somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাবিব স্যার......(ছোট গল্প)

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকলেই হাবিব স্যারের ভেতরটায় একটা সুবাতাস বয়ে যায়। এটি একেবারেই অন্য রকম একটা অনুভূতি। পুরোপুরি বিশুদ্ধ। বাতাস না থাকলেও অনুভূতিটি হাবিব স্যারের ভেতর ঢেউ খেলে যায় কিছুক্ষণের জন্য। হাবিব স্যার ভূমিকম্পের মতো একটা আলোড়ন প্রত্যক্ষ করেন। অতীত সকল স্মৃতি যেনো দুমড়ে মুচড়ে তার সামনে এসে হাজির হয়।
হাবিব স্যার হাঁটছেন নিবিষ্ট মনে। পরিপাটি রাস্তার দু পাশ ধরে চলে গেছে মেহগনি গাছের সারি। মাঝে মধ্যে লাল, নীল হরেক রংয়ের ফুল গাছও নজরে পড়ে। এখানকার সৌন্দর্য একবার দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। মনে হয় সারাক্ষণ চেয়ে চেয়ে এ সৌন্দর্যের পানে হারিয়ে যাই।
অনেকদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন হাবিব স্যার। চাকরি ছাড়ার পনেরটি বছর হয়ে গেলো। এ দিক দিয়ে একটি বারও পা মাড়ান নি। বড্ড রাগে দু:খে অভিমানে হাবিব স্যার চাকরি ছেড়েছিলেন। কিন্তু মানুষ তো আর বেশিদিন এসব অভিমানের বাঁধনে বাঁধা থাকতে পারে না। মাঝে মধ্যেই পুরনো স্মৃতিগুলো ফ্যানের পাখার মতো ঘুরঘুর করে তার সামনে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালীন সময়ে হাবিব স্যার পার করেছেন একটি সংগ্রামী জীবন। কোনো অন্যায় দেখলেই কারো আসার অপেক্ষা না করে সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যেতেন। নীরবে বসে থাকার মধ্যে যে অপমান বোধ সেটি বড্ড খোঁচা মারতো হাবিব স্যারকে। এজন্য তাঁকে মুখোমুখি হতে হয়েছে অনেক বাধা বিপত্তির। হাবিব স্যার ইদানিং লেখালেখির পাশাপাশি অবসর সময়ে এই স্মৃতিগুলো হাতড়ে সময় কাটান। বৃদ্ধ বয়সে এ এক সাধারণ বাতিক। তাছাড়া সুখের স্মৃতির চেয়ে সংগ্রামের স্মৃতিই তো মানুষের মস্তিষ্কে চিরস্থায়ী।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেই হাবিব স্যার পরিষ্কার আকাশের দিকে এক নজর তাকিয়ে নিলেন। এটা উনার পুরনো অভ্যাস। বেশ ভালোই মানসিক টনিক হিসেবে কাজ দেয় হাবিব স্যারকে। হাবিব স্যার হাঁটতে শুরু করলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এক পর্যায়ে হাবিব স্যারের মুখটা কেমন যেনো পাংশে হয়ে গেলো। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে এখনো এক প্রগাঢ় যন্ত্রণা থাবা গেড়ে আছে হাবিব স্যারের বুকে। এখানে কার সাথে দেখা করবেন তিনি? এরকম কেউ আছে কি? এখানকার প্রত্যেকটি চরিত্রকে হাবিব স্যারের কাছে রহস্যময়, শ্বাপদসংকুল বলে মনে হয়। এরা দিনের বেলায় ভন্ডামি করে, সন্ধ্যায় বাইজী নাচায় আর মধ্য রাতে মদ্য পান করে। এরা অমলিন কথার আড়ালে বিষ লুকিয়ে রাখে। সুস্নিগ্ধ চোখের ভঙ্গিতে ষড়যন্ত্র লুকিয়ে রাখে। এরা চরম মাত্রায় স্বার্থপর। এদের প্রতি ঘেন্নার বন্যা বইয়ে যাওয়া উচিত দেশ জুড়ে।
কিন্তু কারো সাথে দেখা না করে গেলেও একটা অপূর্ণতা থেকে যায়। অনেক ভেবে চিন্তে হাবিব স্যার তার ডিপার্টমেন্টের দিকে এগুলেন। ভাবছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেও ডিপার্টমেন্টে যাবেন না। কিন্তু ইদানিং কেন জানি আবেগের কাছে সিদ্ধান্তগুলো বারবার ঠোকর খাচ্ছে । এটাও কি বার্ধক্যের ফল? হাবিব স্যার চিন্তায় পড়ে যান।
মেইন রোডের পাশেই হাবিব স্যারের ডিপার্টমেন্ট। মাত্র পাঁচ মিনিট হেঁটেই পৌঁছে গেলেন। ডিপার্টমেন্টে গিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বেশ অবাকই হতে হলো। কিছুই আর আগের মতো নেই। ডিপার্টমেন্টের সামনে দাড়োয়ান বসা, ফুলের টবে এক পাশ পরিপূর্ণ, মোটামুটি সব টিচারেরই বসার ব্যবস্থা আছে। এগুলো দেখে হাঁটছেন হাবিব স্যার। হাঁটতে হাঁটতে হুট করে প্রফেসর কবির আহমদের চেম্বারটা তাঁর চোখের সামনে পড়লো। নামটা দেখেই হাবিব স্যার থমকে দাঁড়ালেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে নামগুলো শুনলে হাবিব স্যারের রক্ত একশো ডিগ্রিতে ফুটতে শুরু করে কবির আহমদ তার একটি। এই মানুষটির সাথে আর কখনো কথা বলবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন হাবিব স্যার। কিন্তু আজ যেহেতু এতদূর থেকে চলেই এসেছেন তাই উনাকে কিছু কথা শুনানোর লোভ হাবিব স্যার সামলাতে পারলেন না। প্রফেসর কবির আহমদের অনুমতি না নিয়েই হাবিব স্যার তার চেম্বারে ঢুকে গেলেন। প্রফেসর কবির তখন ল্যাপটপের সামনে এক নেশায় বসে আছেন।
হাবিব স্যার একটু রসিকতা করে বললেন, “কী স্যার, বসতে পারি তো?”
মুখ তুলে তাকাতেই প্রফেসর কবিরের মুখটা শীর্ণ হয়ে গেলো। ল্যাপটপের নেশা মুহূর্তেই উধাও। শীর্ণ মুখের আড়ালে একটা ভীতি বেশ স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে।
“আরে, এ কাকে দেখছি আমি! হাবিব স্যার! এতদিন পর..”
চেয়ার থেকে উঠে হাবিব স্যারের সাথে হ্যান্ডশেক করলেন প্রফেসর কবির। পুরো চেহারাটা চমকিত হয়ে রয়েছে প্রফেসর কবিরের।
হাবিব স্যার হ্যান্ডশেক করে বসতে বসতে বললেন, “হুমম, পনেরো বছর পর আসলাম। দেখতে আসলাম সবকিছু কেমন চলছে। অবশ্য ডিপার্টমেন্টে আসার ইচ্ছে ছিলো না। আবার ভাবলাম এতদূর যেহেতু এসেছি ডিপার্টমেন্টটা একটু দেখেই যাই। ”
“তা তো ঠিকই স্যার। আপনার ডিপার্টমেন্টে আপনি তো আসবেনই।” বলে শীর্ণ মুখে একটু হাসি ফুটানোর চেষ্টা করলেন প্রফেসর কবির।
“হা হা হা..”
হাবিব স্যার আকস্মিক হাসি শুরু করলেন। হাবিব স্যারের হাসিতে প্রফেসর কবির ভড়কে গিয়ে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইলেন। হাবিব স্যার বললেন, “ডিপার্টমেন্ট, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রশাসন সবই এখন তোমাদের। আমার এখানে কিছুই নেই। তবে ছিলো। যতদিন ছিলো ততদিন আমি ছিলাম, আর যখন দেখলাম এসব কেড়ে নেয়া হচ্ছে এক এক করে তারপরই তো চলে গেলাম। কোনো বলদের মতো কারো পিছে ঘুরে ঠকবাজি করা আমরা বড্ড ঘৃণা করতাম।”
প্রফেসর কবির একটু চোখ তুলে তাকানোর চেষ্টা করলেন, “চলে যাওয়াটা কোনো সমাধান নয় স্যার!”
কথাটা হাবিব স্যারকে খিমচে ধরলো। হাবিব স্যার বললেন, “হ্যাঁ প্রফেসর কবির, চলে যাওয়াটা কোনো সমাধান নয়। বড্ড দার্শনিক টাইপের কথাবার্তার চর্চা করছো মনে হয়। মনে করো প্রফেসর হাবিব চাকরি না ছেড়ে এখানে পড়ে আছে। তোমরা কী করতে তার বিরুদ্ধে? আমি তো নিজের চোখে দেখেছি প্রফেসর মজুমদারের কী দশাটা তোমরা করেছো! কুলাঙ্গার কিছু ছাত্রের সাথে আঁতাত করে তার রুমে ভাড়া করা মেয়ে ঢুকিয়ে তার নামে মামলা করো, তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করো। সে নাকি তার রুমে জোর করে মেয়ে নিয়ে এসে শারিরীক নির্যাতন চালায়। এটাই তো করতে আমার বিরুদ্ধে। এর চেয়ে ভালো অবশ্যই কিছু করতে না। সুতরাং দার্শনিক আলাপ আমার সামনে বাজিয়ো না। ”
হাবিব স্যারের কথায় প্রফেসর কবিরের মাথায় ধিকি ধিকি আগুন জ্বলতে শুরু করলো। মুখের মধ্যে অপমান করার তীব্র ইচ্ছা সত্ত্বেও অপমান করতে না পারার পুঞ্জীভূত অভিমান। প্রফেসর কবির বললেন, “স্যার আপনি আমাকে অপমান করার জন্য এসেছেন?”
প্রফেসর কবিরের মুখে সুস্পষ্ট রাগের ছাপ।
“অপমান? অপমান হবে কেনো? এগুলো তো অতীত প্রফেসর কবির। পনেরোটি বছর পরে আসলাম। অল্প একটু অতীত শোনার ধৈর্য হবে না?”
প্রফেসর কবিরের ভেতরটা উসখুস করছে। হাবিব স্যারের কাছে প্রফেসর কবিরের কলঙ্কিত নানান অতীত ইতিহাস গচ্ছিত রয়েছে। হাবিব স্যার কি তাহলে সব ফাঁস করে দেয়ার জন্য এসেছেন? না, আর যাই হোক এখন উনাকে ক্ষ্যাপানো মোটেই সমীচীন হবে না। প্রফেসর কবির বললেন, “একটু পরে একটা মিটিং আছে স্যার। আপনাকে আধা ঘন্টার বেশি সময় দিতে পারবো না।”
“আমি আধা ঘন্টাও থাকবো না। ডিপার্টমেন্টে বেশিক্ষণ থাকলে বারবার অতীত আমাকে নাড়া দিতে শুরু করবে। আর অতীতের নাড়ায় মনটা আক্রোশ - হিং¯্রতায় ভরপুর হয়ে যায়। আমি সেরকমটি হতে চাই না। যাক সেসব কথা। তোমার যে গাইড স্যার ছিলেন উনার কী অবস্থা বলো তো? অনেক দিন দেখা সাক্ষাৎ নাই। উনার চাঁদ বদন খানা দেখতে মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে।” হাবিব স্যারের শেষের কথাটিতে সুস্পষ্ট বিদ্রুপের ছাপ পাওয়া যায়।
“রাজ্জাক স্যার? আছেন ভালোই। ছেলেটার কথা জানেন নাকি? মানসিক প্রতিবন্ধী!”
অদ্ভুত একটা হাসি ছেড়ে হাবিব স্যার বললেন, “রাজ্জাক সাহেব কী আগের মতোই আছেন, নাকি একটু আধটু সংশোধনের চেষ্টা করছেন?”
প্রফেসর কবির কিছুক্ষণের জন্য বোবা শূণ্যতায় হারিয়ে গেলেন। প্রমাণিত সত্য বলতেও মাঝে মধ্যে মানুষের বুক দুরু দুরু করে। রাজ্জাক স্যার না থাকলে প্রফেসর কবির কখনোই এ চেয়ারে বসতে পারতেন না। সেদিক থেকে স্যারের প্রতি একটা অন্ধ ভালোবাসা তো আছেই। নখদন্তহীন অথর্বের মতো প্রফেসর হাবিবের জবাব আসলো, “স্যার এ প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারবো না। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”
হাবিব স্যার বললেন, “পারবে কি করে? তুমি কি জানো এই চেয়ারে বসার সাথে সাথেই তুমি রাজ্জাক সাহেবের কাছে বিক্রি হয়ে গেছো?”
প্রফেসর কবিরের সুকুমার মুখশ্রী লাবণ্যহীন হয়ে গেলো। ঠোঁট-মুখ শুকিয়ে ভ্যাবলার মতো হয়ে গেছে। পায়ের তলায় অনুভব করছেন মৃদু মৃদু ভুমিকম্প । হাবিব স্যার যে সময়টা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন বার বার সে সময়টি অনেক আগেই প্রফেসর কবির মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছেন। তিনি চান না আবার সেটা মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসুক। প্রফেসর কবির চুপ মেরে বসে থাকলেন।
হাবিব স্যার বললেন, “জানি তুমি কিছু বলবে না। অবশ্য তোমার বলার মতোও কিছু নেই। শিক্ষকতা ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে রাজ্জাক সাহেবের সাথে তোমাকে নিয়ে আমার তুমুল বাকবিতন্ডা হয়েছিলো। আমি সত্যি বলছি কবির, তুমি ছাত্র হিসেবে হয় তো একটু আধটু লেখাপড়া করেছো, কিন্তু টিচার হওয়ার কোনো যোগ্যতা তোমার ছিলো না। সেটা শুধু আমার না, অধিকাংশ টিচারেরই অভিমত ছিলো। আই অলওয়েজ ওয়ান্টেড টু মেইনটেইন এ কোয়ালিটি এডুকেশন ইন দিস ডিপার্টমেন্ট। এটা তোমার প্রতি আমার কোন রাগ কিংবা ক্ষোভ থেকে করা হয় নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার কোনো যাচ্ছেতাই বিষয় নয়। এরা জাতির বিবেক তৈরি করে। সুতরাং এখানে যে কাউকে বসিয়ে আমি দেশের মানুষের সাথে বেইমানি করতে পারি না। এই রকমই তো হওয়া উচিত, নাকি বলো?”
কথাগুলো প্রফেসর কবিরকে বেশ ভালো করেই বিদ্ধ করছিলো। প্রফেসর কবির বললেন, “স্যার, এত বেশি শুদ্ধতার চর্চা কি আদৌ সম্ভব?”
“সম্ভব নয় বলে একদম সরাসরি অশুদ্ধ হয়ে যাবে? শুদ্ধতার ধারে কাছেও ঘেঁষবে না? হয়তো একটা ভালো কাজ শতভাগ সফলভাবে তুমি করতে পারবে না। তাই বলে দশ ভাগ করার চেষ্টাও করবে না? দিস ইস সো ব্যাড কবির। তবে আমি এটা গর্বের সাথে যেকোনো জায়গায় বলতে পারি, আমার দেহে মেরুদন্ড বলে একটা জিনিস আছে। তুমি যখন টিচার হওয়ার জন্য খুব লাফাচ্ছিলে, রাজ্জাক স্যারের পলিটিক্স্রে যুক্ত হলে, বিভিন্ন জায়গায় টাকা পয়সা ঢালছিলে তার প্রভাব কিন্তু আমার উপর সরাসরি এসে পড়তো। কারণ আমি তখন এসব নোংরামির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। সবাই আমাকে শাসাতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে গিয়েছিলো এক এক করে। আমি চলে গিয়েছি সবার প্রতি বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, কিন্তু কেউ আমাকে অন্যায় দ্বারা তাড়িত করতে পারে নি।”
এবার একটু শান্ত গলায় প্রফেসর কবির হাবিব স্যারকে বললেন, “স্যার থাক না ওসব কথা। আমি মানছি স্যার, ওই সময়টায় অনেক ভুল হয়েছে। আমি ওই সময়টা ভুলে যেতে চাই।”
“ভুলে যেতে চাও! হা হা হা..”
হাবিব স্যারের হাসি প্রফেসর কবিরকে যেনো আরো পর্যুদস্ত করে রেখেছে। হাবিব স্যার তাকে এক কঠিন সত্যের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছেন। যেখানে আসলে প্রফেসর কবির অজানা আতঙ্কে কাঁপতে থাকেন থর থর করে।
“এক গ্লাস পানি হবে কবির?” প্রফেসর কবিরকে জিজ্ঞেস করলেন হাবিব স্যার।
প্রফেসর কবির তার চেয়ারের পেছনে রাখা একটা গ্লাসে জগ থেকে পানি ঢেলে হাবিব স্যারের দিকে এগিয়ে দিলেন। হাবিব স্যার ঢক ঢক করে মুহূর্তের মধ্যে পুরো গ্লাস শেষ করে বললেন, “বড্ড পিপাসা পেয়েছিলো। একদম গেট থেকে হেঁটে হেঁটে এসেছি। হুমম, যেটা বলছিলাম, অতীত ভুলে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না কবির। এই অতীত তোমাকে একদিন খামচে ধরবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারো।”
হাবিব স্যারের কথা প্রফেসর কবিরকে সাময়িকভাবে বিবশ করে দিয়েছে। প্রফেসর কবিরও জগ থেকে আরেক গ্লাস পানি নিয়ে ঢক ঢক করে পান করে নিলেন। ঘড়িতে সময়টা একটু দেখে নিয়ে হাবিব স্যারকে বললেন, “স্যার, মিটিংটা এক্ষুণি শুরু হবে। আমাকে এখন একটু উঠতে হবে।”
উঠার জন্য ইতস্তত করছেন প্রফেসর কবির।
হাবিব স্যার প্রফেসর কবিরের ব্যস্ততা আঁচ করতে পারলেন। একটু সন্দেহও ঘুলিয়ে উঠলো। বললেন, “সে তো উঠবেই। কিসের মিটিং জানা যাবে?”
“আমাদের প্যানেলের মিটিং স্যার। সামনে ইলেকশন আছে। প্রার্থী সিলেকশন হবে আজ।”
বলে ল্যাপটপটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালেন প্রফেসর কবির।
হাবিব স্যার বিস্মিত স্বরে বললেন, “বাহ প্রফেসর কবির, কফিনে তাহলে শেষ পেরেকটাও ঢুকে গেলো। আমিও আর এখানে একদন্ড থাকার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছি না। তোমার আগেই আমি চলে যাচ্ছি মিস্টার প্রফেসর। তুমি বরং তোমার প্যানেলকে জেতানোর দিকটাই ভালো করে দেখো। বেঁচে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে কোথাও দেখা হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন রহস্যময় কুহেলিকায় ঘেরা। এখানে আসলে রহস্য ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়বে না। হাবিব স্যার ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হয়েই হাঁটা শুরু করলেন। যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়টি ছাড়তে হবে ।

সৌরভ দাস
শিক্ষার্থী
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×