somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাঃ হাবীব প্রাণপণে দৌড়াচ্ছেন। কাঁধের উপর বসা মেয়ে মিটমিট করে হাসছে।

২৪ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- স্যার আসব?
ডাঃ হাবীব তাঁর রুমের দরজার দিকে তাকালেন। একজন লোক দরজা ঠেলে উঁকি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রথম দর্শনেই তার ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে সে অনুমতির তোয়াক্কা করা মানুষ না। ডাঃ হাবীব মানুষ চিনতে পারেন। মানুষ চেনার আত্মবিশ্বাস ব্যাপারে তাঁর নিজের উপর উচ্চ ধারণা আছে।
লোকটি আবার একটু জোর দিয়ে বলল, স্যার আসতে পারি?
ডাঃ হাবীবের মেজাজ অকারণে খারাপ হয়ে গেল। লোকটার চেহারা দেখে মনে হল অতি ধুরন্ধর টাইপ মানুষ। ইদুরের মত মুখ, নাকের নিচে পাতলা সরু গোফ। গলায় লাল টাই। তীব্র গতিতে চোয়াল নাড়িয়ে পান চিবুচ্ছে।
লোকটা একবারের জায়গায় দুইবার অনুমতি নিচ্ছে। তার মানে এই লোক কোন কিছুতে ভরসা করতে পারেনা। তার মাঝে অস্থিরতা ধর্ম বিদ্যমান। লোকটার পেশা কি হতে পারে?
বাস হেল্পার নাকি ফুটবল কোচ?
নাহ, এই দুই পেশার কেউ তাঁর কাছে আসার কথা না।
ডাঃ হাবিব ধরে নিলেন তাঁর দিনটা খারাপ যাচ্ছে। চেহারা দেখেই যে লোককে তিনি অপ্রিয় ভাবেন সেই লোকের সাথে তাঁর কখনই ভালো সময় কাটে না,এটা প্রমাণিত সত্য। অফিসে বসে এই লোকটিই প্রথম বাইরের কেউ।
নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি বললেন, আসুন।
লোকটা প্রায় দৌড়ে এসে সামনের চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ল। তারপর চিনচিনে গলায় বলল, ধন্যবাদ স্যার।
ডাঃ হাবীব বললেন, ওয়েলকাম। আপনাকে ঠিক চিনলাম না। বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি?
-স্যার আমার নাম জামাল। জামাল ভুঁইয়া।
- ও আচ্ছা,জামাল ভুঁইয়া সাহেব, দুঃখিত, তারপরও আমি আপনাকে চিনতে পারছি না।
লোকটা বোধহয় চিনতে না পারার কারণে একটু অপমানিত বোধ করল। মুখ কালো করে বলল। স্যার আমি বর্তমান মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক। স্যার নিশ্চয়ই মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীকে চেনেন?
ডাঃ হাবীব এবার একটু নড়েচড়ে বসলেন। তিনি বুঝতে পারলেন তাঁর ধারণা সঠিক। লোকটার ছটফটানি, ধুরন্ধর ভাব এবং অতি আত্মবিশ্বাস প্রমাণ করে সে রাজনীতি সংশ্লিষ্ট কেউ না হয়ে পারে না। এমপি মন্ত্রীদের শ্যালক, খালাত ভাই, মামাত ভাই এই লোকগুলো সব সময়ই অতি ধুরন্ধর এবং মারাত্মক হয়ে থাকে। সূর্যের চেয়ে বালি গরম এই ধরনের। মন্ত্রীর চেয়ে তাদের পাওয়ার বেশি। মন্ত্রী হচ্ছেন হারিকেন, আর এরা হচ্ছে তেল। তেল ছাড়া হারিকেনের কোন দাম নেই।
ডাঃ হাবীব প্রতিমন্ত্রী সাহেবের নামই জানেন না। মহাকাশ প্রযুক্তি ব্যাপারে যে আলাদা মন্ত্রণালয় থাকতে পারে সেটাও তাঁর অজানা ছিল। কিন্তু এসব লোকদের মুখের উপর " নাম জানি না" বলা সম্ভব না। তারা এক প্রকার নিশ্চিত থাকে যে সবাই তাদেরকে চিনবেই এবং চিনতে বাধ্য।
তিনি খানিকটা মিথ্যে বলতে বাধ্য হয়ে বললেন, হাঁ চিনি, চিনব না কেন?
- ধন্যবাদ স্যার। আমি জানতাম আপনি চিনবেন।
- তা মন্ত্রীর শ্যালক সাহেব, আমার এখানে কেন? আমার এখানে তো মহাকাশ প্রযুক্তি নিয়ে কোন কাজ কর্ম হয়না।
জামাল হাত কচলাতে কচলাতে বলল, হেহেহে স্যার!আপনার কাছেই তো আসতে হবেই। আমি আসলে একটা আর্জি নিয়ে আপনার কাছে এসেছি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিনের অধ্যাপক ডাঃ হাবীবুর রহমান দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার কারণে বুঝতে পারলেন কি আর্জি। তাঁর কাছে মানুষ একটা কাজ নিয়েই আসে। তাঁর সাথে জীবিত মানুষ নিয়ে কোন কাজ কারবার নেই, সব কাজটা হচ্ছে লাশ সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে।
তিনি মানুষের না, লাশের কারবারী।
তাঁর মুখে খানিকটা মুচকি হাসি ফুটে উঠল।
- প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক সাহেব, বলুন কি করতে পারি আপনার জন্য ?
জামাল নড়েচড়ে বসল। ষড়যন্ত্রের ভঙ্গীতে সামনে এসে বলল, হয়েছে কি স্যার, আমার খালাত ভাই বকুল, যেমন চেহারা তেমন ব্রেইন। ঢাকা ভার্সিটিতে কেমিস্ট্রিতে ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড ছিল। অল্পের জন্য ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়নি। সেও এক বিরাট কাহিনী, কাহিনী হচ্ছে গিয়ে আপনার...
ডাঃ হাবীব পলিটিশিয়ানদের নিয়ে অনেক নাড়াচাড়া করেছেন। লাশের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে রাজনীতি। বেশিরভাগ লাশের সাথেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনীতির স্টিকার মারা থাকে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা প্রচুর কথা বলে। তাদের কথা ধৈর্যের সাথে শোনতে হয়। কিন্তু তিনি এই জামাল লোকটাকে শুরু থেকেই পছন্দ করতে পারছেন না। তাই সামান্য কথাতেই অধৈর্য্য হয়ে বললেন,আপনি মূল ব্যাপারটা তাড়াতাড়ি বলুন। আমার সময় কম।
জামাল বলল, জ্বি স্যার, অবশ্যই স্যার। যা বলছিলাম, বকুল...বকুল ভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় একটা মেয়েকে পছন্দ করে। একেবারে নায়িকাদের মত চেহারা, নাহার নাম। নাহারকে যে একবার দেখবে সে কারিনা কাইফের কোন মুভি দেখবে না। ওয়াক থু বলে সিডি ভাঙ্গবে। তারপর ভাঙা সিডি দিয়ে পিঠ চুলকাবে।
ডাঃ হাবীব মনে মনে বললেন, হারামজাদা কারিনা কাইফ না, ক্যাটরিনা কাইফ।
মনে মনে বলা কথা জামাল শুনতে পেল না। ডাঃ হাবীব ধৈর্য্য ধরে শুনতে লাগলেন। এই শ্রেণীর লোকজনের উপর বিরক্ত হওয়া বা রাগ করা যাবে না। এদের সাথে খারাপ ব্যবহার মানেই সন্দ্বীপ হাসপাতালে ট্রান্সফার।
জামাল বলতে লাগল, তো স্যার চেহারা ভালো হলে কি হবে, বদের হাড্ডি। নানান লোকের সাথে লটর পটর। বকুল বাইরে যায়, হারামজাদি ঘরে বাইরের মানুষ ঢুকায়।
ডাঃ হাবীব এবার আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারলেন না। পুরোপুরি ধৈর্য্য হারিয়ে বললেন, আপনি দয়া করে মূল ব্যাপার বলুন। আমার কাজ আছে। আপনি প্রসঙ্গহীন কথাবার্তা বলছেন।
জামাল বলল, জ্বি স্যার। তো হয়েছে কি, একদিন বকুল বাইরে থেকে এসে দেখে বাইরের লোক ঘরে। পুরুষ মানুষ, মেজাজ ঠিক রাখতে পারল না। বউকে দিল একটা চড়। আর হারামজাদী করল কি, বিষ খেল। এখন ওর বাপ মামলা করছে বকুল নাকি বউকে গলাটিপে মেরে গলায় বিষ ঢেলে দিছে। চিন্তা করেন স্যার, মানুষ কত খারাপ হতে পারে? কারো এত আদরের বউকে কেউ মারতে পারে?
ডাঃ হাবীব মনে মনে বললেন এই তো ব্যাটা লাইনে আসছিস। হারামজাদা কাহিনী বলার কি দরকার? সরাসরি বললেই তো হয়। শুধু শুধু মিথ্যে কাহিনী বাড়িয়ে পাপ আরো বাড়ানোর কি দরকার?
- তো আমি এখানে কি করতে পারি?
জামাল সবগুলে দাঁত বের করে বলল, স্যার! আপনিই তো সব করতে পারেন। লাশ আপনার এখানে এসেছে। সুরতহাল রিপোর্টে দিলেই হয়, লিভারে বিষের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিষপানে মৃত্যু। আত্মহত্যা। মামলা শেষ। আমার নির্দোষ খালাতো ভাই বেঁচে যাবে।
ডাঃ হাবীব আবারো মনে মনে বললেন, হারামজাদা সুরতহাল রিপোর্ট না, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট। সুরতহাল রিপোর্ট তো তোর পুলিশ বাপরা করে। আর বিষ কি লিভারে পাওয়া যায় রে গরু, পাওয়া যায় স্টমাকে।
মানুষ হওয়ার বিরাট বড় সুবিধা হচ্ছে মনে মনে প্রচুর কথা বলা যায়। মনের বিষ উগড়ে দেয়া যায়। যদিও ডাক্তার হাবীবের উচিত না জামালের উপর রাগ করা। কারণ জামাল এই মুহুর্তে তাঁর ক্লায়েন্ট।
ডাঃ হাবীব বললেন, কিন্তু আপনার মামলা তো এখানে শেষ হচ্ছে না। আমি সিস্টেম করে দিলেই সব শেষ হবে না। পুলিশের ব্যাপার আছে, কোর্টের ব্যাপার আছে।
- ওসব ম্যানেজ হবে স্যার। আপনারটাই হল আসল। আপনারটা শেষ হয়ে গেলে ওসব চুটকির ব্যাপার।
ডাঃ হাবীব দীর্ঘদিন থেকে এ লাইনে আছেন। তিনি বুঝে ফেললেন তাঁর কি করতে হবে। নাহার নামের মেয়ের লাশটা তিনি দেখেছেন। শরীরের অনেকগুলো আঘাতের চিহ্ন। খালি চোখেই বলা যায় হত্যা। কিন্তু এই সত্যটাকে তিনি মুছে দেবেন। তাঁর হাতে একটা অদ্ভূত শক্তিশালী ডাস্টার আছে। অসংখ্য সত্যকে এই ডাস্টার দিয়ে তিনি মুছে দিয়েছেন। সত্য মুছে দিয়ে আরেকটা শক্তিশালী মার্কার দিয়ে তিনি সত্যের জায়গায় মিথ্যে লিখেছেন। সত্য মুছে দিতে তাঁর তেমন কোন সমস্যা হয় না। এ দেশে সত্য মুছে দেয়ার উৎসব চলে। তিনি উৎসবের বাইরে থাকতে বিশেষ ইচ্ছুক নন । তাঁকে আরেক বার ডাস্টার হাতে নিতে হবে। আরেকবার মার্কার হাতে নিতে হবে।
তিনি ঠান্ডা গলায় বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। আমি দেখছি কি করা যায়। আপনার চিন্তা করার দরকার নেই।
জামাল পকেট থেকে হলুদ রংয়ের একটা খাম বের করল।ভেতরে একটা চেক। ডাঃ হাবীব দেখলেন টাকার ঘরে এক এর পর ৬ টা শূন্য।
জামাল হাসিমুখে বলল, স্যার আমি জানতাম আপনি এ উপকারটুকু করবেন। দুলাভাই আমাকে সে কথাই বলেছিলেন। দুলাভাই আপনাকে একদিন তাঁর অফিসে চা খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন। বলেছেন আপনি গেলে খুবই খুশি হবেন। আপনার কথা প্রায়ই তিনি মনে করেন।
কথা বলতে গিয়ে তার পানের পিক টাইয়ের উপর পড়ল। জামাল এদিকে ভ্রুক্ষেপ করল না।
ডাঃ হাবীব মনে মনে বললেন, হারামজাদা! তোর দুলাভাই আমারে কোন দুঃখে চিনবে? কোন দুঃখে আমি চা খেতে যাব? ফাইজলামির জায়গা পাস না?
মনের কথা গোপন করে তিনি হাসিমুখে বললেন, তা তো অবশ্যই।এক দিন অবশ্যই যাবো। অবশ্যই যাব।
জামাল বিনয়ে গলে গিয়ে বলল, আসি স্যার?
ডাঃ হাবীব নাহার মেয়েটাকে ২য় বারের মত হত্যা করে হলুদ খামটা পকেটে ঢুকিয়ে বিরস গকায় বললেন,আসুন।
সম্পূর্ণ দুই ভিন্ন পেশার একই আদর্শের দুইজন মানুষ কিছুক্ষণ পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর দুইজনই দুইজনকে মনে মনে কয়েকটা কঠিন গালি দিল। তার মধ্যে সবচেয়ে ভদ্র গালিটাহচ্ছে " শালা আস্ত একটা টাউট" ।
:
:
ডাঃ হাবীরের মন চূড়ান্ত রকম খারাপ। একটু আগে তার স্ত্রীর সাথে ফোনে কথা বললেন। তাঁর ১১ বছর বয়সী একমাত্র মেয়েটার জ্বর নাকি আরেকটু বেড়েছে।
এই মেয়েটাই তাঁর জীবনের একমাত্র দুর্বলতা। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। শেষ বয়সে ফুটফুটে একটা সন্তান পেলেন। পরীর মত চেহারা। দেখলে সারাদিন তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথেই একটা বড় সমস্যা দেখা দিল। মেয়েটা কথা বলতে পারেনা । ৪ বছর বয়স পর্যন্ত ভেবেছিলেন হয়ত কথা বলতে সময় লাগছে। কিন্তু একটা সময় আবিষ্কার করলেন মেয়েটা জন্মগতভাবেই বোবা। দেশের ডাক্তার দেখালেন, বিদেশে নিয়ে গেলেন। কেউ বলল ভোকাল কর্ডে প্রবলেম, কেউ বলে ল্যারিঞ্জিয়াল ইনলেটে। আবার কেউ বলল ফুসফুসে, কেউ বলে নার্ভে। কিছু হচ্ছে না দেখে গোপনে পীর ফকিরের কাছে গেলেন। কিছুতে কিছু হলোনা।
মেয়েটা যখন কথা বলতে না পেরে মিষ্টি করে হাসে, তখন তাঁর বুক ভেঙে যায়। ইচ্ছে করে সারা পৃথিবীর বিনিময়ে মেয়েটা একটু কথা বলতে শিখুক।
ডাঃ হাবীব তাঁর সহকারীকে কাজ বুঝিয়ে বের হয়ে পড়লেন। সন্ধ্যা নাগাদ তিনি তাঁর ড্রাইভারকে ছেড়ে দিলেন। আজ রিকশা নিয়ে ঘুরবেন। মন বেশি খারাপ হলে তিনি রিকশা নিয়ে দীর্ঘসময় ঘুরেন। আজ তাঁর প্রাইভেট চেম্বারও নেই। হাতে অনেক সময়।
রিকশাওয়ালার বয়স ৩৫ এর মত হবে।
গলায় গামছা,শক্ত সামর্থ চেহারা।
- স্যার,যাইবেন কই?
ডাঃ হাবীব বললেন, ইচ্ছামত ঘুরব। সমস্যা নাই, তুমি টাকা যা চাইবে তাই পাবে।
রিকশায় চড়লে তিনি চালকদের সাথে প্রচুর কথা বলেন, এটা তাঁর একটা স্বভাব। চুপ করে বসে থাকতে পারেন না।
- তোমার পরিবারে কে আছে?
রিকশাওয়ালাও বোধহয় বাঁচাল প্রকৃতির। সে সাথে সাথে কথা বলতে শুরু করে দিল।
- দুইটা মাইয়া আছে আর পরিবার। একটার বয়স আট আরেকটার চাইর।
- ইনকাম কেমন হয়?
- ইনকাম হয় আল্লার রহমতে ভালোই। মাসে ধরেন পনের হাজার। বস্তি ভাড়া দিই দুই হাজার। খরছ বেশি না। পয়সা জমানোর ইচ্ছা আছে, মাইয়াগরে তো বিয়া দিতে হইব। কিন্তু একটা পয়সাও হাতে থাকে না।
- কেন? নেশা টেশা কর নাকি?
- তওবা, কি বলেন স্যার? এই নানান অসুখ বিসুখ থাকে। নেশা করি নাই তয় মানুষ ফেরেশতা না। রাইত হইলেই ভাড়া বেশি চাই। মানুষের যত বেশি বিপদ ভাড়া তত বেশি। টাকায় বরকত আইব কেমনে কন তো? সুখ শান্তি আইব কেমনে? এই সব করলে সুখ শান্তি আসে?
ডাঃ হাবীব আনমনা হয়ে গেলেন।
রিকশাওয়ালা আবার বলতে লাগল।
- সেদিন এক পেসেঞ্জার রিসকায় মানি ব্যাগ ফেলে চলে গেল। আমি কিন্তুক পড়তে দেখছি। লোভ হইল ফেরত দেই নাই। মানিব্যাগে টাকা পাইলাম সাতশ বিশ। বাসায় গিয়া দেখি ছোট মাইয়াটা পা কাটছে। খরছ হইল নয়শ টাকা। বুঝলেন স্যার, আল্লার বিচার আল্লায় করছে। পাপ করলে রেহাই নাই। আফনার কিছু না হইলেও আফনার কলিজার টুকরা কারো হইবই। আল্লার বিচার এইটাই। ইসতিরির পাপ পড়ে স্বামীর উপর, বাপের পাপ পড়ে সন্তানের উপর। কোরান- হাদীসের কথা।
একটা তীব্র ঝড়ে যে গাছ ভেঙে পড়েনা, সামান্য মৃদু বাতাসেও মাঝে মাঝে সে গাছ উপড়ে পড়তে পারে। একটা বুলেট যে মানুষকে নড়াতে পারেনা মাঝে মাঝে একটা আনপিন তাকে নড়াতে পারে।
আইনস্টাইন বলে গেছেন পৃথিবীর সবকিছু আপেক্ষিক। একেক জায়গায় একেক সময় একই জিনিসের একক রূপ থাকে।
ডাঃ হাবীব আইনস্টাইনের সূত্রে পড়ে গেলেন। সামান্য রিকশাওয়ালা তাকে ভিন্ন এক জগতে নিয়ে গেল।
তিনি গভীর চিন্তায় পড়ে গেলেন। তাঁর মেয়ের পরিণতি কি তাহলে তাঁর জন্যই?
তিনি জানেন তিনি অপরাধ করছেন। বাবার পাপ সন্তানের উপর পড়ে কিনা এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত নন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এটাই হয়েছে। তাঁর পাপ তাঁর মেয়েকে আঘাত করবে তা তিনি কখনও ভাবেননি। হঠাৎ করে তাঁর যেন কি হয়ে গেল। তাঁর মন দর্পন হঠাৎ তাঁর কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠল। তিনি কল্পনায় দেখলেন নাহার মেয়েটা তাঁকে বলছে, আমিও কারো মেয়ে ছিলাম।
বেশ কিছুক্ষণ পর তিনি কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইল হাতে নিলেন। তাঁর সহকারী মিজানকে ফোন দিলেন।
- হ্যালো মিজান!
- স্লামালেকুম স্যার, জ্বি স্যার!
- নাহার নামের ভিকটিমের কি ফাইনাল রিপোর্ট হয়ে গেছে?
- না স্যার। তবে আপনি যেভাবে বলছেন সেভাবে করছি।
ডাঃ হাবীব খুক করে একটা কাশি দিয়ে বললেন, শোনো, আগের সব কথা বাদ দাও। যেটা সত্য সেটাই লিখো। আঘাতের চিহ্ন, গলা টিপে ধরা কিছুই বাদ দেবে না।
সহকারী একটু অবাক হয়ে বলল, মানে স্যার?
তিনি ধমক দিয়ে বললেন, মানে যেটা বলছি সেটা। সত্য রিপোর্ট দাও। এখন থেকে কোন রিপোর্টই মিথ্যা লিখবে না।
- স্যার কি কোন সমস্যায় আছেন? আই মিন কেউ ব্ল্যাকমেল করছে?
- না।
- স্যার কি অসুস্থ?
- না।
- কিন্তু স্যার, পার্টি তো প্রভাবশালী। মন্ত্রীর আত্মীয়। আপনি সমস্যায় পড়বেন না?
- তোমার সেটা ভাবতে হবে না। তোমাকে যেটা বলছি সেটা করো।
- ওকে স্যার।
ফোন কেটে দিলেন।
অদ্ভূত একটা ব্যবসা ছিল তাঁর। দোকান এ পাড়ে, কাঁচামাল ও পাড়ে। তিনি কতটুকু আস্তিক সেটা জানেন না। তবে পুরোপুরি নাস্তিক যে না এটা নিশ্চিতভাবেই জানেন। ওপাড়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে চলে যাওয়া মানুষকে নিয়ে এ পাড়ে ব্যবসা করতে তাঁর এতদিন কোন সমস্যা হয়নি। এখন মনে হচ্ছে এট চরম ধৃষ্টতা ছিল। লাশ এবং সৃষ্টিকর্তা উভয়ের সাথেই ধৃষ্টতা।
ডাঃ হাবীব স্থায়ী সিদ্ধান্ত নিলেন আর কখনো এ ব্যবসায় নামবেন না। যদিও সিদ্ধান্ত কতদিন ধরে রাখতে পারবেন সেটা জানেন না। এতদিনের অভ্যেস বদলে দেয়া কঠিন। এই দেশ কোন ভালো মানুষকে এলাও করে না। খারাপ থেকে ভালো হতে চাওয়া কারো জন্য পরিস্থিতি আরো বেশি কঠিন।
ডাঃ হাবীবের মনে ভীষণ রকম শান্তি লাগছে। মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে তাঁর বুকের উপর থেকে কেউ একটা ভারী পাথর সরিয়ে নিল। কিংবা একটা স্বচ্ছ কাঁচের উপর বহুদিনের জমে থাকা ধূলোর আস্তরণ কেউ পরিষ্কার করে দিল।
এত শান্তি আর হালকা অনুভূতি তিনি বোধহয় জীবনে কখনো পান নি।
:
:
ডাঃ হাবীব রাস্তার একটা শো রুম থেকে মেয়ের জন্য একটা সুন্দর দেখে পুতুল কিনলেন। মেয়েকে কোন উপহার দিলে সে সুন্দর করে একটা প্লে কার্ড তুলে ধরে। সেখাসে বড় করে লিখা থাকে "আই লাভ ইউ বাবা"। নিচে ছোট করে "ইউ আর গ্রেট।" তিনি তাঁর মেয়েকে প্রতিবন্ধী স্কুলে পড়াচ্ছেন। কোন কিছু পড়তে এবং লিখতে কখনোই তার কোন সমস্যা হয় না। প্রতি দিন সে প্লে কার্ড আগে থেকেই লিখে রাখে। কোন গিফট দেয়া মাত্র তুলে ধরে।
তিনি মেয়ের কর্মকান্ড দেখে একই সাথে একটা গভীর আনন্দ এবং গভীর বেদনা অনুভব করেন।
রিকশা ড্রাইভার প্রশ্রয় পেয়ে পুরোটা সময় ননস্টপ কথা বলে গেল। কবে বিয়ে করেছে, কবে মা মারা গেছেন, অনেক কাহিনী। তিনি কিছুই ঠিকমতো শোনলেন না। শুধু হু হা করে গেলেন।
রাত নয়টার দিকে তিনি বাসায় আসলেন। রিকশাওয়ালাকে পাঁচশ টাকা দিলেন। সে খুশি মনে পাশের স্টলে চা খেতে চলে গেল।
ডাঃ হাবীব কিছুটা আতংকিত মনে ঘরে ঢুকলেন। মেয়েটার জ্বর বাড়েনি তো। এতক্ষণ কোন খবর নেননি, নেয়া উচিত ছিল।
ঘরে ঢুকেই তিনি বুঝতে পারলেন তাঁর আশংকা বোধহয় ঠিক। তাঁর স্ত্রী মেয়ের পাশে বসে অঝোর ধারায় কাঁদছেন।
তিনি তীব্র আতংক নিয়ে বললেন, কি হয়েছে শাহানা। মেয়ের জ্বর বেড়েছে?
তাঁর স্ত্রী শাহানা ডানে বায়ে মাথা নাড়লেন।
- তাহলে কাঁদছ কেন? খারাপ কিছু হয়েছে?
শাহানা আবার ইশারায় না বললেন।
তিনি পুতুলটা তাঁর মেয়েকে দিলেন এবং "আই লাভ ইউ" প্লেকার্ড দেখার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন।
কিন্তু আধা মিনিটের মত সময়ে তাঁর মেয়ে কোন প্লেকার্ড দেখাল না। তারপর তাঁকে তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় চমক দিয়ে, সবচেয়ে বড় আনন্দ দিয়ে স্পষ্ট স্বরে বলে উঠল,
"আই লাভ ইউ বাবা! ইউ আর গ্রেট!!"
ডাঃ হাবীব ভাবলেন তিনি ভুল শুনছেন। তাঁর পুরো পৃথিবী দোলে উঠল। এত কিছুতে কিছু হয়নি আর আজ এমনিতেই তাঁর মেয়ে কথা বলল!
তাঁর মেয়ে আবার বলল,আই লাভ ইউ বাবা!
তিনি আনন্দে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। জীবনে তিনি অনেক মিরাকল ঘটতে শুনেছেন। তব এর চেয়ে বড় আনন্দময় মিরাকল বোধহয় কারো জীবনে কোন দিন ঘটেনি। কোন দিন কথ না বলা মেয়ে হটাৎ করে কিভাবে কথা বলতে পারে? মেডিকেল সায়েন্সে এর কি কোন ব্যাখ্যা আছে?
তিনি মেডিকেল সায়েন্স নিয়ে চিন্তা করা বাদ দিলেন। এ সব নিয়ে পড়ে চিন্তা করা যাবে। এতটা বছর পর তিনি বাবা ডাক শুনলেন। এটাই তাঁর কাছে সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মেয়েকে এবং স্ত্রীকে একসাথে জড়িয়ে ধরলেন।
তিনি স্ত্রীকে বললেন, মেয়ে কখন কথা বলেছে?
শাহানা চোখ মুছে বললেন, এক ঘন্টা আগে।
- আমাকে ফোনে জানাওনি কেন?
- ভাবলাম তুমি বিশ্বাস করবে না। সারপ্রাইজ হিসাবে রেখেছি।
ডাঃ হাবীবের মনে পড়ল এক ঘন্টা আগে তিনি রিকশায় ছিলেন। হঠাৎ করে তাঁর মনে হল এ ঘটনার পেছনে রিকশাওয়ালার অবদান আছে। তিনি খানিকটা যুক্তিবাদী ধরণের মানুষ। কোন যুক্তিহীন কিছুতে বিশ্বাস করেন না। আজকে তাঁর যুক্তি বিশ্বাস উধাও হয়ে গেল। তিনি ধরে নিলেন এই ব্যাপারটা সরাসরি সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ এবং এই ঘটনার পেছনে রিকশাওলার কোন না কোন ভুমিকা আছে। রিকশাওয়ালা মানুষ কি মানুষ না সেটা ব্যাপারেও খানিকটা দ্বিধায় পড়ে গেলেন।
তাঁর কেন জানি মনে হতে লাগল রিকশাওয়ালা মানুষ না। আশরীরি ধরণের কেউ একজন। এত ব্যাপার একটা ব্যাপার এমনি এমনি ঘটতে পারে না। সবকিছু ঘটেছে যুক্তির বাইরে। কিন্তু যুক্তির বাইরেও আরেক যুক্তি নিশ্চয়ই আছে। সেটা বের করতে হবে। এরজন্য রিকশাওয়ালাকে খুঁজে বের করা দরকার। সে যদি সত্যিই মানুষ হয় তবে তাকে জড়িয়ে ধরে কৃতজ্ঞতা জানাবেন। এখন না পেলে দুই কোটি মানুষের শহরে আর এই লোককে পাবেন না।
তিনি তাঁর মেয়েকে কাঁধে তুলে ঘর থেকে বের হলেন।
শাহানা পেছন থেকে বললেন, কোথায় যাও।
- আসছি। তুমি ওয়েট করো।
তিনি রাস্তায় বের হয়ে চারপাশে খুঁজে দেখলেন, পেলেন না। চায়ের স্টলে এক লোক বলল উত্তর দিকে গেছে।
তিনি মেয়েকে কাঁধে তুলে দৌড় দিলেন। এই পাড়ার পরিচিত মানুষ তিনি। অনেকেই বলল, ডাক্তার সাহেব, দৌড়ান কেন?
- এক রিকশাওয়ালাকে খুঁজি। গলায় গামছা, বয়স ৩৫ এর মতো।
- কেন হারামজাদা কি আপনার কোন কিছু চুরি করেছে?
তিনি জবাব না দিয়েই দৌড়াচ্ছেন। এক সময় না বুঝেই আরও কিছু মানুষ তাঁর পেছন পেছন দৌড়াতে লাগল।
তাঁর বয়স হয়ে গেছে। দৌড়াতে কষ্ট হচ্ছে। তার উপর কাঁধে এগার বছরের মেয়ে। শেষ কবে তিনি দৌড়িয়েছেন মনে করতে পারলেন না। তারপরও তিনি এক ধরণের তীব্র আনন্দ পাচ্ছেন। মনে হচ্ছে এত সুখ তিনি আগে কখনও পাননি।
শহরের কিছু মানুষ অবাক হয়ে দেখল অধ্যাপক ডাঃ হাবীব দৌড়াচ্ছেন। রিকশাওয়ালাকে খুঁজে বের করতেই হবে। সে মানুষ না অন্য কিছু সেটা জানতে হবে। একবার হলেও তিনি তাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করতে হবে।
ডাঃ হাবীব প্রাণপণে দৌড়াচ্ছেন। কাঁধের উপর বসা মেয়ে মিটমিট করে হাসছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৪১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×