somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অকারণ বোকা ঝড়

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তারপর? সব থেমে যাবে, ফুরিয়ে যাবে সব?

আসলে কিছুই হবে না। এমনকি একটা গাছের পাতাও টের পাবে না পৃথিবীতে আমি ছিলাম। আমার জন্য কিছুই আটকে থাকবে না। যেমন থেমে নেই আমি থাকাতেই। এমনই হয়। এমনটাই সত্য। চলে গেলে যা ক্ষত হয় সেটা সাময়িক। কিংবা অনেকখানি ভান। ঘুম ভাঙার পর থেকে আমার কেবলই এমন অনুভব ডুকরে ডুকরে উঠছে ভেতরে। কেমন একটা শূন্যতা এসে থেমে আছে গলা অবধি। হাহাকার। কেন এমন লাগে? পৃথিবীর তাবৎ দুঃখ তো না পাওয়া থেকেই আসে। পেয়ে গেলেই আর কোন দুঃখ থাকে না মানুষের। নাকি পাওয়ার পরও জমা হয় কোন নিরেট বেদনা? আমি জানি না আসলে। আমি না পাওয়াদের দলে।

সকালে বেশ রোদ দেখেই বের হয়েছিলাম বাসা থেকে। এখন আকাশ মেঘলা। একদম কাকঘাড় রঙ। এখন তখন নামে অবস্থা। বসে আছি বাসে। মৎস্য ভবনের মোড়ে জ্যামে গিট্টু লেগে আছে মনে হয়। মিনিট বিশেক হবে এখানে বসে আছি। অবশ্য অন্য পাশের রাস্তা দিয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটে যাচ্ছে গাড়ি। আমার না বলতে পারা অনুভব যদি এইভাবে ছুটে যেত আমার থেকে।

গত দুইদিন ধরে এই বাসে অবশ্য একটা সুন্দর ব্যাপার ঘটছে। আজকে একটু বেশি সুন্দরই ঘটে গেছে। একজন মানুষের সাথে বাসে বেশ কয়েকদিন দেখা হয়েছে। দেখা বলতে চোখাচোখি আরকি। উনি একটা দারুণ মুচকি হাসি ঝুলিয়ে রাখেন ঠোঁটের ডগায়। আমার সাথে চোখাচোখি হলেই হাসিটা পেয়েছি আমি। অচেনা একজন সুন্দরী তরুণীর চোখে চোখ রেখে হাসার মতন অত সাহস আমার নাই। তাই সেই হাসি আর ফেরত দেই নি আমি। আমরা একই স্টপেজ থেকে উঠি প্রতিদিন। উনার একটা ব্যাপার বেশ ভালো লাগে। বাসের মধ্যে বই পড়েন। এই অভ্যাসটা আমার সাথে মিলে গেছে। আজকে কাকতালীয়ভাবে আমরা পাশাপাশি বসে যাচ্ছি। উনি একটা বই পড়ছেন। আমিও এতক্ষণ পড়ছিলাম । অদ্ভুত সুন্দর লাগলো এইটুকু আমার কাছে। এই ব্যাপারটা বাসের খুব পরিচিত দৃশ্য যদি হতো দারুণ হতো না?

বাইরে বেশ ঝড়ো একটা হাওয়া বয়ে গেল। বেশ খানিকটা এলোমেলো ধুলো ছেয়ে গেল চারপাশে। পরক্ষণেই নামলো ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। বৃষ্টির ছাট এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে বাসের ভেতরেও। জানালা টেনে দিলাম। জানালার কাঁচে বৃষ্টির ফোঁটা দেখে আমার মধ্যে অদ্ভুত কিছু ভাবনা এলো। সেইসাথে কোত্থেকে উড়ে এলো একরাশ হাহাকার। কেবলই মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে। যাচ্ছে না ফেলছি বুঝি না আমি। ক্রমশ একটা ছোট্ট জায়গায় আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার ভুবন। প্রতিদিন একই ঘটনা, একই সব।

দশ বছরের সেই দুষ্ট ছেলেটার মতন আবার হতে ইচ্ছে করে। ফুটবল খেলতে গিয়ে পা কেটে ঘরে ফিরে মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়া সেই ছেলেটার দেখা পাওয়া দরকার। সেই ছেলেটার সাথে আমার আবার দেখা হোক। এক বর্ষার দিনে হালকা জ্বর গায়ে যে বাইরে বেরিয়ে প্রথম চার লাইন ছড়া লিখে খুশি হয়ে দৌড়ে বাড়ি চলে এসেছিলো। এসেই খাতা কলম নিয়ে বসে পড়েছিলো। সেই ছেলেটার আত্মবিশ্বাসটা দরকার আমার। কিংবা রাত জেগে লুকিয়ে লুকিয়ে গল্পের বই পড়ে সকালে ক্লাসে গিয়ে ঘুমানো ছেলেটার কল্পনা শক্তি দরকার আবার আমার। সেই ছেলেটা আর নেই। সেসবও নেই…

কী আবোল তাবোল লিখছি! আচ্ছা আমার এই হাহাকারের কারণ কি এইসব? লেখাটার সুর কেটে গেছে। আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। তারচেয়ে বরং গান শুনি। কানে একটা খেয়াল ছেড়ে দিয়ে আমি বৃষ্টি দেখতে আরম্ভ করলাম। বাস চলছে, আমিও চলছি নিয়মিত গন্তব্যে। কানে বেজে চলেছে কারও ঘরে ফেরার আকুতি...

আচ্ছা এমন বাস কোথাও আছে শৈশবে নিয়ে যাবে?

কবি জসিম উদ্দিন রোড,
কমলাপুর, ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩০
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৫৯
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×