somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাহসী সন্তান
{♥ যদি কখনো নিজেকে একা ভাবো, তাহলে ঐ দূর আকাশের অসীম সীমান্তের দিকে তাকিয়ে থাকো! কখনো নিরাশ হয়ে যেও না! হয়তো বা একটা বাজপাখিও তোমার দিকে উড়ে আসতে পারে! ♥}

ডায়েরির পাতা থেকেঃ আমার বে-খেয়ালী মনের নিঃষ্পাপ অনুভূতি গুলো আজও বিশ্বাস করে; ভরা পূর্ণিমার জ্যোৎস্না রাতে এখনো তোমার স্পর্শ অনুভব করতে পারি......!!

১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রিয় মৌ,
নিস্তব্দ রজনীর উন্মাতাল করা সাগরের বুকে গন্তব্যহীন ভাবে ভেসে চলা জাহাজের ব্যক্তিগত কেবিনে বসে তোমার কাছে এই পত্র লিখছি। সামনে জ্বলছে খুবই ছোট্ট টিমটিমে একটা চার্জার লাইট। যার আলোটা দেখতে অনেকটাই তোমার কাজল কালো অশ্রু ছলছল নীল দু'টি চোখের মত। আমি খুব ভাল করেই জানি যে, আমার আজকের এই চিঠিটা আর কোনদিনও তোমার কাছ পর্যন্ত পৌঁছবে না। হয়তো চিঠিটা লেখার পরে একবার ভালকরে চোখ বুলিয়ে নিয়ে এটাকে ফেলে দিতে হবে পরিচিত সেই ডাস্টবিনে, অথবা খেলার ছলে নৌকা বানিয়ে ভাসিয়ে দেবো ভূ-মধ্য সাগরের নীল জলে।

কিন্তু কি করবো বলো? অভ্যাস করে ফেলেছি যে। প্রতি বছরের এই দিনটাতে আমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকিনা কেন, তোমার নামে একটা করে চিঠি পাঠাতে হবে, এটা যে তুমিই আমাকে শিখিয়েছিলে। অন্তত গত ছয় বছর যাবত আমি তো সেটাই পালন করে আসছি, একদম সিডিউল মাফিক নিজের বাধ্যতামূলক কাজ গুলোর মত। আর সেই অভ্যাস বসত আজও তোমাকে উদ্দেশ্য করে লেখা আমার আজকের এই চিঠি।

আচ্ছা মৌ, তোমার কি মনে আছে গত বছরের সেই ১৫ ই জুলাইয়ের কথা? যেদিন প্রথম তোমার অনামিকাতে একটা ছোট্ট রিং পরিয়ে দিয়ে তোমাকে আমি চিরদিনের জন্য নিজের আপন করে নিয়েছিলাম? আর সেই আংটিটা পরানোর পরে সবাই যখন আমাদের দু'জনকে একটা রুমের মধ্যে একা রেখে বাইরে চলে গিয়েছিল, তখন তুমি খুব আস্তে করে আমার ডান হাতটা ধরে বলেছিলে- 'এরপর থেকে যেন তোমাকে আর আমি আগের মত একদমই জ্বালাতন না করি?'

আর তোমার কথা শুনে যখন আমি মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তখন আমার ঠোঁটে মৃদু একটা টোকা মেরে তোমার সেকি হাসি! আর হাসতে হাসতে তুমি আমাকে বুদ্ধু বলে ক্ষ্যাপাচ্ছিলে! জানো, আমি সেদিন না সত্যিই খুব লজ্জা পেয়েছিলাম। আর সেজন্যই তো আমি তোমার সাথে একটা কথাও বলতে পারিনি। যে ছেলেটা গত পাঁচ বছর যাবত তোমাকে এতটুকু সময়ের জন্য কাছে পেলে পাগলের মত বকবক করতো, অথচ সামান্য একটা আংটি বদলের কারণে আজ এক মূহুর্ত্বের মধ্যেই সে কতটা শান্ত শিষ্ট হয়ে গেল? তুমি বু্দ্ধিমতী ছিলে, হয়তো আমার সেদিনকার লজ্জাটা ঠিকই ধরতে পেরেছিলে। কিংবা এমন একটা কথা বলে হয়তো নিজেই লজ্জা পেয়ে গিয়েছিলে। আর তাইতো পরক্ষনে একটাও কথা না বলে চুপচাপ রুম থেকে দৌঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলে।

তবে সত্যিটা কি জানো মৌ? আমি কিন্তু সেদিন চুপকরে ছিলাম সম্পূর্ন অন্য একটা কারণে। আসলে তুমি যখন নীল কম্বিনেশনের উপরে গোলাপী ফুলের ঝিলমিলে শাড়িটা পরে আমার সামনে এসেছিলে, সেই তখনই তো আমার সব কথা কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গিয়েছিল। তুমি তো খুব ভাল করেই জানো, নীল আর গোলাপী রং আমার কতটা প্রিয়। আর ঠিক সেদিনই তুমি এমন ভাবে সেঁজে এসেছিলে যেন, আমার প্রত্যেকটা প্রিয় জিনিসের অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছিলাম তোমার ঐ ছোট্ট দেহ সৌরভের মধ্যে। এমনিতেই তো ছিলে মন পাগল করা অপরুপ সুন্দরী, তার উপরে ঐ সাঁজ! আমার মন পাগল করে দেওয়ার বোধ হয় আর কিছুই বাকি রাখোনি সেদিন। তুমি হয়তো যান না মৌ, আমি সেদিন তোমার ঐ ভূবন ভোলানো রুপ দেখে ভেবেছিলাম, তুমিকি সত্যিই আমার মৌ? নাকি আসমান থেকে নেমে আসা কোন ডানা কাটা পরি?

তোমাকে ভালবাসার সেই লম্বা সময়টার মধ্যে হয়তো অনেক স্মৃতিই জমা হয়ে আছে আমার মনের মনি কোঠায়। কোনটা হয়তো সুখের, আবার কোনটা দুঃখের। তবে সকল স্মৃতির মধ্যে আমি সেই দিনটার কথা কখনোই ভুলবো না। যেদিন তোমাকে প্রথম ভালবাসার প্রস্তাব করেছিলাম, আর মুখের উপরে তুমি কি অপমানটাই না করেছিলে আমাকে। বলেছিলে- 'ছোট বোনের বান্ধবীকে ভালবাসতে আপনার লজ্জা করে না? সম্পর্কে আমিও তো আপনার বোনের মত হই নাকি? তো সেই বোনকে ভালবাসার কথা বলার আগে আপনার বিবেক কি একটুও বাঁধা দেয় নি?'

বিশ্বাস করো মৌ, খুব কষ্ট হচ্ছিল তোমার সেদিনকার সেই কথাগুলো শুনে। কিন্তু তোমার কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমি পাল্টা কোন যুক্তি দেখাতে পরিনি। হয়তো ইচ্ছা করেই দেইনি। কি দরকার বলো, খামোখা যুক্তি দেখিয়ে? কারণ তুমি যা বলছিলে তার মধ্যে তো আর ভুল কিছু ছিল না। মনে আছে, তোমার অমন কড়া কথা শোনার পরেও সেই একই ভাবে আমাকে হ্যাবলার মত নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তুমি আবারও বলেছিলে- 'এখনও নির্লজ্জ বেহায়ার মত এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? যান বলছি এখান থেকে?'

তোমার সেদিনকার সেই আদেশ আমি মানতে পারিনি মৌ। কেন জানি না খুব জেদ চেপেছিল মাথার উপরে। সত্যিই বলছি, ঐ কথা গুলো যদি তুমি না হয়ে আমার সামনে অন্য কেউ বলতো, তাহলে হয়তো তার অবস্থা সেদিন খারাপই ছিল। তুমি তো খুব ভাল করেই জানতে, একগুয়ে আর বদমেজাজী ছেলে হিসাবে এলাকায় কি বদনামটাই না ছিল আমার! তবে আমাকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তুমিই চলে গিয়েছিলে। আর আমি তোমার গমন পথের দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে থেকে সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, জীবনে যদি কাওকে বিয়ে করতে হয়, তাহলে তোমাকেই করবো। ঘরের বৌ যদি এমন কাঁচা ধানি লঙ্কার মত ঝাঁঝালো না হয়, তাহলে আর বিয়ে করে লাভ কি?

তবে তোমাকে হয়তো এই কথাটা সেদিন বলা হয়নি। কিন্তু আজ বলছি! আসলে তোমাকে সেদিন ঐ প্রপোজটা করেছিলাম সম্পূর্ণ অন্য একটা কারণে। সেদিনের আগের রাতে আমি যখন ঘুমাতে যাচ্ছিলাম তখন বাবা-মায়ের ঘর থেকে তাদের কিছু কথা শুনতে পাই। তারা নিজেদের মধ্যে এই বলে আলোচনা করছিল যে, ভবিষ্যতে তোমাকে আমার বৌ করে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসবে। আর সেজন্য আমার কোন চাকরি পাওয়ার পরেই আমার বাবা তোমার বাবার কাছে কথাটা বলতো। তাছাড়া আমি তো অনেক আগে থাকতেই তোমাকে পছন্দ করতাম, কিন্তু মুখ ফুটে কোনদিনও কিছু বলতে পারিনি। পাছে তুমি রেগে যাও এই ভয়ে। তবে বাবা মায়ের সেদিনের সেই আলোচনা শুনে মনে মনে ভেবেছিলাম- তাদের সিদ্ধান্তটা তোমাদের বাড়িতে যাওয়ার আগেই আমি আমার ভাল লাগার কথাটা তোমাকে জানাবো।

তাছাড়া যদি অপমানিত হতেই হয় তাহলে যেন আমিই হই, আমার বাবা-মা যেন না হন। কেননা, আমি বেঁচে থাকতে যদি কোন কারণ বসত বিশেষ করে আমার জন্য যদি আমার বাবা মা অন্য কারো দ্বারা অপমানিত হন; তাহলে সেটা আমি কোনদিনও সহ্য করতে পারবো না। আর তাইতো আমি চেয়েছিলাম, বাবা-মার তোমাদের বাড়িতে জানানোর আগেই বিষয়টা তোমাকে আমার আগে জানানো দরকার। কারণ হুট করে যদি ব্যাপারটা ঘটে যায়, তাহলে তুমি অকারণে একটা মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে যেতে। যেটা আসলে আমি কিছুতেই সইতে পারতাম না।

তারপর অবশ্য তুমি আমাকে ভালবেসেছিল। কিন্তু তার আগে কি কাহিনীটাই না করেছিলে। তোমার অনেক গুলো শর্তের মধ্যে কিছু শর্ত ছিল- খুবই আজগুবি টাইপের। এই যেমন আমার ব্যক্তিগত ডায়েরি তোমাকে পড়তে দিতে হবে। আমার ব্যক্তিগত ড্রয়ারের চাবি তোমার কাছে একদিনের জন্য দিতে হবে। এমনকি আমার ব্যক্তিগত ফাইলও তোমাকে দেখতে দিতে হবে। তাছাড়া পরে আমার ছোট বোনের কাছ থেকে জানতে পেরেছিলাম যে, তুমি নাকি একদিন আমার সমস্থ বই-খাতা-কাগজপত্র সব ঘেঁটে ঘুঁটে কি যেন দেখেছিলে। জানো, শুধু তুমি ছিলে বলেই বাবা-মা আর আমার ছোট ভাইবোন কিন্তু এই ঘটনার দরুন তোমাকে কিছু বলেনি। নইলে অন্য কেও এসে যদি আমার একটা বইয়ের মলাটেও হাত দিত না, তাহলে তার খবর হয়ে যেত। পরে অবশ্য আমি যাতে কোন কিছু না বুঝতে পারি সেজন্য আমার বোন আর তুমি মিলে বেশ সুন্দর করে সব কিছু সাঁজিয়ে রেখেছিলে, ঠিক যেভাবে আমি রাখতাম।

আচ্ছা এত খোঁজ খবর করে কি দেখতে চেয়েছিলে? আমি কাওকে ভালবাসি কিনা তাই? কি ডেঞ্জারাস মেয়েরে বাবা! মনে হচ্ছিল যেন আমি কাওকে ভালবাসতে যাচ্ছি না, বরং কাওকে মার্ডার করে লুকিয়ে আছি; আর পুলিশের সি.আই.ডি বিভাগ আমার বাড়িতে এসে রেড্ করে গেছে। পরে অবশ্য তুমি তার কারণও বলেছিলে! কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, তোমার সেদিনকার সেই মন ভোলানো কারণটা কিন্তু আমি খুব সহজেই ধরতে পেরেছিলাম। তবে তুমি কষ্ট পাবে বলে সামনা-সামনি কিছু বলিনি, বরং চুপ করে ছিলাম। তুমি বলেছিলে- 'জীবনে কাওকে ভালবাসলে তাকে ভালবাসার মত করেই ভালবাসবে। যাতে তাকে যেন কোনদিনও আর হারাতে না হয়।' তবে সত্যিই তুমি এদিক থেকে ঠিকই জয়লাভ করলে মৌ। কেবল হেরে গেলাম আমি। হেরে গেল আমার ভালবাসা। আর তছনছ হয়ে গেল, তিল তিল করে সাঁজানো আমার প্রত্যেকটা স্বপ্ন। কারণ আমি যে পারলাম না মৌ, তোমাকে বুকের মাঝে আগলে রাখতে!

মনে আছে তোমার, সেই যে প্রথম যেদিন আমি চাকরির এ্যাপার্টমেন্ট লেটার হাতে পেয়েছিলাম, সেদিন তুমিই প্রথম আমাকে স্যালুট করে বলেছিলে- 'খুব শীঘ্রই দেশ একজন গর্বিত সৈনিক পেতে চলেছে। তাই প্রথম স্যালুটটা না হয় আমিই করে রাখলাম। যদি ভবিষ্যতে আর করার চান্স না পাই। অনেক অনেক দোয়া আর ভালবাসা রইলো তোমার জন্য। যাতে তুমি এই দেশের এবং তোমার বাবা-মায়ের মুখ উজ্জল করতে পারো।' তারপর হাসতে হাসতে কতকটা রহস্যের ছলেই বলেছিলে- 'কি গো! চাকরি তো পাইছো! এইবার চাকরির চাপে পইড়া এই অভাগীরে ভুইল্লা যাইবা না তো?'

আমি তোমার সেদিনের সেই কথা গুলো শুনে খুব হেসেছিলাম। ভুলে যাওয়ার জন্য নয় কিন্তু, আসলে তোমার মুখে আঞ্চলিক ভাষা শুনতে যে কি ভাল লাগছিল! দেখ মৌ, আমি আজও তোমাকে ভুলিনি! এই দেখ না, আজও আমি রাত জেগে আমার প্রিয় মৌয়ের জন্য পৃষ্টার পর পৃষ্টা লিখে চলেছি!

ধীরে ধীরে চার্জার লাইটের চার্জ শেষ হয়ে আসছে। আর সেই সাথে সাথে আলোটাও নিস্তেজ হয়ে আসছে। কিন্তু আমার লেখাটার যে এখনো অনেক বাকি। সত্যিই বলছি মৌ, কত স্মৃতিই যে আজ মনে পড়ছে আমার, সেটা তোমাকে আমি আসলেই বুঝাতে পারবো না।

প্রতিবার যখন বাড়িতে ছুটি কাটিয়ে চাকরির গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়তাম, তখন তুমি আমার হাত দু'টি ধরে ছলছল নয়নে বলতে- 'সাবধানে যেও! আর পৌঁছে ফোন দিতে ভুল হয় না যেন?' বিশ্বাস করো মৌ, তোমার সেই সময়কার অশ্রুসিক্ত নয়ন দু'টি যে আমি কোনদিনও ভুলতে পারবো না। তাছাড়া সেই জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে কঙ্গোতে অবস্থান করার সময়, আমি তোমার সাথে ঠিক মত কথা বলতে পারতাম না বলে তোমার সেকি রাগ! একবার তো অভিমান করে বলেই বসলে- 'ব্যাপার কি, কঙ্গোর গহীন জঙ্গলে আমার টারজান কি নতুন কোন বনদেবীর সন্ধান লাভ করলো নাকি? কোন খোঁজ খবর পাচ্ছি না যে?'

সেদিনও তোমার কথা শুনে আমি খুব হেসেছিলাম! আসলে সত্যিই কিন্তু সেদিন আমি খুব মজা পেয়েছিলাম মৌ! মাঝে-মাঝে তুমি এমন সব রহস্যময় কথা বলতে না, যে না হেসে থাকতে পারতাম না। পাগলী মেয়ে একটা! তবে তুমি তো জানতে মৌ, চাকরির ক্ষেত্রে কতটা ডিসিপ্লিনের মধ্য দিয়ে আমাদেরকে চলতে হয়। ট্রেনিং চলা কালিন সময়ে একগ্লাস পানি খেতে গেলেও টাইম মেইনটেন করে যেতে হয়। তাছাড়া সারাদিনের কর্মক্লান্তির পর শরীর এতটাই অবসাদ গ্রস্থ হয়ে পড়তো যে, একটু শোয়াতেই গভীর ঘুমের মধ্যে তলিয়ে যেতাম। ফলে তোমার সাথে আর কথা বলা হয়ে উঠতো না।

তবে বিশ্বাস করো মৌ, তোমার সেদিনকার সেই আক্ষেপ মেশানো কথা গুলো যে এত দ্রুত ফলে যাবে, আমি সত্যি কোনদিন কল্পনাও করিনি। তুমি কি ভাবতে, আমি ইচ্ছা করেই তোমাকে এভোয়েড করে চলতাম? কিংবা হয়তো অন্য কাওকে নিয়ে মেতে আছি বলে আর তোমার কথা মনে থাকতো না? ধুর পাগলী! তোমাকে প্রত্যাখ্যান করার মত ক্ষমতা কি আমার ছিল বলো? কিন্তু তারপরেও একদিন তুমি অভিমান করে বলেছিলে- 'যেদিন তোমার কাছ থেকে আমি হারিয়ে যাবো, একদম চিরদিনের মত; সেদিনই তুমি বুঝবে আমার শূণ্যতা তোমাকে কতটুকু পোড়াবে!'

আমি সত্যিই আজ বুঝতে পারছি মৌ, তুমি হীনা এই পৃথিবীটা আমার কাছে একটা শূণ্য মরুভূমি ছাড়া আর কিছুই নয়। তুমিতো সব সময়ই প্রায় অভিযোগ করে বলতে যে, আমার নাকি হৃদয় বলে কিছু নেই। তাহলে এই যে, আজ আমি কোন একজন মানুষের জন্য আমার ভালবাসার ডালা সাঁজিয়ে বসে আছি; সেটা কি হৃদয়হীন কোন মানুষের লক্ষণ বলো? তোমার কাছে একটা প্রশ্নের উত্তর আজ খুব জানতে ইচ্ছে করছে, যদিও জানি কোন উত্তর পাবো না! তবুও যদি পারো অন্তত স্বপ্নের ঘরে এসে না হয় একবারের জন্য হলেও বলে যেও- 'কতদিন পর্যন্ত পুড়লে একজন মানুষের হৃদয় তার ভালবাসার শূণ্যতাকে ভুলে থাকতে পারে?'

কেন এভাবে চলে গেলে মৌ? আমাকে কষ্ট দিতে তোমার খুব ভাল লাগে তাই না? নাকি পূর্বে তোমাকে দেওয়া কষ্ট গুলোর শোধ তুলছ এখন? এর থেকেও যদি তুমি অন্য কারো বুকে নিজের সুখের নীড় রচনা করতে তবুও আমি শান্তি পেতাম। হয়তো এটা ভেবে নিজের অবুঝ মনকে শান্তনা দিতাম যে, আমার মৌ তো অন্তত সুখি আছে! হয়তো আমার নয়, অন্য কারো হৃদয়ে সে এখন শান্তির পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। অথচ দেখ না, এক মূহুর্ত্বের মধ্যে সব কিছু কেমন ওলট-পালট হয়ে গেল!

সেদিন যখন অফিসে বসে তোমার গাড়ি এক্সিডেন্টের কথাটা প্রথম জানলাম, তখন এতটাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম যে অফিসের ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থাতেই তোমাকে একনজর দেখার জন্য বাড়ির উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়ে পড়েছিলাম। আর মনে মনে শুধু সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছিলাম, যেন বাড়িতে গিয়ে তোমাকে একদম সুস্থ অবস্থাতেই দেখতে পাই। কিন্তু জানো মৌ, আমার সেদিনকার সেই ডাকটা বোধ হয় সৃষ্টিকর্তার কান পর্যন্ত পৌঁছাইনি। নইলে তিনি আমার সেদিনের ডাকে কোন সাড়া দেননি কেন? নাকি এই সাড়া না দেওয়ার মধ্যেই তার অন্য কোন গেম প্লান ছিল? কি জানি, হবে হয়তো!

তবে গাড়ি করে যখন হাসপাতালের গেটে পৌঁছলাম, তখন রাত প্রায় পৌঁনে একটা বাজে। হাসপাতালের সামনের খোলা মাঠটাতে দেখলাম, তোমার আর আমার আত্মীয় স্বজনরা সবাই মিলে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্বাস করো মৌ, আমি তখনও জানতাম না যে আমার সুখ নামক বস্তুটা অনেকক্ষন আগেই এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে। পিঞ্জিরা বদ্ধ পাখি তার ভালবাসাকে ফাঁকি দিয়ে অনেক আগেই শূণ্যে উড়াল দিয়েছে। কিন্তু যখন জানলাম, তখন একটা কথাও আর বলতে পারিনি। শুধু নির্বাক দৃষ্টি মেলে শূণ্যে তাকিয়ে ছিলাম! যখন ডেথ সার্টিফিকেট সহ তোমার ক্ষত-বিক্ষত লাশটা এনে আমার সামনে রাখা হয়েছিল, তখনও আমি মুখে একটা শব্দও উচ্চারণ করতে পারিনি! তুমি তো জানতে, চিৎকার করে কান্না করাটা আমার জন্য কতটা অসম্ভব ছিল? আসলে আমি কোনদিনই পারতাম না অন্যদের মত গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে। শুধু ভয়ংকর যন্ত্রনা হৃদয়ের গভীরে গুমরে গুমরে মরতো আর বুকের মধ্যে থাকা হৃদপিন্ডটা ভাঙচুর করতো, অথচ দু'চোখের কোণ বেয়ে সামান্য কিছু অশ্রু ঝরে পড়া ছাড়া আমার কান্নার আর কোন ডেফিনিশন ছিল না!

আমি সেদিনও পারিনি মৌ! খুব চেষ্টা করেছিলাম, আজ আমি চিৎকার করে সৃষ্টিকর্তার কাছে এর বিচার চাইবো। কেন? কোন অপরাধে তিনি আমাকে এতবড় শাস্তি দিয়েছিলেন, সেটা জানার অধিকার আমার আছে! কিন্তু আমি পারিনি মৌ। শুধু অবসন্ন হাত দু'টি দিয়ে খুব সন্তোর্পনে তোমার যন্ত্রনাকাতর রক্তাক্ত মুখের উপরে আলতো করে পরশ বুলিয়ে দিয়েছিলাম! কান্না ভেজা কণ্ঠে শুধু বলেছিলাম- 'মৌ, একবার চোখ মেলে দেখনা! তোমার টারজান আজ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে মৌ! একবার চোখ মেলে তাকিয়ে দেখ, তোমার হৃদয়হীন টারজানের চোখে আজ কি পরিমাণ অশ্রু ঝরছে? অশ্রুসিক্ত নয়নে সে শুধু তোমার প্রতিক্ষাতেই বসে আছে মৌ!'

কিন্তু শত চেষ্টা করেও তোমার সেদিনকার সেই গভীর ঘুম আমি আর ভাঙাতে পরিনি মৌ! অশ্রুসিক্ত নয়নে না চাইতেও তোমাকে চির বিদায় জানাতে হয়েছিল! শুধু বিদায় বেলায় আমার দু'চোখের ঝরে পড়া তপ্ত অশ্রু বিন্দু শেষবারের মত গড়িয়ে পড়েছিল তোমার নিঃষ্পলক দু'টি চোখের পাঁপড়ির উপর! আচ্ছা, তুমি কি আমার সেই গড়িয়ে পড়া অশ্রু ফোঁটা গুলোর উষ্ণতা অনুভব করতে পেরেছিলে মৌ? শুনেছি মৃত ব্যক্তিরা শুধুমাত্র কথা বলা ছাড়া আর সব কিছুই দেখতে পায়, বুঝতে পারে! তাহলে কি তুমি আমার সেইসময়কার আকুলতাকে প্রত্যক্ষ করতে পেরেছিলে মৌ? যদি পেরেই থাকো, তাহলে সেদিন কেন ওভাবে চুপ করে ছিলে মৌ? কেন কোন কথা বলনি সেদিন? খুব আনন্দ হচ্ছিল না! যে ছেলেটার চোখে জীবনে কোনদিনও একফোঁটা অশ্রু দেখনি, সে আজ তোমার জন্য কাঁদছে; এটা দেখে তোমার খুব পুলক হচ্ছিল তাই তো? সেদিন কি নিষ্ঠুর ছিলে তুমি! একবারের জন্যেও আমার এই ব্যাকুলতা তোমাকে ছুঁয়ে যেতে পারেনি। পারেনি আমার জন্য তোমার মনে সামান্যতম দয়ার উদ্রেগ সৃষ্টি করতে!

খুব অভিমান হয়েছিল আমার উপরে তাই না? আমি যে বুঝেছিলাম মৌ, কি দুঃসহ যন্ত্রনার আগুন বুকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত তুমি মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছিলে। তোমার ঐ রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত মুখের প্রত্যেকটা অভিব্যক্তিই যে বলে দিচ্ছিল, মৃত্যুর কাছে আর্ত্মসমার্পন করার আগে কতটা যন্ত্রনা কাতর হয়ে পড়েছিলে তুমি। হয়তো পানির পিপাসায় ছটফট করছিলে, আর্ত্মনাদ করতে গিয়েও বারবার কণ্ঠ রোধ হয়ে আসছিল। প্রচন্ড রক্ত ক্ষরণে নিস্তেজ হয়ে আসছিল তোমার প্রত্যেকটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। কণ্ঠ নালীতে এসে বারবার আঘাত করছিল তোমার অনুচ্চারিত সব কথা মালা গুলো। বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে হয়তো শেষ সময়ে এসে একবার মরণ যন্ত্রনায় চিৎকারও করেছিলে, কিন্তু তার সবই মিলিয়ে গিয়েছিল প্রযুক্তির চাপায় পিষ্ট এই কোলাহল পূর্ণ অজস্র চেনা অচেনা শব্দের ভিড়ে। আর তাই তো শত আকুলতা, শত হাহাকারকে পরাজিত করে অবশেষে তোমার যন্ত্রনা কাতর ক্লান্ত দেহটাকে সপে দিতে বাধ্য হয়েছিলে মৃত্যু দূতের কাছে!

প্রায় দশ মাস হতে চলল, তোমার স্মৃতি বুকে নিয়ে আমি আজও বেঁচে আছি। জানি না এভাবে আর কতদিন চলতে হবে। হয়তো সারা জীবনেও তোমাকে আমি এই মন থেকে মুছে ফেলতে পারবো না। তোমার খুব ইচ্ছা ছিল, বিয়ের পরে তুমি আমার সাথে জাহাজে চড়ে ঘুরতে যাবে কূল-কিনারাহীন গভীর সুমুদ্রে! যখন বাড়িতে ফিরতাম তখন সারাক্ষণ শুধু জ্বালিয়ে মারতে এইসব গল্প করার জন্য! অথচ জানো মৌ, আজ দীর্ঘদিন কেউ আর আমার কাছে সেই সব দুঃসাহসী জীবনের গল্প শুনতে চায় না। কেউ আর বুকে মাথা রেখে বলে না-' আরো একটু বল না! শুনতে খুব ভাল লাগছে!'

এইমাত্র কেবিনের মধ্যে রাখা দেওয়াল ঘড়িটাতে রাত দুইটা বাজার সময় সংকেত দিল। আর যে লিখতে পারছি না মৌ! দেখ না, কোন এক অজানা কারণে তোমার অকুতভয় টারজানের হাত আজ কাঁপছে। প্রতি নিয়ত যে হাতের এতটুকু স্পর্শে রাইফেল আর মেশিনগানের গর্জন কাঁপিয়ে তুলতো শত্রুর পাষাণ হৃদয়। যে হাতে তুমি খুঁজে পেতে তাজা বারুদ আর মরা লাশের গন্ধ। আজ সেই হাত সামান্য একটা কলম ধরতেও যে ব্যর্থ হচ্ছে মৌ। ওদিকে চার্জার লাইটের আলোটাও ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে আসছে। আমার চারপাশ জুড়ে এখন শুধু গভীর অন্ধকার আর অসম্ভব রকমের নিস্তব্দতা বিরাজ করছে। শুধুমাত্র মাঝে মাঝে উত্থাল সাগরের উন্মাতাল করা ঢেউ ছলাৎ ছলাৎ শব্দে এসে আমাদের এই ছোট্ট জাহাজটাকে কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। আমার আশে পাশের সবাই এখন গভীর ঘুমে নিমগ্ন। হয়তো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে তারা কেউ সুখ স্বপ্ন দেখছে, অথবা দুঃস্বপ্ন দেখে বারবার শিউরে উঠছে! অথচ দেখ, এই কূল-কিনারাহীন গভীর সুমুদ্রের বুকে আমি একা জেগে বসে আছি। আর বসে বসে শুধু তোমার ধ্যান করছি!

জানো মৌ, অনেকেই ভাবে আমি সব সময়ের জন্য এতটা হাসি খুশি থাকি বলে আমার মনে বোধ হয় কোন দুঃখ নেই। অথচ ওরা তো জানে না, গত প্রায় একটি বছর কোন দুঃস্বহ স্মৃতি বুকে নিয়ে আমি এই পৃথিবীতে বেঁচে আছি। আমি আজও হাসি! তবে সেদিনের মত আমার হাসিতে আর নেই কোন জৌলুস। কেন জানি না, আমার হাসিতে এখন আর কেউ পৃথিবীর সুখ খুঁজে পায় না! কেমন যেন একটা মরা মরা ভাব! আমি আজও চিৎকার করে কাঁদতে শিখিনি মৌ! শুধু দু'চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রুই যে কেবল প্রমাণ করে আমি কাঁদছি। এক সময় যে নামটা মনের মধ্যে ভেসে উঠলে আমার সমস্থ হৃদয় খুশির জোয়ারে আন্দোলিত হতো, আজ সেই নামটাই মনে উঠলে সমস্থ হৃদয় জুড়ে একটা না পাওয়ার যন্ত্রনা হাহাকার করে ওঠে!

২০১৬ সালের ২৯ শে ফেব্রুয়ারি ছিল আমাদের বিয়ের তারিখ। অনেক ভেবে চিন্তে দু'জনে মিলে ঐ দিনটাকেই বাছাই করেছিলাম আজীবনের জন্য পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হবো বলে। অথচ বর্তমানে সেটা এখন আমার জীবনের একটা ইতিহাস বই অন্য কিছু নয়। তোমার মনে আছে মৌ, বিয়ের তারিখ ঠিক করার সময় আমি মজা করে তোমাকে বলেছিলাম- 'প্রতি বছর তোমাকে আমি হাবি-জাবি গিফট দিতে পারবো না বলেই ঐ লিপ ইয়ারকেই আমাদের বিবাহের দিন হিসাবে ধার্য করলাম।' অথচ কত সহজেই না তুমি আমার সেই যুক্তি খন্ডন করে বলেছিলে- 'তা হবে না মশাই! বিবাহ বাষির্কী উপলক্ষে মৌসুমি কখনোই কিপটামিকে প্রশ্রয় দেবে না হু! আমি ইংরেজি তারিখ নয়, বরং বাঙালি মেয়ে বাংলা তারিখটাকেই না হয় আমার বিয়ের নির্দিষ্ট তারিখ হিসাবে গ্রহণ করবো!'

অথচ নিয়তি বোধ হয় আমাদের সেদিনকার সেই কথা গুলো শুনে মনে মনে খুবই অট্টহাস্য করেছিল। তা না হলে কেন এমন হবে বলো? সেদিন কেউ কি স্বপ্নেও ভেবেছিল, বিয়ের মাত্র কয়েকমাস আগেই নিষ্টুর নিয়তি সদ্য প্রস্ফুটিত একটা গোলাপকে এভাবে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেবে? তুমি হয়তো ভেবেছিলে, মৃত্যুর পরে আর কোনদিনও আমি সেভাবে তোমাকে মনে করবো না তাই তো? কিন্তু দেখ মৌ, তোমার সেই অলিক ধারনাকে আজ আমি কত সহজেই বদলে দিলাম! শুধু আজ তোমার জন্মদিন বলে নয় কিন্তু? প্রতিটা দিন, প্রতিটা মিনিট, এমনকি প্রতিটা সেকেন্ডে সেকেন্ডে আমি তোমার স্মৃতি মনে করে প্রতি নিয়তই তীলে তীলে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি!

আর যে কলম চালাতে পারছি না মৌ? কোন এক অজানা কারণে কেন জানি না হাত দু'টো অবশ হয়ে আসছে। শুধু কি তাই? আজ যে আমার মৌয়ের জন্মদিন, অথচ সেইটা মনে করতেই যেন গলাটা ভীষণ ভাবে ধরে আসছে। বেঁচে থাকলে হয়তো উপহারে উপহারে তোমার ঐ ছোট্ট মেহেদী রাঙানো হাত দু'টো আজ ভরে যেত। কিন্তু ঠিক এই মূহুর্ত্বে আজ আমি তোমাকে কি উপহার দেবো বলতো? ভগ্ন হৃদয়ের অস্ফুট ক্রন্দন আর নিদ্রাহীন দু'চোখের তপ্ত অশ্রু ছাড়া যে আর কিছুই দেওয়ার নেই আমার। বিদায় বেলায় সেটুকুই না হয় থাকলো তোমার আজকের এই শুভ জন্মদিনের উপহার সুরুপ!

পরিশেষে যেখানেই থাকো, যে অবস্থাতেই থাকো, সব সময় যেন ভাল থেকো! আমিও সৃষ্টিকর্তার কাছে সারাজীবন তোমার জন্য এই প্রার্থনাই করে যাবো। আর আমার দেওয়া এই সামান্য উপহার টুকু গ্রহণ করলে কিনা, স্বপ্নের মধ্যে এসে না হয় একবারের জন্য হলেও সেটা জানিয়ে যেও। আমি কিন্তু অপেক্ষায় থাকবো, তোমার কাছ থেকে পাওয়া প্রতি উত্তরের জন্য......!!

ইতি
তোমার হৃদয়হীন টারজান

পুনশ্চঃ- জানো মৌ, সারাদিনের কর্ম ক্লান্তি শেষ করে যখন চন্দ্রাস্নাত জ্যোৎস্না রাতের নিস্বব্দ পরিবেশে একাকি বসে শীতল বাতাসের স্পর্শে শরীরের যাবতিয় ক্লান্তি দূর করি। তখন আমার বে-খেয়ালী মন সেই শীতল বাতাসের স্পর্শে তোমার অস্থিত্ব অনুভব করতে পারে। বুঝতে পারি, আমাকে একটু খানি ছুঁয়ে দেখবার জন্য তোমার অবাধ্য মনের সেই ব্যাকুলতা। আমার কেন জানি মনে হয়, তুমি দাঁড়িয়ে আছো, একদম আমার কোল ঘেষে: ঠিক সেই আগের মত! আর তোমার শরীর থেকে মিষ্টি সুবাসিত পারফিউমের গন্ধ নাম না জানা কোন এক বুঁনো ফুলের গন্ধের সাথে মিশে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে দিক-বিদিক!

আমি হয়তো ঘাড় ঘুরালেই তোমাকে দেখতে পাবো! আমি স্পষ্ট অনুভব করতে পারবো, গোলাপী রঙের স্যালোয়ার কামিজের উপরে শুভ্র আর হালকা নীল রঙ মেশানো ওড়না পরে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমার মৌ! কিন্তু জানো (?) কোন এক অজনা আশংকায় শত চেষ্টা করেও আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তোমাকে দেখতে পারি না! ভয় হয়, যদি তখন আর তোমাকে দেখতে না পাই! যদি আর অনুভব করতে না পারি তোমাকে; যদি হারিয়ে ফেলি তোমার এই অদৃশ্য উপস্থিতিকে! তাইতো চুপচাপ বসে থাকি! আর অনুভবে অনুভবে আমার প্রিয়তমা মৌ'য়ের এই অদৃশ্য ছুঁয়ে দেওয়াটাকে উপভোগ করি। আমি বিশ্বাস করি, আমার মৌ আছে; আমার খুব কাছে! যতটা কাছে থাকলে দু'জন মানুষের মাঝে আর কোন শূণ্যস্থান থাকে না, ঠিক ততটাই.......!!


বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- আজ থেকে কয়েকমাস আগে কোন এক চন্দ্রাস্নাত জ্যোৎস্না রাতে একাকী ঘুরতে গিয়ে কর্ণফুলির উপকূলে পলিথিনে মোড়ানো একটা ভেজা আধা ছেড়া ডায়েরির কয়েকটা পৃষ্টা কুঁড়িয়ে পেয়েছিলাম। আমি জানি না কে এই ডায়েরির প্রকৃত মালিক, কিংবা কি তার পরিচয়? শুধু তার এই অনুভূতি পূর্ণ লেখাটা পড়ে বুঝতে পারি, মৌসুমি নামক সেই মেয়েটি লেখকের হৃদয়ে কতটুকু স্থান দখল করতে পেরেছিল! আজ ১৭ই আগষ্ট মৌ'য়ের ১৯তম জন্মদিন! শুভ জন্মদিন মৌ! এছাড়াও আজকের এই দিনে মৌ সহ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেকটা মানুষের জন্যই রইলো শরতের শিউলি ফুলের শুভেচ্ছা সহ প্রাণঢালা অভিনন্দন এবং অফুরন্ত শুভ কামনা......!!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৫৪
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×