somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী তুমি অনন্যা...

১০ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টিনা শৈশব থেকেই নানা বৈরী পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েই জেনে গিয়েছিল যে ওর জন্য পৃথিবীটা খুব সুখকর জায়গা হবে না। একরকম যুদ্ধ করেই বাঁচতে হবে তাকে। এর কয়েক বছর পর আশ্চর্যজনকভাবে ও বুঝতে পারল শুধু ওর নয় বরং পৃথিবীর কোনো মেয়ের জীবনই সহজ নয়। এককথায় কাঁটায় ভরা! তবে এর মধ্যেই সেই কঠিন জীবনের পথ অনেকখানি সহজ করে তুলেছে টিনা। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে একটি নামকরা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে গবেষণার কাজে যোগ দেয় সে। সেখানেও পদে পদে কাঁটা বিছানো, একটু এদিক-ওদিক হলেই নানা গুঞ্জন, যোগ্যতার মাপকাঠি নিয়ে টানাটানি। বস থেকে শুরু করে অফিসের ড্রাইভার পর্যন্ত সবার চোখেই সে কেবল একজন মেয়ে, আর কিছুই নয়। গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে থাকাতে কেউ হয়তো সামনে কিছু বলার সাহস করে না, তবে পিঠপিছে ছাড়ে না কেউই! তবে সবাই বললে ভুল হবে। এর মধ্যেও যে সহযোগী ছিল না তা কিন্তু নয়। এমন অনেকেই ছিলেন এবং আছেন যারা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পৃথিবীতে চলায় বিশ্বাস করেন। বিশ্বাস করেন, 'বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।' তবে সেই সংখ্যাটা নেহায়েতই কম।
এরপর জীবন খাতার একটি পাতায় বিয়ের সময়টা এসে গেল। ছেলে ডাক্তার, এক-আধটু কবিতাও লেখে_নাম মুন্না! রূপকথার রাজ্য থেকে স্বপ্নের রাজপুত্র সাদা ঘোড়ায় এলো রাজকন্যাকে নিয়ে যেতে, এমন কিছু হয়নি। তবে দিন যেতেই টিনা বুঝতে পারল স্বপ্নের রাজপুত্র থেকে কম কিছু নয় তার জীবনসঙ্গী। বিয়ে মানেই যে 'আমি' থেকে 'আমরা' হয়ে ওঠা সে কথাটি মুন্না রেখেছে ঠিক আজও! আবার মুন্নার ক্ষেত্রেও অনুভূতিটা একই। তার প্রতিটি কাজে টিনার অনুপ্রেরণা, সহযোগিতা এবং কঠিন কাজকে সহজ করে তুলেছে প্রতিনিয়ত। এর মধ্যেই তাদের ঘর আলো করে এসেছে দুটি সন্তান_ নিসর্গ ও সায়ান। একজনের বয়স এখন ১৪ আরেকজনের ৯ বছর। ওদের দু'জনকে নিয়েই কয়েক বছর আগে দেশের বাইরে গিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে এসেছে টিনা। মুন্না থাকতে পারেনি তখন পাশে, কারণ সে ব্যস্ত ছিল তার পিএইচডি ও শিক্ষকতা পেশা নিয়ে। তবে মানসিকভাবে সঙ্গে থাকতেন প্রতিটি মুহূর্তেই। টিনা নিজের মুখেই বললেন, 'মাঝে মধ্যে মনে হতো, আর পারছি না, লাগবে না পিএইচডি ডিগ্রি আবার পর মুহূর্তেই দাঁতে দাঁত কামড়ে পড়ে থাকতাম, পারতে আমাকে হবেই! আমার সঙ্গীর সহযোগিতা ছিল শতভাগ। আর সন্তানদের সহযোগিতাও অনস্বীকার্য!'
টিনা শেষ পর্যন্ত পেরেছেন। পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে পেশা হিসেবে বেছে নেন শিক্ষকতাকে। সেই ৯-৫টা অফিস। ঘরের কাজ, রান্না, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, বাজার করা, সামাজিকতা রক্ষা_কোনোটাতেই পিছিয়ে নেই টিনা। একদিন তো মুন্না মুখ ফুটে বলেই ফেলল, 'তোমার টাইম ম্যানেজমেন্টে আমি মুগ্ধ!' কেবল মুন্নাই নয় বরং টিনার আশপাশের সবাই তার এই গুণ নিয়ে কথা বলে হরহামেশাই, চায় তার মতো হতে।
একজন টিনার গল্প বলছিলাম, অবশ্য গল্প নয়-সত্যি! 'গল্পটা' শুনতে বা পড়ে যতটা সহজ মনে হলো, বাস্তবে কিন্তু এটা ছিল এর থেকে অনেক বেশি কঠিন। এমন হাজারো টিনা রয়েছেন আমাদের আশপাশে, একেকজনের একেক নাম, পরিচয়; তবে সবাই তাদের নিজ গুণেই গুণান্বিত, অনন্যা! নারী জাতি কোমল অনুভূতির শক্তিশালী উৎস। প্রশান্তি, ভালোবাসা, ক্ষমাশীল, সাহায্যকামী প্রভৃতি মহৎ গুণ নারীকে করেছে মহান। কোনো সমাজ যদি নারীর এসব গুণ ভালোভাবে কাজে লাগাতে না পারে, তাহলে ওই সমাজ থেকে ধীরে ধীরে মানবিক মূল্যবোধগুলো হারিয়ে যাবে। একজন নারীকে যদি সময়ের গণ্ডিতে বেঁধে রাখা না হয়, তাহলে তার কাছ থেকে সবচেয়ে ভালো কাজটি আদায় করা সম্ভব। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, একবিংশ শতাব্দীতে পা রেখে আজও আমাদের সমাজব্যবস্থায় নারীরা হেয়প্রতিপন্ন। পুরুষশাসিত সমাজে কলকারখানায় এখনও নারী শ্রমিকের পারিশ্রমিক একজন পুরুষের থেকে কম। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে, ঘরের বাইরে অফিস-আদালতে, ক্রিকেট মাঠে, সাহিত্য রচনায়, সৃজনশীল কাজে, বিপজ্জনক যে কোনো পেশায় কিংবা ঘরের কাজে কোথায় নেই আধুনিক নারীর সরব পদচারণা। সবখানেই আজকের সাহসী নারীরা একশ'তে একশ'! আর যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের ও পরিবারের প্রয়োজনে যখন থেকে নারীরা বাইরের জগতে মনোনিবেশ করেছে, তখন থেকেই কিন্তু তার দুটো জগত। প্রথম জগৎটি তার সেই পুরনো জগৎ, পরিবার, সন্তান, সামাজিকতা। আর দ্বিতীয়টি তার পেশা জগৎ, শিক্ষা, অফিস, কাজ, যোগ্যতা, নিজের পায়ে দাঁড়ানো এবং নিজের একক পরিচয় গড়ে তোলার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। একদিকে পরিবার সামলাতে তারা সিদ্ধহস্ত, আবার অন্যদিকে অফিস সামলানোতেও। অফিসের কাজ সেরে এসে ঘরের কাজে মন দিতে হয় নারীকেই, পুরুষের কিন্তু সেই ঝক্কি নেই! তবে সর্বগুণে গুণান্বিতা বলেই হয়তো এ যুগের আধুনিকারা কিন্তু দু'ক্ষেত্রেই সফল। শালীনতা বজায় রেখে আধুনিক পোশাকে যেমন আজকের নারী অনন্যা, তেমনি অফিসের কাজে দক্ষতায়ও কম নয় কারও থেকে, আর রান্নার গুণও ষোলোআনা।
আজকের আধুনিকারা কিন্তু পিছিয়ে নেই দেশের তরেও। শাহবাগের স্লোগানকন্যারাই তার প্রমাণ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় লক্ষ নারী হারিয়েছেন তাদের সম্ভ্রম, তাদের অস্তিত্বকে! সেই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে, সেই সম্ভ্রম হারানোর প্রতিশোধেই যেন স্লোগানকন্যারা আজ দৃপ্ত। পুরুষের সঙ্গে সব বয়সী নারীর উপস্থিতিতে সরব থাকে প্রজন্ম চত্বর দিন-রাত। কই, সেখানে তো নারী-পুরুষে দেখি না কোনো ভেদাভেদ। সবাই সেখানে এক, সবার একটাই দাবি, সবার একটাই পরিচয়_মানুষ, বাঙালি! এভাবেই যুগে যুগে নারীরা তাদের ধৈর্য, ত্যাগ, সাহসিকতা দিয়ে আমাদের ধন্য করেছে। আজও আধুনিক নারীরা চলেছে তাদের পথে সগৌরবে, সমহিমায়, রুখবে কে তাদের? আধুনিক, সাহসী অনন্যা সেসব নারীকে আমাদের শ্রদ্ধা!

(গত বছর নারী দিবস উপলক্ষে সমকাল পত্রিকার সাপ্তাহিক লাইফস্টাইল ক্রোড়পত্র 'শৈলী'তে ছাপা হয়েছিল আমার এই লেখাটি)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×