
মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা, ২০২৩' এ মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ নয়, গতি কমানোর দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। মোটরসাইকেলে বয়স্ক ও শিশুকে যাত্রী না করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিএসটিআই অনুমোদিত উন্নতমানের হেলমেটসহ অন্যান্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম চালককে পরার কথা বলা হয়েছে। মহাসড়কে ১২৬ সিসি’র নিম্নগতির গাড়ি চলাচল করতে পারবে না। রাজধানীতে বাইকের গতি ৩০ কি: মি: এর উপরে হবে না। কিছু সড়ক বেধে গাড়ির গতি ৬০ অতিক্রম করবে না এবং মহাসড়কে বাইকের সর্বোচ্চ গতি ৮০ অতিক্রম করবে না। এছাড়া, পেছনে আরোহী নিয়েও মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলতে পারবে না। মোটরসাইকেলের থেকে স্কুটি নিয়ন্ত্রণ সহজ উল্লেখ করে খসড়ায় বলা হয়েছে, স্পোর্টি মোটরসাইকেল দ্রুতগতিসম্পন্ন। এই গতির সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষার জন্য এসব মোটরসাইকেলের বসার আসন কিছুটা কৌণিকভাবে তৈরি করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ, পেছনের দিকটা উঁচু। অন্যদিকে, স্কুটি মোটরসাইকেল আরামদায়ক, জ্বালানিসাশ্রয়ী ও অপেক্ষাকৃত কম গতিসম্পন্ন। এসব মোটরসাইকেলের বসার আসন সাধারণত ভূমির সমান্তরাল হয়। সব মিলিয়ে এগুলো সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব নেতৃত্বে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), পুলিশ এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত ৯ সদস্যের একটি কমিটি মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা, ২০২৩' প্রস্তাব করেছে।
সারাদেশে নিবন্ধিত ৫৬ লাখ ২৮ হাজার যানবাহনের মধ্যে ৪০ লাখ ৩৯ হাজার মোটরসাইকেল। তবে রাজধানীতে মোটরসাইকেল বাড়ার হার আরও বেশি। ঢাকায় নিবন্ধিত ১৯ লাখ ৬৬ হাজার যানবাহনের ১০ লাখ ২৩ হাজারই মোটরসাইকেল। ২০২২ সালে নতুন ৫ লাখ ৬ হাজার ৯১২টি মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে। গত ১১ বছরে সারাদেশে চারগুণ হয়েছে মোটরসাইকেলের সংখ্যা। ঢাকায় ১১ বছরে পাঁচগুণ হয়েছে এই দ্বিচক্রযানের সংখ্যা।শুধু রাজধানী ঢাকার সমীক্ষা লক্ষ করলে দেখবেন ২০২১ সাল থেকে ২০২২ সালের মাঝে ঢাকাতে নিবন্ধিত মোটরসাইকেল এর সংখ্যা দ্বিগুন হয়েছে।
সামনের বছর গুলোতে মোটরসাইকেল বাড়ার হার কেমন হবে তা ধারণা করার জন্য কিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে।বর্তমান সময়ে ঢাকাতে প্রতি কিলোমিটার রিকশা ভাড়া প্রায় ১৫ থেকে ২০ টাকা ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতির সাথে তাল মিলিয়ে তা আরো বৃদ্ধি পাবে।আবার সব রাস্তায় রিকশা চলাচল করে না দিন দিন ভি আই পি রোডের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।বিকল্প পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বাস বা লেগুনা সার্ভিস এর উন্নতি তো দূরের কথা দিন দিন অবনতি হচ্ছে। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে উঠার জন্য হাতে বাড়তি আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা সময় নিয়ে বাইর হওয়া লাগে।রোদ বৃষ্টিতে অনেক সময় অপেক্ষার পর দুই একটা বাস যাও বা পাবেন তাতে মানুষ এর ভিড়ে উইঠা দাঁড়ানোর জায়গাও পাওয়া যায় না। মহিলা বা অফিস মুখী যাত্রীদের জন্য এই সব পাবলিক ট্রান্সপোর্ট কোনো কাজেই আসে না। মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে মানুষ দৈনন্দিন খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করবে তাতে করে সি এন জি বা উবার এ মানুষ এতো সহজে উঠতে চাইবে না। ফলাফল ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও স্কুটি চালানো শুরু করবে তার মানে প্রতিটি বাসায় একাধিক মোটরসাইকেল থাকবে। এই সব বিষয় গুলো বিবেচনায় নিলে খুব সহজেই বুঝা যায় সামনের বছর গুলোতে মোটরসাইকেল বৃদ্ধির হার অতীত এর সব রেকর্ড ব্রেক করবে।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল ব্যবহৃত হয়, এমন ১৬টি দেশের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট দেখতে পেয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি ১০ হাজার মোটরসাইকেলের বিপরীতে ২৮.৪ জন নিহত হচ্ছে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান ৯৪৫ জন। ২০২০ সালে তা বেড়ে হয় ১ হাজার ৪৬৩ জন। আর ২০২১ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান ২ হাজার ২১৪ জন। ২০২২ সালের প্রথম ১০ মাসেই মৃত্যুর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে।বেসরকারি রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে যত দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে, তার প্রায় ৪০ শতাংশের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংশ্নিষ্টতা রয়েছে। ২০২২ সালের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাড়ে ১৬ শতাংশের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছর। আর ৭৩ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। পঙ্গু হাসপাতাল বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত হওয়া যত মানুষ সেবা নেন, তাঁদের ৬৫ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার।মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কেউ হাত বা পা ভাঙলে সুস্থ হতে ৩ থেকে ৯ মাস সময় লাগছে।
মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার পিছনে মূল কারণ বেপরোয়াভাবে কিশোর-যুবকদের মোটরসাইকেল চালানো, মোটরসাইকেল চালকদের অদক্ষতা ও অস্থিরতা, বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির ক্ষেত্রে শিথিলতা ,নিম্ন মানের হেলমেট ব্যবহার ,ফিটনেস লাইসেন্স রোড পারমিট ছাড়া মোটরসাইকেল রাস্তায় চালানো এবং সড়ক-মহাসড়কে বিভাজক না থাকা অন্যতম।
আইন তো বাংলাদেশে তৈরী হয় ঠিকই কিন্তু আইনের প্রয়োগ খুবই দুর্বল যেমন ধরুন সি এন জি তে কি সুন্দর ভাড়ার মিটার বসানো হইলো কিন্তু গতো এক বছরে এমন কেউ কি আছেন যিনি মিটার অনুযায়ী এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেয়ে ভাড়া দিয়েছেন মনে হয় না এরকম কাউকে পাওয়া যাবে। তে হইলে এই রকম আইন বানায়া লাভ কি যদি প্রয়োগই না থাকে। সামনের বছর গুলোতে মোটরসাইকেল এর সংখ্যা কি পরিমান বৃদ্ধি পাবে তা আমাদের কল্পনার বাইরে এখনই সময় মোটরসাইকেল এর জন্য নীতিমালা শক্ত ভাবে তৈরী করা এবং তার প্রয়োগ নিশ্চিত করার না হইলে দুর্ঘটনায় আরো কতো কাছের মানুষ আমরা হারাবো সৃষ্টিকর্তা জানে এমনেই পঙ্গু হাসপাতালে জায়গা হয় না তখন কি হবে কে জানে
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



