অনেকদিন ধরে খুব সকালে আমার ঘুম ভাঙে না। সকাল আমার নিকট বড়ই প্রিয়। বিশেষকরে শীতের দিনের সকাল। লেপের ভেতর থেকে মাথা বের করে জানালায় মৃদু সুন্দর রোদ কুয়াশার খেলা দেখতাম শৈশবে। বিছানা ছেড়ে উঠতে মন চাইতো না। সকাল মানেই তখন আনন্দ। ধোঁয়া উঠা গুড় চা আর ভাপা পিঠার সকাল গুলো মনে পড়লে হারিয়ে যাই সেই শৈশবে , সেই আনন্দলোকে। আহ, সেই স্কুল ছুটির দিনগুলো যদি দেখতে পেতাম একবার। নিজে ফিরে যেতে পারব না জানি, অন্যকেউ আনন্দটুকু পাচ্ছে দেখতে পেলেও আমি অনেক আনন্দিত হবো। মনে আছে এমনই এক শীতের সকালে শিকারী পুরুষ বইটা পড়ে আমার খুব বিস্কুট খেতে ইচ্ছা হয়েছিল। কেন হয়েছিল জানিনা।
শীত আর বর্ষার সময়টাতে শিকার কাহিনীর বই বেশি পড়তাম। আমার মনে আছে যেবার জন হান্টারের "হান্টার" বইটা পড়ি সেই কনকনে শীতেও আমি কেমন এক উষ্ণতা অনুভব করেছিলাম রক্তস্রোতে। অনেক ছোটবেলায় একটা বই পড়েছিলাম শিকারের, বাংলাদেশী কোন লেখকের । বইটার নাম মনে পড়ছে না। অসাধারণ একটা বই ছিল। নিজেকে অনেকদিন সেই গল্পের নায়ক ভেবেছি। তারপর একদিন অনুভব করলাম পশুদের শখের বশে হত্যা করলে আমাকেও তো কেউ হত্যা করতে পারে।
আমার শৈশবের প্রায় সবটুকু কেটেছে স্বপ্নের মতন। হয়তো চাইলেই সবকিছু পেতাম না। তবে বই পড়ার একটা স্বাধীনতা ছিল। এখন যদিও আরো বেশি পেয়ে গেছি স্বাধীনতা, সুযোগ যাই বলি না কেন। তবে পড়াটা হচ্ছে না। কেমন করে যেন দিন কেটে যায়। দিনটা শুরু না হতেই শেষ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগা কাজ করে। ভেতরে ভেতরে পুড়ে মরি। মন খারাপ হয়। খুব মন খারাপ হয়।
দিনদিন কেবল যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি। সকাল মানে এখন ১০টা। সকাল মানে এখন ঘুম ভেঙেই ফেসবুক। অথচ আমার শৈশবের সেই মিষ্টি সকালের কোমলতার এক বিন্দুও খুঁজে পাইনা এখন আর। আফসোস করতেও ভুলে গেছি। সকালেই দিনের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। প্রতিটা সকাল পানসে , বিবর্ণ। দিনগুলোও তাই । আমি আমার শৈশবকে চাইলেও ফিরে পাব না। আমি আলাভোলা , পড়ুয়া আমাকে ফিরে পেতে চাই। ঠিক শৈশবের মতন কৌতুহলী হাসিখুশি আমাকে.....
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:২৫