" সিঁদরাত, এক গ্লাস পানি দাও তো" ছাত্রীকে পানি আনতে বলে বুকের ভেতর ধ্বক্ করে উঠলো ইভানের। কারণ পেছনে যে গার্জিয়ান দাঁড়ানো ছিল ইভান খেয়াল করে নি, করলে পানি আনতে বলতনা। এই ভদ্রলোককে দেখলেই কেমন ভয় ভয় লাগে, তিনি এমনভাবে তাকান মনে হয় সবকিছুর উপর তিনি বিরক্ত! পানি আনতে বলাতে ভদ্রলোক এমন ভাবে তাকাচ্ছেন যেন তিনি ছোটবেলায় "শিক্ষা গুরুর মর্যাদা" কবিতা পড়েননি! বলার ইচ্ছে ছিলনা, এম্নিতে স্টুডেন্টদের বাসায় চা-নাস্তা খেতে দিলে তার সঙ্গেই পানি দেয়া হয়। কিন্তু ইভান কোন স্টুডেন্টের বাসায় কিছু খায় না! এর পেছনে অবশ্য একটা কারণ আছে। একবার এক স্টুডেন্টের বাসা থেকে চায়ের সঙ্গে মেলামাইনের বাটিতে করে বিস্কিট দিয়েছিল। এতে তার ইগোতে লেগেছে। ছোটবেলাতে তাদের বাসাতে যখন কাজের লোক কিংবা নিচু শ্রেণীর কেউ কাজ করতো তাকে মেলামাইনের কিংবা টিনের প্লেটে করে খাবার দেয়া হত। বিষয়টা তার কাছে খুব খারাপ লাগলেও সাহস করে কিছু বলতে পারত না। একবার মাকে বলাতে তিনি এমনভাবে তাকিয়েছিলেন যেন এমন বিস্ময়কর কথা তিনি তার সমগ্র জীবনে শুনেন নি! এই কারণে যেদিন স্টুডেন্টের বাসাতে মেলামাইনের প্লেটে খাবার দিয়েছিল সেদিন তার প্রচন্ড অপমান লেগেছিল, উনারা কি ওকে কাজের লোকের মত মনে করে! তারপর থেকে সে আর কোনদিন কোন স্টুডেন্টের বাসায় পানি ছাড়া কিছু খায়নি, কয়েকদিন খাবার দেয়ার পর সে কিছু খায়না বলে এখন কোন স্টুডেন্টদের বাসায় আর কিছু দেয়না।তাই পানি খেতে চাইলে চেয়ে খেতে হয়। আজ বাইরে এত রোদ পরেছে মনে হচ্ছে সূর্যের ব্রাইটনেস ১০০% দেয়া! তার উপর বাস দিয়ে গাদাগাদি করে এসে টিশার্ট পুরোপুরি ভিজে গেছে, তৃষ্ণায় বুক শুকিয়ে গেছে, পানি চাওয়া ছাড়া উপায় ছিলনা। কিন্তু চাওয়ার পর থেকে ঐ ভদ্রলোকের চাহনি দেখে তেষ্টা আরো বেড়ে গেছে।
সিঁদরাত পানি আনলো ঠিকই বাট পানি ঠান্ডা না! এই পানি খেয়ে কোন লাভই হলনা! এখন আরেকবার ঠান্ডা পানি চাইবে সে সাহস ইভানের নেই। ইভান তৃষ্ণা ও অস্বস্তির কারণে আজ দ্রুত ছুটি দিয়ে দিল, ছুটি দেয়াতে সিঁদরাতের আম্মু এমনভাবে ভ্রু কুচকে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলেন যেন এত বড় অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য!
ইভান এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে, কারণ তার পকেটে আছে ৫০ টাকা। ধানমন্ডি-১৫ থেকে হলে রিক্সা করে যাওয়া যাবে, এই গরমে বাস স্ট্যান্ডে অনেক্ষণ অপেক্ষার পর যুদ্ধ করে বাসে উঠে গাদাগাদি করে যেতে ইচ্ছে করছেনা। আবার অন্যদিকে একটা কোল্ড ড্রিংকস খেতে প্রচন্ড ইচ্ছে করছে, ১৫ টাকা দিয়ে পেপসি কিনলে রিক্সা দিয়ে যাওয়া হবেনা! ইভান দোকান থেকে একটা পেপসি কিনলো। চকলেটের প্যাকেট ছেঁড়া নতুন বোতলের মুখ খোলা তার কাছে কঠিন কাজের একটি! প্যাকেট ছেঁড়ার সময় সে দাঁত ব্যাবহার করে, মাঝেমধ্যে মনে হয় দাঁত বুঝি খুলে আসবে কিন্তু প্যাকেট ছিঁড়বেনা, বোতলের ছিপি খোলার সময় হাত পিছলে যায়! কিন্তু এ যাত্রায় সে সফলভাবে পেপসির মুখ খুলতে সক্ষম হল। পেপসি খেতে যাবে এমন সময়ে সে দেখল একটি খালি গায়ের বাচ্চা মেয়ে (পথশিশু সম্ভবত) তার ছোট ভাইকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভাইবোন দুজনের দৃষ্টি পেপসির বোতলের দিকে! ইভানের প্রচন্ড মায়া হল! সে পেপসির বোতল তাদের দিকে বাড়িয়ে বলল, 'নাও'! বাচ্চা দুটির চোখ চকচক করছে! তারা বোতলটি নেয়া ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছেনা কিংবা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। ইভান আরেকবার সাধলো। এবার ওরা নিল। ইভান এখন দূর থেকে দাঁড়িয়ে বাচ্চা দুটোর পেপসি খাওয়া দেখেছে। ওরা বোতল খালি করে বোতলটি মুখের সামনে নিয়ে ঝাকাচ্ছে যেন বোতলের গায়ে লেগে থাকা ফোঁটা গুলোও মুখে যায়। অদ্ভূত সুন্দর দৃশ্য! ইভানের তেষ্টা মিটে গেছে! আজ আর বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি, ইভান বাসের ভেতরে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে বাচ্চা দুটিকে দেখছে …
বি: দ্র: নিজের পছন্দের লেখাগুলো আমি সবসময় ফেইসবুকের চেয়ে সামুতে লিখতে পছন্দ করি, কারণ ফেইসবুকে অপরিচিত কেউ পড়েনা, পরিচিতরা সবাই না পড়েই লাইক দেয়,কেউ পড়ে খারাপ লাগলেও বলেনা পরিচিত তো তাই। কিন্তু সামুতে অনেক অপরিচিত ভাল ভাল লেখকবৃন্দরা পড়েন। উনাদের মন্তব্য গুলো দেখলে ভাল লাগে। ভুলত্রুটি শুধরিয়ে দেন। কিন্তু আগে আমার ব্লগ গুলো সরাসরি প্রথম পাতায় প্রকাশিত হলেও লাস্ট ব্লগটি হয়নি। কেন হয়নি তা কার কাছে জানতে চাইব সেটাও জানিনা! এ ব্লগটিও সম্ভবত কেউ পড়বেনা! যদি কেউ পড়ে তবে কায়ন্ডলি কারণটা জানা থাকলে বললে কৃতজ্ঞ থাকতাম :-)
বাই দ্যা ওয়ে এত কষ্ট করে এত বোরিং একটি লেখা পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা :-)