প্রধান মন্ত্রীর বিশাল এবং দীর্ঘ সফর শেয করে দেশে ফেরার পূর্বেই আফগানিস্তানে সেনাবাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব সংক্রান্ত সংবাদ এবং তৎপরবর্তী তালেবানদের হুমকি নিয়ে দেশের সকল অঙ্গনে এ মূহুর্তে তুমুল আলোচানা সমালোচনার ঝড় বইছে। বিষয়টি কতটা স্পর্শকাতর তা ব্লগারদের ইতিমধ্যেই দেয়া পোস্ট, মন্তব্যকারীদের মতামত এবং সর্বপরি আজকের পত্রিকাগুলোতে চোখ বুলালেই স্পস্ট হবে।
আফগানিস্তানে বাংলাদেশী সৈন্য মোতায়নের প্রস্তাবটি আমেরিকা এমন এক মূহুর্তে দিয়েছে যখন ওবামা নিজেই ইতিমধ্যে ঘোষনা করেছেন যে তারা ২০১১ সালের থেকে আফগানিস্তান থেকে পাততাড়ি গুটানো শুরু করবে! আফগানিস্তানে আমেরিকা ও তার মিত্ররা যতই বাগারম্বর করুকনা কেন প্রকৃতপক্ষে তারা ওখানে প্রচন্ডভাবে নাস্তানাবুদ হচ্ছে প্রতিদিন। আমি সে কথা বিস্তারিত নাইবা বললাম।
আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হল, আফগানিস্তান থেকে পাওয়া সব চেয়ে বেশী সুবিধাভোগী রাষ্ট্র হল ভারত এবং আফগানিস্তানের পুতুল কারজাই সরকারও ভারতের স্বার্থ দেখছে প্রবল ভাবে। এখানে একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিস্কার হবে, মাস তিনেক আগে আল জাজিরায় দেখেছিলাম, আফগানিস্তানের প্রায় সকল অবকাঠামো, রাস্তা ঘাট, এমনকি ওদের সংসদ ভবনটি তৈরী করছে ভারত। প্রচুর ভারতীয় ওখানে কাজ করছে। আফগানিস্তানের চিরায়ত বোধ বিশ্বাস ঝেড়ে ফেলে ক্লিন সেভড তরুণরা রাস্তার পাশে বড় স্ক্রিন লাগিয়ে ভারতীয় সিনেমা দেখছে। কোন এক পত্রিকায় দেখেছিলাম, এসব তরুণদের হাতে কাঁচা ডলার ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ কারজাইসহ আফগানদের একটি অংশ এখন ভারতবান্দব।
যাক, সেটা আমাদের কোন সমস্যা না। কিন্ত আমার কাছে যেটা মনে হচ্ছে, আমেরিকা ও তার ইউরিপীয় মিত্রদের নতুন কৌশলের অংশ হিসেবেই আফগানিস্তানকে ভারতের সার্বিক কব্জায় রেখে যেতে চাচ্ছে। সেক্ষেত্রেও নাটাই আমেরিকার হাতেই থাকবে বলে মনে হয়। এখানে আমেরিকা ও তার মিত্রদের সাথে ভারতের একটা বোঝাপারার বিষয়তো নিশ্চয়ই আছে।
পাকিস্তানকে প্রায় ঘিরে ফেলা হয়েছে, প্রতিদিন সেখানকার চরম অস্হিতিশীল পরিবেশ এবং সর্বপরি চীন ঠেকাতে ভূকৌশলগত কারনেই ঐ অঞ্চলের সার্বিক অবস্হার নেপথ্যের ভূমিকায় এখন ভারত। অবশ্য সাহায্যকারী হিসেবে সাম্প্রতিক কালে ব্যপকভাবে আলোচনায় আছে ইসরাইলের নামও। মোদ্দাকথা, হিমবাহের দৃশ্যমান অংশ হিসেবে আমরা আমেরিকা ও ন্যাটোকে দেখছি কিন্ত অন্তরালে ভারতের ব্যপক উপস্থিতি বিদ্যমান।
আফগানিস্তানের বর্তমান সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী হিসেবে ভারত তার সৈন্য বাহিনী রাখবে, তার সুবিধা দেখবে সেটাই স্বাভাবিক কিন্ত আমরা নিজের খেয়ে কেন বনের মোষ তাড়াতে যাব? আমার আশংকা, বাংলাদেশকে দেয়া প্রস্তাবের নেপথ্যেও ভারত, যা ওদের চিরায়ত কুটকৌশলেরই অংশ।
আমাদের ভাবতে হবে, কোন ভাবে একবার জড়িয়ে পরলে জংগী, তালেবান সমস্যা ছাড়াও ভূকৌশলগত কারনে বহুবিধ সমস্যায় নিপতিত হব এবং সেক্ষেত্রেও বাংলাদেশকে খবরদারী করতে ভারতের সুবিধাটাই বড় হয়ে দেখা দিবে। অন্যদিকে বাংলাদেশকে অহেতুক চীনের বিরাগভাজন হতে হবে!
অবশ্য সরকার উলফাদের সাথে যা করছে তাতে বোধকরি আফগানিস্তানে সেনাবাহিনী পাঠালেও আমি আশ্চর্য হব না। কিন্ত ভয়ের কথা হল, আফগানিস্তানে কোন ভাবে সেনাবাহিনী পাঠালে আমরা দীর্ঘমেয়াদী সমস্যায় নিপতিত হব সেটা নিশ্চিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১০:০৩