ্ঞানের অধিকারী। বেবাক মানুষকেই তাই তিনি দয়া করেন।"
আমি এইবার নড়েচড়ে বসলাম। জ্যাঠার হাত চলছেই। পাইছা অর্ধেক মতো বানানো হয়েছে।
জ্যাঠাকে বললাম, "তোমার এই এলেমের মানে হিসেবে তো আলেম খুব কম জ্যাটা!"
জ্যাঠা হাসেন। প্রাজ্ঞ ব্যক্তির মতো।
"জ্যাটা, এহুনকার এক আলেম আরেক আলেমেক দেকপার পায় না। এক মতের আলেম অন্য মতের আলেমগোরে কা*ফের কয়। অন্য ধর্মের মানু্‌ষদের ব্যাপারে তাদের অবস্থান আর কী বলবো জ্যাটা।"
শেষে জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি কি সত্যিকারের আলেম দেকচো জ্যাটা?"

জ্যাঠা উত্তর দেন না। এক মনে কঞ্চি দিয়ে পাইছা বানাতে থাকেন। তার মুখাবয়বে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। প্রকৃত আলেমের খোঁজ জ্যাঠা এই অজপাড়া গায়ে থেকে কিভাবে পাবেন?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×