somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝিলমিল দুঃখ

০৭ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রিনঝিন করে হাসির শব্দ হলো। পাশ ফিরে তাকালাম। মুখের সামনে হাত নিয়ে হাসিতে ভেঙ্গে পড়ছে একজন। গালে টোলও পড়ছে হাসির দমকে দমকে। বুকে ধাক্কার মতো খেলাম। সবার চোখ আর মুখ একসাথে হাসে না। এ মেয়েকে প্রকৃতি সেটা দিয়েছে। এরকম হাসি দেখলে আমার মন খারাপ হয়ে যায় । অসম্ভব রকমের মন খারাপ হয়ে যায়। আলগোছে ফিরিয়ে নিলাম চোখ।

ভিসি চত্বরে বসে আছি একজনের অপেক্ষায়। সাত মিনিটের কথা বলে ২১ মিনিট পার হয়ে গেছে। খবর নেই তার। আকাশের অবস্থা ভালো না। কিন্তু রঙটা সুন্দর। যখন তখন বৃষ্টি নামবে অবস্থা। আকাশের এ রঙটাকে বলে কাকঘাড় রঙ। কাকের ঘাড়ের মতো রঙ থাকলে বুঝতে হবে বৃষ্টি নামা সময়ের ব্যাপার। কিন্তু বৃষ্টি নামবে আরো অনেক পরে।

এরকম বৃষ্টি আসি আসি দিনেই মানুষ ঘরকুনো হয়। বাইরে থাকতে চায় না মন।

যেখানটায় বসে আছি তার সামনেই এক বৃদ্ধ বসে ঝিমাচ্ছেন। আইস্ক্রিমের দোকান তার। একজোড়া তরুণ তরুণী এলো। আইস্ক্রিম চাইছে। ঝিমুনি কেটে গেল তার। আইস্ক্রিম দিয়ে আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেলেন। ব্যাপারটা বিজ্ঞাপন বিরতির মতন লাগলো আমার কাছে।

একটা চড়ুই এসে বসলো ছোট্ট রেলিং এর ওপর। ঘাড় ঘুরিয়ে কিছুক্ষণ দেখে উড়াল দিল। সুন্দর দেখতে পাখিটা। আমার চোখ আরও পাখি খুঁজে বেড়াচ্ছে। খানিকটা দূরে একটা শালিকের দেখা মিলল। মনে পড়লো ওয়ান ফর সরো, টু ফর জয়।

একটা পা নেই শালিকটার। লাফিয়ে লাফিয়ে খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে। কারা করে এইসব অপকর্ম।পাখিটা লাফাতে লাফাতে সরে গেল দেয়ালের একপাশে। তবু চোখ সরাতে পারছিনা আমি।

কচুপাতা রঙের একটা গাড়ি থামলো আমার সামনে। যার অপেক্ষা করছিলাম সে এলো। গাড়ির রঙের সাথে মিলে গেছে তার শাড়ির রঙ। খুব দ্রুতই শেষ হলো আলাপ। একটা আইস্ক্রিম খেয়ে বিদায় নিলো সে। আকাশের অবস্থা তথৈবচ।

এখন দুপুর। অনেকদিন বৃষ্টিতে ভেজা হয়না। ছোটবেলায় কাকভেজা হয়ে যখন বাড়িতে যেতাম প্রচুর বকা ক্ষেত্রবিশেষে মারও জুটত কপালে। বইখাতা সব ভিজে একসা হয়ে থাকত। পরেরদিন ক্লাসে যাওয়া হতোনা। আর ভাগ্যক্রমে একবার জ্বর উঠলে পারলে আমায় আর পায় কে। টানা একসপ্তাহ ক্লাস ফাঁকি।

একবার বছরের প্রথম বৃষ্টিতে হাঁটু কেটে বাসায় ফিরেছিলাম। হাসপাতাল অবধি যেতে হয়েছিল। মা সেদিন কিশোরীর মতো কেঁদে ফেলেছিল। ভেতরটা ডুকরে ওঠে এখনো আমার। সেই সব সুখ ছোঁয়া মুহূর্তগুলো মানুষের জীবনে বারবার ঘুরে ঘুরে আসে।

আমি বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছি। বৃষ্টি হলে অনেক কিছু ভেসে যাবে। অনেক দুঃখ, অনেক আনন্দও। বৃষ্টিতে ভিজলে নিজেকে কেমন যেন পবিত্র মনে হয়। মনে হয় সব পঙ্কিলতা ধুয়ে মুছে চলে গেছে। হালকা একটা অনুভূতি এসে ভর করে। নিজেকে পাখি পাখি লাগে।
আমি হাঁটছি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে ফুটপাথ ধরে। আকাশ ধীরে ধীরে কালো হচ্ছে। ফুটপাথের উপর একটা পলিথিনের ঝুপড়ি। সামনে বসে এক বৃদ্ধ বিড়ি টানছে। চোখে মুখে রাজ্যের বিরক্তি। বারবার আকাশে তাকাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে বৃষ্টি এলে তার ক্ষুদ্র প্রাসাদ ভেঙে পড়বে। বাসস্থানের চিন্তায় সে অস্থির হয়ে আছে। একদলা থুথু ফেলল সে রাস্তার উপর। বোঝা যাচ্ছে বিরক্তির মাত্রা চরমে।
কার উপর সে বিরক্ত হতে পারে ? বৃষ্টি, তার ঘর, প্রকৃতি নাকি তার নিজের উপর?

একই সময়ে একই জায়গায় দাড়িয়ে দুইজন মানুষের মধ্যে কত অমিল। একজন চাচ্ছে বৃষ্টি হোক অন্যজন প্রাণপনে চাইছে বৃষ্টি যেন না আসে।

আমি আবার হাঁটতে শুরু করলাম। মেঘের ডাকাডাকি শুরু হয়ে গেছে। হঠাৎ করে মনে হলো আমার ভেতরে এই মুহূর্তে দুইটা স্বত্তা বসে আছে। একজন চাইছে বৃষ্টি হোক, আমি বৃষ্টিতে ভিজি। অন্যজন প্রাণপনে চাইছে বৃষ্টি যেন না আসে।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:২৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×