অনুরোধে ঢেকি গেলার মত একটা কথা বাংলা প্রবাদে প্রচলিত থাকলেও আমাকে গিলতে হয় ছোট বোনের রান্না করা উপমহাদেশের আজগুবি সব রেসিপি। মাঝে মাঝে মনে কৌতুহল জাগে, কি জানি আমাকে কি ওর মানুষ বলে মনে হয়? নাকি গিনিপিগ বা ঐ জাতীয় কোন জন্তু ভাবে, যাকে খুব সহজেই ব্যবচ্ছেদ করা যায়!
ঘটনাটা রমজানের আগে কোন এক দুপুরের। বাবা আমি আর ছোট ভাই, তিন বাপ বেটায় মিলে খাইতে বসছি। পরিবেশন করতেছেন আম্মা হুজুর। কিন্তু খাবারের টেবিলে আরও একজন সদস্য অনুপস্থিত দেইখা আম্মারে জিগাইলাম, 'তোমার গুণবতী আদরীনিকে দেখতাছি না দেখি? কলেজ থেকে ফিরে বুঝি খুব কষ্ট হই গেছে?'
আম্মা কইলেন, 'আজ কলেজ যায় নাই। সেই সকাল থেকে ও আর সোনিয়া (কাজিন) দুই বোনে মিলে কি জানি একটা রান্না করছে। তারপর গোসল-টোসল কইরা ঘুমাইতে যাওয়ার আগে আমারে কইয়া গেছে, ভাইয়া খাইতে বসলে যেন তারে ডাক দিয়া দিই। কিন্তু আমি যে তারে ডাকি নাই এইটা যদি সে ঘুণাক্ষরেও জানবার পারে, তাইলে দেখবি আজ কেয়ামত ঘটাইয়া ছাড়বে!'
আম্মার কথা তখনও শেষ হয় নাই। এর মধ্যেই ঘুম ভাইঙ্গা মহারাণী হাই তুলতে তুলতে আইসা টেবিলের ধারে দাঁড়াইয়া কইলেন, 'আম্মা, তোমারে না কইলাম ভাইয়া খাইতে বসলে আমারে ডাক দিবা? ডাকো নাই ক্যান?'
বইলা চিল্লাইয়া উঠলো। বলা বাহুল্য তার চিল্লানির চোটে আমাদের চার জনেরই মুখ শুকাইয়া আমসত্ত্ব হইয়া যাওয়ার দশা। সত্যি বলতে কি, বাড়ির মধ্যে ঐ একমাত্র ব্যক্তি যাকে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা থেকে শুরু কইরা একটা শিশুও বাদ যাবে না পর্যন্ত সবাই ডরায়। অবশ্য সে জন্য মায়ের অভিযোগ, তার এই মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ির জন্য নাকি একমাত্র আমিই দ্বায়ী!
যদিও বর্তমানে আমার নিজেরই তাকে যথেষ্ট তোঁয়াজ কইরা কথা বলতে হয়। কারণ এখন আমার যে অবস্থা, আর ও যে পাঁজির পা-ঝাঁড়া, কবে না জানি রাগ কইরা আমারে ধাক্কা মারে আর আমারও স্ক্যাচ-ট্রাচ (তখন খুব অসুস্থ ছিলাম) লইয়া হুড়মুড় কইরা পইড়া নতুন কইরা আবার খান কতক দাঁত ভাঙার জোগাড় করতে হয়।
সুতরাং আমি এই কাহিল শরীরে আর কম্বলের বোঝা ঘাড়ে না নিয়া বরং আসন্ন গৃহ কলহ থামাইবার নিমিত্তে খাটো গলায় কইলাম, 'তা তোরে ডাকবে ক্যান সেইটা তো বলবি! খামোখা চিল্লাইতেছিস ক্যান? আমিই আম্মারে নিষেধ করছিলাম। ঘুমানো মানুষকে ডাকতে হয় না সেইজন্য!'
বাধ্য হইয়া কিছুটা মিথ্যা বলতে হইল। কিন্তু এছাড়া তখন আর কিছু করারও ছিল না। সিচ্যুয়েশান আন্ডার কন্ট্রোলে আনতে গেলে মাঝে মাঝে এধরনের একটু আধটু মিথ্যা বললে বোধহয় খুব একটা দোষ-টোষ হয় না। আমার কথাতে সে কিছুটা আস্বস্ত হয়ে বললঃ
- 'আরে ডাকতে বলবো না। আজকে আমার এক বান্ধবীর কাছ থেকে একটা নুতন আইটেমের রেসিপির সন্ধান পাইছিলাম। তো সেইটা রান্না করছিলাম তোর জন্য। কিন্তু দেখ, ঘুমের কারনে সেইটা প্রায় মিস হইয়া গেছিল। আচ্ছা তোরা একটু আস্তে আস্তে খা, আমি ততক্ষণে রান্নাঘর থেকে আমার রান্নাটা নিয়া আসি!'
বইলা সে ঝড়ের বেগে কিচেনের দিকে চইলা গেল। কিন্তু তার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ‘খাইছে আমারে’ বইলা পাশে বসা ছোট ভাইটা প্রচন্ড শব্দে মুখ বিকৃত কইরা তাড়াতাড়ি আধা খাওয়া প্লেটে হাত ধুইয়া চেয়ার ঠেলতে ঠেলতে বলল, ‘আম্মু আমি আর খাবো না। পেটের মধ্যে ভাত রাখার মত আর একটুও জায়গা নাই।’
বইলা দৌঁড়ে বাইরে চলে গেল। আম্মাও কোন কথা না বইলা উঠে তাড়াতাড়ি পানের ডালা থেকে খানিকটা পান মুখে দিয়া জাবর কাটার মত কইরা তাই চিবাইতে লাগলেন। বাবা তড়িঘড়ি কইরা খাইতে গিয়া বিষম টিষম লাগাইয়া তখন একাকার অবস্থা। কিন্তু সেদিকে খেয়াল না কইরা তিনি দ্রুত খাওয়া শেষ কইরা সবেমাত্র হাত ধুই ধুই করছেন, ঠিক এমন সময় মহারাণী তার নতুন রেসিপি নিয়া ডাইনিং-এ হাজির।
অতএব বাবাকে আর সামনে না আগাইয়া ঐ হাত ধোয়ার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হইল। কারণ এই মুহুর্ত্বে বাবার জন্য হাত ধোয়া আর নিজের বিপদ নিজে ডাইকা আনাটা হইবে সমানুপাতিক। সুতরাং ঘটনা যাই ঘটুক না কেন, আপাতত দাঁতে দাঁত চাইপা সেইটা সহ্য করা ছাড়া আর কিছু করার নাই। আমি বোনের হাতে ধরা পাত্রটার দিকে আড় চোখে তাকাইয়া বোঝার চেষ্টা করলাম বস্তুটা আসলে কি! কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ ইরেটিক লুকে তাকাইয়া থাকার পরেও ধরতে পারলাম না, রেসিপিটার মধ্যে আইটেম গুলা আসলে কি কি!
ছোট বোন পাত্রটা নিয়ে বাবার দিকে আগাইতেই বাবা অত্যন্ত করুণ মিনতি ভরা চোখে তার দিকে তাকাইয়া থেকে আমতা আমতা করে বললেন, “মা'রে ইদানিং আমার খুব গ্যাস হচ্ছে! আজকের মত তোর এই খটোমটো রান্না খাওয়ানোর হাত থেকে কি আমাকে মাফ কইরা দেওয়া যায় না?”
ছোট বোন বাবার কথাকে কোন গুরুত্বই দিলো না। বরং অত্যন্ত তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল, 'ধুর, এসব খাইলে গ্যাস হয় না। আর খটোমটো কি, খটোমটো কি? খাইয়া দেখো, এরকম সুস্বাদু রান্না তোমার মা’ও জীবনে তোমারে রান্না কইরা খাওয়াইতে পারছে কিনা সন্দেহ।'
আমি বাবার করুণ চোখের দিকে তাকালাম। সে চোখ এই আজগুবি খানা খাওয়ার জন্য মনে মনে বিদ্রোহ ঘোষনা করলেও পরিস্থিতি তাতে মোটেও স্বায় দিচ্ছে না। বাবা বাধ্য হয়ে বললেন, ' তা অবশ্য মন্দ বলিস নাই। তবে একটু অল্প কইরা দিস মা! পেট ভইরা গেছে তো। বেশি দিলে হয়তো নষ্ট হয়ে যাবে। তুই-ই বল, আমার মায়ের হাতের রান্না কি আমি নষ্ট করতে পারি?'
চিপার থিকা উদ্ধার পাওনের লাইগা বাবা যে হালকা চাপার উপর দিয়া গেলেন, সেটা খুব সহজেই বুঝতে পারলাম। কিন্তু ধরা না দিয়া আড় চোখে কেবল তাদের কান্ড কারখানা দেইখা যাইতে লাগলাম।
তবে ছোট বোন দেখলাম বাবার কথা রাখলেন। বাবা ভয়ে ভয়ে খাবারের এক কোণে হালকা একটু অঙ্গুলি সঞ্চালন কইরা সেটাকে মুখে পুরে দিয়ে মহা সোল্ল্যাসে চিৎকার কইরা উঠলেন, 'আহাঃ হাঃ, ওহঃ কি চমৎকার! কি চমৎকার! দারুণ হইছে। বিউটিফুল, ওয়্যান্ডারফুল! তোর ভাইয়াকে একটু বেশি কইরা দে!'
স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে পাম এবার একটু বেশি হইয়া যাইতাছে। তবে আমার ধারণা বাবা সেটা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারতেছেন না। কারণ বুঝতে পারলে উনার মত জ্ঞানী মানুষের দ্বারা এই ধরনের ভুল কোন ক্রমেই গ্রহণযোগ্য হইতো না। অথবা বুঝতে পারলেও তিনি নিজে যেহেতু মরেছেন সেহেতু সবাইরে লগে কইরা মরবেন, এইরকম কিছু একটা চিন্তা কইরাই বোধহয় স্বেচ্ছায় এই পাম্পিং-এর মাত্রা বাড়াইয়া দিতাছেন।
তবে ঘটনা যাই হোক, অবশেষে সেই পামের ঠেলায় তিনি ঠিকই ধরা খাইয়া গেলেন। কারণ উনার চিৎকার চেঁচামেচি শুইনা ছোট বোন পাত্রটা উনার প্লেটের দিকে নিতে নিতে কইলো, 'তাইলে আর একটু দিই!'
এবার বোধহয় বাবা সম্বিত ফিরে পেলেন। সবার অগোচরে জিভ কেটে হই হই করে বলে উঠলেন- ‘আরে না না! এখন না’রে মা, এখন না! রাতে দিস!’
বলে তিনি দ্রুত খাবারটা মুখে পুরে দিয়ে চোখ বন্ধ করে কোন রকমে এপাশ ওপাশ করে টুপ করে গিলে ফেলে হাত ধুয়ে উঠে চলে গেলেন। আমি বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে সবার অগোচরে ফিক করে একটা হাসি না দিয়ে পারলাম না। ছোটবোন এবার খাবারের প্লেটটা নিয়ে মায়ের দিকে অগ্রসর হইতেছিল। সাথে সাথে আম্মা একটা বড় ঢোক গিলে হাহাকার কইরা উঠলেন, “আরে আরে করিস কি, করিস কি! আমি এখন খাবো কি করে? সবেমাত্র না পান মুখে দিয়েছি? এখন খাই ক্যামনে ক’তো?”
বইলা তিনি জাবর কাটার মাত্রা আরো দ্বিগুণ বাড়াইয়া দিলেন। ছোট বোন নাছড়বান্দা, 'পান মুখে পুরছো তো কি হইছে। কুলি কইরা ফেলে দেও!'
আম্মা হাহাকারের মাত্রা আরও বাড়াইয়া দিয়া কইলেন, ‘বলিস কি? সবেমাত্র না পানের টেস্টটা পাওয়া শুরু করছি। এখন ফেলে দিলে কি হয় বল?’
আম্মার কথা শুনে মনে হইল এই পৃথিবীতে বোধহয় পানই একমাত্র খাদ্যবস্তু, যেটাকে চরম বিপদের মুহূর্তেও মুখে নিয়া চিবানো যায়। আর বাকি সব আজাইরা। আমার এবার অবশ্য বিরক্তই লাগছিল। এমনিতে ছোট বোনের রান্না যে খুব একটা খারাপ তা নয়। বরং সে যখন একান্ত মন দিয়ে কোন কিছু রান্না করে, তখন সে রান্না অনেক সময় মায়ের রান্নার থেকেও দারুন হয়ে যায়। তবে সমস্যাটা হইল, মাঝে মাঝে সে ডাউলে চাউলে মিশাইয়া খিচুড়ী করার পরিবর্তে এমন জগাখিচুড়ী তৈরি করে যে; ঠিক তখনই সেই খাদ্য নামের অখাদ্যকে মুখে দেওয়ার পরিবর্তে বরং ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করতে হয়।
তবে পান সম্পর্কিত বিষয়ে আজ আম্মার কথা শুইনা মনে হইল, উনার খাওয়াকে গুরুত্ব দিয়া পানকে বাঙলির জাতীয় খাদ্য হিসাবে ঘোষনা করার জন্য এক্ষুনি সরকারের কাছে একটা লম্বা চওড়া দরখাস্ত কইরা ফেলি। কারণ এটা এখন সময়ের দাবি হইয়া দাঁড়াইছে। তবে আপাতত সেইটা সম্ভব না। কারণ ঠিক এই মুহূর্তে খাবারের প্লেট হাতে নিয়া আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমারই ছোট বোন শান্তা।
কিন্তু কেন জানি না এখন তার হাতে ধরা ঐ খাবারের প্লেটটাকে আমার কাছে ঠিক সাধারণ প্লেট বইলা মনে হইতাছে না। বরং সেটাকে একটা আগ্নেয়াস্ত্র বইলাই মালুম হইতাছে। যার পেট ভর্তি শুধু গুলি আর গুলি। আর যেটাকে তাক করা আমারই মুখ গহ্বরের দিকে। এখন কেবল ট্রিগারটাতে একটা চাপ দেওয়ার অবকাশ।
আমি পাত্রটার দিকে আড় চোখে তাকাইয়া বোনরে কইলাম, ‘দেখ তোর এই অচেনা বস্তু খাইতে আমার কোন আপত্তি নাই। তবে শর্ত হইল, আগামী এক সপ্তাহ তুই খাদ্য সম্পর্কিত আর কোন আব্দার নিয়া আমার সামনে হাজির হইতে পারবি না। এমনকি খাওয়ানোর নাম মুখেও উচ্চারণ করতে পারবি না। কারণ তোর এই আজগুবি জিনিস হজম করতে করতেই হয়তো আমার এক সপ্তাহ লেগে যাবে। এমনকি সপ্তাহ খানিকের মধ্যে কুলাইয়া উঠতে পারবো কিনা সেইটাও বুঝতেছি না।’
বোন বোধহয় এবার মনে মনে একটু গোস্সাই হইল। সাথে সাথে সে খাবারের প্লেটটা ঝাড়া মাইরা ফেলাইয়া দিয়া অশ্রু ভরা চোখে ঘর থেকে বাহির হইয়া গেল। আমি হাউমাউ কইরা তারে কিছুটা থামানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু সে চেষ্টা বৃথা। কারণ ততক্ষণে মহারাণী নিজের রুমে গিয়া দরজার খিল আটকাইয়া কান্না নামক গোলাবারুদ ভর্তি ভারি অস্ত্র প্রদর্শন করা শুরু কইরা দিছেন।
আমি অনাহুত এই বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার নিমিত্ত্বে এবার খাবারের প্লেটটা হাতে তুলে নিয়া আম্মা সহযোগে দ্রুত তার রুমের দরজায় গিয়া মূহুমূহু ধাক্কাইতে লাগলাম। কিন্তু কে খোলে কার দরজা। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ দরজা ধাক্কাধক্কির পরেও যখন সে কোন মতে দরজা খুলতেছে না, তখন অনেকটা বাধ্য হইয়াই তার রান্না করা ঐ আজগুবি খাদ্য মুখে নিয়া আমাকে স্টেজ বিহীন পাক্কা অভিনেতার মত অভিনয় করতে হইলঃ
-“আহাঃ কি দারুণ, কি দারুণ! এ যেন অমৃত!”
তারপর আম্মারে কইলাম, ‘আম্মা তুমিও একটু মুখে দিয়া দেখ, সত্যিই খুব ভাল্লাগছে!’
আম্মা মুখে না দিয়াই কইলেন, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ সে আমি এমনিতেই বুঝতে পারতেছি। আমার মেয়ের রান্না ভাল না হইয়া যায়-ই না!’
বুঝলাম পাম্পিং-এ আম্মাও কম যান না। সাথে সাথে হুড়ুম কইরা দরজা খোলার শব্দ হইল। বুঝলাম থিউরী কাজে লাগছে! আর সাথে সাথে মহারাণীর পূর্বানুগমনে ঘরের বাহিরটা ধন্য হইয়া গেল। তবে তখন আর খাবার না খাওয়ার পরিবেশ সামনে নাই। কারণ খাওয়া বাদ দিলে আবারও পরিস্থিতি প্রতিকূলে চলে যাইতে পারে। বিধায় বাধ্য হইয়া ঐ ভাবে দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়াই আমাকে খাওয়া কন্টিনিউ রাখতে হইল।
তবে একটা কথা এখানে না বললেই নয়। সত্যি বলতে কি, সেদিনে তার রান্নাটা কিন্তু আসলেই ভাল ছিল! তবে ঐ যে কথায় আছে, ঘর পোড়া গরু সিঁদূরে মেঘ দেখলে ডরায়। তো আমাদের হইছে সেই অবস্থা। আসলে পূর্ব থেকেই কেউ যদি তার উদ্ভট রেসিপি দিয়া খাদকের মনে ভয় ধরাইয়া রাখে, তাইলে পরবর্তিতে সেইটার চেইন রি-এ্যাকশানের কারণে কোন অঘটন ঘটলে সেজন্য তো আর খাদককে দ্বায়ী করা চলে না; তাই না?
পুনশ্চঃ আমার আদরের বোনটা আজ কয়েকমাস হতে চলল অন্যের ঘরের ঘরনী হয়ে বসে আছে। এখন আর সে আমাদের পরিবারের কেউ না। বরং মাথায় ঘোমটা, কোমরে শাড়ি গুজে ঘর্মাক্ত মুখে হয়তো সে আজ অন্যের সংসারকে নিজের করে নিয়ে এখন সেটাকেই সামলানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে।
তবে খাবার টেবিলে বসলে আজও তার অভাবটা খুব স্পষ্ট অনুভব করি! মনে হয় এই বুঝি সে ডাইনিং-এ এসে হই হই করে তার রান্না করা খাবার খাওয়ানোর জন্য সবাইকেই জোরাজুরি করছে। কিন্তু সেই রান্না খাবে না বলে সবার মধ্যে সে কি তাড়াহুড়ো। সত্যিই সময় কত দ্রুত বয়ে যায়...
তবে সে না আসলেও আমাদের ডাইনিং টেবিলে তার বসা সেই চেয়ারটা আজও সেভাবেই খালি পড়ে থাকে। কেউ সেটাতে বসেও দেখে না। এমন কি মাঝে মাঝে আম্মাকে দেখি, কান্না বিজড়িত নয়নে সেটাকে খুব যত্ন সহকারে পরিষ্কার করছেন। দেখলে মনে হবে, এক্ষুনি বোধহয় সে ঐ চেয়ারটাতে এসে বসবে বলে মমতাময়ী মায়ের কত আয়োজন।
একদিন খেতে খেতে দেখলাম, বাবা মুখের মধ্যে ভাত নিয়ে ঐ চেয়ারটার দিকে নিঃস্পলক তাকিয়ে থেকে নিরবে চোখের পানি ফেলছেন। কি জানি, সেদিন বাবার মনে এরকম কোন ঘটনা ঊঁকিঝুঁকি মারছিল কি না! যে ঘটনা শুধু ঘটার সময়ই মনে রেখাপাত করে না, বরং সারাজীবনের জন্যই স্মৃতির পাতায় অমলিন হয়ে বসে থাকে।
জানি না তার শশুর বাড়ির মানুষ গুলো ঠিক কেমন প্রকৃতির। সেখানেও খাওয়ার সময় তার রান্না খাবে না বলে কোন ধরনের হৈ চৈ হয় কিনা! তবে সেদিন আম্মা ফোন করে বললেন, ওর শশুর-শাশুড়ি নাকি সব সময় ওর রান্নার খুব প্রশংসা করে। শুনে কিছুটা আশ্চর্য্ হলাম! তবে ভালোও লাগলো এটা ভেবে যে, আমার আদরের বোনটা তার নিজের প্রচেষ্টায় শশুর বাড়িতে অন্তত একটা মজবুত আসন করে নিতে সক্ষম হয়েছে।
এক সময় কষ্ট হবে বলে যে মেয়েকে মা একটা কাজও করতে দিতো না, আজ সে অন্যের বাড়িতে গিয়ে হাজারটা দ্বায়িত্ব সামলাচ্ছে! ভাবতেই অবাক লাগে! তবে এটাও সত্যি যে, নিজে না চাইলেও সময় এবং পরিস্থিতি অনেক সময় অনেক কিছুই বদলে দেয়...
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- টাইপিংয়ের ভুলের কারণে হয়তো অনেক জায়গায় বানানে ভুল থাকতে পারে। সেটাকে বিবেচ্য বিষয় হিসাবে না ধরে, ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে কৃতার্থ হবো! সবাইকে ঈদ-ঊল-ফিতরের অগ্রীম শুভেচ্ছা! ঈদ মোবারক...
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৭